পাকিস্তান-ভারত আকাশযুদ্ধ : সেদিন কী হয়েছিল?
পাকিস্তান-ভারত আকাশযুদ্ধ : সেদিন কী হয়েছিল? - ছবি : সংগৃহীত
গত ২৬ ফেব্রুয়ারি ভারতীয় বিমান বাহিনীর বালাকোট হামলা এবং পরের দিন পাকিস্তান বিমান বাহিনরি ‘তড়িৎ বদলা’ আধুনিক আকাশযুদ্ধের মাইলফলক বিবেচনা করা যেতে পারে। ভারতীয় বিমান বাহিনীর হামলাটি যদিও কারিগরি ত্রুটি-বিচ্যুতির মুখে পড়েছিল, কিন্তু তবুও তারা ৪০ কিলোমিটার দূরে তাদের বোমাগুলো ফেলতে পেরেছিল (অবশ্য তা ছিল পাইন বনে)। অনুপ্রবেশকারী ভারতীয় বিমানবাহিনীর জঙ্গিবিমানগুলো আটকানো নিয়ে নতুন ধাঁধার সৃষ্টি হয়েছে। নিজের ভূখণ্ডে বিমানগুলো যখন উড়ছিল, তখন তাদের বৈরী উদ্দেশ্য নিয়ে আগাম প্রশ্ন তোলা যায় না, তখন তাদের ওপর হামলা করা হলে পাকিস্তানকে বিনা প্ররোচনায় আগ্রাসন চালানোর জন্য অভিযুক্ত করা হতো। অস্ত্রগুলো ফেলার পর ভারতীয় বিমান দ্রুত ফিরে আসে। এ সময় আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের জন্য তাদের পিছু ধাওয়ার মুখে পড়ার আশঙ্কাও ছিল না। কারণ বোমা ফেলা এবং শান্তি ভঙ্গ করা সত্ত্বেও তাদের অনুপ্রবেশের বিষয়টি ধরা পড়ে বেশ কিছু সময় পরে।
ভারতীয় বিমান বাহিনীর হামলার ৩০ ঘণ্টার মধ্যে পাকিস্তান বিমান বাহিনী হামলা চালায়। তারা নিজেদের ভূখণ্ডে অবস্থান করেই ভারতীয় টার্গেটে হামলা চালায়। তাদের এই হামলায় অন্তভূক্তি ছিল জঙ্গিবিমানের পাশাপাশি ভারতীয় বিমান প্রতিরক্ষা রাডার অকার্যকর করে দেয়া, পাকিস্তানের বিমানগুলোর দিকে টহলরত সু-৩০ বিমানকে এগিয়ে আসতে প্ররোচিত করা। পাকিস্তান বিমান বাহিনরি স্ট্রাইক ফাইটারগুলো বোমা ফেলা ও ঘুরে দাঁড়ানোর পরপরই এফ-১৬ ও জেএফ-১৭ বিমানগুলো দ্রুত আকাশে চলে আসে ডাটা-লিঙ্কের সাথে থাকা এইডব্লিউসি ও গ্রাউন্ড রাডারের কার্যকর সহায়তা নিয়ে। পাইলটেরা চমৎকারভাবে তাদের দক্ষতা প্রদর্শন করতে থাকেন। মনে হতে থাকে যে আকাশে একটি পুরো স্কয়াড্রোন বিশাল একটি ভিডিও গেমে অংশ নিচ্ছে। চমৎকার পরিস্থিতিগত সতর্কতা অবলম্বন করে একটি এফ-১৬ বিমান একটি বিভিআর আমরাম (এইম-১২০সি) নিক্ষেপ করে আগুয়ান একটি সু-৩০কে লক্ষ্য করে।
এতে সু-৩০ অক্ষতও থাকতে পারে, সামান্য আঘাতপ্রাপ্তও হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু ক্ষেপনাস্ত্রটি হঠাৎ করেই এতে বিস্ফোরিত হয়। এর ফলে ভারতীয় বিমানগুলোর মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়। টহলরত ভারতীয় বিমানবাহিনীর মিরেজ ২০০০গুলোর মধ্যেও ভয় ঢুকে যায়। ফলে তারা আর পাকিস্তান বিমানগুলোর মুখোমুখি হতে সাহস করেনি। আর ভূমিতে প্রস্তুত হয়ে থাকা ভারতীয় মিগ-২১ বাইসনগুলোতে হুড়াহুড়ি পড়ে যায়। পুরো সময়ে পাকিস্তান বিমানবাহিনীর আকাশ ও স্থল জ্যামারগুলো কাজ করে। ফলে ভারতীয় বিমানের পাইলট ও বিমান প্রতিরক্ষা নিয়ন্ত্রকেরা পুরোপুরি বিভ্রান্তিতে পড়ে যায। এর মধ্যেই ভারতের একটি মিগ পাকিস্তানের এফ-১৬-এর রাডারে ধারা পড়ে, আরেকটি আমরাম ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করা হয়, এটি মিগকে আকাশে আঘাত হানে। ফলে মিগটি ভূপাতিত হয়, এর পাইলট প্যারাসুট দিয়ে পাকিস্তানি ভূখণ্ডে নেমে আসেন।
পাকিস্তান বিমান বাহিনীর মিশনটি ছিল অনেক দিক থেকেই অনন্য। আগে থেকেই ভূভাগের টার্গেটগুলো ঠিক করা ছিল, কী করতে হবে তাও নির্ধারিত ছিল। পাইলটেরা প্রস্তুতি নিয়েছিলেন যথার্থভাবে। তাদেরকে ইসিএমের পাশাপাশি এইডব্লিউসি বিমান দিয়ে ব্যাপক সঙ্কেত প্রদান করা হচ্ছিল। বিভিআর ক্ষেপণাস্ত্রগুলো প্রথমবারের মতো ইন্দো-পাক দৃশ্যপটে ব্যবহৃত হয়। এই লড়াই থেকে যে শিক্ষাটি পাওয়া যায় তা হলো ভবিষ্যতে যেকোনো সঙ্ঘাতে দূর ও স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপের সামর্থ্য থাকতে হবে। সেইসাথে থাকতে হবে রাডার, হুমকি হুঁশিয়ারি ব্যবস্থা, ডাটা লিঙ্কের সহযোগী ব্যবস্থা। পাকিস্তান নিজেদের দেশে তৈরী জেএফ-১৭ বিমান দিয়ে এই কাজটি বেশ ভালোভাবেই সামাল দিয়েছে।
আকাশ যুদ্ধে উভয় পক্ষই সমান তালে দক্ষতা প্রদর্শন করেছে। আর অ্যাটাকিং বিমানের নিরাপত্তার বিষয়টির দিকে বেশ নজর রাখা হয়েছে। অবশ্য বিভিন্ন কারণে আক্রমণের নির্ভুলতা হাসিল করা যায়নি। বিশেষ করে ভারতীয় বিমান বাহিনী টেরাইন ডাটা তাদের বোমার গাইডেন্স সিস্টেম সরবরাহ করতে পারেনি। পাকিস্তান রাজনৈতিক বিবেচনার কারণে সামরিক টার্গেট এড়িয়ে গেছে। কারণ পাকিস্তান চায়নি সামরিক স্থাপনায় হামলা চালিয়ে উত্তেজনা বাড়াতে। তবে তারা যে জবাব দিতে পারে, তা তারা বেশ ভালোভাবেই প্রদর্শন করেছে।
হামলা শুরু করেছেল ভারতীয় বিমান বাহিনী। পাকিস্তান বিমান বাহিনী এর জবাব দেয়ার নীতি অনুসরণ করেছে। তারা একটি পুরো দিন ধরে প্রস্তুতি নিয়েছে। তাদের এই প্রতিক্রিয়া ভবিষ্যতে যেকোনো ভারতীয় হামলার জবাব দেয়ার মডেল হতে পারে। তাদের প্রস্তুতি অবশ্যই অব্যাহত রাখতে হবে এবং সেইসাথে তা আরো পরিমার্জিত করতে হবে। ভারতীয় বিমান বাহিনীও তাদের ত্রুটিগুলো শনাক্ত করে সেগুলো সংশোধনের চেষ্টা করবে।
উল্লেখ করা যেতে পারে যে ভারতীয় বিমান বাহিনীর ২৬ ও ২৭ ফেব্রুয়াডরি বিপর্যয়কর অবস্থার মধ্যেও ভারত সরকার অবিজ্ঞজনোচিতভাবে পাকিস্তানকে টার্গেট করে ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে। সম্ভবত কারিগরিভাবে ভারতীয় বিমান বাহিনীকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনা করে পাকিস্তানের হাতে নিজেদের আর বিমান যাতে হারাতে না হয়, সেজন্যই এই পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তারা। কিন্তু এতে ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়ে তা পরিণামে পরমাণু যুদ্ধের শঙ্কা সৃষ্টি করতে পারে। কারণ পাকিস্তানও বিষয়টি নিয়ে ভাববে এবং প্রয়োজনীয় মোতায়েন করে রাখতে চাইবে।
বালাকোটের ঘটনা থেকে মনে হয়, ভারত এখন পাকিস্তানকে ভয় দেখানোর কৌশল গ্রহণ করেছে। এমন পরিস্থিতিতে করণীয় নির্ধারণ করতে পাকিস্তানের উচিত হবে অভ্যন্তরীণ ও বৈদেশিক সব বিবেচনা সামনে রেখে
রাজনৈতিক-সামরিক নেতৃত্বে প্রয়োজন ন্যাশনাল সিকিউরিটি কাউন্সিল ও জয়েন্ট স্টাফ হেডকোয়ার্টাসে সভাগুলো নিয়মিত করা। পাকিস্তান বিমান বাহিনী দ্রুততার সাথে চমৎকার জবাব দিয়েছে। তাই বলে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর ওপর অতিরিক্ত ভরসা করে থাকলে চলবে না। সব বাহিনীকে মিলেই যেকোনো আগ্রাসনের জবাব দিতে প্রস্তুত থাকতে হবে।
পাকিস্তান পলিটিকো