দিল্লির বিরদ্ধে আসামের গামছা আন্দোলন

অন্য দিগন্ত ডেস্ক | Dec 17, 2019 07:40 am
দিল্লির বিরদ্ধে আসামের গামছা আন্দোলন

দিল্লির বিরদ্ধে আসামের গামছা আন্দোলন - ছবি : সংগৃহীত

 

আসামের ভয়াবহ বিক্ষোভের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে একটি লাল-সাদা কাপড়। আর গামছা নামে পরিচিত এই কাপড়ই ভারতের এই রাজ্যটির আদিবাসী তথা ভূমিপুত্রদের তাদের অনন্য সংস্কৃতির প্রতি বিপজ্জনক হুমকি সৃষ্টিকারী নতুন নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে সংগ্রামের প্রতীকে পরিণত হয়েছে।

ঐতিহ্যগতভাবে গামছা হলো জেলে আর কৃষকদের পোশাক। সেটিই এখন তরুণরা মাথায়, কব্জিতে বেঁধে সরকারবিরোধী স্লোগান দিচ্ছে। কখনো পুলিশের ফাঁকা, এমনকি তাজা বুলেটের সামনেও তারা দাঁড়াচ্ছে। তাদের আন্দোলনে ইতোমধ্যেই ছয়জন নিহত হয়েছে।

আসামের রাজপথগুলোতে চলমান আন্দোলনে জোরালোভাবে অংশ নেয়া যতীন বারোহ (২২) বলেন, গামছা আমাদের কাছে পতাকা। এটি আসামের প্রতিনিধিত্ব করে, এটি এখানকার জনগণের সংস্কৃতি ও সম্মিলিত রাজনৈতিক ও সামাজিক আকাঙ্ক্ষার প্রতীক। এটি আমাদের গর্ব। এটিই আমাদের ঐক্যবদ্ধ করে। ভারতের উত্তরপূর্বাঞ্চলের এই অংশটি বাংলাদেশ, চীন ও মিয়ানমারের মাঝে অবস্থিত। অনেক দিন ধরেই এখানে জাতিগত উত্তেজনা চলছে। সশস্ত্র উপজাতীয় গ্রুপগুলো এখনো ভারতের অংশ হওয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। আসামে স্থানীয় ও বাংলা ভাষাভাষী অভিবাসীদের বিরোধ নতুন কিছু নয়। অভিবাসীদের নিয়ে এসেছিল ব্রিটিশরা, চা বাগানের জন্য। এছাড়া বাংলাদেশ থেকেও অনেকে সেখানে গেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

ছাত্র সংগঠনগুলো বছরের পর বছর ধরে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে। ১৯৮৩ সালের নিলি ম্যাসাকারের কথা বলা যায়। ওই ঘটনায় মাত্র ছয় ঘণ্টায় অন্তত দুই হাজার লোককে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। ১৯৮৫ সালে আসাম চুক্তির মধ্য দিয়ে ওই বিক্ষোভের অবসান হয়েছিল।

ওই চুক্তির অংশ ছিল বিদেশীদের বহিষ্কার করা। চলতি বছর এর জের ধরে নাগরিক নিবন্ধন হয় এবং ১৯ লাখ লোক প্রমাণ করতে পারেনি যে ১৯৭১ সালের আগে তারা ভারতে গিয়েছিল। তারা রাষ্ট্রহীন হওয়ার আশঙ্কায় আছে।
এখন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পুরনো ক্ষত নতুন করে জাগিয়ে তুলেছেন নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের মাধ্যমে। এই আইনের ফলে ভারতে বসবাসকারী দুই কোটি অভিবাসীকে নাগরিকত্ব দেয়া হতে পারে, আসামে নাগরিকত্ব পেতে পারে ৫ লাখ লোক। এর বিরুদ্ধে আসামে যে আন্দোলন চলছে, তার কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে রাজ্যটির প্রধান নগরী গৌহাটি। আন্দোলনকারীরা বলছে, এটি ১৯৮৫ সালের চুক্তির পরিপন্থী। এখনো শক্তিশালী অল আসাম স্টুডেন্টস ইউনিয়নের (এএএসইউ) সিনিয়র নেতা সমুজ্জ্বল ভট্টচার্য বলেন, এই আইন সরাসরি আমাদের সংস্কৃতি, জীবিকা ও আবাসভূমির পরিপন্থী। আমরা একজন অভিবাসীকেও গ্রহণ করব না। আসাম অতীতে যথেষ্ট অভিবাসী গ্রহণ করেছে।

তিনিও গামছা ধারণ করেছেন, তার পাশ দিয়ে নীরবে হেঁটে যাওয়া দুই তরুণীর সাথেও গামছা আছে। তাদের গামছায় ইংরেজি ও অসমীয় ভাষায় লেখা, ‘মি. মোদি, আসাম আপনার ভাগাড় নয়।‘ গামছাগুলোর আকার ভিন্ন, তবে সবগুলোতেই হাতে তৈরী সাদা জমিনের ওপর ফুলের লাল বর্ডার দেয়া। সমাজবিজ্ঞানী বিষ্ণু সৈকিয়া বলেন, শত শত বছর ধরে আসামের জীবনের অংশ হলো গামছা। তবে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে এটি লোকপ্রিয় সংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে, আসামের পরিচিতির প্রতীক হয়ে গেছে। রাজ্যের সুভিন্যির হিসেবে পর্যটকেরা এটি নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, চলতি সহস্ত্রাব্দে জন্মগ্রহণকারীরা একে সাংস্কৃতির প্রতীক বিবেচনা করছে। এটি তাদেরকে শিকড়ের সাথে সংযুক্ত হওয়ার অনুভূতি এনে দেয়। বিক্ষোভকারী উৎপল বরাহ বলেন, আমাদের পূর্বপুরুষেরা শত শত বছর ধরে সংস্কৃতিকে লালন করেছিলেন। বাইরের লোকদেরেএখানে বসতি স্থাপন করতে দিলে এই সংস্কৃতিও হারিয়ে যেতে পারে। আমাদের অস্তিত্ব হুমকির মুখে।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us