বিপদ ডেকে এনেছে মোদি সরকার!

ওয়াং দেহুয়া | Dec 21, 2019 09:01 am
মোদি ও অমিত শাহ

মোদি ও অমিত শাহ - ছবি : সংগৃহীত

 

ভারতের পার্লামেন্ট ১১ ডিসেম্বর নাগরিকত্ব সংশোধনী অ্যাক্ট (সিএএ) পাস করেছে। এর মানে হলো বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান থেকে হিন্দু, খ্রিস্টান, জৈন, বৌদ্ধ ও শিখ অভিবাসীসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা ভারতীয় নাগরিকত্ব দাবি করতে পারলেও মুসলিমদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে না। ওই আইনের বিরুদ্ধে ওই দিন থেকে যে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ শুরু হয়েছে, তা অনেক এলাকায় এখনো থামেনি। দুটি কারণে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে এবং তা দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে।

প্রথমত, ভারতে অভিবাসনের ঢল নামা নিয়ে ভারতীয়দের শঙ্কা। আসামের মতো উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলোর অধিবাসীরা ভয় পাচ্ছে যে বাহিরাগতদের চাপে তাদের সাংস্কৃতিক পরিচিত ও আঞ্চলিক সুবিধা হারিয়ে যাবে। ফলে সংশোধনীর বিরুদ্ধে তাদের বিরোধিতার লক্ষ্য ধর্ম-নির্বিশেষে সব অভিবাসী।

দ্বিতীয়ত, সংশোধনীতে যে ধর্মীয় বৈষম্য রয়েছে, সেটি উস্কে দিয়েছে অস্থিরতা। উদ্দেশ্যমূলকভাবে মুসলিমদের বাদ দেয়ার ফলে তা বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রুপের মধ্যে কেবল বিভেদই সৃষ্টি করেনি, সেইসাথে সমাজের মধ্যে বিভাজনও বাড়িয়ে দিয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরকার ধর্মীয় কার্ড খেলার জন্য ও তার ক্ষমতা সুসংহত করার জন্য এই পথ ধরেছেন। বর্তমানে ভারতের মোট জনসংখ্যঅর প্রায় ৭০ ভাগ হিন্দু। বাকিরা অন্যান্য ধর্মের। সিএএর ফলে হিন্দুরা অগ্রাধিকার পাবে। মোদি সংখ্যাগরিষ্ঠদের সমর্থন চান।

এই সংশোধনীর আরেকটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হলো পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সাথে ভারতের সঙ্ঘাত। এই দুই দেশের সাথে ভারতের অনেক বিরোধ রয়েছে। যেমন কাশ্মির সমস্যা দীর্ঘ দিন ধরে সুরাহা হচ্ছে না। এই সংশোধনীর ফলে ভারত এখন ধর্মীয় অজুহাতে অনান্য দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে পারবে। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে মোদি অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও হিন্দু জাতীয়তাবাদের প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। অবশ্য গুজরাটে তার নিজের রাজ্যে সাফল্য লাভের পর মোদির অর্থনৈতিক নীতি দৃশ্যত আর কোথাও কাজ করেনি। অর্থনৈতিক উন্নয়ন ভারতের অন্য কোনো এলাকায় ফলপ্রসূ করা যায়নি। ফলে সিএএর মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে দুর্বলা আড়াল করার হাতিয়ারই বিবেচিত হচ্ছে।

সংশোধনীতে প্রদর্শিত ধর্মীয় বৈষম্য হিন্দু জাতীয়তাবাদের চরমপন্থার দিকে চলার ইঙ্গিত দিচ্ছে। বিশ্বজুড়েই লোকরঞ্জকবাদের এই প্রবণতা গভীরভাবে দেখা যাচ্ছে। ভারত উচ্চ মাত্রায় আন্তর্জাতিকিকরণের আগ্রহ প্রকাশ করার ফলে পাশ্চাত্যের প্রভাব অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েছে দেশটিতে। ভারতের ডানপন্থী লোকরঞ্জাকবাদ সম্ভবত ডান দিকে যাওয়ার আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক প্রবণতাই অনুসরণ করছে। সন্দেহ নেই যে এই সংশোধনীর ফলে সম্ভাব্য অভিবাসন জোয়ারে ভারতের জনসংখ্যার বোঝা আরো বাড়বে। এর ফলে অনেক দিক থেকেই ভারতীয় সমাজ প্রভাবিত হবে।
ভারতের প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস এই আইনের বিরুদ্ধে থাকলেও তারা কোনো পার্থক্য সৃষ্টি করতে পারেনি। ক্ষমতাসীন বিজেপির পার্লামেন্টের উভয় কক্ষেই সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে।

বর্তমান গোলযোগ ইতোমধ্যেই মোদি সরকারের মধ্যে প্রভাব সৃষ্টি করেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান সহিংস বিক্ষোভের মুখে ভারত সফর বাতিল করেছেন। এই অস্থিরতা মোদির জাতীয়তাবাদ নীতির ওপরও প্রশ্ন সৃষ্টি করেছে। এই নীতির প্রতি অনেকে সমর্থন দিলেও ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভ মোদিকে বাধাগ্রস্ত করবে। ভারত এখন একের পর এক বিক্ষোভে আক্রান্ত। তবে ভারত সরকা হয়তো নতুন আইন পরিবর্তনের চেষ্টা করবে না, কারণ এটি সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দুদের লক্ষ্য করেই প্রণীত।

কাশ্মির নিয়ে বিরোধের কারণে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে এবং আরো নানা কারণে ভারতে গোলযোগ অব্যাহত থাকবে, এবং এমনকি বাড়তেও পারে। অবশ্য এটি ধর্মীয়, জাতিগত ও ভূখণ্ডগত সমস্যার সাথে সম্পৃক্ত হওয়ায় ভারতের পরিস্থিতি কেমন হতে পারে, তা নিয়ে ভবিষ্যদ্বাণী করা কঠিন।

গ্লোবাল টাইমস


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us