ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পথে কাঁটা এস-৪০০
ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের পথে কাঁটা এস-৪০০ - ছবি : সংগৃহীত
রুশ এস-৪০০ ভূমি থেকে আকাশে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা কেনার ভারতীয় সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যকার আলোচনায় ছায়াপাত করেছে। এর জের ধরেই চলতি সপ্তাহে ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত ভারত-যুক্তরাষ্ট্র ২+২ মন্ত্রিপর্যায়ের সংলাপে তৃতীয় ভিত্তিমূলক সামরিক চুক্তিটি সই হয়নি। অবশ্য সার্বিকভাবে পরিবেশ ভালো ছিল এবং দুই পক্ষই অভিন্ন হুমকির বিরুদ্ধে একসাথে কাজ করার প্রয়োজনীয়তার ব্যাপারে একমত হয়।
ভেতরের সূত্রগুলো জানায়, দুই দেশ তৃতীয় সামরিক চুক্তি হিসেবে বেসিক এক্সচেঞ্জ অ্যান্ড কোঅপারেশন এগ্রিমেন্ট (বিইসিএ) সই করা নিয়ে আলোচনা করেছে। তবে মন্ত্রিপর্যায়ের সংলাপে এ নিয়ে চুক্তি হয়নি। বিইসিএ সই হলে ভারত জিওস্পেশিয়াল গোয়েন্দা তথ্য নিয়ে মার্কিন পরামর্শ পাবে এবং ক্রুইজ, ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের মতো অস্ত্র ও অটোমেটেড সরঞ্জামরে সামরিক নির্ভুলতা বাড়াতে পারবে।
ভারত ইতোমধ্যেই লজিস্টিকস এক্সচেঞ্জ মেমোরেন্ডাম অব এগ্রিমেন্ট (এলইএমওএ) ও কমিউনিকেশন্স কম্পাটিবিলিটি অ্যান্ড সিকিউরিটি এগ্রিমেন্ট (সিওএমসিএএসএ) সই করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে। যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে অত্যন্তধুনিক অস্ত্র ও যোগাযোগব্যবস্থা পেতে হলে অন্য দেশকে তিনটি চুক্তিই (বিইসিএসহ) সই করতে হয়। সূত্র জানায়, বিইসিএ সই করতে বিলম্ব হওযা এবং রাশিয়ার কাছ থেকে ভারতের এস-৪০০ সংগ্রহ করার ব্যাপারে অনড় মনোভাব প্রদর্শন করায় যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কে জটিলতার সৃষ্টি হয়েছে।
রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ সংগ্রহের ব্যাপারে আপত্তি জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন রাশিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়কারী দেশগুলোর ওপর অবরোধ আরোপের হুমকি দিয়েছে। সিনিয়র মার্কিন কর্মকর্তারা ভারতকে হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন যে এস-৪০০ চুক্তির ফলে কাউন্টারিং আমিরকাস অ্যাডভারসারিস থ্রো স্যাঙ্কশন অ্যাক্ট (সিএএটিএসএ)-এর আওতায় অবরোধ আরোপ করা হতে পারে। এই আইনের আওতায় রাশিয়া, ইরান ও উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে অস্ত্র কেনার ওপর অবরোধ আরোপ করা হয়েছে। অবশ্য যুক্তরাষ্ট্রকে ভারত বলেছে যে সে এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা কেনা থেকে সরে আসবে না।
যুক্তরাষ্ট্র-ভারত ২+২ ডায়ালগে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং, পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক আর পম্পেইও ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক টি একস্পার অংশ নেন। উভয় দেশের শীর্ষ কর্মকর্তারাও এতে যোগ দেন।
ভারত কেন রাশিয়ার কাছ থেকে এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্রব্যবস্থা কিনতে চাচ্ছে, তা সে যুক্তরাষ্ট্রকে বোঝানোর চেষ্টা করে গেলেও বিষয়টি জটিলই রয়ে গেছে। এস-৪০০ ক্ষেপণাস্ত্র কেনা থেকে ভারতকে বিরত রাখার জন্য যুক্তরাষ্ট্র দেশটির কাছে একই ধরনের অস্ত্র বিক্রির প্রস্তাবও দিয়েছে। উভয় দেশ যদিও বলে আসছে যে তারা পরস্পরের কাছাকাছি আসার চেষ্টা করে যাচ্ছে, কিন্তু বাস্তবে উভয় দেশই সমস্যায় পড়ে গেছে।
অবশ্য দুই দেশ বিইসিএ-এ সই না কলেও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও প্রযুক্তি হস্তান্তর নিশ্চিত করার জন্য সহায়ক প্রতিরক্ষা শিল্পবিষয়ক চুক্তিতে সই করেছে। দুই দেশ ডিফেন্স টেকনলজি অ্যান্ড ট্রেড ইনিশিয়েটিভের আওতায় তিনটি চুক্তিও চূড়ান্ত করেছ। এর ফলে গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তি যৌথ উৎপাদনের কাজে অগ্রসর হতে পারবে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র।
ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এটি ছিল দ্বিতীয় ২+২ ডায়ালগ। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যে কৌশলগত অংশীদারিত্ব এগিয়ে নিতে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেন। মোদি ও ট্রাম্পের মধ্যকার ব্যক্তিগত রসায়নের ফলে দুই দেশের সম্পর্কও ঘনিষ্ঠ হতে পারছে।
ডায়ালগে পারস্পরিক স্বার্থ ও উদ্বেগের আরো যেসব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়েছে, তার একটি হলো ইন্দো-প্যাসিফিক। অবশ্য এটি কেবল এই দুই দেশের বিষয় নয়, পুরো অঞ্চলের সাথে সংশ্লিষ্ট। দুই দেশ ইন্দো-প্যাসিফিকে জাতিসঙ্ঘ শান্তিরক্ষা সক্ষমতা বাড়ানোর ব্যাপারেও একমত হয়েছে।
সানডে গার্ডিয়ান লাইভ