চর্যাপদ ও লোকসংস্কৃতি
চর্যাপদ ও লোকসংস্কৃতি - ছবি : নয়া দিগন্ত
সংস্কৃতি ভাবনা
প্রাগৈতিহাসিক কালে সমগ্র বাংলাদেশ কয়েকটি ছোট ছোট দ্বীপ নিয়ে গঠিত ছিল। প্রাচীনকালে এসব দ্বীপে বঙ্গাল, সুক্ষ্ম, পুণ্ড্র্র, রাঢ়, হরিকেল এবং পরবর্তীকালে দ্রাবিড় ভাষাগোষ্ঠী এসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দ্বীপ নিজেদের দখলে নিয়েছিল। ক্রমান্বয়ে এসব ক্ষুদ্র দ্বীপগুলো সমুদ্র থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে নদ-নদী পরিবেষ্টিত ভূখণ্ডে রূপান্তরিত হয়। কালক্রমে বঙ্গাল ভাষাগোষ্ঠী অন্যদের ওপর আধিপত্য বিস্তার করে এবং গোটা ভূখণ্ড তাদের দখলে নেয়। এমনিভাবে গোটা ভূখণ্ডের নাম ‘বঙ্গাল’ বা ‘বঙ্গ’ নামে পরিচিত হয়। তবে দীর্ঘকাল এতদাঞ্চলে এসব ভাষগোষ্ঠী বসবাসের ফলে বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল ‘রাঢ়’, উত্তরাঞ্চল ‘পুণ্ড্রবর্ধন’, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ‘বঙ্গাল’ নামে চিহ্নিত হয়। ১৯৭৫ খ্রিষ্টাব্দে ভারতের পশ্চিম বাংলার মুর্শিদাবাদ-মালদহ সন্নিকটস্থ এলাকায় ফারাক্কা ব্যারেজ নির্মাণের জন্য মাটি খনন করা হলে মাটির উপরিভাগ থেকে আট মিটার নিচে যেসব প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া যায় তা হরপ্পা-মহেঞ্জোদারোর সমসাময়িক বলে প্রত্নতত্ত্ববিদদের ধারণা জন্মে। বাংলাদেশ নদীমাতৃক হওয়ায় প্লাবন এবং ভাঙনের ফলে এতদাঞ্চলের প্রাচীন সভ্যতা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বর্তমানে বিভিন্ন অঞ্চল খননের ফলে নানা প্রত্নতাত্ত্বিক ঐতিহ্য আবিষ্কৃত হচ্ছে এবং তার ফলে বাংলাদেশের সভ্যতা যে অনেক প্রাচীন সে সম্পর্কে বিশ্বাস জন্মাচ্ছে। কিন্তু প্রাকৃতিক নিদর্শন না থাকলেও লোকসংস্কৃতির ইতিহাস এখনো বিদ্যমান। এই নিদর্শন রয়েছে এ দেশের মানুষের ভাষা, সাহিত্য, শিল্পকলা এবং সঙ্গীতে। লোকসঙ্গীতের মধ্যেই সুরক্ষিত রয়েছে এ দেশের প্রাচীন ইতিহাস ও সংস্কৃতি। এই লোকসঙ্গীতের বিভিন্ন ধারা অনুসন্ধান করলে আমরা খুঁজে পাব আমাদের সাংস্কৃতিক বৃক্ষের শিকড়।
অতীতে আর্যদের গ্রন্থ বেদ-এ ‘বঙ্গ’ বা বঙ্গদেশের উল্লেখ পাওয়া যায়। সেখানকার মানুষের আচার-আচরণ ইত্যাদি সম্বন্ধেও বেদ গ্রন্থে কমবেশি উল্লেখ রয়েছে। এরা আর্যদের সাথে প্রকাশ্যে ও গোপনে লড়াই করে তাদের জয়যাত্রা কখনো কখনো থামিয়ে দিয়েছে বিধায় আর্য সমাজ তাদেরকে ‘দস্যু’ ‘পঙ্খি’ এমনকি ‘রাক্ষস’ নামেও চিহ্নিত করেছে। আমার বক্তব্যে অতীতের ‘বঙ্গ’ এবং বর্তমানের পশ্চিমবঙ্গ যাকে এখন ‘বাংলা’ এবং পূর্ববঙ্গ যা বর্তমানে স্বাধীন বাংলাদেশ, তার উল্লেখ থাকবে। বিশেষ করে বর্তমানের বাংলাদেশ এবং তার লোকসংস্কৃতি নিয়েই হবে আমার বক্তব্যের উপজীব্য বিষয়।
ভারতবর্ষে আর্য সম্প্রদায়ের আক্রমণ ঘটেছিল পারস্য বা ইরান থেকে। মধ্য এশিয়াতে তাদের অবস্থান ঘটেছিল। বর্তমান ইউরোপ এবং অতীতের ঝপধহফরহধারধহ দেশ থেকে তাদের প্রাচ্যে আবির্ভাব ঘটে। ভারতবর্ষ আর্যদের দখলে আসবার অনেক পরে বঙ্গদেশ আর্যদের শাসনাধীন হয়। এ সময় আর্যদের ধর্ম ও ভাষা সমাজ জীবনে প্রসার লাভ করে। ‘সংস্কৃত’ ভাষা ছিল রাজভাষা। এই বহিরাগত আর্য সম্প্রদায় এ দেশের মানুষকে দাসে পরিণত করে এবং তাদের বেশির ভাগকে বর্ণবাদের সূত্রে ‘শূদ্র’ বলে গণ্য করে। বর্ণবাদের প্রতিষ্ঠায় ব্রাহ্মণদের ক্ষমতা সমাজে বৃদ্ধি পায়। ক্ষত্রিয়দের ওপর তাদের প্রভাব থাকায় ক্ষমতায়নে তারাই অগ্রগামী ছিল। শূদ্ররাই ছিল সমাজের নি¤œবর্ণের মানুষ। শূদ্রদের মধ্য থেকে বেশ কিছু সংখ্যক এ দেশের মানুষ বৈবাহিক এবং অন্য ‘কায়স্থ’ হয়ে আর্যদের জাতে উঠেছিল।
বাংলাদেশের নিম্নবর্ণের যে জনগোষ্ঠী ‘লোক’ নামে পরিচিত তাদের মধ্যে আদি-অস্ট্রেলীয়দের প্রভাব সর্বাধিক। এখানকার প্রাচীন অধিবাসীদের মধ্যে অনেকে বুনো, বাগদি, বাঁশফোড়, সাঁওতাল, বিন্দি শ্রেণীর মানুষ। তবে এসব অধিবাসীদের অনেকে মোগল এবং ব্রিটিশ আমলে কাজের জন্য ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এ দেশে চলে আসে। পরবর্তীকালে এদের সাথে মিশ্রিত হয়েছে দ্রাবিড়, নিগ্রোবট এবং মোঙ্গলীয় শ্রেণীর মানুষ। কালক্রমে বাংলাদেশে আর্য জাতির অনুপ্রবেশ এবং তারই সূত্র ধরে অন্যান্য জাতি বিশেষ করে আরব-পারস্য থেকে আগমনকারী বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর সংমিশ্রণে বাংলাদেশের জনগোষ্ঠীতে নানা বিবর্তন ঘটেছে। এরই সাথে এসেছে ধর্ম এবং সংস্কৃতি। বিজয়ী এবং বিজিতের মধ্য থেকে সৃষ্টি হয়েছে উচ্চবর্ণ এবং নিম্নবর্ণ। হিন্দু ধর্মে এই বর্ণবাদ অত্যন্ত প্রকট। ইসলাম ধর্মে বর্ণবাদ ও বর্ণবৈষম্য আদৌ না থাকলেও এদেশীয় ধর্ম ও সংস্কৃতির প্রভাবে মুসলিম ধর্মেও সৃষ্টি হয়েছে আশরাফ, আতরাফ এবং আজলাফ শ্রেণী। আশরাফ চিহ্নিত হয়েছে উচ্চবর্ণ হিসেবে। আতরাফ এবং আজলাফদের স্থান হয়েছে নিম্নবর্ণের সাথে। উচ্চবর্ণের মধ্যেও এসেছে মধ্যবর্তী এক শ্রেণী। অতঃপর সব জাতির নিম্নশ্রেণীর মানুষ এক কাতারে এসেছে এবং নিজেরাই গড়ে নিয়েছে তাদের এক ধর্ম যা ‘লোকধর্ম’ নামে পরিচিত এবং এমনিভাবেই তাদের সংস্কৃতিও নির্ধারিত হয়েছে। অতঃপর এই শ্রেণিবৈষম্যের বিরুদ্ধে তাদের লড়াই।
চর্যাপদের বঙ্গদেশ
১৯০৭ সালে নেপালের রাজদরবার কর্তৃক পরিচালিত ‘জাতীয় যাদুঘর’ থেকে মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্যাপদ বা ‘চর্যাচর্য বিনিশ্চয়’ নামে বেশ কিছু পদ উদ্ধার করে নিয়ে আসেন। এই ‘চর্যাপদ’ই বঙ্গদেশের সাহিত্যচর্চার প্রাচীনতম নিদর্শন।
এটি ছিল পদ বা গীতির সঙ্কলন। হরপ্রসাদ শাস্ত্রী সংগৃহীত চর্যাপদের মোট সংখ্যা ছিল ৪৬টি। প্রবোধ চন্দ্র বাগচী চর্যাপদের তিব্বতি অনুবাদ আবিষ্কার করেন। অদ্যাবধি অনার্য বাঙালিদের অন্য কোনো সাহিত্যকর্ম এখনো পাওয়া যায়নি
হরপ্রসাদ শাস্ত্রী এ পদগুলোকে ‘বৌদ্ধগান ও দোহা’ নাম দিয়ে তা সম্পাদনা করেন। হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর আগে রাজা রাজেন্দ্রলাল মিত্র নেপাল থেকে বৌদ্ধধর্ম ও সাহিত্যের কিছু পুঁথি সংগ্রহ করেন। রাজেন্দ্রলাল তাঁর সংগৃহীত পুঁথিগুলোকে ১৮৮২ সালে Sanskrit Buddhist Literature নামে প্রকাশ করে তার একটা তালিকাও প্রকাশ করেন।
চর্যাপদগুলো সাধন সঙ্গীত। বর্ণভেদের ফলে ধর্মে সবার অংশগ্রহণ অনুমোদিত না থাকায় নিম্নবর্ণের মানুষ নিজেরাই তাদের ধর্ম সৃষ্টি করে নেয়। আপাতদৃষ্টিতে এ সাধনা নর-নারীভিত্তিক দেহকেন্দ্রিক যুগল সাধনা বলে মনে হলেও পদকর্তাদের বক্তব্যে প্রতীকী ব্যবহারে আড়ালে তা অনেকটা ‘গুপ্ত’ রাখা হয়েছে। পাল রাজাদের শেষে সেন বংশোদ্ভূত রাজন্যবর্গ বাংলায় রাজত্ব করেছিলেন। সেন আমলে লক্ষণ সেন রাজা থাকাকালীন বঙ্গদেশের জনপদকে পুরোপুরি ব্রাহ্মণ্য শাসনাধীনে আনা হয়েছিল। রাজভাষা হিসেবে সংস্কৃতকে জনগণের মধ্যে চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল। শুধু এটাই নয়, বাংলা ভাষার চর্চাকেও নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। ঘোষণা দেয়া হয়েছিল, সংস্কৃতের পরিবর্তে যারা অনার্য বাংলা ভাষার চর্চা করবে, তাদের ‘রৌরব’ নামক নরকে নিক্ষেপ করা হবে। অনুমান করা হয়, চর্যাপদের রচয়িতারা বাঙালি হওয়াতে চর্যাপদগুলো প্রকাশ্যে তারা প্রচার করতে সক্ষম হননি। এ ছাড়া চর্যাপদগুলো দেহভিত্তিক সাধনার অংশ হওয়ায় কেবল দীক্ষিতজনের মধ্যেই তা সীমাবদ্ধ রাখার চেষ্টা হয়েছিল। এ ভাষার ভাব এবং সাধনাকে লোকচক্ষুর আড়ালে রাখার জন্যই এর ভাষা ও অর্থ দ্বার্থবোধক ছিল। চর্যাপদে বিধৃত ‘দেহতত্ত্ব’ রূপকের মাধ্যমে সাধারণের থাকা আড়াল করে রাখা হয়েছিল। এ গানগুলোয় ভাষার একটা অস্পষ্টতা রয়েছে। গোটা পদগুলোই বলা যেতে পারে রূপক এবং প্রতীকী শব্দের ব্যবহারের মাধ্যমে একটা ‘আলো-আঁধারি’র ভাব দেখতে পাওয়া যায়। এ কারণে হরপ্রসাদ শাস্ত্রী চর্চাপদের ভাষাকে ‘সন্ধ্যাভাষা’ বলে উল্লেখ করেছেন। চর্যাপদগুলোর মধ্যে এই অস্পষ্টতা ও তার মূলভাবকে অন্যদের কাছ থেকে আড়াল করার পেছনে অন্য কারণ যে ছিল সেটিও এখানে বলা যেতে পারে। বলেছি, তৎকালীন আর্য-সমাজ বিশেষ করে ব্রাহ্মণ প্রভাবিত সেন রাজন্যবর্গ বাঙালি অনার্যদের প্রতি বিরূপ মানষিকতা পোষণ করত। বিশেষ করে এদের মধ্যে যারা একেবারে নি¤œবর্ণের শূদ্র ছিল। সমাজে তাদের কোনো স্থান ছিল না। সে সময় শূদ্রের কাছ থেকে অন্নগ্রহণ ব্রাহ্মণদের জন্য পরিত্যাজ্য ছিল। শূদ্রদেরকে তারা অস্পৃশ্য এবং অন্ত্যজ ও ম্লেচ্ছ মনে করত এবং তাদের হাতে অন্ন শুধু নয়, জল স্পর্শও ছিল মহাপাপ।
চর্যাপদ বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন
ইতোপূর্বেই বলা হয়েছে, হিন্দু সেন আমলে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের চর্চা নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়। আর্য শাসনামলে বাংলাভাষার যে চর্চা প্রচলিত ছিল, বৌদ্ধধর্মে দীক্ষিত অনার্য সিদ্ধাচার্যদের বিরচিত চর্যাপদ তার প্রমাণ বহন করে। বৌদ্ধ আমলে বাঙালি অনার্যরা স্বেচ্ছায় বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন এবং তাদের ভাষা ও সংস্কৃতি বৌদ্ধ শাসনামলে নিষিদ্ধ ছিল না। বৌদ্ধ আমল শেষে হিন্দু আমলে পট পরিবর্তন হয় এবং বৌদ্ধধর্ম অবলম্বনকারী এদেশের বাঙালি অনার্যদের প্রতি ব্রাহ্মণদের অত্যাচার তুঙ্গে ওঠে। এ কারণেই বৌদ্ধ বাঙালিরা মুসলমানদের এদেশ দখলে আমন্ত্রণ জানায় বলে জানা যায়। সে সময়ের তুর্কি সুলতানদের স্থপতি ইখতিয়ারউদ্দিন মো: বিন বখতিয়ার খলজি বিনাযুদ্ধেই তৎকালীন বাংলাদেশ দখল করেন। অতপর তুর্কি শাসনামলে বাংলাভাষার চর্চা পুনরায় শুরু হয় এবং তুর্কি মুসলমানদের অনেকেই এদেশে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। অনেকেই এখানে বিয়ের মাধ্যমে নতুন জীবন শুরু করেন
বর্ণভেদের ফলে ধর্মে সবার অংশগ্রহণ অনুমোদিত না থাকায় নি¤œবর্ণের মানুষ নিজেরাই তাদের ধর্ম সৃষ্টি করে নেয়। আপাতদৃষ্টিতে এ সাধনা নর-নারীভিত্তিক দেহকেন্দ্রিক যুগল সাধনা বলে মনে হলেও পদকর্তাদের বক্তব্যে প্রতীকী ব্যবহারে আড়ালে তা অনেকটা ‘গুপ্ত’ রাখা হয়েছে।
একটি চর্যায় এমন বলা হয়েছে- উঁচু পাহাড়ের উপরে বসবাস করে শবরী বালিকা ময়ূর পুচ্ছের মতো পরিধেয় তার গলায় গুঞ্জের মালা। শবরীকে এ অপরূপ পোশাকে সজ্জিত দেখে শবর উম্মত্ত পাগল। শবরী ভৎর্সনা স্বরে বলে এত চঞ্চল কেন আমি তো তোর নিজের সহজ সুন্দরী। বৃক্ষরাজী মুকুলিত তাদের পুষ্পিত শাখা আকাশ ছুঁয়ে ফেলছে শবরী নানা সুন্দর সজ্জায় অরণ্যে একা একা ঘুরে ফিরে। কানে ঝুলছে বজ্ররূপী কুন্তল। এ পদাবলির রচয়িতারা বৌদ্ধ সহজযানি মতাদর্শের অনুসারী ছিলেন বলে জানা যায়। এ সময়ে বাংলাদেশে তন্ত্রের প্রভাব ছিল এবং ‘কাপালিক’ ও ‘অবধূত’ নামে দুই সাধন মার্গের অনুসারীদের কথাও ইতিহাস সূত্রে পাওয়া যায়। আবিষ্কৃত চর্যাপদগুলো সাধনসঙ্গীত এবং এর রচয়িতারা দেহসাধনার তত্ত্বে বিশ্বাসী ছিলেন বলে ধারণা জন্মে। চর্যাপদগুলোতে নর-নারীর যৌথ সাধন ভাবনার উল্লেখ রয়েছে। বেশ বোঝা যায় যে, এসব পদের রচয়িতাগণ নর-নারীর মিলনজনিত যৌন সম্ভোগের উপর ধর্মের প্রলেপ দিতে চেয়েছেন। প্রায় পদেই হিন্দু ব্রাহ্মণদের প্রতি ক্ষোভ ও আক্রোশের পরিচয় রয়েছে। এই ব্রাহ্মণেরা যে ক্ষত্রিয়দের সাহায্যে এ দেশের জনগণকে দাসে পরিণত করেছিল এবং তাদের রমণীদের নিদ্বির্ধায় ব্যবহার করে থাকত, এমন পরিচয়ও পাওয়া যায় চর্যার নানা পদে। চর্যাপদগুলোতে এক বিশেষ ধরনের ধর্মের পরিচয় রয়েছে। এসব পদে সম্ভোগের মাধ্যমে ‘আরাধ্য’ বস্তুকেও যে পাওয়া সম্ভব এমন কথারও উল্লেখ রয়েছে। চর্যাপদের নর-নারীরা যে শ্রমজীবি, অন্ত্যজ বা দাসশ্রেণীভুক্ত ছিল, পদাবলিতে তার নির্দশন রয়েছে।