মিয়ানমারের কাছে সাবমেরিন : কেমন হবে এই অঞ্চলের নিরাপত্তা?
মিয়ানমারের সাবমেরিন - ছবি : সংগৃহীত
চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে ভারত থেকে মিয়ানমারের ইতিহাসে প্রথম সাবমেরিনটি গ্রহণের খবরটি নিয়ে আরেক দফা শিরোনামে আসে। নেপিডোর পাশাপাশি বৃহত্তর অঞ্চলে এই সাবমেরিনটির প্রভাব কী হতে পারে, তা নিয়ে কয়েক মাস ধরে যে গুঞ্জন চলছিল, তার ধারাবাহিকতাতেই এই খবরটি প্রকাশিত হলো।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামমেরিন সক্ষমতা সৃষ্টির কথা ভেবে আসছিল মিয়ানমার। ভারত ও রাশিয়ার কাছ থেকে মিয়ানমার যে সাবমেরিন সংগ্রহের চেষ্টা করছেল, তা নিয়ে অনেক খবর প্রকাশিত হয়েছে। মিয়ানমারের নিকট প্রতিবেশীরা সাম্প্রতিক সময়ে সাবমেরিন সংগ্রহ করেছে কিংবা সংগ্রহ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই সাবমেরিন সক্ষমতা অর্জন করেছে, থাইল্যান্ড কয়েক বছরের মধ্যে তা পেতে চলেছে, ইতোমধ্যেই তারা চুক্তি করে ফেলেছে।
চলতি বছরের প্রথম দিকে খবরে প্রকাশ পায় যে ভারত তার রাশিয়ার নির্মিত কিলো-ক্লাস ডিজেল-ইলেকট্রিক অ্যাটাক সাবমেরিন আইএনএস সিন্ধুবীরকে সংস্কার করে মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তর করতে পারে। চলতি মাসের প্রথম দিকে ভারত প্রতিশ্রুত সময়ের আগেই মিয়ানমারের কাছে তা হস্তান্তর করে।
মিয়ানমার অনেক দিন ধরে যে সক্ষমতা অর্জন করার চেষ্টা করেছিল, তা তারা পেয়ে গেছে। দেশটি তার সামুদ্রিক সক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা করার প্রেক্ষাপটে সাবমেরিন সংগ্রহ করা স্বাভাবিক বিষয়। আর চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে মিয়ানমার নৌবাহিনীর ৭২তম বার্ষিকীতে এটিই ছিল প্রধান আকর্ষণ।
তবে এই পদক্ষেপটির বৃহত্তর অঞ্চলের ওপর প্রভাব সৃষ্টি করবে। ভারতের সাবমেরিন মিয়ানমারের কাছে হস্তান্তরটি ইন্দো-প্যাসিফিকে সাধারণভাবে ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় বিশেষভাবে নয়া দিল্লির ক্রমবর্ধমান ভূমিকার প্রমাণ। তাছাড়া নেপিডোর ওপর পাশ্চাত্যের টানাপোড়েন সত্ত্বেও সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমার-ভারত প্রতিরক্ষা সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হয়েছে। কেবল মিয়ানমারের সাথেই নয়, ফিলিপাইনের সাথেও ভারতের সম্পর্ক উষ্ণ হয়েছে, দেশটিতে দিল্লি ব্রহ্ম ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করতে চলেছে। তবে মিয়ানমারের শক্তিবৃদ্ধিটির দিকে থাইল্যান্ড যে নজর রাখতে তা স্বাভাবিক বিষয়। তারাও এই অঞ্চলে শক্তির ভারসাম্যের বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করবে। সেইসাথে আছে চীন-ভারত প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়টি। বাংলাদেশ ও থাইল্যান্ডে চীনের সাবমেরিন সরবরাহ করা বা করতে যাওয়ার প্রেক্ষাপটেই মিয়ানমারের কাছে সাবমেরিন হস্তান্তর করেছে ভারত।
অবশ্য আরেকটি বিষয়ও মনে রাখতে হবে। মিয়ানমারকে যে সাবমেরিনটি দেয়া হয়েছে, তা পুরনো। এর শক্তি মোটামুটি। আবার সাবমেরিন কেবল কিনলেই কাজ শেষ হয়ে যায় না। এটি সামরিক সরঞ্জাম দিয়ে প্রস্তুত রাখতে হয়, রক্ষণাবেক্ষণ করতে হয়। এর জন্য প্রচুর সময় ও অর্থ ব্যয় করতে হয়। মিয়ানমার এসব কিভাবে ব্যবস্থাপনা করবে, তা দেখার বিষয়।
তারপরও সাবমেরিন সংগ্রহের আকাঙ্ক্ষা বাস্তবায়ন করাটা মিয়ানমারের জন্য কম কোনো সাফল্য নয়। নেপিডো ও বৃহত্তর অঞ্চলের জন্য এর বিপুল তাৎপর্যের মধ্যেই দেশটি তা করেছে। এখন আগামী মাসগুলোতে এর প্রভাব বৃহত্তর অঞ্চলে কেমন পড়ে, তাই দেখার জন্য অপেক্ষা করতে হবে।
দি ডিপ্লোম্যাট