জনসনের বেক্সিট চমক

মু. ওমর ফারুক আকন্দ | Dec 18, 2019 02:23 pm
জনসনের বেক্সিট চমক

জনসনের বেক্সিট চমক - ছবি : সংগ্রহ

 

ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে যাওয়াকে (ব্রেক্সিট) কেন্দ্র করে কয়েক বছর ধরে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে গত দু’বছরের মধ্যে দ্বিতীয় সাধারণ নির্বাচনে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হয়েছে গত বৃহস্পতিবার। ফলাফলে দেখা গেছে, সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন পেয়ে ক্ষমতা নিশ্চিত করেছে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের কনজারভেটিভ পার্টি।

নির্বাচনে কনজারভেটিভ পার্টি তিন দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভালো ফল করেছে। ১৯৮৭ সালের পর এটা কনজারভেটিভ দলের জন্য সবচেয়ে বড় জয় এবং ১৯৩৫ সালের পর লেবার দলের সবচেয়ে বড় পরাজয়। পার্লামেন্টে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ায় জানুয়ারির মধ্যে জনসনের ব্রেক্সিট কার্যকরেরও সম্ভাবনা প্রকট হয়েছে। এখন নির্বাচনে জনসনের জয়ে এটি স্পষ্ট যে, ব্রেক্সিটের পক্ষেই সমর্থনের বিশাল ঢেউ আছড়ে পড়েছে।
গত শুক্রবার বিজয়ী ভাষণে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, আর ‘কোনো কিন্তু’ নেই। ৩১ জানুয়ারির মধ্যেই যুক্তরাজ্যের সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিচ্ছেদে জনগণ চূড়ান্ত রায় দিয়েছে। ব্রেক্সিটকে কেন্দ্র করে সাড়ে তিন বছর ধরে দেশে যে মতভেদ চলছিল, তা ভুলে যাওয়ার সময় হয়েছে বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।

৩১ জানুয়ারি ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগ করা এবং আগামী বছরের শেষের দিকে ইইউর সাথে একটি নতুন বাণিজ্য চুক্তি নিশ্চিত করাই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী জনসন সরকারের শীর্ষ অগ্রাধিকার। ব্রিটেনের স্বাস্থ্যসেবা খাতকে অর্থিকভাবে লাভবান করাও এবারের নির্বাচনের অন্যতম প্রতিশ্রুতি ছিল জনসনের।

পার্লামেন্টে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকায় এবং এমপিদের বিরোধিতার কারণে এ পর্যন্ত ব্রেক্সিট কার্যকর করতে না পেরে প্রধানমন্ত্রী জনসন আগাম নির্বাচন ডেকেছিলেন। এতে কাজও হয়েছে। আনুষ্ঠানিক ফল ঘোষণার আগেই জনসনের দলের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার আভাস নির্ভুল বলেই প্রতীয়মান হয়েছে। তার মানে জনসন খুব দ্রুতই ইইউর সাথে করা তার ব্রেক্সিট চুক্তি পার্লামেন্টে পাস করিয়ে নিতে পারবেন। সেটি খুবই আশাব্যঞ্জক ব্যাপার।

তবে হতাশা যে একেবারে দূর হয়ে গেল তাও নয়। কারণ, ইইউ থেকে ব্রিটেন বেরিয়ে এলেও অর্থাৎ, ব্রেক্সিট সম্পন্ন হলেও এটি কেবল একটি প্রক্রিয়ার সূচনা মাত্র। পুরো প্রক্রিয়াটি শেষ হতে ব্রিটেনকে পাড়ি দিতে হবে আরো দীর্ঘ পথ। বাস্তবিকভাবে বলতে গেলে, জনসনের ব্রেক্সিট চুক্তি কার্যকর করাটা কয়েক বছরের একটি লম্বা প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপ।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় বাণিজ্য ব্লক হয়ে ওঠা ইইউতে ব্রিটেন প্রায় অর্ধ শতাব্দী ধরে আছে। সেখান থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া মানেই জনসনের সামনে থাকবে নতুন নতুন আন্তর্জাতিক চুক্তি করার দুরূহ কাজ। বিশ্বে অর্থনৈতিক দিক থেকে ব্রিটেনের শীর্ষ অবস্থান ধরে রাখা এবং দেশের অখণ্ডতা রক্ষা করার চ্যালেঞ্জও তাকে মোকাবেলা করতে হবে। তার মানে ব্রেক্সিট শেষ হওয়া অনেক দূরের পথ।

ব্রিটেনকে ১১ মাসের মধ্যেই ইইউর সাথে বাণিজ্য চুক্তি করার অসাধ্য সাধন করতে হবে এবং পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের সাথেও আরেকটি বাণিজ্য চুক্তি করতে হবে। এর ওপরই নির্ভর করবে ব্রিটেনের অর্থনীতির ভবিষ্যৎ। যদিও প্রধানমন্ত্রী জনসনের কনজারভেটিভ পার্টি তাদের নির্বাচনী ইশতেহারে এত গভীরের এ বিষয়গুলো তুলে ধরেনি। একটি বাণিজ্য চুক্তি করতে যেখানে বছরের পর বছর লেগে যায়, সেটি জনসন কিভাবে মাত্র ১১ মাসে করবেন সে পরিকল্পনাও দেয়া হয়নি।

ইইউ ত্যাগ করার ফলে যাতে অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্যের কোনো ক্ষতি না হয়, দুই অংশের জনগণ চাকরি থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেসব সুবিধা ভোগ করতেন, সেগুলোতে কোনো ছেদ যেন না পড়ে, তাই ব্রেক্সিট কিভাবে হবে তা আগে থেকেই একটা চুক্তির ভিত্তিতে স্থির করে নিতে হবে।

বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং পূর্বসূরি থেরেসা মে এরকম চুক্তি করে এসেছিলেন ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সাথে। তবে তারা তাদের প্রস্তাবিত চুক্তি পার্লামেন্টে পাস করাতে পারেননি। পার্লামেন্টে ব্রেক্সিটকে কেন্দ্র করে নজিরবিহীন তিক্ততা, বিভক্তি ও অচলাবস্থার ধারাবাহিকতায় এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

ব্রেক্সিটপন্থীরা বলছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেন বেরিয়ে গেলে সেখানকার সমাজ ও অর্থনীতিতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন আসবে। অন্য দিকে, ব্রেক্সিটবিরোধীদের দাবি- এর পরিণতিতে ব্রিটেন ভেঙে যেতে পারে। কারণ, স্কটল্যান্ড ও উত্তর আয়ারল্যান্ডে ব্রেক্সিটের বিরুদ্ধে ব্যাপক জনমত রয়েছে।

আর ব্রেক্সিটের প্রতিক্রিয়ায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের ঐক্যও হুমকির মুখে পড়তে পারে। এক কথায় গোটা ইউরোপেই অনেক সুদূরপ্রসারী পরিবর্তন আসতে যাচ্ছে। ব্রিটিশরা যে পরিবর্তনের উত্তাল হাওয়া ইউরোপে ছড়িয়ে দিয়েছে, তার শেষ কোথায় হবে সেই ধারণা পেতে অপেক্ষা করতে হবে আরো কিছু সময়।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us