গায়ানায় ইসলাম : এক চমকপ্রদ কাহিনী
গায়ানার একটি মসজিদ - ছবি : সংগৃহীত
হরেক রকম পানির দেশ গায়ানা। দক্ষিণ আমেরিকান স্পেনিশ ভাষার প্রাধান্যের মধ্যে একমাত্র ইংরেজি ভাষাভাষী লোকজনের দেশ এটা। অ্যামেরিন্ডিয়ান শব্দ থেকে গায়ানা শব্দটি এসেছে। এটা ব্রিটিশ গায়ানা হিসেবেও পরিচিত। এটাকে ‘দ্য ল্যান্ড অব সিক্স পিপুলও’ বলা হয়। দক্ষিণ আমেরিকার একেবারে উত্তর-পূর্ব দিকে গায়ানার অবস্থান। উত্তরে আটলান্টিক মহাসাগর, পূর্বে সুরিনাম, উত্তর-পশ্চিমে ভেনিজুয়েলা, দক্ষিণে ও দক্ষিণ-পশ্চিমে ব্রাজিল। জর্জটাউন দেশটির রাজধানী। ৯০ শতাংশ জনসংখ্যা বাস করে উপকূলীয় এলাকায়। ডাচরা আঠার শতকে দাসদের এখানে এনে রাখার ফলে দেশটিতে বসতি শুরু হয়। আয়তন দুই লাখ ১৪ হাজার ৯৬৯ বর্গ কিলোমিটার (৮৩ হাজার বর্গমাইল)। প্রধান ভাষা ইংরেজি হলেও উর্দু, হিন্দি, ক্রেওল ভাষার প্রচলন রয়েছে। প্রধান ধর্ম খ্রিষ্টান, হিন্দু ও ইসলাম। গড় আয়ু পুরুষ ৬৪ এবং নারী ৬৯ বছর। মুদ্রার নাম গায়ানিজ ডলার।
১৯৬৬ থেকে স্বাধীন গায়ানা
নামটা ব্রিটিশ গায়ানা হলেও এটা একটি স্বাধীন দেশ। এর অল্প দুরত্বের মধ্যেই আরেকটি গায়ানা রয়েছে বলে এটা ব্রিটিশ গায়ানা হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। অন্যটি ফ্রেঞ্চ গায়ানা। ব্রিটিশদের অধীন ছিল বলে ইংরেজী ভাষার কদর বাড়ে এবং সকলের ভাষা হয়ে যায় (লিঙ্গুয়া ফ্রাঙ্কা)। জাতিগত বিভক্তিতে তৈরি রাজনৈতিক দলের মধ্যে প্রায়ই সংঘর্ষ হয়ে থাকে এবং প্রায়ই এসব সংঘর্ষ ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করে। দেশটির বেশির ভাগই গ্রীষ্মন্ডলীয় রেইনফরেস্টে ভর্তি। বক্সাইট, স্বর্ণ এবং কাঠ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গেলেও দেশটির দারিদ্র্য দুর হয়নি এখনো। উপকূলীয় এলাকায় তেল পাওয়ার পর ভেনিজুয়েলার সাথে শতাব্দী পুরাতন সীমান্ত সমস্যা আরো বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এই তেলই রাজনৈতিক বিভাজন তৈরি করেছে গায়ানায়। ব্রিটিশ ও আমেরিকান কোম্পানিগুলো তেল উত্তোলন করছে। ফলে এরা এদের স্বার্থ রক্ষায় কিছু এলিটও তৈরি করছে। তেল কোম্পানি রাজনীতিতে প্রভাব বিস্তার করে রেখেছে। রাজনীতিও নিয়ন্ত্রণ হয়ে থাকে তেল অর্থনীতি অথবা তেল থেকে প্রাপ্ত অর্থের ব্যবহার ও দুর্নীতিকে কেন্দ্র করে।
জনসংখ্যা
গায়ানার জনসংখ্যা প্রায় সাত লাখ ৮৪ হাজার। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ খ্রিষ্টান। ৬৫ শতাংশের বেশি বিভিন্ন মতবাদের খ্রিষ্টান, হিন্দু ২৪.৮ শতাংশ, মুসলমান ৬.৮ শতাংশ, কিছু ইহুদিও রয়েছে। জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫০ হাজার ৬০০ জন মুসলমান। আবার জনসংখ্যার ৩৯ .৮ শতাংশ ভারত ও পাকিস্তানের বংশোদ্ভত। এদের পূর্ব ভারতীয় বলা হয়ে থাকে। জনসংখ্যার ৩৯.৮ শতাংশ বলে গায়ানার রাজনীতিতে এরা বেশ প্রভাবশালী হয়ে উঠে যখন ঐক্যবদ্ধ থাকে। এরা ইন্দো-গায়ানিজ নামেও পরিচিত। ৩০ শতাংশ আফ্রিকান বা আফ্রো-গায়ানিজ, ১৯.৯ শতাংশ বহুজাতি ভিত্তিক বিশেষ করে আফ্রিকান, ১০.৫ শতাংশ এ্যামেরিন্ডিয়ান (আমেরিকান ইন্ডিয়ান, আদিবাসী আমেরিকান হিসেবে পরিচিত) এবং ০.৫ শতাংশ অন্যান্য জাতির বেশির ভাগ চাইনিজ)। আবার ইন্ডিয়ানদের মধ্যে হিন্দু ৬৫ শতাংশ, মুসলমান ২০ শতাংশ, খ্রিষ্টান ১৫ শতাংশ। ডাচরা যখর বসতি গড়ে তোলে তখন কিছু চাইনিজ, ইউরেপিয়ান ছিল। এরা পরে অন্যত্র চলে যায়।
বিষ্ময়কর প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ গায়ানা
গায়ানা সম্বন্ধে মানুষের মধ্যে ধারণা খুবই কম। বিশ্ব রাজনীতি ও ভুগোলে পারদর্শীরা ছাড়া দেশটি সম্বন্ধে সাধারণের জ্ঞান নেই বললেই চলে। আমরা রেইন ফরেস্টের নাম শুনলেই অ্যামাজনের ছবিটা ভেসে উঠে চোখের মধ্যে। কিন্তু গায়ানাও রেইন ফরেস্টের জন্য বিখ্যাত। এছাড়া এ দেশে রয়েছে প্রচুর জলপ্রপাত। কেইটিউর নামে একটি বিখ্যাত জলপ্রপাত রয়েছে। ৭৪১ ফুট উচ্চতা থেকে এ জলপ্রপাতে পানি গড়িয়ে পড়ে। যেখানে নায়াগ্রা জলপ্রপাতের উচ্চতা মাত্র ১৬৭ ফুট। রেইনফরেস্টে ঠাসা বলে এ দেশটির ৭০ শতাংশ এলাকায় এখনো কোনো বসতি নেই। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বাস করে রাজধানী জর্জটাউন অথবা এর আশে-পাশের এলাকায়। জর্জটাউনের এক পাশে রেইন ফরেস্ট এবং অন্য পাশে রয়েছে আটলান্টিক মহাসাগর। জর্জ টাউনের পরেই আরেকটি শহর রয়েছে যার নাম কুইন্স টাউন। এ দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের ‘দ্য ওমেই স্বর্ণ খনি’ পৃথিবী বিখ্যাত। এখানে ৩৭ লাখ আউন্স পরিমাণ স্বর্ণ রয়েছে বলে ধারনা করা হয়।
গায়ানায় মুসলমানদের আগমন
১৮৩৮ সালে দক্ষিণ এশিয়ান মুসলমানদের দ্বারা গায়ানাতে ইসলাম আসে। তবে এরও আগে গায়ানাতে মুসলমানরা এসেছে বলে ইতিহাসে উল্লেখ আছে। আফ্রিকান দাসদের মধ্যে যাদের গায়ানাতে আনা হয়েছিল এদের মধ্যেও কিছু মুসলমান ছিল। পশ্চিম আফ্রিকা থেকে ম্যানডিঙ্গো ও ফুলানি মুসলমানদের এখানে আনা হয়েছিল আখ চাষের জন্য। ধারণা করা হয় যে ১৭৬৩ সালে গায়ানিজদের অধিকার আদায় আন্দোলনের নেতা ‘কুফি’ ছিলেন মুসলমান। তার নামটার মধ্যে আরবি আরবি ভাব আছে। তখনকার সময়ে তিনি ছিলেন গায়ানার জাতীয় নেতা। ওই সময় গায়ানা ছিল ডাচদের (দ্য ন্যাদারল্যান্ডস) দখলে। গায়ানায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে কুফি পরিচালিত আন্দোলনের যে দাবি ও শর্ত তা আরবিতে লেখা ছিল। এ দলিলটি ডাচদের কাছে ছিল। এতে আরো প্রমাণ করে যে কুফি নিজেও মুসলমান ছিলেন এবং তার আন্দোলনেও মুসলমানরা ছিলেন।
কুফির আন্দোলন দমানোর জন্য ডাচরা নিষ্ঠুর দমননীতি পরিচালনা করে বলে আধুনিক ইতিহাসেই লেখা রয়েছে। ওই দমনের পর গায়ানার মুসলিম জনসংখ্যা কমে আসে এবং আন্দোলনও স্তিমিত হয়ে আসে। ফল স্বরূপ ইসলামও মানুষের মন থেকে মুছে যায় অথবা মুছিয়ে দেয়া হয় জোর পূর্বক। এরপর চলে যায় দীর্ঘদিন। গায়ানার মালিকানা ডাচদের থেকে ব্রিটিশদের কাছে হস্তান্তরিত হয়। ব্রিটিশরা ১৮৩৮ সালে তাদের প্রয়োজনে ভারত থেকে প্রচুর শ্রমিক শ্রেণীর মানুষ নিয়ে আসে। এতে হিন্দুদের সংখ্যা বেশি ছিল। সাথে কিছু মুসলমানও আসে। এই দলে উর্দু ভাষী ও শিক্ষিত কিছু মুসলমানও ছিল। তাছাড়া এদের সাথে ভারত ও পাকিস্তানের মুসলমানদের যোগাযোগ কখনো বিচ্ছিন্ন হয়নি।
কুফির আন্দোলন শেষ হয়ে গেলেও গায়ানার মুসলিমদের এখনো ফুলা বলে অভিহিত করা হয়ে থাকে। ফুলার মধ্যেই পশ্চিম আফ্রিকান মুসলমানদের ইতিহাস স্মরণ করে থাকে গায়ানিজ মুসলমানরা। মিরশিয়া এলিদার গবেষণা গ্রন্থে এ সম্বন্ধে বলা হয়েছে যে- ‘১৮৩৫ থেকে ১৯১৭ সালের মধ্যে পূর্ব ভারতীয় দুই লাখ ৪০ হাজার মানুষকে গায়ানায় আনা হয়। এদের বেশির ভাগই উর্দুভাষী ছিল। এই উর্দু ভাষীদের বেশির ভাগই ছিল গ্রামে বাস করা মানুষ এবং অশিক্ষিত। এদের মধ্যে ৮৪ শতাংশ ছিলেন হিন্দু এবং অবশিষ্টরা মুসলমান। মুসলমানদের প্রায় সকলেই ছিলেন সুন্নি। এ দলে কিছু শিয়া সম্প্রদায়ের মুসলমান এবং এমনকি কিছু আহমদিয়া সম্প্রদায়ের লোকও মিশে ছিল। আহমদিয়ানদের (কাদিয়ানি) সংখ্যা উল্লেখ করার মতো ছিল না, এখনো নেই কিন্তু অর্থ-বিত্তে প্রভাবশালী।
নতুন মুসলমান
গায়ানার ইমিগ্রেশনের রেকর্ড থেকে আরো কিছু তথ্য পাওয়া যায়। গায়ানা ও এর পাশের দেশ সুরিনামে অভিবাসী সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম ছিলেন উত্তর প্রদেশ, লখনৌ, আগ্রা, ফৈইজাবাদ, গাজীপুর, রামপুর, বাস্টি এবং সুলতানপুরের শহরবাসী। আবার সিন্ধুর করাচি, পাঞ্জাবের রাওয়ালপিন্ডি, মুলতান, লাহোর, দাক্ষিণাত্য, হায়দরাবাদ, কাশ্মিরের শ্রীনগর, আফগানিস্তানের সীমান্তবর্তি পেশওয়ার ও মার্দান থেকে সামান্য কিছু মুসলমান এসেছিলেন। ওই রেকর্ডে সবার গায়ের রং, উচ্চতা, বর্ণ, গোত্র সম্পর্কেও উল্লেখ রয়েছে। এমনকি সেখানে সিন্ধি, বিহারি, পাঠান, কাশ্মিরি, পাঞ্জাবি হিসেবে উল্লেখ আছে।
গায়ানার কুইন্স টাউন জামে মসজিদ হলো গায়ানার অন্যতম পুরাতন একটি মসজিদ। আফগানরা সে মসজিদ নির্মাণে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তাও উল্লেখ রয়েছে ওই রেকর্ডে। রেকর্ডে খান নামের একজন কুরআনের হাফিজও ছিলেন বলে উল্লেখ আছে। মুসলমানদের মধ্যে ভারতীয় উপমহাদেশের রীতি-নীতি পুরোটা এখনো বিদ্যমান। যেমন সেখানে ঈদে এ মিলাদুন্নবী পালন হয়। এছাড়া ফাতিহা পাঠ করা, কাসিদা গাওয়া, দোয়া করা ইত্যাদি ঐতিহ্য উর্দুভাষী মুসলমানদের মধ্যে রয়েছে। এসব অভ্যাস ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশে বাস করেন এদের মধ্যে এখনো বিদ্যমান রয়েছে।
মুসলমানদের সংগঠন
গায়ানার সবচেয়ে বড় ইসলামী সংগঠনের নাম গায়ানা ইউনাইটেড সদর ইসলামিক আঞ্জুমান। গায়ানার দ্বিতীয় বৃহত্তম জাতি হিন্দুদের সাথে মুসলমানদের দ্বন্দ্ব আছে। যেমন ভারতে রয়েছে অনেক আগে থেকেই। এ দুই জাতির মধ্যে এখনো মাঝে মাঝে ঝগড়া ও মারামারি লেগে যায় বলে গবেষণা পত্র এবং সংবাদ মাধ্যম বলছে। তবে নিজেদের মধ্যে একটি অলিখিত ও অনুক্ত চুক্তি রয়েছে। তাহলো- একে অপরের সদস্যদের ধর্মান্তরিত করা যাবে না। তবে গ্রামের দিকে খ্রিষ্টান ও মুসলমানদের মধ্যে বেশ মেলা-মেশা রয়েছে। তারা একে অপরের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে থাকে। আদানিং মধ্যপ্রাচ্যের দেশগগুলোতে গায়ানিজরা পড়তে আসছে এবং কুরআন ও হাদিসের বিশুদ্ধ জ্ঞান নিয়ে অনেকেই গায়ানায় ফিরে গিয়ে সেগুলো প্রয়োগ করা এবং অনুশীলন করার কারণেও কিছু দ্বন্দ্ব তৈরি হচ্ছে মুসলমানদের মধ্যে।
পাকিস্তানি ও ভারতীয় মাওলানাদের প্রভাব
পাকিস্তান ও ভারত থেকে মাওলানাদের নিয়মিত আসা-যাওয়া রয়েছে গায়ানায়। তারা পাশের দেশ সুরিনাম ও ত্রিনিদাদেও যান। এই দুই দেশেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মুসলমান রয়েছে। এখানে উষ্ণ অভ্যর্থনাই পেয়ে থাকেন মাওলানারা। তারা বিভিন্ন ইসলামিক সংগঠনগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করার কাজেও নিজেদের ব্যস্ত রাখেন। মুসলমানদের মধ্যে মত পার্থক্য দুর করতে মধ্যাস্থতা করেন। আবার তাদের দ্বারাই তৈরি হয়ে যাচ্ছে কিছু মত পার্থক্য। ওই দুই দেশের মাওলানারা সেখানে কুরআন ও হাদিস দিয়ে ইসলামকে উপস্থাপন করে থাকেন। সরকারি ভাষা ইংরেজি হলেও উর্দু মুসলমানদের মাতৃভাষা। ফলে মাওলানাদের ভাষাগত কোনো সমস্যা হয় না। কারণ ভারত ও পাকিস্তানের মুসলমানরা উর্দুতেই কথা বলেন। গায়ানার মুসলমানরা তাদের কাছ থেকে ইসলামী সাহিত্য পেয়ে থাকেন। ভারত ও পাকিস্তান শিক্ষকরাও সেখানে যান পড়ানোর জন্য। এমনকি ক্যারিবিয়ান মুসলমাদের বৃত্তি প্রদানের ব্যবস্থাাও করে থাকেন তারা।
গায়ানিজ মুসলমানদের প্রয়োজনেই ১৯৩৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল দ্য ইসলামিক এসোসিয়েশন অব ব্রিটিশ গায়ানা (আইএবিজি)। ওই বছরই আইএবিজি প্রথম ইসলামিক পত্রিকা নুর ই ইসলাম প্রকাশ করে। পরে আইএবিজি ইউনাইটেড সদর ইসলামিক আঞ্জুমানের মধ্যে মিশে যায়।
হলিডে
১৯৭০ সাল পর্যন্ত মুসলমান ও হিন্দুদের পবিত্রতম দিনগুলোকে সরকারিভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়নি। এরপর থেকে মুসলমান ও হিন্দুদের পবিত্রতম দিনগুলোতে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। মুসলমানদের ছুটির মধ্যে রয়েছে ঈদুল ফিতর, ঈদুল আজহার উৎসব, নবি মুহাম্মদ (সা) এর জন্মদিনের ছুটিও দেয়া হয়। হিন্দুদের হলি, দিপাবলিতেও সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে।
রাজনীতি
গায়ানার পরবর্তি সাধারণ নির্বাচন হতে যাচ্ছে ২০২০ সালের ২ মার্চ। ২০১৮ সালের ২১ ডিসেম্বর ৬৫ আসনের সংসদে আস্থা ভোটে হেরে যাওয়ার পর বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডেভিড এ গ্র্যাঙ্গারকে নতুন নির্বাচনের ঘোষণাটি দিতে হয়েছে । ২০১৫ সালের সাধারণ নির্বাচনে ডেভিড এ গ্র্যাঙ্গার সংসদে একটি মাত্র আসনের গরিষ্ঠতা পেয়ে সরকার গঠন করতে পেরেছিলেন। গ্র্যাঙ্গারের দলের আসন ছিল ৩৩টি। বিরোধী গোষ্ঠীর ছিল ৩২টি। ডেভিড এ গ্র্যাঙ্গারের দলের একজন সংসদ সদস্য তার বিরুদ্ধে অনাস্থা দেয়ায় তিনি হেরে যান। সংসদীয় মেয়াদ চলতি বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর শেষ হয়ে গেছে এবং ২৫ সেপ্টেম্বর পরবর্তি নির্বাচনের ঘোষণা দিতে হয়েছে। উল্লেখ্য সংসদ সদস্যদের ভোটেই প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয় গায়ানায়।
বিভিন্ন ধরনের আইনগত বিষয় তুলে ধরে গ্র্যাঙ্গার সরকার পরবর্তি সাধারণ নির্বাচনের তারিখ পিছিয়েছে। গায়ানার নির্বাচন কমিশন ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে জানিয়ে দিয়েছে যে মধ্য মার্চের মধ্যে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা থাকা সত্বেও আরেকটি সাধারণ নির্বাচন করা সম্ভব নয়। বিরোধি পক্ষও এটা মেনে নিয়েছে। এর মধ্যে আইনগত কিছু বিষয় নিষ্পত্তি করতে হয়েছে উচ্চ আদালতকে। চরনদাস পারসউদ নামের একজন সংসদ সদস্যের অনাস্থা ভোটেই প্রেসিডেন্ট গ্র্যাঙ্গারের জোট হেরে যায় সংসদে। চরনদাসের কানাডার দ্বৈত নাগরিকত্ব রয়েছে। এই বলে উচ্চ আদালতের একটি ডিভিশন ওই ভোটটিকে অবৈধ ঘোষণা করার পর অ্যাটর্নি জেনারেল আপিল আদালতে নিয়ে যান বিষয়টি। আপিল আদালত চরনদাসের ভোটটিকে বৈধ বলে রায় দিলে প্রেসিডেন্ট গ্র্যাঙ্গারকে নতুন নির্বাচন দেয়ার অঙ্গীকার করতে হয়েছে। পিপিপি সাবেক গৃহায়ণ মন্ত্রী ইরফান আলীকে ২০২০ সালে নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ঘোষণা করেছে। অপরদিকে এএফসি বর্তমান প্রেসিডেন্ট গ্র্যাঙ্গারকেই তাদের প্রার্থী করেছে।
ডেভিড আর্থার গ্র্যাঙ্গার
গায়ায়ানর বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডেভিড আর্থার গ্র্যাঙ্গার। রাজনীতিবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত আর্মি অফিসার ডেভিড আর্থার গ্র্যাঙ্গার ডেভিড এ গ্র্যাঙ্গার নামে পরিচিত। ২০১৫ সালে তিনি গায়ানার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। গায়ানা ডিফেন্স ফোর্সের তিনি কমান্ডার ছিলেন। ২০১২ থেকে ২০১৫ পর্যন্ত তিনি গায়ানার ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলির বিরোধি দলীয় নেতা ছিলেন। ২০১১ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ছিলেন কিন্তু সফল হতে পারেননি। ২০১৫ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট হলেও তিনি ২০১৮ সালের মে মাসের অনাস্থা ভোটে তিনি হেরে যান।
মুসলমানদের অবস্থা
গায়ানার প্রধান দুইটি রাজনৈতিক দলেই মুসলমানদের প্রাধান্য রয়েছে। এই দুইটা দলেই তারা সক্রিয়। এর একটা পিপুলস প্রগ্রেসিভ পার্টি (পিপিপি) এবং আরেকটি দ্য পিপুলস ন্যাশনাল কংগ্রেস (পিএনসি)। শুধু মুসলমান নয় হিন্দুরাও স্বাধীনতার আগে ভারত ও পাকিস্তানের সাথে বেশ ঘনিষ্ঠ ছিলেন। রাজনৈতিক শিকড়টাও দুই দেশে প্রোথিত ছিল। ১৯৬০ সাল পর্যন্ত মুসলমানদের নেতৃত্বে ভারত-পাকিস্তানীরাই ছিলেন। এদের বেশির ভাগই ভারত-পাকিস্তানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকেই লেখাপড়া শিখে গেছেন। দেশটির দারিদ্র্য মুসলমাদের মধ্যেও প্রচুর রয়েছে। আগে মুসলমানরা আরবি, উর্দুতে লিখতে, পড়তে ও কথা বলতে পারলেও এখন অধিকাংশই পারেন না। কারণ দেশটির সরকারি ভাষা এখন ইংরেজি। কিছু মুসলমান নিজেদের চেষ্টায় পূর্ব পুরুষের ভাষা উর্দু ও কুরআনের ভাষা আরবি শিখে নিচ্ছেন। একটা সময় ধনী পরিবারের সন্তানরা লেখাপড়া শিখেতে আরব দেশগুলোকে প্রাধান্য দিতেন ভারত, পাকিস্তানের চেয়ে। এখন অবশ্য এ প্রবণতা নেই আরব দেশগুলোতে যুদ্ধ লেগে যাওয়ার কারণে।
hamimuk@gmail.com