ভুটানে কেন এত কম লোক রাজনীতি করে
ভুটানে কেন এত কম লোক রাজনীতি করে - ছবি : সংগৃহীত
ভুটানে ২০১৮ সালের জাতীয় পরিষদের নির্বাচনের পর দলের সদস্যসংখ্যা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছিল। কিন্তু ভুটানে রাজনৈতিক দলগুলোর সার্বিক সদস্যপদ ধীরে ধীরে বাড়ছে। দ্রুক চিরওয়াং শোগপা (ডিসিটি) ভেঙে যাওয়া সত্ত্বেও দেশটির নিবন্ধিত দলীয় সদস্য ২০১৩ সাল থেকে ২০১৮ সালে প্রায় ১৬০০ ভাগ বেড়েছে বলে ইলেকশন কমিশন অব ভুটান জানিয়েছে।
এ সময়ে দেশটির রাজনৈতিক দলগুলোর মোট সদস্য সংখ্যা ১,৪২৯ থেকে বেড়ে ২২,৯০৯ হয়েছে। ২০১৮ সালে রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ছিল মাত্র চারটি, আগের নির্বাচন থেকে তা ছিল একটি কম। ভুটানের রাজনীতিতে নির্বাচনের পরপরই রাজনৈতিক দল থেকে সরে দাঁড়ানো সাধারণ নিয়মে পরিণত হয়েছে। নির্বাচনী আইন অনুযায়ী, স্থানীয় সরকার নির্বাচনে অংশ নিতে হলে কিংবা চাকরির জন্য দরখাস্ত করতে হলে তাকে অরাজনৈতিক হতে হয়। এ কারণে নির্বাচন শেষ হওয়ার পর অনেকেই রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ত হতে চায় না। গত বছরের জাতীয় পরিষদের নির্বাচনের পর রাজনৈতিক দলগুলো থেকে ১১ হাজারের বেশি সদস্য পদত্যাগ করে। এদের বেশির ভাগই ছিল দ্রুত নিয়ামরুপ শোগপার (ডিএনটি) সদস্য।
ডিটিএন থেকে গণপদত্যাগ সত্ত্বেও নির্বাচন-পরবর্তী চার দলের সার্বিক সদস্যপদ ২০১৪ সালের ১,৪৪৩ থেকে বেড়ে ২০১৯ সালে ১২,২৫৯ হয়। এর অর্থ হলো, ২০১৪ সালে ৫টি দলের যত সদস্য ছিল, বর্তমানে চারটি দলে তার চেয়ে ১০,৮০০ বেশি আছে।
৫ বছর আগে ৫টি রাজনৈতিক দলের প্রাক-নির্বাচনী সবচেয়ে বেশি সদস্য ছিল দ্রুত ফুয়েনসাম শোগপা তথা ডিপিটির, ৯৭৭। আর সবচেয়ে কম ছিল ডিএনটির সবচেয়ে কম, ১৩৫।
ডিপিটির বিষয়টি বাদ দিলে লোকজনের রাজনৈতিক দলে নিবন্ধন করার হার ২২০১৩ নির্বাচন-পরবর্তী বেড়েছে। তবে ৫ বছর আগে দলের সদস্য কয়েক শ’তেই সীমিত ছিল। গত বছরের নির্বাচনের পর তা বেশ বেড়ে যায়।
নির্বাচনের এক বছর পর বর্তমানে ডিএনটি (তাদের মাত্র ১৫১) ছাড়া ব্যক্তিগত দলের সদস্যপদ কয়েক হাজারে পরিণত হয়েছে। পিপলস ডেমোক্র্যাটিক পার্টি (পিডিপি) ও বিরোধী উভয়ের রয়েছে ৫ হাজারের বেশি। ডিডিপি ও বিকেপির সদস্য সংখ্যা তেমনভাবে কমেনি।
ভুটানে বিভিন্ন কারণে লোকজন রাজনৈতিক দলের সদস্য হয়। বিশেষ করে পার্লামেন্ট সদস্য হওয়া, পারিবারিক চাপ, সরকার ও এমপিদের আনুকূল্য লাভের কথা বলা যায়।
ভুটান কুয়েন-নিম পার্টির (বিকেপি) সদস্য সজন রাই আগে এক সাক্ষাতকারে বলেছিলেন যে রাজনৈতিক দলের আদর্শের কারণে তিনি দলটিতে যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, দলটি তাকে একজন ব্যক্তি হিসেবে তাকে বিকশিত হতে সহায়তা করেছে। তিনি বলেন, লোকজন আমাকে চেনে বিকেপির মাধ্যমে।
সারপাঙের ডিপিটি সদস্য দিও কুমার রিমল বলেন, জনগণের সেবা করার আগ্রহ থেকেই তিনি গত বছর রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছেন। তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলে যোগদানের কারণে তিনি কণ্ঠহীনদের পক্ষ থেকে কথা বলতে পারছেন।
তিনি বলেন,তিনি দলের আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন। তিনি চান, দেশ ও এর অর্থনীতিতে ভূমিকা রাখতে। তিনি অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখতে চান।
পিডিপির এক সদস্য বলেন, তিনি আসন্ন নির্বাচনে দলীয় টিকেট পাওয়ার আশায় অনেকে রাজনৈতিক দলে যোগ দেয়। আর যে দলের নির্বাচনে জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, ওই দলেই লোকজন বেশি যোগ দিতে চায়।
ডিএনটির এক সমর্থক বলেন, দলের সাথে তার সম্পৃক্ততার কারণে তিনি অনেক বার সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে যেতে পারেন সহজেই।
রাজনৈতিক দলের আচরণবিধিতে বলা হয়েছে যে দলকে হতে হবে ব্যাপকভিত্তিক এবং আন্তঃজাতীয় সদস্যপদের ব্যবস্থঅ থাকতে হবে, সব জেলায় সমর্থন থাকতে হবে। দলীয় কর্মকর্তারা বলেন, সদস্যপদের আকারে দলের শক্তি বোঝা যায় না গেলেও এতে আন্তঃদলীয় গণতন্ত্রের শক্তি বোঝা যায়, দলের প্রতি জনগণের আস্থা তাতে প্রতিফলিত হয়।
উল্লেখ্য, ভুটানে সরকারি চাকরিজীবী, করপোরেট কর্মী, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য, স্থানীয় নেতারা রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারে না। ফলে এমনিতেই ভুটানের লোকজনের রাজনৈতিক দলের সদস্য হওয়ার সুযোগ কমে যায়।
গত বছরের হিসাব অনুযায়ী ভুটানে ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব ছাড়া ১৮ বছরের বেশি বয়স্ক লোকের সংখ্যা ৪৩৮৬৬৩ জন।
হিসেবে প্রাথমিক হিসেবে দেখা যায়, ভুটানের প্রায় ২.৮ ভাগ লোক রাজনৈতিক দলগুলোতে নিবন্ধিত রয়েছে। আর ১৮ বছরের বেশি বয়স্ক প্রায় ৫১ হাজার সক্ষম ভুটানি (১৩ হাজার করপোরেট কর্মীসহ) অরাজনৈতিক রয়ে গেছেন।
কুয়েনসেল