৩ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে বিএনপি
৩ কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে বিএনপি - ছবি : সংগৃহীত
দেশে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে নতুন বছরে বিএনপির সামনে তিনটি কঠিন চ্যালেঞ্জ উপস্থিত হয়েছে। চ্যালেঞ্জগুলো হচ্ছে- দলের কারাবন্দী চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে নিরপেক্ষ নির্বাচন আদায় করা এবং দল পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষে জাতীয় কাউন্সিল করা। দীর্ঘ এক যুগের বেশি সময় ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপি কঠিন এসব চ্যালেঞ্জ কিভাবে মোকাবেলা করবে সেটাই মুখ্য বিষয়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে- খালেদা জিয়া ও তারেক রহমান-দুই শীর্ষ নেতার অনুপস্থিতিতে দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখে বেগম জিয়ার মুক্তি আন্দোলন জোরদার করাই বিএনপির সামনে বড় চ্যালেঞ্জ। দল পরিচালনা পদ্ধতি ও পুনর্গঠন নিয়ে সিনিয়র অনেক নেতাই ক্ষুব্ধ। তবে বিএনপিতে কোনো দ্বন্দ্ব নেই দাবি করে দলটির নেতারা বলছেন, নতুন বছরে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের পাশাপাশি জনগণের রাষ্ট্রের মালিকানা ফিরে পাওয়া বড় চ্যালেঞ্জ। আর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হলে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। কারণ গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও খালেদা জিয়ার মুক্তি আজ একাকার হয়ে গেছে। এটি শুধু বিএনপির না, সমগ্র দেশবাসীর জন্য চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জে দেশের মানুষের মুক্তির সংগ্রামে বিএনপি সবসময় পাশে রয়েছে, ভবিষ্যতেও থাকবে।
জানা গেছে, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ঘুরে দাঁড়াতে দল পুনর্গঠনের কাজ শুরু করে বিএনপি। কিন্তু বিগত এক বছরেও তা সম্পন্ন হয়নি। কবে নাগাদ এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে তা-ও অনিশ্চিত। আর গত বছরের মার্চে নির্বাহী কমিটির মেয়াদ শেষ হলেও কাউন্সিল করতে পারেনি বিএনপি। ফলে মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি দিয়েই চলছে দেশের অন্যতম বৃহৎ এই রাজনৈতিক দলটি। কবে নাগাদ কাউন্সিল হবে সেটাও অনিশ্চিত। অবশ্য দলটির নেতারা বলছেন, দল পুনর্গঠন শেষ হলেই বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্ঠিত হবে। কেননা, দুর্নীতির দুই মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে কারাবন্দী রয়েছেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। তার মুক্তির দাবিতে গত দুই বছর ধরে নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির পাশাপাশি আইনি লড়াইয়ে আস্থা রেখেছিল দলটি। যদিও দলীয় চেয়ারপারসনের মুক্তির জন্য কঠোর কর্মসূচি দিতে বছরজুড়েই বিএনপির হাইকমান্ডের ওপর তৃণমূলের চাপ অব্যাহত রয়েছে। শেষ পর্যন্ত কঠোর আন্দোলনে যায়নি দলটি। গতানুগতিক ও সাদামাটা অহিংস কর্মসূচিতেই বছর পার করে বিএনপি। দলীয় চেয়ারপারসন মুক্ত না হওয়ায় তৃণমূলের নেতাকর্মীরা চরম হতাশ হয়ে পড়েন।
জানা গেছে, দলকে সুসংগঠিত করতে তৃণমূলের মতামত ও ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। বিএনপির ৮১টি সাংগঠনিক জেলার মধ্যে মেয়াদোত্তীর্ণ ৩৪টি জেলা কমিটি পুনর্গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে ১০টিতে আংশিক হতে পূর্ণাঙ্গ এবং ২৪টিতে আহ্বায়ক কমিটি দেয়া হয়েছে। ছাত্রদলসহ কয়েকটি অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনেও নতুন নেতৃত্ব আনা হয়েছে। ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) কৃষক দল, মৎস্যজীবী দল, তাঁতী দল, ওলামা দলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হয়েছে। কিন্তু মেয়াদ শেষে এখন পর্যন্ত কাউন্সিলের দিনক্ষণ নির্ধারণ করতে পারেননি এসব সংগঠনের নেতারা। যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করে বিএনপির হাইকমান্ডের কাছে জমা দিয়েছে। মহিলা দল ও জাসাসের আংশিক কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়েছে। ২০১৪ সালের এপ্রিলে শ্রমিক দলের জাতীয় সম্মেলন হয়। বিএনপির সর্বশেষ ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিল হয় ২০১৬ সালের ১৯ মার্চ। সব মিলিয়ে দলটির পুনর্গঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়নি। যতটুকু গোছানো হয়েছে তাতে বিএনপি শক্তিশালী হতে পারেনি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, গেল বছরটি ছিল গণতন্ত্র হত্যারও। মানুষের অধিকারকে কেড়ে নেয়ার বছর। ফ্যাসিবাদের জয়ের বছর। নতুন বছরে আমরা সবসময়ই নতুন করে ভাবতে চাই, নতুন করে স্বপ্ন দেখতে চাই। সংগঠনকে শক্তিশালী করতে চাই। দেশনেত্রী বেগম জিয়াকে কারাগার থেকে মুক্ত করে গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করতে চাই। দেশনেত্রীর মুক্তি মানে গণতন্ত্রের মুক্তি এবং আমাদের সবার মুক্তি। এ জন্য সব দলমত নির্বিশেষে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে লড়াই করতে হবে।
রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা বলছেন, নতুন বছরে বিএনপির সামনে যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে এর মধ্যে অন্যতম হলো দলের অভ্যন্তরে ঐক্য ও পরস্পরের প্রতি আস্থা বিশ্বাস ধরে রাখা। সম্মিলিতভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে হবে। বিশেষ করে দুই শীর্ষ নেতার অনুপস্থিতিতে আগামীতে দলের ভেতরে-বাইরে ঐক্য ধরে রাখাও বিএনপির বড় চ্যালেঞ্জ। মূল দল ও অঙ্গসংগঠনগুলো পুরোপুরি গোছানোও জরুরি। এরপর দলের কাউন্সিল করতে হবে। বেগম জিয়ার মুক্তি দাবিতে আইনি লড়াইয়ের পাশাপাশি রাজপথের আন্দোলন কর্মসূচিও জোরদার করতে হবে। জনস্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো নিয়েও রাজপথে আন্দোলন করতে হবে। আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ সামনের স্থানীয় সরকারের সব নির্বাচনে দলকে জয়ী করাও বিএনপির সামনে চ্যালেঞ্জ বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।
এ প্রসঙ্গে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা: জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, শুধু বেগম জিয়ার মুক্তির দাবিতে নয় জনগণের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিএনপিকে আন্দোলনে যেতে হবে। এখন যে জুট মিলের শ্রমিকরা অনশন করছেন বিএনপির উচিত হবে তাদের সাথে একদিন অনশন করা। দ্বিতীয়ত, দলে শিগগিরই একটি কাউন্সিল করে নতুন নেতৃত্ব নিয়ে আসা। অপেক্ষাকৃত তরুণ ও রাজপথের সাহসীদের দিয়ে স্থায়ী কমিটি থেকে শুরু করে বিএনপির সর্বস্তরের কমিটি করা উচিত।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, দেশের মানুষের মালিকানা প্রতিষ্ঠা এবং তাদের মৌলিক অধিকার, ভোটাধিকার, আইনের শাসন ও জীবনের নিরাপত্তা ফিরে পাওয়া আজ সমগ্র দেশবাসীর জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। এটি শুধু বিএনপির একার চ্যালেঞ্জ না। আমরা বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির এই সংগ্রামে রয়েছি।