আফগানিস্তানে জয়ী হতে যাচ্ছে পাকিস্তান!
ইমরান খান - ছবি : সংগৃহীত
আফগানিস্তানে সরকার পরিবর্তন নিয়ে ভারত সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির সথে ৩০ বছর আগে ১৯৮৯ সালের শেষ দিকের পরিস্থিতির রহস্যময় সামঞ্জস্যতা পাওয়া যাচ্ছে।
আফগানিস্তানে হস্তক্ষেপকারী একটি পরাশক্তি এক দশক স্থায়ী একটি রক্তাক্ত সঙ্ঘাতের পর পিছু হঠছিল এবং তার অনুগত রাষ্ট্র থেকে বিদায় নিচ্ছিল। কাবুলের ক্রীড়নক সরকার কোণঠাসা হয়ে পড়েছিল, দেশটিতে নৈরাজ্য বিরাজ করছিল, শত্রুরা ছিল ফটকগুলোতে। পাকিস্তানের ওপর এক চোখ রেখে দিল্লি মনে করেছিল যে নাজিবুল্লাহ সরকারকে জীবন দেয়া নিরেট বাস্তবতা হবে।
এমন এক প্রেক্ষাপটেই প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী প্রচণ্ড চাপে থাকা আফগান প্রেসিডেন্ট নাজিবুল্লাহকে ওই বিখ্যাত ফোনটি করে তাকে ভারত সফরের আমন্ত্রণ জানান।
অবাক করা সামঞ্জস্যতায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিও ২৪ ডিসেম্বর ক্ষমতাসীন আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানিকে ফোন করে তাকে ভারতে তার ‘দ্বিতীয় দেশে’ আসার আমন্ত্রণ জানান।
নিশ্চিতভাবেই নাজিব খুশি হয়েছিলেন। আর আফগানরা ধরে নিয়েছিল যে সোভিয়েতরা চলে যাওয়ার পর যে শূন্যতার সৃষ্টি হবে তা পূরণ করতে দিল্লি এগিয়ে আসছে। কাবুলের ক্ষমতাসীন এলিটরা মনে করছিল যে তাদের সরকারের পতন, অন্তত পাকিস্তান-বান্ধব বাহিনীর হাতে পড়া থেকে ঠেকাতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ দিল্লি।
কিন্তু যা ঘটল, তা আগে কেউ দেখেনি। পতনের মুখে থাকা নাজিব সরকারকে রক্ষা করার কোনো ইচ্ছা দিল্লির ছিল না। ওই ধরনের চিন্তা ভারতীয় নেতৃত্বের মাথাতেই আসেনি। তখন ভারত সরকার নিজেই অর্থনৈতিক সঙ্কটে (বর্তমানের মতোই) নিমজ্জিত ছিল।
আফগানরাও শেষ পর্যন্ত বুঝতে পেরেছিল যে দিল্লি স্রেফ ফাঁপা বেলুন, যত বড় বন্ধুই হোক না কেন, কাবুল সরকারকে রক্ষার মতো অর্থ তাদের হাতে নেই।
কাবুল নগরী পাহারায় নিয়োজিত উজবেকি মিলিশিয়াদের বেতন দেয়ার মতো অর্থ না থাকায় নির্মম সত্য চেপে বসে নাজিবের ওপর, দিল্লির কাছে তিনি বারবার অর্থ চাইলেও তাতে কেউ কর্ণপাত করেনি।
দিল্লির উদাসিনতার কারণে ক্ষুব্ধ উজবেকি যুদ্ধবাজ নেতা রশিদ দোস্তাম পক্ষত্যাগ করতে উদ্বুদ্ধ হয়ে নাজিব সরকারকে উৎখাত করতে আহমদ শাহ মাসুদের সাথে সর্বনাশা চুক্তি করেন। বাকিটা ইতিহাস।
মোদির ফোন নিয়ে গনির উৎফুল্লতা হয়তো মর্মান্তিকভাবেই শেষ হবে কিংবা হবে না। তবে তাতে ভালো কিছুও হবে না। এ ধরনের অবশ্যম্ভাবী ফোন আবেগতাড়িত হয়ে করা উচিত নয়।
নয়া দিল্লি কেন তাড়াহুড়া করল, তার কী কারণ থাকতে পারে? কেমন নির্বাচন ছিল এটি? সাড়ে তিন কোটি লোকের দেশে ভোট দিয়েছে ৫ ভাগেরও কম লোক। আর গনি পেয়েছেন ৯.৩ লাখ ভোট, ১১ হাজার ভোট বেশি পেয়ে জয়ী হওয়ার দাবি করেছেন।
দিল্লি কেন এত উত্তেজিত হয়ে পড়ল, তা বোঝগম্য নয়। এমনকি গনির মূল পৃষ্ঠপোষক আমেরিকানরা পর্যন্ত সংযম প্রদর্শন করেছে। কাবুলে মার্কিন রাষ্ট্রদূত জন বাস পর্যন্ত টুইটে ২২ ডিসেম্বর বলেছেন, সব আফগানকে মনে রাখা দরকার যে এই ফলাফল প্রাথমিক। চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য আরো অপেক্ষা করতে হবে।
এখন থেকে ৩০ বছর আগে ১৯৮৯ সালে একটি আফগান ফয়সালার ব্যবস্থা করেছিল আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। ওই সময়ও ভারতকে আলোচনা থেকে বাদ দেয়া হয়েছিল।
আর এখন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, রাশিয়া ও পাকিস্তান হলো চালকের আসনে। সই করার অপেক্ষায় রয়েছে শান্তিচুক্তি।
পাকিস্তানের সহায়তাতেই শান্তি আলোচনা আবার শুরু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও তালেবানের মধ্যে। পাকিস্তানের এই ভূমিকায় সন্তুষ্ট হয়ে বিখ্যাত ২+২ যুক্তরাষ্ট্র-ভারত সংলাপের পরপরই ওয়াশিংটন দুই বছর স্থগিত রাখার পর ইসলামাবাদের সাথে সামরিক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি আবার শুরুর ঘোষণা দেয়। এতে পাকিস্তানের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক আবার ঘনিষ্ঠ হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
এছাড়া ২৪ ডিসেম্বর রুশ প্রেসিডেন্টের দূত জামির কাবুলভ ঘোষণা করেন যে আফগান শান্তিচুক্তি সই অনুষ্ঠানে মস্কোকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আগামী বছরের শুরুতেই এই চুক্তি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এদিকে গনির যুগের পর কী হবে তা দেখার অপেক্ষা করছে ওয়াশিংটন। ২২ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যালিস ওয়েলস ইঙ্গিত দেন যে ট্রাম্প প্রশাসন এখন গনির ভবিষ্যতের চেয়ে আফগান শান্তিপ্রক্রিয়াকেই বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে।
তিনি এক টুইটবার্তায় বলেন, আমরা আফগান নির্বাচন কমিশনকে পেশাদারিত্ব ও স্বচ্ছ উপায়ে সব অভিযোগের সুরাহা করতে বলছি। তিনি বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ আফগান ভোট দিতে সক্ষম না হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে দেশের সমৃদ্ধ বৈচিত্র্য নিশ্চিত করার জন্য সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।
অর্থাৎ গনির নেতৃত্বাধীন আফগান সরকারকে পর্যাপ্ত প্রতিনিধিত্বশীল মনে করে না ওয়াশিংটন।
গনির ‘বিজয়’ নিয়ে দিল্লির উল্লাস আসলে ভারতের নিরাপত্তা জারদের মারাত্মক লজ্জা ঢেকে রাখারই প্রয়াস। এই জারেরা ‘গ্রেট গেমে’ ভারতকে আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করে ফেলেছেন।
গনিকে তার ‘দ্বিতীয় দেশে’ আসার জন্য মোদির ফোনে উচ্চবাচ্য নেই। তবে গনি উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। এখন বড় প্রশ্ন হলো, মোদি কি সত্যিই সত্যিই তাকে আসার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন? কারণ এ ধরনের প্রস্তাব সত্যিই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধেই যায়।
ইন্ডিয়া পাঞ্চলাইন