ইন্দো-প্যাসিফিকে ভারতের নতুন হিসাব

লং ঝিংচুন | Dec 31, 2019 07:37 am
ইন্দো-প্যাসিফিকে ভারতের নতুন হিসাব

ইন্দো-প্যাসিফিকে ভারতের নতুন হিসাব - ইন্দো-প্যাসিফিকে ভারতের নতুন হিসাব

 

সদ্য সমাপ্ত যৌথ ইন্ডিয়ান ওশ্যান ডায়ালগ ও দিল্লি ডায়ালগে বক্তৃতাকালে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর পশ্চিম ভারত মহাসাগরসহ ভারত মহাসাগর, সেইসাথে উপসাগরীয় প্রতিবেশী এলাকা, আরব সাগরের দ্বীপ দেশগুলো, আফ্রিকার অংশীদারদের ব্যাপারে ভারতের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরে যোগ করেছেন যে ইন্দো-প্যাসিফিক একটি ‘উন্মুক্ত, অবাধ ও অন্তর্ভূক্তমূলক’ প্লাটফর্ম।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ২০১৮ শাংগ্রি-লা ডায়ালগে বক্তৃতার পর কোনো সিনিয়র ভারতীয় কর্মকর্তা সবচেয়ে জোরালোভাবে ও পরিকল্পিতভাবে বিষয়টি ব্যাখ্যা করলেন। মোদি ওই বক্তৃতায় বিষয়টির ব্যাপারে তার দেশের অবস্থান ব্যাখ্যা করেছিলেন।
ইন্দো-প্যাসিফিক হলো একটি আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক ধারণা। এক দশকেরও আগে এটি আত্মপ্রকাশ করলেও ২০১৭ সালে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল হিসেবে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন উত্থাপন করার পরই উত্তপ্ত বিষয়ে পরিণত হয়। এটি ভারত ও ভারত মহাসাগরের উদীয়মান কৌশলগত মর্যাদা প্রতিফলিত করছে।

১৯৯০-এর দশকের শেষ দিক থেকে ভারতীয় অর্থনীতি দ্রুতগতিতে প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে থাকে, ভারত গুরুত্বপূর্ণ উদীয়মান দেশে পরিণত হয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ভারতের সম্ভাবনার ব্যাপারে আশাবাদী হয় এবং এমনকি ভবিষ্যদ্বাণী করে যে দেশটি ২০৩০ সাল নাগাদ বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে জাপানকে পেছনে ফেলে দেবে। যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া, জাপান, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ অনেক পরাশক্তিও ভারতকে বড় দেশ মনে করে, অনেকে জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদে স্থায়ী আসন লাভে নয়া দিল্লির দাবিকে সমর্থন করে। যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান ভূরাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ থেকে চীনকে সংযত করার জন্য তাদের অংশীদার হিসেবে কামনা করে ভারতকে।
ইন্দো-প্যাসিফিক ধারণায় ভারত মহাসাগর ও প্যাসিফিরে মধ্যে ক্রমাগত ঘনিষ্ঠ অর্থনৈতিক সম্পর্কের বিষয়টি দেখা যায়। ১৯৯০-এর দশকের মধ্যভাবে ভারত ‘লুক ইস্ট’ নীতির কথা ঘোষণা করে, পরে ২০১৪ সালে মোদি তা আরো পরিমার্জিত করে করেন ‘অ্যাক্ট ইস্ট’। তার লক্ষ্য ছিল সমৃদ্ধ পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের সাথে অর্থনৈতিক সহযোগিতা জোরদার করা এবং অ্যাপেকে অংশগ্রহণ করা।

এদিকে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সাথে ভারত, উপসাগরীয় অঞ্চল ও আফ্রিকার মধ্যকার বাণিজ্য বাড়ছে। পূর্ব এশিয়ার জ্বালানি, কাঁচামাল ও পণ্যবাজারের গুরুত্বপূর্ণ উৎসে পরিণত হয়েছে আফ্রিকা ও উপসাগরীয় অঞ্চল। পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকা ও ইউরোপের মধ্যকার বাণিজ্যের ৯০ ভাগ হয় ভারত মহাসাগর থেকে। ভারত মহাসাগারের ক্রমবর্ধমান কৌশলগত অবস্থান এতে ফুটে ওঠে, প্রধান প্রধান শক্তি এর নিরাপত্তা ঘনিষ্ঠভাবে অবলোকন করছে।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের সুপারিশ করা ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের লক্ষ্য হলো চীনকে সংযত করার জন্য ভারতকে ব্যবহার করা। যুক্তরাষ্ট্রের আওতায় ইন্দো-প্যাসিফিকের ভৌগোলিক ব্যপ্তি পশ্চিমে ভারত উপকূল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূল পর্যন্ত বিস্তৃত, এখানে ভারত মহাসাগরের আরব সাগরের উপকূলীয় এলাকার উপসাগরীয় দেশগুলো এবং ভারত মহাসাগরের পশ্চিম উপকূলের আফ্রিকা অন্তর্ভুক্ত নয়।

যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের পুরো ভারত মহাসাগর ও এর উপকূলীয় সব এলাকার চেয়ে বরং কেবল ভারতই প্রয়োজন। এতে ভারত মহাসাগরীয় এলাকার দেশগুলোর সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদারের কোনো লক্ষ্যও নেই। এর মূল টার্গেট হলো চীন। এই কৌশল ভারতসহ ইন্দো-প্যাসিফিক দেশগুলোর স্বার্থ পূরণ হবে না, কেবল যুক্তরাষ্ট্রই লাভবান হবে।

এ কারণেই ভারত নিজস্ব স্বার্থে ও লক্ষ্যে নিজস্ব ধরনের ইন্দো-প্যাসিফিক ভাষ্য উত্থাপন করেছে। জোট নিরপেক্ষ নীতিমালা অনুসরণ ও কৌশলগত স্বায়ত্বশাসন বজায় রাখার ওপর জোর দেয়া দেশ ভারত যদি যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল অনুসরণ করে, তবে সে কেবল পরাশক্তি হওয়ার লক্ষ্যই ক্ষতিগ্রস্ত করবে না, চীনের সাথে সম্পর্কে অবনতি ঘটানোর ঝুঁকির মধ্যেও পড়বে।

আর নিজস্ব ঘরানার ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল প্রস্তাব করার মাধ্যমে ভারত ‘অ্যাক্ট ইস্ট’ নীতির মাধ্যমে পূর্ব এশিয়ার সাথে তার সহযোগিতা জোরদার করতে পারবে, পশ্চিমে উপসাগর ও আফ্রিকান অঞ্চলের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করতে পারবে। ফলে সে হয়ে ওঠবে ইন্দো-প্যাসিফিকের কেন্দ্র, যা ভারতের আন্তর্জাতিক মর্যাদা বাড়াবে, ভারতকে এশিয়া-প্যাসিফিকের পাশাপাশি ভারত মহাসাগারেও প্রধান শক্তি হিসেবে গণ্য করার অবস্থা সৃষ্টি করবে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, যেকোনো কৌশল বা নীতি বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন হয় প্রয়োজনীয় সম্পদের। তা না হলে সেটি কেবল ধারণা হিসেবেই থেকে যাবে। প্রজেক্ট মওসুম ও স্পাইস রাউটসের মতো সাম্প্রতিক ঘোষিত ভারতের অনেক নীতি সামনে অগ্রসর না হওয়ার বিষয়টি সামনে থাকায় ভারতের ইন্দো-প্যাসিফিক সংস্করণটি স্রেফ ধারণার ঊর্ধ্বে ওঠতে পারবে কিনা তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থাকে। তবে তা যদি স্রেফ ধারণা হয়েও থাকে, সেটিও যুক্তরাষ্ট্রের ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশলের জন্য একটি বড় আঘাত বিবেচিত হতে পারে।

গ্লোবাল টাইমস


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us