হৃদয়বিদারক সেই ঘটনা

নিজস্ব প্রতিবেদক | Jan 01, 2020 06:33 am
হৃদয়বিদারক সেই ঘটনা

হৃদয়বিদারক সেই ঘটনা - ছবি : সংগৃহীত

 

সেদিন গভীর রাতে সবাই ছিল ঘুমে আচ্ছন্ন। হঠাৎ প্রচণ্ড শব্দে তীব্র ঝাঁকুনিতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছিল সব। রাতের ঘুম থেকে চিরনিদ্রায় চলে গিয়েছিলেন শিশুসহ ১৭ জন। আহত হয়েছিলেন শতাধিক। গত ১১ নভেম্বর রাত ৩টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবায় দু’টি ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে সৃষ্টি হয়েছিল সেই মর্মান্তিক ঘটনা। মায়ের কোলে ঘুমিয়ে থাকা শিশুটি চিরদিনের জন্য ঘুমিয়ে পড়েছিল। আবার কোনো শিশু রাতের আঁধারে অচেনা জায়গায় চিৎকার দিয়ে মাকে খুঁজে ফিরছিল। হৃদয়বিদারক সে ঘটনাটি শুধু ব্রাহ্মণবাড়িয়া নয়, নাড়িয়ে দিয়েছিল গোটা দেশের মানুষের হৃদয়কে।

সেদিন ৩টায় কসবার মন্দবাগ এলাকায় চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথা ও সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস ট্রেনের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। প্রচণ্ড জোরে সংঘর্ষ হওয়ায় একটি ট্রেনের একাধিক বগি আরেকটি ট্রেনের কয়েকটি বগির ওপর উঠে যায়। দুমড়ে-মুচড়ে যায় ট্রেনের কয়েকটি বগি। দু’টি ট্রেনেরই বেশির ভাগ যাত্রী তখন ছিলেন ঘুমিয়ে। কিছু বুঝে ওঠার আগে প্রচণ্ড ধাক্কায় তারা নিজের আসন থেকে ছিটকে অন্য জায়গায় পড়তে থাকেন। এতে ঘটনাস্থল ও বিভিন্ন হাসপাতালে নারী-শিশুসহ ১৭ জনের মৃত্যু হয়। আহত হন দুই ট্রেনের শতাধিক যাত্রী। যাত্রীদের চিৎকার ও আহতদের আহাজারি ধ্বনিতে মন্দবাগের বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল। সেই সাথে উদ্বেগাকুল আত্মীয়-পরিজনের আহাজারি। হাসপাতাল এবং ঘটনাস্থলে হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছিল। দুর্ঘটনার পর ঢাকার সাথে চট্টগ্রাম ও সিলেটের রেলযোগাযোগ ৮ ঘণ্টা বন্ধ থাকে। এ সময় হতাহতের ঘটনায় দুর্ঘটনাস্থলে সৃষ্টি হয়েছিল অবর্ণনীয় মানবিক বিপর্যয়।

দুর্ঘটনার পর রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছিলেন। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধ্যানে গঠিত হয়েছিল পাঁচটি তদন্ত কমিটি। তাৎক্ষণিকভাবে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছিল তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের চালক, সহকারী চালক ও ট্রেনের গার্ডকে।

তূর্ণা নিশীথা ট্রেনের চালক সিগন্যাল (সঙ্কেত) অমান্য করায় এই দুর্টনা ঘটেছে বলে গঠিত কমিটির তদন্তে উঠে আসে। তূর্ণা নিশীথাকে মন্দবাগ রেলস্টেশনে দাঁড়ানোর জন্য সিগন্যাল দেয়া হয়। ওই সিগন্যালে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেস প্রধান লেন থেকে ১ নম্বর লাইনে যাচ্ছিল। ট্রেনটির ছয়টি বগি ১ নম্বর লাইনে উঠতে পেরেছিল। অন্য বগিগুলো প্রধান লেনে থাকা অবস্থায় তূর্ণা নিশীথা সিগন্যাল অমান্য করে প্রচণ্ড গতিতে ধাক্কা দেয় উদয়নকে। এতে তূর্ণা নিশীথার একাধিক বগি ওই ট্রেনের কয়েকটি বগির ওপর উঠে যায়। দুর্ঘটনার পর ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ, জেলা প্রশাসন ও রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি স্থানীয় অধিবাসীদের অংশগ্রহণ ছিল লক্ষণীয়। তাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় প্রায় ৮ ঘণ্টা পর ঢাকার সাথে চট্টগ্রাম ও সিলেটের রেলযোগাযোগ স্বাভাবিক হয়েছিল।

এ ছাড়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর হাসপাতালে আহত রোগীদের চিকিৎসার জন্য রক্ত দিতে স্থানীয় সমাজকর্মীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এগিয়ে এসেছিলেন। সদর হাসপাতালের মর্গে পড়ে থাকা হবিগঞ্জের শিশু ছোঁয়ামনির নিথর দেহ; শিশু ইয়াছিনের খোঁজে স্বজনদের আহাজারি; মা, বাবা, দাদী, নানীকে হারানো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবুঝ শিশু নাঈমার কান্নার খবরে কেঁদেছিলেন দেশের মানুষ।

ওইদিন রাতেই ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে রেলপথমন্ত্রী বলেছিলেন, দুর্ঘটনার সংবাদ পাওয়ার সাথে সাথে স্থানীয় প্রশাসন, পুলিশ বিভাগ, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, রেল পুলিশ, রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী, রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ, বিজিবিসহ সব সরকারি সংস্থা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি এবং জনসাধারণের সহযোগিতায় উদ্ধার কার্যক্রম শুরু করা হয়।

ওই ঘটনায় জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিহতদের পরিবারপ্রতি ২৫ হাজার টাকা এবং রেলপথ মন্ত্রণালয় থেকে ১ লাখ টাকা করে দেয়া হয়। আহতদের পরিবারপ্রতি ১০ হাজার টাকা সাহায্য প্রদান করা হয়েছিল বলে জানা গেছে। ঘটনার পরপর আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা ও সহমর্মিতা জানান।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us