শেখ হাসিনার হাতে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ছক
শেখ হাসিনা - ছবি : সংগৃহীত
ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এবারের সম্মেলনে ব্যাপক পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে বর্তমান কেন্দ্রীয় নেতাদের প্রায় অর্ধেক কমিটি থেকে ছিটকে পড়তে পারেন। তাদের জায়গায় বেছে নেয়া হবে দলের অপেক্ষাকৃত স্বচ্ছ ও ত্যাগী নেতাদের। সম্ভাব্য এসব নেতার ব্যাপারে বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজখবর নিচ্ছেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তার আলোকে ইতোমধ্যেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একটি ছকও তৈরি করে রেখেছেন তিনি। সেই তালিকায় শেষবারের মতো ঘষামাজা করছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। আওয়ামী লীগ ও সরকারের একাধিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
সূত্রগুলো জানায়, চলমান শুদ্ধি অভিযানের প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। দুর্নীতির ব্যাপারে দলের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জিরো টলারেন্স নীতির ঘোষণা বাস্তবায়নে দৃঢ় অবস্থান নিয়েছেন। আর শুধু দুর্নীতিই নয়, যেকোনো অপকর্মে জড়িতরা যাতে দলে স্থান না পায়, সেই ব্যাপারেও তিনি অত্যন্ত কঠোর অবস্থানে আছেন। ফলে এবারের সম্মেলনে দলের কার্যনির্বাহী সংসদে (কেন্দ্রীয় কমিটি) ব্যাপক পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে দলের ৮৩ সদস্যের কেন্দ্রীয় কমিটির বেশির ভাগ পদেই পরিবর্তন আসতে পারে। পাশাপাশি অন্তত ৪০টিরও বেশি পদে বর্তমানে যারা আছেন তারা বাদ পড়তে পারেন। এ ব্যাপারে দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সম্প্রতি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমাদের সভাপতি শেখ হাসিনা ছাড়া কেউ-ই দলের জন্য অপরিহার্য না। পরিবর্তন সব পদেই আসতে পারে। দল কিভাবে চলবে, কাকে দিয়ে চলবেÑ সেটাও তিনি জানেন। তিনি যেটা ভালো মনে করবেনÑ সেটাই করবেন। তবে দলে যাদের পারফরম্যান্স ভালো নয়, তাদের পরিবর্তন অবশ্যই হবে। এ ব্যাপারে কারো কোনো কথা থাকবে না।’
প্রসঙ্গত, আগামী ২০ ও ২১ ডিসেম্বর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে দেশের সবচেয়ে প্রাচীন রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ২১তম ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলন। সরকার ও দলের মধ্যে গতিশীলতাকে আরও সুসংহত করার লক্ষ্য নিয়ে অনেকটাই সাদামাটাভাবে আয়োজন করা হচ্ছে এবারের সম্মেলন।
দলের নেতারা জানান, আসন্ন সম্মেলনে একমাত্র আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে সভাপতি পদে অপরিহার্য রেখে বাকি পদগুলোতে কারো বহাল, কারো পদোন্নতি এবং কোনো কোনো পদে নতুন মুখ অন্তর্ভুক্তির সম্ভাবনা রয়েছে। আওয়ামী লীগ টানা তিন মেয়াদে সরকার গঠনের ফলে দলটির নেতাকর্মীরা দুর্নীতি ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ায় দলীয় সভাপতি শেখ হাসিনা তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছেন। ফলে সহযোগী সংগঠনগুলোর মতো দলটির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেও ক্লিন ইমেজের দক্ষ ও নিবেদিতপ্রাণ নেতৃত্ব খুঁজছেন তিনি। আর এতে দীর্ঘ সময় ধরে আলোচনার বাইরে থাকা স্বচ্ছ ভাবমর্যাদার অনেকেরই কপাল খুলতে পারে। এরই মধ্যে বিভিন্ন মাধ্যমে সম্ভাব্য এসব নেতার আমলনামা সংগ্রহ করেছেন দলীয় সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, জাতীয় সম্মেলনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সভাপতিমণ্ডলী থেকে শুরু করে সম্পাদকমণ্ডলীসহ কার্যনির্বাহী সদস্যের প্রতিটি পর্যায়েই বাদ পড়ার তালিকায় রয়েছেন অনেকে। এর মধ্যে মন্ত্রিসভার সদস্য থাকা নেতারাও আছেন। আবার সভাপতিমণ্ডলী থেকে শুরু করে যুগ্ম সম্পাদক ও সম্পাদকমণ্ডলীর কারো কারো পদাবনতি দিয়ে ঠাঁই হতে পারে কার্যনির্বাহী সদস্য পদে। সব মিলিয়ে এবার নজিরবিহীন পরিবর্তন আসতে পারে বলে আভাস দিয়েছে ওই সূত্রগুলো।
বিশ্বস্ত একটি সূত্র জানায়, একই সাথে মন্ত্রিসভা ও দলের কেন্দ্রীয় কমিটিতে থাকা কাউকে কাউকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেকোনো এক জায়গায় রাখার মনোভাব ব্যক্ত করেছেন। সম্প্রতি মন্ত্রিসভায় ও দলের গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকা এক নেতাকে প্রধানমন্ত্রী জিজ্ঞাসাও করেছেন যে তিনি দলে থাকবেন না কি মন্ত্রিসভায়। তখন ওই নেতা মন্ত্রিসভায় থাকতে চান বলেই প্রধানমন্ত্রীকে জানান।
দলে পরিবর্তনের বিষয়ে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ নয়া দিগন্তকে বলেন, ‘প্রতি সম্মেলনেই দলে কিন্তু পরিবর্তন আসে। সম্মেলনের মাধ্যমে নতুনদের অনেককেই দলে স্থান করে দেয়া হয়। তবে এবার একটু আলাদা প্রেক্ষাপটে আমাদের জাতীয় সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তাই কেমন পরিবর্তন আসবে সেটা নেত্রীই ভালো জানেন। দলের জন্য যেটা মঙ্গল সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে নেত্রীর চেয়ে বিচক্ষণ এ মুহূর্তে আর কেউ নেই।’
দলের সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘দল চালান বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। কিভাবে দল চালাতে হয় তিনিই সেটা ভালো জানেন। তিনি কার পরিবর্তে কাকে আনবেন আর কাকে কী দায়িত্ব দেবেন অত্যন্ত বিচক্ষণতার সাথে সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। তিনি যেভাবে পরিচালিত করবেন দায়িত্বপ্রাপ্তরাও সেভাবেই চলবেন।’