পাঞ্জাব থেকে কাশ্মির : অজানা অধ্যায়
কাশ্মির - ছবি : সংগ্রহ
কাশ্মিরে অধুনা যে শক্ত প্রশাসন কাজ শুরু করেছে সে রকম এক কালো অধ্যায় ৩৫ বছর আগে পাঞ্জাবে শুরু হয়েছিল। শিখদের খালিস্থান আন্দোলন চিরতরে স্তব্ধ করে দেয়ার মানসে চালানো হয় এমন নিষ্ঠুরতা। কাশ্মিরিদের ওপর এমন নিষ্ঠুরতা নেমে আসবে তা আগে চিন্তা করা যায়নি। ভারত সরকারই বিধান করে কাশ্মিরিদের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার দিয়েছে। ভারতীয় ইউনিয়েনে বিভিন্ন রাষ্ট্র তাদের স্বকীয়তার আলো দিয়ে ভারতের সূর্যালোককে বর্ণিল করে রাখবে এমনই সে দেশের সেকুলার নেতারা ও আমজনতা ভাবেন।
শিখদের বিরুদ্ধে অপারেশন ব্লু স্টারের শুরু হয়েছিল ১৯৮৪ সালে। যারা ওই সময় শিখ মন্দিরে আশ্রয় নিয়েছিল, যেখানে শিখ বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সাধারণ শিখরা ছিল তারা সবাই আক্রমণের শিকার হয়। এরপর ‘অপারেশন ওডরোজ’ শুরু হয়, তখন গণগ্রেফতার ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডও ঘটে। তবে এ অপারেশনের বিষয়ে বেশি কিছু পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়নি।
ব্রহ্মা চিল্লানি নামে অ্যাসোসিয়েট প্রেসের এক সাংবাদিককে গ্রেফতার করা হয়েছিল অনলাইন লাইভমিন্টে ২০১৪ সালে অপারেশন ব্লু স্টারের বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করার জন্য, সেখানে তিনি হত্যা ও গুমের তথ্য প্রকাশ করেছিলেন, যেরকম এখন কাশ্মিরে হচ্ছে। অবশ্য সরকার পরে তাকে ছেড়ে দেয়।
যারা স্বাধিকার আন্দোলনে নেমেছে সে গোষ্ঠীকে চিহ্নিত করে সরকার কার্যক্রম চালায়। ১৯৯০ সালে শিখদের আন্দোলন তুঙ্গে ওঠে, অপারেশন ওডরোজও বিভিন্নভাবে চলতে থাকে। বর্তমানে শিখর আরো ক্ষিপ্ত ও সঙ্ঘটিত। ২০২০ সালে তারা একটি রেফারেন্ডাম করতে চায়। স্বাধীনতার জন্য খালিস্তান আন্দোলন চালাবে কি না, তাদের সংগঠন শিখ ফর জাস্টিস বা এসএফজে এই জরিপ চালাবে।
ইমরান খান বলেছেন, কাশ্মিরে কালচারাল জেনোসাইড আরও তীব্রভাবে হবে যেমনটি চালানো হয়েছিল পাঞ্জাবে শিখদের বিরুদ্ধে। কাশ্মিরে কোনো নিরপেক্ষ সাংবাদিককে প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। কাশ্মিরিদের সামাজিক অ্যাকাউন্টগুলো মুছে ফেলা হচ্ছে। এখন দিল্লি যে সংবাদ দেয় তাই বিশ্ববাসী জানছে। অনেক কাশ্মিরিকে হত্যা করা হচ্ছে, বন্দী ও গুম করা হচ্ছে; যা শিখদের ক্ষেত্রে আগে করা হয়েছিল। ১৯৮৪ সালে পাঞ্জাবে শিখদের ওপর যে নৃশংসতা চলেছে তা এখন কাশ্মিরিদের ওপর চলছে। ভারতে কংগ্রেস বা বিজেপি যারাই ক্ষমতায় আসুক সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন চলতেই থাকে।
কাশ্মিরে সেনা নির্যাতন চালিয়ে ভারত যেন প্যানডোরার বাক্স খুলেছে। এখন খালিস্তান ও কাশ্মিরিদের স্বাধীনতা দু’টিই বেগবান হয়েছে। উত্তর-পূর্ব ভারতেও আন্দোলন শুরু হয়েছে। ইসরাইলি আগ্রাসনের মতো কাশ্মিরে আগ্রাসন শুরু হয়েছে; প্রথমে সেখানে সাত লাখ সৈন্য মোতায়েন করা হয়েছিল।
১৪ আগস্ট ভারতের স্বাধীনতা দিবস। কাশ্মিরিরা ও খালিস্তান আন্দোলনের সদস্যরা তখন লন্ডনের ট্রাফালগার স্কোয়ারে সমবেত হয়, র্যালি করে, স্বাধিকারের ডাক দিয়ে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। রাশিয়ার স্পুটনিক ধারাবাহিকভাবে এসব তথ্য প্রকাশ করেছে। ওই দিনে মনিপুর ও নাগাবাসীরাও তাদের নিজ নিজ পতাকা উত্তোলন করে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দেয়। আরো একটি স্বাধিকার আন্দোলন ফুঁসে উঠছে- সেটি গুর্খাল্যান্ড আন্দোলন। ভারতের উত্তর-পশ্চিম বাংলার নেপালিরা এই সংগ্রামের পেছনে। কাশ্মির, খালিস্থান, মনিপুর, নাগাল্যান্ড ছাড়াও আরো অনেক গোষ্ঠী স্বাধিকারের আন্দোলন চালাচ্ছে। তবে তারা ভারতীয় ইউনিয়নের মধ্যে পৃথক স্টেট হিসেবে থাকতে চায়। তাদের এই মনোভাব বহু পুরনো হলেও ২০১৭ সালে ভারত ও চীনের ডংলাং মালভূমি বিরোধের সময় চাঙা হয়ে ওঠে। গুর্খারা স্বাধীনতা চায় না, তারা ভারতের মধ্যে পৃথক স্টেট হিসেবে থাকতে চায়, যে ভাবে কাশ্মিরিরা এতকাল ছিল।
রাজনৈতিক চিন্তাবিদরা দেখছেন যে, কাশ্মির সমস্যাটি জায়নবাদীরাই তোষণ করেছে।
সমস্যার শুরু থেকেই ইহুদি লবি কাজ করে যাচ্ছে। অনেকেই হয়তো জানেন না, এডউইনা মাউন্টব্যাটেন লর্ড মাউন্টব্যাটেনের স্ত্রী ছিলেন, তিনি একজন নিবেদিতপ্রাণ জায়নিস্ট এবং ব্রিটিশ জায়নিস্ট ব্যাংকার আরনেস্ট ক্যাসেলের নাতনী। এরা থিওডর হের্জেলের আন্দোলনে প্রচুর অর্থ ঢেলেছিল। হের্জেল ছিল ফিলিস্তিনে ইহুদিদের নিয়ে আসার প্রবক্তা। যেখানে হাজার হাজার ফিলিস্তিনিকে ভিটেবাড়ি ছাড়া করা হয়েছিল। হের্জেলকে ইসরাইলের আধ্যাত্মিক পিতা বলা হয়। ব্রিটিশ লেখক ডগলাস রিড তার বই ‘The Controversy of Zion’- এ এসব কথা বলেছেন। ১৯৯৫ সালে প্রকাশিত লে: তারিক মাজিদ, পাকিস্তানি নৌবাহিনীর অফিসার, তার ‘The Global Game for a New World Order’ বইতে দাবি করেন যে, এডউইনা নিবেদিত ইহুদি ও জায়নিস্ট এজেন্ট, তিনি কাশ্মির নিয়ে মাউন্টব্যাটেন, র্যাডক্লিফ ও নেহরুকে প্রভাবিত করেছিলেন। তিনি নবসৃষ্ট পাকিস্তানের বিপক্ষেও কলকাঠি নেড়েছেন। তার মেয়ে পামেলা ভারতীয় সাংবাদিক করন থাপার কাছে ২০০৭ সালে এক সাক্ষাৎকারে স্বীকার করেন যে, নেহরুর সাথে তার বিশেষ সম্পর্ক কাশ্মির সমস্যার জন্ম দেয়।
দক্ষিণ এশিয়ায় কাশ্মিরের অবস্থান ভূ-রাজনৈতিক দিক দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটা ভারত বোঝে বলেই এমনিতেই কোনো ছাড় দিতে চাইবে না। রাশিয়া, চীন, ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরানের জন্য সামরিক দিক দিয়ে কাশ্মির গুরুত্বপূর্ণ। এখান থেকে ২৮টি নদী ও অনেকগুলো খালের নেটওয়ার্ক বিস্তৃতি লাভ করেছে। জায়নিজমের টার্গেট কেন কাশ্মির তার দু’টি কারণ ব্যাখ্যা করা যায়। প্রথমত, খেলাফত আন্দোলন; যার পরিপ্রেক্ষিতে উপমহাদেশে এক মুসলিম দেশের উদ্ভব হয়েছে। বিশ্ব জায়নিস্ট আন্দোলন ধারার বিপরীত এক মুসলিম দেশের সৃষ্টি। মুসলিম অধ্যুষিত কাশ্মিরকে ফিলিস্তিনিদের মতো নির্যাতন করলে কে এগিয়ে আসবে? কারো এগিয়ে আসার সম্ভাবনা ক্ষীণ।
আরব দেশগুলো ফিলিস্তিনিদের কোনো কাজে আসছে না। তেমনি পাকিস্তানও কাশ্মিরিদের কাজে আসবে না- এমন অবস্থান তৈরি করা। জায়নিস্ট-ভারত চায় এমন একটি প্রশাসনব্যবস্থা ঢেলে সাজাতে যারা ভারতের কেন্দ্রীয় প্রশাসনের তাঁবেদার হিসেবে কাজ করবে। এমন একজন হলেন শেখ আবদুল্লাহ ও তার পরিবার, যিনি পাকিস্তান ও কাশ্মিরিদের কাছে ‘ভারতের পুতুল’ বলে খ্যাত। ২০১৭ সালে ভিম সিং বলেন, পুত্র ফারুক আবদুল্লাহ সিআইএর এজেন্ট। কানাডার ঐতিহাসিক Henry Makow তার ‘The Myth of India's Independence'; নিবন্ধে বলেন, নেহরু ভারতে জায়নিস্ট আন্দোলনকে পৃষ্ঠপোষকতা করেন। তার বাবা মতিলাল নেহরুও এ আন্দোলনকে সহায়তা দিয়েছিলেন। তিনি ১৮৮৪ সালে কানপুরের লজ হারমোনিতে ফ্রি ম্যাসোনারি চালু করেছিলেন। আমরা যদি খিলাফত আন্দোলনের (১৯১৯-২৪) দিকে নজর দেই তবে দেখব কাশ্মির সমস্যাটি ইচ্ছাকৃতভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে।
এই আন্দোলন অ্যাংলো-ইসরাইলি অক্ষকে ভয় লাগিয়ে দিয়েছিল। আরো একটি বিষয়, খিলাফত আন্দোলন না হলে পাকিস্তান হতো না। এই আন্দোলন মধ্যপ্রাচ্যের জায়নিস্ট প্রকল্পকেও ভাবিয়ে তুলে। ব্রিটিশ ম্যানডেটের মাধ্যমে ওসমানি খেলাফত থেকে ফিলিস্তিনকে ছিনিয়ে আনাও একটি লক্ষ্য ছিল। এটা কারো অজানা নয় যে, ব্রিটিশ পররাষ্ট্র সচিব আর্থার বালফোর ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র গঠনে কী পত্র লিখেছিলেন। খেলাফত আন্দোলন সবখানে জাতীয়তাবাদী শক্তির উন্মেষ ঘটায়। এই আন্দোলনের সব পর্যায়ে মুসলিম স্কলাররা জড়িত ছিলেন। গান্ধী ১৯২০ সালে এদের সাথে হাত মিলিয়ে হিন্দু ও মুসলমানদের সাপোর্ট পান। তিনি ফিলিস্তিনে ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের বিরোধী ছিলেন। ভারতের স্বাধীনতার মাত্র পাঁচ মাসের মধ্যে তাকে নাথুরাম গডসে হত্যা করে; সে একজন আরএসএস সদস্য। জায়নিস্টরা নাথুরামকে এ কাজে লাগায় যাতে এডউইনার বন্ধু নেহরু ভারত শাসন করতে পারেন। ভারত যারা শাসন করছেন তাদের সাথে ইসরাইলের বন্ধুত্ব এখনো চলমান। ইহুদিরা নিজেদের মানবজাতির মধ্যে সেরা বিবেচনা করে, হিন্দু ব্রাহ্মণরাও নিজেদের সেরা মনে করে অন্যদের ‘নীচ’ ভাবে। এটাও ভারত ও ইসরাইলের ভ্রাতৃত্ববন্ধনকে শক্তিশালী করেছে। ইহুদিদের ‘কাবালিস্টিক মহল’ এবং ভারতের ব্রাহ্মণরা বিষয়গুলো ভালোভাবে বুঝতে পারবেন।
ভারত জাতিসঙ্ঘের প্লাটফর্ম ব্যবহার করে পাকিস্তানকে কাশ্মির ছাড়ার জন্য চাপ দেয়ার পথ ধরেছে। জাতিসঙ্ঘ সিদ্ধান্ত নেয় নির্ধারিত এলাকাকে সেনাশূন্য বা ডিমিলিটিরাইজড করার; আবার ভারত প্রয়োজনীয় সেনা রাখতে পারবে পাকিস্তানি কোনো আক্রমণ থেকে নিজকে রক্ষার জন্য যা পাকিস্তান ও কাশ্মিরি মুসলমানদের জন্য কোনোভাবেই কাম্য ছিল না। তবে পাকিস্তান কখনো সেনাশূন্য করেনি। সেটাই আজ ‘আজাদ কাশ্মির’। জাতিসঙ্ঘের মধ্যস্থতাকারী ডা: ফ্রাঙ্ক গ্রাহাম ২০১৫ সালে বিষয়টি আনক্লাসিফাইড করেন। তিনি জানান, ‘মধ্যস্থতাকারীদের প্রস্তাব পাকিস্তান মানলেও ভারত প্রত্যাখ্যান করেছে।’
ভারত ‘সেকুলার’ রাষ্ট্র। শুরু থেকেই দেশটি এই বার্তা দিয়ে আসছে। আরএসএস চায় ভারতকে একটি মৌলবাদী হিন্দু রাষ্ট্রে পরিণত করতে। বর্তমান সরকার আরএসএস নিয়ন্ত্রিত এবং সরকার সংবিধানের বিভিন্ন ধারা পরিবর্তন করে চলছে। কলোনিয়ালিজমের বিরুদ্ধে ১৯২০ সালে ফ্রিডম মুভমেন্ট শুরু হয় আর তখন থেকেই হিন্দু চরমবাদী ও মৌলবাদীরা ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র বানাতে কাজ শুরু করে।
তখন তারা সংখ্যগরিষ্ঠ ছিল না এবং সঙ্ঘবদ্ধও ছিল না। হিন্দু মৌলবাদীরা সাধারণ মানুষের মগজ ধোলাই করতে থাকে বিদ্যাজর্নের মাধ্যমে; যা একটি উত্তম পন্থা। শিক্ষাঙ্গনের পর তারা মিডিয়াকে ব্যবহার করেছে। এভাবে তারা সঙ্ঘবদ্ধ হয়, পরে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। বিজেপিতে অনেক চরমপন্থী হিন্দু নেতৃত্ব দিতে শুরু করে। গত জুন নির্বাচনে বিজয়ের পর ও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের পর তারা এখন বহু পুরনো লালিত ইচ্ছা ভারতকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ বানানোর কাজে লেগে পড়েছে। সমালোচকরা বলছেন, ভারতীয় চরমপন্থীরা বিশ্ব শান্তির জন্য হুমকি। এর মোকাবেলায় পাকিস্তান দাঁড়িয়েছে, পাকিস্তানও চরমপন্থীদের মোকাবেলা করতে হিমশিম খাচ্ছে। আফগান সমস্যা বিভিন্নভাবে তাকে আরো সমস্যাগ্রস্ত ও জটিলতর করেছে।
কাশ্মির অন্যান্য স্টেটের মতো ইন্ডিয়ান ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্ত করায় কাশ্মিরি মুসলমানরা দ্বৈত নাগরিকত্ব সুবিধা, পৃথক পতাকা, লেখাপড়ার পৃথক সুবিধা, চাকরিতে প্রাধান্য পাওয়া-সব শেষ হয়ে গেছে এবং অকাশ্মিরিরা সেখানে জমাজমি কিনে থাকার অধিকার অর্জন করেছে; যেটি আগে সম্ভব ছিল না। মহিলারা বাইরের কাউকে বিয়ে করলে তারা নাগরিকত্ব হারাবে। কাশ্মিরের সংসদ ছিল ছয় বছর মেয়াদি। এখন সেটি পাঁচ বছর। এরকম আরো অনেক সুবিধা থেকে কাশ্মিরিরা বঞ্চিত। কারফিউ বলবৎ হওয়ার কারণে গৃহবাসীদের খাবারের সমস্যা হচ্ছে। তাজা শাকসবজি ও ফলমূল জোগাড় করা সম্ভব হচ্ছে না। বিদ্যুৎ নেই, সুপেয় পানি সরবরাহ বন্ধ, গ্যাস নেই, রান্নার সমস্যা প্রকট এবং ওষুধের অভাব। স্কুল-কলেজ, ব্যবসা-কৃষি ও পর্যটন বন্ধ। সেনাবাহিনীই সব নিয়ন্ত্রণ করছে। ফিলিস্তিনিদের গাজার অবস্থাও এ রকম। গাজায় পরিবারের সব খুঁটিনাটি বিষয় সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ করে। কাশ্মিরিদের ১৫ মিলিয়ন মানুষকে নিয়ন্ত্রণের জন্য এক মিলিয়ন সেনা! অর্থাৎ প্রতি ১৫ জন কাশ্মিরির জন্য একজন কমান্ডো। যাকে খুশি ‘সন্ত্রাসী’ ঘোষণা করে তাকে গ্রেফতার করা এবং আইনের আওতায় আনা যায়। লোকজন বাধ্য হয়ে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাচ্ছে, সীমান্ত পেরিয়ে অন্য দেশে- পাকিস্তান, আকসাই চীন, আফগানিস্তান, ভারতের অন্য স্টেট, আজাদ কাশ্মির, গিলগিট বা কোনো মধ্য এশিয়ার দেশে।
কাশ্মির বিশ্বের সুন্দরতম এলাকাগুলোর একটি। সুউচ্চ পবর্তমালা, গ্লেসিয়ার, বন-জঙ্গল, লেক-হ্রদ-নদী, ফুল ও রসালো ফলে ভরা এই দেশ। সুন্দর স্বাস্থ্যের অধিকারী মানুষগুলো দেখতেও সুন্দর। কাশ্মির ঐতিহ্যের খাবারে সমৃদ্ধ এবং ঐশ্বর্যশালী হস্তশিল্প ও সংস্কৃতিতে, জীবনবৈচিত্র্যে পুষ্ট চমৎকার একটি দেশ। ‘পৃথিবীর বেহেশত’ এখন শ্মশান। মানুষ মরছে, নির্যাতিত হচ্ছে, মহিলারা হচ্ছে ধর্ষণের শিকার। সব ধরনের মানবাধিকার সূচকগুলো লঙ্ঘিত। শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করাও এখন বিপজ্জনক।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার