'স্বপ্নকন্যা' শাহনাজ বেগম
মোছা: শাহনাজ বেগম - ছবি : সংগ্রহ
খুলনার ডুমুরিয়ায় মাঠ প্রশাসনে নারী ইউএনও মোছা: শাহনাজ বেগম স্বগৌরবে তারুণ্যদীপ্ত হয়ে কাজ করছেন। সবসময় ছুটে চলছেন গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে। ‘সুশাসনে গড়ি সোনার বাংলা’ ছড়িয়ে দিতে অবিরাম গতিতে তার উদ্যম মনোদীপ্ততায় এগিয়ে চলেছে উপজেলা প্রশাসন ডুমুরিয়া। অনিয়ম-দুর্নীতির আঁধার কেটে আলোর মিছিলে জেগেছে ডুমুরিয়ার সমাজ-সভ্যতা। সে আলোয় আজ ঘরে ঘরে পৌঁছে যাচ্ছে সরকারের নানামুখী প্রশাসন সেবা। ডুমুরিয়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পাশাপাশি ফুলতলা উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করছেন। সাধারণ জনসাধারণের অধিকার প্রতিষ্ঠা প্রত্যাশার প্রশাসনের যাত্রায় তিনি যেন উপজেলার একজন স্বপ্নকন্যা।
মোছা: শাহনাজ বেগম দিনাজপুর জেলার চিরিরবন্দর উপজেলার খোচনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সফলতার সাথে পড়ালেখা জীবন শেষ করে ২৯তম বিসিএসের মাধ্যমে ১ আগস্ট ফরিদপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সহকারী কমিশনার পদে যোগদান করেন। একই পদে তিনি ১২ ডিসেম্বর নীলফামারি জেলায় বদলি হন। সেখানে তিনি বুনিয়াদি প্রশিক্ষণ এবং আইন ও প্রশাসন প্রশিক্ষণ শেষ করে বিভাগীয় সিনিয়র স্কেল পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। ১৫ ফেব্রুয়ারি তিনি সহকারী কমিশনার (ভূমি) প্রশিক্ষণ ও সার্ভে অ্যান্ড সেটেলমেন্ট প্রশিক্ষণ শেষে সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে পদায়নের জন্য বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়, খুলনায় ন্যস্ত হন। ২০১৫ সালের জুন মাসে তিনি সহকারী কমিশনার (ভূমি) পদে খুলনা জেলার ফুলতলা উপজেলায় যোগদান করেন। উপজেলা ভূমি অফিসের শোভাবর্ধন, উপজেলা ও ইউনিয়ন ভূমি অফিসগুলোর সংস্কার ও উন্নয়ন, ভূমি অফিসকে দালাল মুক্তকরণ, গণশুনানিসহ সরকারি অফিসে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার সাথে জনবান্ধব পরিবেশ সৃষ্টির জন্য ২০১৬ সালে তিনি খুলনা জেলার শ্রেষ্ঠ এসিল্যান্ড নির্বাচিত হন।
২০১৬ সালের শেষের দিকে তিনি ছয় মাস ফুলতলা উপজেলায় অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বর মাসে তিনি সিনিয়র সহকারী কমিশনার পদে প্রমোশন পান। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে তিনি যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদে যোগদান করেন।
২০১৭ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি ভারতের দেরাদুন রাজ্যের মুশুরি থেকে প্রশাসন সংক্রান্ত উচ্চতর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেন। ২০১৮ সালের মে মাসে তিনি উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলায় বদলি হন। এখানে তিনি সরকারের সেবাগুলোকে সর্বাত্মক স্বচ্ছতার সাথে সাধারণ জনগণের দোরগোড়ার পৌঁছে দিতে নিরলসভাবে দায়িত্ব পালন করছেন।
তিনি ডুমুরিয়া উপজেলা ক্যাম্পাসের অভ্যন্তরীণ রাস্তা পাকাকরণ, শিশুপার্ক সংস্কার, চুরি বন্ধে মসজিদ চত্বরসহ ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, প্যানেলসহ সোলার লাইট স্থাপন, উপজেলা পুকুরের চারপাশে চলার পথ ও দৃষ্টিনন্দন ছাতাসহ বসার জায়গা নির্মাণ এবং নয়নাভিরাম রঙিন বাতি স্থাপন করে পুরো ক্যাম্পাসকে শরীরচর্চায় প্রাতঃভ্রমণ, বিনোদন ও অবকাশের জন্য একটি আধুনিক ক্যাম্পাসে পরিণত করেছেন।
একজন শিক্ষাবান্ধব ব্যক্তিত্ব হিসেবে উপজেলার প্রাথমিক, মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন সময় পরিদর্শন করেন। কোমলমতি শিশু শিক্ষার্থীর গুণগত এবং লেখাপড়ার জন্য মানসম্মত বিদ্যাপীঠ গড়ে তোলার নানা কার্যক্রম শুরু করেছেন ইতোমধ্যে। বিদ্যালয়ে ইউএনওর ঝটিকা অভিযানের ফলে নিয়মমাফিক চলছে বিদ্যালয়ের শিক্ষা কার্যক্রম।
এক প্রশ্নের জবাবে মোছা: শাহনাজ বেগম এ প্রতিবেদককে বলেন, প্রশাসন ক্যাডার নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই উন্মুক্ত। তবে এখানে একজন পুরুষ কর্মকর্তা যেভাবে অনায়াসে খ্যাতি বা সামাজিক গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করেন, একজন নারী কর্মকর্তাকে তার দক্ষতা ও যোগ্যতা প্রমাণ করে গ্রহণযোগ্যতার সে পর্যায়ে আসতে প্রচুর কষ্ট করতে হয়।
কারণ, একজন পুরুষ কর্মকর্তাকে সবাই যেভাবে গ্রহণ করে, একজন নারী কর্মকর্তাকে সেভাবে গ্রহণ করতে চায় না, যা মানুষের সহজাত প্রবৃত্তি। তা ছাড়া নারী কর্মকর্তা হিসেবে প্রশাসনিক কাজে বিভিন্ন সময়ে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে এবং সে বাধা দক্ষতার সাথে অতিক্রম করার চেষ্টা করেছি। কারণ, একজন নারী কর্মকর্তার কাছে পুরুষের পাশাপাশি নারীরা নির্বিঘ্নে তাদের সমস্যাগুলো প্রকাশ করতে পারে, যা জনগণের অধিকার নিশ্চিতকরণসহ নারীর ক্ষমতায়নে সহায়ক।
তিনি আরো বলেন, নারী কর্মকর্তা হিসেবে সাংসারিক সব কাজ এড়িয়ে যাওয়ার উপায় নেই। কেননা, ‘যে রাঁধে সে চুলও বাঁধে’। একজন নারী কর্মকর্তার সংসার জীবন প্রাপ্তি ও ত্যাগের এক মিলিত প্রক্রিয়া। সাংসারিক কাজে পুরোপুরি সময় দেয়া সম্ভব না হলেও সন্তানের লেখাপড়াসহ সংসারের বিভিন্ন বিষয় তিনি নিয়মিত তদারকি করেন।