হাঁসের না মুরগির : কোন ডিমে পুষ্টি বেশি?
হাঁসের না মুরগির : কোন ডিমে পুষ্টি বেশি? - ছবি : সংগ্রহ
ঢেঁকিছাঁটা চালের পুষ্টিগুণ
আমাদের নিত্যদিনের প্রধান খাদ্য ভাত। আমরা সকলেই জানি ভাত হচ্ছে শর্করাজাতীয় খাদ্যের সিংহভাগ অংশ। শর্করা উপাদান ছাড়াও ভাতে আরো কতগুলো গুরুত্বপূর্ণ উপাদান রয়েছে যা আমাদের অনেকেরই জানা নেই। ভাত থেকে পুষ্টিমান বেশি পেতে হলে দরকার গুণগতমানের চাল। ঢেঁকিছাঁটা চালের আবরণ অনেকটা বজায় থাকে এই আবরণকে বলা হয় কুঁড়ো। এই আবরণে থাকে ভিটামিন, অ্যাসেনসিয়াল অয়েল, ফাইবার ও মিনারেলস। বাজারে ঝকঝকে পালিশ করা কলে ছাঁটা চালের আবরণ অনেকটা উঠে যায় বলে এই সমস্ত পুষ্টি উপাদান থেকে আমরা প্রতিদিন বঞ্চিত হচ্ছি।
খাদ্যোপযোগী প্রতি ১০০ গ্রাম ঢেঁকিছাঁটা চালের পুষ্টি উপাদান নিচে দেয়া হলো
শর্করা ৭৭.৪ গ্রাম, আমিষ ৮.৫ গ্রাম, স্নেহ পদার্থ ০.৬ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, আয়রন ২.৮ মিলিগ্রাম, অন্যান্য খনিজ ০.৯ গ্রাম, ভিটামিন-বি১, ০.২৭ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-বি২ ০.১২ মিলিগ্রাম, জলীয় ১২.৬ গ্রাম, ক্যারোটিন ৯ মিলিগ্রাম, ফাইবার ০.৬ মিলিগ্রাম ও খাদ্যশক্তি ৩৪৯ কিলো ক্যালরি।
কলে ছাঁটা চালে ক্যারোটিন নষ্ট হয়ে যায়। ঢেঁকিছাঁটা চালের আবরণে থাকা অ্যাসেনসিয়াল অয়েল রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে রেখে হৃৎপিণ্ডের রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে এবং ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য প্রতিরোধ করে পরিপাকতন্ত্রের ক্রিয়াকলাপ ঠিকমতো বজায় রাখে। ঢেঁকিছাঁটা চালে যে ভিটামিনটি বেশি পেয়ে থাকি তা হচ্ছে ভিটামিন-বি বা থায়ামিন। এই ভিটামিনকে বলা হয় বেরি বেরি প্রতিরোধক ভিটামিন। এটি হজমে সাহায্য করে এবং খাবারে রুচি বজায় রাখে। ফলে দেহের বৃদ্ধিতে সহায়ক হয়। একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দৈনিক ভিটামিন-বি এর চাহিদা ১.২-২ মিলিগ্রাম । গর্ভবর্তী এবং প্রসূতি মায়েদের জন্য অতিরিক্ত থায়ামিনের প্রয়োজন। ঢেঁকিছাঁটা চাল বাদে শিমজাতীয় খাদ্য, বাদাম, ঈষ্ট, ডাল, গাজর, বিট, ডিমের কুসুম, দুধ ইত্যাদিতে থায়ামিন পাওয়া যায়। সুতরাং পুষ্টিমান লক্ষ করে আমাদের ঢেঁকিছাঁটা চালের ভাত খাওয়া দরকার।
ডিমের পুষ্টিকথা
ডিম একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর খাদ্য। ডিমের সাদা অংশে আছে উঁচুমানের প্রোটিন যা সহজ প্রাচ্য। আমাদের দেহ গঠনের জন্য প্রোটিনের অন্যতম উপাদান যে ৯টি অ্যাসেনসিয়াল ও অ্যামাইনো এসিড দরকার তার সব কটিই থাকে ডিমের সাদা অংশে। সে জন্য ডিম খেলে তার সম্পূর্ণ প্রোটিনের চাহিদা পূরণ হয়। ডিমের প্রোটিন সহজেই হজম হয় বেলে রোগীদের খাদ্য তালিকায় ডিম অবশ্যই রাখা হয়। ডিমের কুসুমে আছে অনেকগুলো ভিটামিন যেমন এ ডি ই কে বি এবং থাকে মিনারেলস। শুধু ভিটামিন-সি ডিমে থাকে না। ডিমের গড় ওজন প্রায় ৬০ গ্রাম। ১০০ গ্রাম খাদ্যোপযোগী মুরগির ডিমের পুষ্টি উপাদান নিচে দেয়া হলো: প্রোটিন ১৩.৩০ গ্রাম, ফ্যাট ১৩.৩ গ্রাম, ক্যালসিয়াম ৬০ মিলিগ্রাম, আয়রন ২.১ মিলিগ্রাম, ক্যারোটিন ৬০০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন-বি১, ০.১০ মিলিগ্রাম, ভিটামিন বি২, ০.৪০ মিলিগ্রাম, অন্যান্য খনিজ ১ গ্রাম জলীয় অংশ ৭.৩ গ্রাম ও খাদ্যশক্তি ১৭৩ কিলোক্যাসরি।
হাঁসের ডিমের পুষ্টিমান মুরগির ডিমের প্রায় সমান তবে হাঁসের ডিমে অতিরিক্ত থাকে অল্প পরিমাণ শর্করা যা মুরগির ডিমে থাকে না। বিভিন্নভাবেই ডিম রান্না করে খাওয়া যায় তবে অতিরিক্ত সিদ্ধ করে খাওয়া ঠিক নয় এতে ডিমের কুসুম কালচে আকার ধারণ করে যা স্বাস্থ্যসম্মত নয়। আবার কাঁচা ডিমও খাওয়া উচিত না এতে হজমের অসুবিধা হতে পারে। শিশুরা দৈনিক একটি করে ডিম খেলে ভালো। প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তি সপ্তাহে তিনটি ডিম সহজেই খেতে পারে। ত্রিশোর্ধ বয়সে বাড়তি কোলেস্টেরলের ভয়ে ডিমের কুসুম খাওয়া কমিয়ে দেয়া উচিত তবে সাদা অংশ নির্দ্বিধায় খাওয়া যাবে। এটা শুধুই প্রোটিন যা দেহের জন্য অত্যন্ত দরকারি। অনেক বাড়িতে ভাইরাসঘটিত রোগ বসন্ত, হাম দেখা দিলে ডিম খাওয়া বন্ধ করে দেয়। অথচ এ সময় শরীরের বাড়তি পুষ্টির জন্য ডিম অবশ্যই খাওয়া উচিত।