হিন্দু ২৫,৪৪৭, শিখ ৫,৮০৭, খ্রিস্টান ৫৫, বৌদ্ধ ২
নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ - ছবি : সংগৃহীত
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের ফলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মোট ৩১,৩১৩ ব্যক্তি (এদের মধ্যে ২৫,৪৪৭ জন হিন্দু, ৫,৮০৭ জন শিখ, ৫৫ জন খ্রিস্টান, ২ জন বৌদ্ধ ও ২ জন পার্সি) তাৎক্ষণিকভাবে উপকৃত হবেন।
পার্লামেন্টারি কমিটির ২০১৬ সালের প্রতিবেদনে ইন্টিলিজেন্স ব্যুরো প্যানেলকে বলেন যে সংখ্যালঘু গ্রুপগুলোর সদস্যদেরকে প্রমাণ করতে হবে যে তারা ধর্মীয় নির্যাতনের কারণে ভারতে এসেছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মোট ৩১,৩১৩ ব্যক্তি (এদের মধ্যে ২৫,৪৪৭ জন হিন্দু, ৫,৮০৭ জন শিখ, ৫৫ জন খ্রিস্টান, ২ জন বৌদ্ধ ও ২ জন পার্সি) দাবি করেছেন যে সংশ্লিষ্ট দেশে তারা ধর্মীয় নির্যাতনের কারণে ভারতে এসেছেন এবং তারা ভারতীয় নাগরিকত্ব চান। তাদের দাবির ভিত্তিতে তাদেরকে ‘লং টার্ম ভিসা’ দেয়া হয়েছিল। তারাই সদ্য পাস করা নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনে উপকৃত হবেন।
যৌথ পার্লামেন্টারি কমিটির সভায় ২০১৬ সালে নাগরিকত্ব বিলটির সংশোধনীর পর্যালোচনার দায়িত্বে ছিল। ওই সময় পার্লামেন্টারি কমিটি ইন্টিলিজেন্স ব্যুরোর কাছে জানতে চেয়েছিল, ওই তিন দেশ থেকেই ভারতে এসেছে, কিন্তু ওই সময় দাবি করেনি যে তারা ধর্মীয় নির্যাতনের কারণে এসেছে, তাদের কী হতে পারে। জবাবে ইন্টিলিজেন্স ব্যুরো (আইবি) জানায়, তাদেরকে এই শ্রেণির আওতায় ভারতের নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করতে হবে। তাদেরকে প্রমাণ করতে হবে যে তারা ধর্মীয় নির্যাতনের কারণে ভারতে এসেছে। তারা যদি ভারতে আসার সময় ওই দাবি না করে থাকে, তবে তাদেরকে এখন ওই দাবি প্রমাণ করতে সমস্যায় পড়তে হবে। ভবিষ্যতের যেকোনো দাবি তদন্ত (ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা র’সহ অন্যরা তা করবে) করা হবে। তার পর তাদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
২০১৬ সালের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কমিটি তখন জানতে চায়, এই আইনে মাত্র ৩১,৩১৩ জন উপকৃত হবে?
আইবি তখন জানায়, হ্যাঁ, কারণ তারা দাবি করেছিল, তারা আবেদন করেছিল। আরো অনেকে হয়তো আছে। তাদের অনেক হয়তো ইতোমধ্যেই নানাভাবে নাগরিকত্ব লাভ করেছে। তারা হয়তো পাসপোর্ট পেয়েছে, রেশন কার্ডও লাভ করেছে। তারা ইতোমধ্যেই ভোটার তালিকাতেও নাম অন্তর্ভুক্ত করে ফেলেছে। বাস্তবে তারা ইতোমধ্যেই নাগরিকত্ব পেয়ে গেছে। তবে তারা জালিয়াতির মাধ্যমে তা করেছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে ট্রাইব্যুনাল থাকবে। তবে তা একেবারেই ভিন্ন ইস্যু। যারা আবেদন করেছে এবং যারা দাবি করেছে যে তারা নিজ নিজ দেশে নির্যাতনের শিকার হয়েছে কেবল তাদের জন্যই এই বিল।
আইবি জানিয়েছে, শুরুতে বিষয়টি কেবল অল্প সংখ্যক লোকের জন্য প্রযোজ্য হবে।
কমিটি আরো জানতে চায় যে বিলটি পাসের পর পরই যাদের নাগরিকত্ব দেয়া হবে, তাদের বিষয়ে নতুন করে তদন্ত করা হবে কিনা। ইন্টিলিজেন্স ব্যুরোর (আইবি) এই বক্তব্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে চলতি সপ্তাহের প্রথম দিকে রাজ্যসভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের বক্তব্যের প্রেক্ষাপটে। এক প্রশ্নের জবাবে অমিত শাহ স্বীকার করেছেন যে ওই সংখ্যাটি বাড়তে পারে।
বুধবার রাজ্যসভায় অমিত শাহ বলেন, কোটি কোটি মানুষ যাতে নতুন দিনের সাক্ষাত পেতে পারে, সেজন্য নরেন্দ্র মোদি সরকারের আনীত বিলটি গ্রহণ করার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। বক্তৃতায় অমিত শাহ বেশ কয়েকবারই বলেন কোটি কোটি লোক নতুন আইনের ফলে উপকৃত হবে।
রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল নিয়ে বিতর্কের সময় সিনিয়র কংগ্রেস নেতা ও সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদাম্বরম তখনকার প্রস্তাবিত আইনের বৈধতা নিয়ে সরকারের উদ্দেশ্যে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন উত্থাপন করেছিলেন। তিনি অভিযোগ করেছিলেন, সরকার তার হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য অসাংবিধানিক পন্থায় বিলটি এনেছে।
চিদাম্বরমের ছয়টি প্রশ্ন ছিল এই যে
১. সরকার কেন তিনটি দেশকে উল্লেখ করছে, অথচ অন্যদের বাদ রেখেছে?
২. সরকার কেন মাত্র ছয়টি ধর্মীয় গ্রুপকে (হিন্দু, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন, পার্সি ও খ্রিস্টান) শনাক্ত করেছে, অথচ আহমদিয়া, রোহিঙ্গা ও হাজারাদের বাদ রেখেছে?
৩. আব্রাহিমি ধর্ম তিনটি _ ইহুদি, খ্রিস্টান ও ইসলাম। কেন অপর দুটিকে বাদ রেখে কেবল খ্রিস্টানদের অন্তর্ভুক্ত করা হলো?
৪. শ্রীলঙ্কার হিন্দু ও ভুটানের খ্রিস্টানদের বাদ দেয়া হলো কেন? এতে কোনো যুক্তি পাওয়া যায় না।
৫. কেন কেবল ধর্মীয় নির্যাতনের শিকার লোকদের জন্য বিলটি আনা হয়েছে? কেন রাজনৈতিক কারণে নির্যাতনের শিকাররা অন্তর্ভুক্ত হবে না?
৬. বিলটি কি অনুচ্ছেদ ১৪-এর তিনটি মৌলিক উপাদানের লঙ্ঘন? আইনের চোখে সবার সমান অধিকার থাকতে হবে।
কংগ্রেস নেতা কবিল শৈবালও অভিযোগ করেন, সরকার দ্বিজাতি তত্ত্বকে আইনি রূপ দিচ্ছে। তিনি ভারতীয় প্রজাতন্ত্রকে দুটি ডায়নোসর-সংবলিত জুরাসিক প্রজাতন্ত্রে পরিণত না করতে বলেন। সিনিয়র কংগ্রেস নেতা আনন্দ শর্মা প্রস্তাবিত আইনকে অসাংবিধানিক হিসেবে অভিহিত করে বলেন, কোনো রাজনৈতিক দলের ইস্তেহারকে সংবিধানের ওপর স্থান দেয়া ঠিক নয়।
বিলটি পাস হওয়ার পর থেকেই ভারতজুড়ে সহিংস বিরোধিতা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে আসাম, ত্রিপুরা, মনিপুর, নাগাল্যান্ড, দিল্লি ও পশ্চিমবঙ্গে সহিংস বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। আসামে বিক্ষোভের সময় অন্তত ছয়জন নিহত হয়েছে।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গে ক্ষমতাসীন তৃণমূল কংগ্রেস রোববার রাজ্যজুড়ে মিছিল বের করে সংশোধিত নাগরিকত্ব বিলের বিরোধিতা করে। তারা আইনটি বাতিল করার আহ্বান জানায়।
ফার্স্ট পোস্ট