যুদ্ধে কাজেই লাগবে না ভারতীয় বিমানবাহী রণতরী!
ভারতীয় বিমানবাহী রণতরী বিশাল - ছবি : সংগৃহীত
বিশাল নামের ভারতীয় নৌবাহিনীর তৃতীয় বিমানবাহী রণতরীটি ২০২০-এর দশকে নৌবাহিনীতে যুক্ত হবে। ৬৫ হাজার টনের রণতরীটি ভারতের বর্তমান একমাত্র বিমানবাহী রণতরী বিক্রামাদিত্য (সাবেক সোভিয়েত আমলের অ্যাডমিরাল গরশকভ নামে পরিচিত) এবং দেশে তৈরী দ্বিতীয় বিমানবাহী রণতরী বিক্রান্তের (এটি যেকোনো সময়ে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাবে) চেয়ে অনেক বেশি বড়।
ভারতীয় নৌবাহিনীর জন্য বিশাল কেন বড় কিছু তা বুঝতে হলে এর প্রস্তাবিত বিমান শাখাটির দিকে নজর দেয়াই যথেষ্ট। এতে প্রায় ৫৭টি জঙ্গি বিমান (বিক্রমাদিত্যে ২৪টি মিগ-২৯কে এবং বিক্রান্তের প্রায় ৩০টি মিগ-২৯কে জঙ্গি বিমান রাখার জায়গা আছে) রাখা যাবে। এটি মার্কিন নৌবাহিনীর গেরাল্ড আর ফোর্ড-শ্রেণির সুপারক্যারিয়ারের (৭৫+) চেয়ে ছোট হলেও বিশাল যথার্থই পূর্ণাঙ্গ আকারের ক্যারিয়ার। প্রথম দুটি সত্যিই ছোট-ডেকের ক্যারিয়ার এবং অনেক দিক থেকেই বেশ সীমিত ক্ষমতার অধিকারী।
ভারতীয় নৌবাহিনী তার তৃতীয় ক্যারিয়ারের জন্য ফোর্ড ক্লাসের মতো একটি ইলেকট্রোম্যাগনেটিক লঞ্চ সিস্টেমের সন্ধানে রয়েছে। ভারতের প্রথম ক্যারিয়ার দুটিতে এসটিওবিএআর কনফিগারেশন রয়েছে। এতে স্কাই-জাম্পের সহায়তায় বিমান উড্ডয়ন করে। এই পদ্ধতিতে আকাশেই বিমানের সর্বোচ্চ ওজন সীমিত করা হয়। এর ফলে জঙ্গিবিমানে খুব বেশি পরিমাণ অস্ত্র-বোমা বহন করা সম্ভব হয় না। এতে জ্বালানিও রাখতে হয় কম।
বিশালের জন্য ভারতীয় নৌবাহিনী বিদেশী উৎসের টুইন-ইঞ্জিন জঙ্গিবিমান অনুসন্ধান করছে। সবচেয়ে বেশি বিবেচনা করা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের এফ/এ-১৮ ও ফরাসি রাফাল। ভারত তার বিমান বাহিনীর জন্য ইতোমধ্যেই ৩৬টি ফরাসি-নির্মিত মাল্টিরোল রাফালের অর্ডার দিয়েছে। তবে এই ঘটনা ভারতের নিজস্ব বিমান তৈরির প্রকল্পের জন্য বড় একটি আঘাত। ভারত তার নৌবাহিনীর জন্য এইইচএএল তেজার কথা ভেবেছিল। কিন্তু এগুলোর ওজন বেশি হওয়ায় তা বাদ করতে হচ্ছে।
বিশালে যে ধরনের জঙ্গি বিমানই ব্যবহার করা হোক না কেন, প্রশ্ন হলো, ভারতের সত্যিই কি তৃতীয় ক্যারিয়ারের প্রয়োজন রয়েছে? বড় প্রশ্ন হলো, এ ধরনের একটি রণতরী পরিচালনা করতে হলে বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের প্রয়োজন হয়।
এখন এসব ক্যারিয়ার ব্যবহার করে একটি যুদ্ধ দৃশ্যের কল্পনা করা যাক।
খুব সম্ভবত ভারত পাকিস্তানের ওপর অবরোধ আরোপের চেষ্টায় এবং স্থল-ভিত্তিক টার্গেটে আঘাত হানার জন্য এসব বিমানবাহী রণতরী ব্যবহার করবে। কিন্তু ভারতীয় ক্যারিয়ারে আঘাত হানার জন্য পাকিস্তানের হাতে আছে অনেক বিকল্প। তাদের হাতে আছে প্রায় অশনাক্তযোগ্য সাবমেরিন ও জাহাজবিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। এগুলো ভারত থেকে অনেক দূরে পশ্চিম ও উত্তর আরব সাগর থেকে কাজ করে। চীনেরও এ ধরনের সমস্যা নেই। কারণ তাদের নৌবাহিনীর ক্যারিয়ারগুলো তাইওয়ানসহ ‘ফার্স্ট আইল্যান্ড চেইনের’ মধ্যে রাখে। এগুলোর সমর্থনে স্থলভাগ থেকে বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন থাকে।
ফলে ভারতীয় ক্যারিয়ারগুলো তুলনামূলকভাবে অরক্ষিত থাবে। এগুলোর মধ্যে মাত্র একটিই মানসম্পন্ন অস্ত্র ও জ্বালানি বহনে সক্ষম। সেটি হলো বিশাল। এটি আগামী দশকে সাগরে যাত্রা করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
পাকিস্তানের প্রতি সরাসরি হুমকি সৃষ্টি করার জন্য তাই ছোট ডেকের ক্যারিয়ারকে উপকূলের কাছাকাছি আসতে হবে। কিন্তু এগুলো অ্যান্টি-অ্যাকসেস/এরিয়া ডেনিয়াল অস্ত্রের টার্গেট হতে পারে। এমনকি ভারতের তৃতীয় ক্যারিয়ারটিকেও তার বিমান অংশকে রক্ষা করতে হিমশিম খেতে হবে। বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছেন বেন ওয়ান বেং হো তার নেভাল ওয়ার কলেজ রিভিউতে।
তিনি লিখেছেন, যুদ্ধের সময় এই ক্যারিয়ার থেকে দুই অংকের বিমান উড়ানো সম্ভব হবে না এর সীমাবদ্ধতার কারণে। ফলে এটি তেমন সক্ষমতা প্রদর্শন করতে পারবে না।
এতে করে ভারতীয় ক্যারিয়ারগুলো আত্মরক্ষার কাছেই নিয়োজিত থাকতে হবে। তাদের পক্ষে শত্রুর ওপর অভিযান পরিচালনার কাজটি তেমনভাবে করা সম্ভব হবে না। আবার ক্যারিয়ার হলো জাতীয় মর্যাদার ব্যয়বহুল প্রকল্পও। ফলে ভারত চাইবে না তাদের একটি, দুটি বা তিনটিকে হারাতে। ফলে তারা ঝুঁকিমুক্ত থাকতে চাইবে। ফলে ক্যারিয়ারে ভারতের বিনিয়োগ হবে অনেকটাই প্রতীকী এবং মূলত তার শিপিয়ার্ডগুলোকে ব্যস্ত রাখতে ও শিপিয়ার্ড কর্মীদের চাকরিতে বহাল রাখতে।
অবশ্য ক্যারিয়ারকেন্দ্রিক নেভাল স্ট্র্যাটেজির বিষয়টি পুরোপুরি উড়িয়ে দেয়া হচ্ছে না। হো উল্লেখ করেছেন, পশ্চিম আরব সাগরে পাকিস্তানি রণতরীর হয়রানি থেকে বাণিজ্য জাহাজগুলোর পাহারাদারের ভূমিকা পালনের জন্য এসব রণতরী বেশ কার্যকর হতে পারে। তবে এই কাজেও বেশ কিছু সমস্যায় পড়তে হবে।
কিন্তু সেক্ষেত্রেও পাকিস্তানি প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে তাদেরকে। কারণ পাকিস্তান তাদের ভূখণ্ডের অনেকটা কাছাকাছি থেকে ভারতের মোকাবিলা করতে পারবে। ফলে সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে পাকিস্তানই।
আরেকটা সম্ভাবনা আছে, তা হলো ভারত তার ক্যারিয়ারগুলোকে যুদ্ধের একেবারে শেষ দিকে মোতায়েন করতে পারে। কিন্তু যুদ্ধের গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়েই যদি ব্যবহার করা না যায়, তবে ভারতের এসব ক্যারিয়ারের সত্যিই কি দরকার আছে- এই প্রশ্ন উত্থাপিত হতে পারে।
ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট