ভারতকে কোথায় নিয়ে যাবে নাগরিকত্ব আইনের উত্তাপ

জি. মুনীর | Dec 16, 2019 04:39 pm
ছড়িয়ে পড়ছে নাগরিকত্ব আইনের উত্তাপ

ছড়িয়ে পড়ছে নাগরিকত্ব আইনের উত্তাপ - ছবি : সংগ্রহ

 

ভারতের নাগরিকত্ব বিল নিয়ে আসাম উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। শুধু আসামই বলছি কেন, এ উত্তপ্ত পরিস্থিতি ভারতের অন্যান্য রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়ছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আশ্বস ও অন্যান্য কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর অনুরোধ সত্ত্বেও আসামে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের আগুন না নিভে বরং আরো বেড়ে চলেছে। নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন নিয়ে বিক্ষোভের সামাল দিতে নামানো হয়েছে সেনাবাহিনী, জারি করা হয়েছে কারফিউ। এরপরও গত কারফিউ ভেঙে আমামে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় কয়েকজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। রাজ্যের শহরে শহরে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এসেছে। ভাঙচুর করা হয়েছে রাজ্যের বেশ কয়কটি রেল স্টেশন। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবকের কিছু কার্যালয়। পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লিতেও চলছে সহিংস বিক্ষোভ।

খুব সহসা এই উত্তাল রাজনৈতিতক পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে বলে মনে হয় না। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এই বিক্ষোভ দেশটির অন্যান্য রাজ্যেও ছড়িয়ে পড়বে। এরই মধ্যে কেরালা রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা এই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাস্তবায়ন করবে না। তারা বলছে কেন্দ্রেীয় সরকার প্রণীত এই আইন সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির পরিপন্থী। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, এই আইনে শুধু মুসলমান ছাড়া যেসব হিন্দু, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মাবলম্বীরা ভারতে শরণার্থী হয়েছে, তাদের নাগরিকত্ব দেয়ার কথা বলা হয়েছে। শুধু কেরালাই নয়, অন্যান্য ভারতীয় রাজ্য সরকারর এই নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বাস্তবায়ন না করার কথা ঘোষণা করছে। জানা গেছে, বিরোধী দল শাসিত রাজ্য পাঞ্জাবও এই আইন বাস্তবায়ন না করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছে। তা ছাড়া পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সবার আগেই এই আইন বাস্তবায়ন না করার ঘোষণা দেন। এমনি অবস্থায় এই বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন মোদি সরকারের গলার কাঁটা হয়ে উঠেছে।

কেরালায় রয়েছে প্রচুরসংখ্যক মুসলমানের বাস। এ রাজ্যের মোট জনসংখ্যা সোয়া তিন কোটি। এর মধ্যে মুসিলম ও খ্রিষ্টানেরা মিলে ৪৫ শতাংশ। রাজ্যের বাকি ৫৫ শতাংশ জনগোষ্ঠী হিন্দু। কেরালার মুখ্যমন্ত্রী ও সিপিএম পিনারাই বিজয়ান সাংবাদিকদের কাছে বলেছেন, এই আইনটি ‘অসাংবিধানিক’ প্রকৃতির হওয়ায় তারা এই আইন বাস্তবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ধরনের একটি অসাংবিধানিক আইনের স্থান কেরালায় নেই এবং তা কখনোই এ রাজ্যে বাস্তবায়িত হবে না। এই সিদ্ধান্ত কেন্দ্রকে জানিয়ে দেয়া হবে।

এ ধরনের অসাংবিধানিক আইন, যা জনগণকে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত করবে, তা কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।’ তাকে সাংবাদিকেরা প্রশ্ন করেন, সারাদেশে যে আইন প্রয়োগযোগ্য সে ধরনের কোনো আইন এড়িয়ে যাওয়া কি তার রাজ্যের পক্ষে সম্ভব? এর জবাবে তিনি বলেন, এর বাস্তবায়ন থামিয়ে দেয়ারও উপায় আছে। তিনি আরো বলেন, ‘এই আইনটি হচ্ছে আরএসএস কৌশলেরই একটি অংশ। বিজেপির এই কৌশল হচ্ছে ঠিক সেই কৌশলের মতোই, যা ব্রিটিশেরা অবলম্বন করেছিল ভারতে, আর হিটলার করেছিল জার্মানিতে। সেই কৌশলটি হচ্ছে ধর্মের ভিত্তিতে জনগণের মধ্যে বিভাজন সৃষ্টি করা। কিন্তু ইতিহাস প্রমাণ করেছে, এই ধরনের কৌশল বেশি দিন টেকে না।’ তার মতে- নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল দিয়ে কেন্দ্র চাইছে ভারতকে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত করার সাভারকার ও গোয়ালকারের স্বপন পূরণ করতে। অপরদিকে পাঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরিন্দর সিং বলেছেন, কংগ্রেস এ রাজ্যে এর দুই-তৃতীয়াংশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা রাজ্যসভায় কাজে লাগিয়ে এই অসাংবিধানিক বিল ব্লক করে দেবে।
অমিত শাহকে এখন অভিহিত করা হচ্ছে ভারতের ‘ডিফিক্টো প্রাইম মিনিস্টার’ হিসেবে।

তার নানা কারসাজিতেই ভারতে এ ধরনের নানা পদক্ষেপ নেয়া হচ্ছে। এর সর্বসাম্প্রতিক কয়েকটি উদাহরণ হচ্ছে- কাশ্মিরের মর্যাদাসংশ্লিষ্ট সংবিধানের ৩৭০ নম্বর ধারা বাতিল, বাবরি মসজিদের স্থান রামমন্দির নির্মাণের জন্য আদালতর মাধ্যমে হিন্দুদের দিয়ে দেয়া, আসামে নাগরিক পঞ্জি তৈরি এবং সর্বশেষ আলোচ্য নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন। আর এসব করতে গিয়ে তারা করে চলেছেন নানামাত্রিক ইতিহাস বিকৃতি। আমরা দেখেছি ভারতের ইউনিয়ন হোম মিনিস্টার ও সিনিয়র আরএসএস লিডার অমিত শাহ গত ৯ ডিসেম্বর ২০১৯ নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল লোকসভায় উত্থাপন করতে গিয়ে গোয়েবলসীয় কায়দায় ইতিহাস বিকৃতির আশ্রয় নিয়েছেন। বিলটি শুধু গণতন্ত্রবিরোধী নয়, সেই সাথে ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত সংবিধান ও মানবাধিকার নীতিরও পরিপন্থী। তিনি লোকসভায় বিলটি উপস্থাপনের সময় বলেন: ‘আপনারা জনতে চেয়েছেন, কেন এই বিলটি অপরিহার্য। কংগ্রেস যদি দেশটিকে ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত না করত, তা হলে আজ এই বিল উত্থাপনের প্রয়োজন হতো না। কংগ্রেসই দেশকে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত করেছে, আমরা করিনি।’

যেসব অপরাধী জাতিকে দুই ভাগে বিভক্ত করে অভাবনীয় মাত্রায় রক্তপাত, সন্ত্রাস ও ধ্বংসযজ্ঞের সূচনা করেছিল- তাদের আড়াল করার জন্যই অমিত শাহর এই নির্লজ্জ ইতিহাস বিকৃতি। যখন অমিত সাহা দাবি করেন, ‘কংগ্রেস দেশকে ধর্মের ভিত্তিতে বিভক্ত করেছে, আমরা করিনি’, তখন বলতে হয়, এটি তার অজ্ঞতাপ্রসূত ধারণা। তিনি যখন এ ধরনের কথা বলেন তখন মনে হয় এ জন্য সাক্ষাৎ গোয়েবলস কথা বলছেন। তিনি অসত্য বারবার উচ্চারণ করছেন, যেন তা সত্য বলে প্রতিষ্ঠা পায়। ইতিহাসের দিকে একটু ফিরে তাকালেই ধরা পড়বে তিনি কী ধরনের ইতিহাস বিকৃতির প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছেন। ভিডি সাভারকারের নেতৃত্বাধীন আরএসএস ও হিন্দু মহাসভার দলিলপত্র থেকে এর প্রমাণ মিলবে সহজেই।

হিন্দুত্ব জাতীয়তাবাদী আরএসএস নেতা ভাই পরমানন্দ (তার ছেলেকে আরএসএস/বিজেপি সরকার গভর্নর নিয়োগ করেছিল) বিংশ শতাব্দীর শুরুতে ঘোষণা করেছিলেন, ভারতে হিন্দুইজম ও ইসলামের অনুসারীরা হচ্ছে দুটি আলাদা জাতি। কারণ, মুসলমানেরা এমন একটি ধর্ম অনুসরণ করে, যার উৎপত্তি আরব ভূমিতে। ভাই পরমানন্দ ছিলেন উর্দু সাহিত্যের জনপ্রিয় লেখক। তার লেখায় বিশেষত আলোকপাত করা হতো যে বিষয়টির ওপর তা হচ্ছে, হিন্দুরা হচ্ছে ভারতের সত্যিকারের সন্তান, আর মুসলমানেরা হচ্ছে বহিরাগত। তিনি ১৯০৮-১৯০৯ এর দিকে আহ্বান জানান, হিন্দু ও মুসলমান জনগোষ্ঠীকে দু’টি সুনির্দিষ্ট আলাদা অঞ্চলে স্থানান্তরের। তিনি এ পরিকল্পনার বিস্তারিত উল্লেখ করেন তার জীবনকাহিনী ‘দ্য স্টোরি অব মাই লাইফ’-এ : ‘সিন্দুর বাইরের ভূখণ্ডকে আফগানিস্তানের সাথে উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশকে একীভূত করে গড়তে হবে ‘গ্রেট মুসলমান কিংডম’। সে অঞ্চলের হিন্দুরা সেখান থেকে চলে আসবে হিন্দুস্তানে এবং একই সাথে ভারতের বাকি মুসলমানেরা সেখানে চলে গিয়ে বসাবস করতে হবে।’

অপরদিকে আরএসএস প্রতিষ্ঠাতা ড. হেডগেয়ারের ঘনিষ্ঠ সহযোগী এবং মুসোলিনির বন্ধু ড. বি এস মোনজি ছিলেন আরেক বড় মাপের হিন্দু জাতীয়তাবাদী। তিনি ১৯৪০ সালের মুসলিম লীগের লাহোর প্রস্তাবের বহু আগে থেকেই হিন্দু সেপারিটিজমের অনুসারী। ১৯২৩ সালে অনুষ্ঠিত হিন্দু মহাসভার তৃতীয় অধিবেশনে তিনি ভাষণ দিতে গিয়ে বলেছিলেন: ঠিক যেমনিভাবে ইংল্যান্ডের মালিক ইংরেজরা, ফ্রান্সের মালিক ফ্রেঞ্চরা, এবং জার্মানি হচ্ছে জার্মানদের, ঠিক তেমনিভাবে ইন্ডিয়ার মালিক হিন্দুরা। হিন্দুরা যদি সংগঠিত হয়, তাহলে তারা ইংরেজ ও তাদের ভাঁড় মুসলমানদের নাকে খত দেয়াতে পারবে। ... এর পর হিন্দুরা সৃষ্টি করবে তাদের নিজস্ব জগৎ, যা সমৃদ্ধি অর্জন করবে শুদ্ধির (ভাষাগতভাবে এর অর্থ বিশুদ্ধায়ন, কিন্তু এ পদবাচ্যটি ব্যবহার করা হয়েছে মুসলমান ও খ্রিষ্টানদের হিন্দু ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া বুঝাতে) ও সংগঠনের মধ্য দিয়ে।’

এই বক্তব্য মোনজির অজ্ঞতারই পরিচায়ক। তিনি ইংল্যান্ড, ফ্রান্স ও জার্মানির উদাহরণ টেনে এনেছেন ইন্ডিয়ার মালিক হিন্দুদের হওয়ার দাবিকে যৌক্তিক করে তুলতে। কিন্তু তিনি জানেন না, এই দেশ তিনটির পরিচয় সত্তায় ধর্মীয় কোনো পরিচয় বিবেচ্য নয়, সেখানে বসবাসকারীরা ধর্মনিরপেক্ষ পরিচয় সত্তাই বহন করে। কিন্তু ভারতের হিন্দুত্ববাদীরা ভারতকে একমাত্র হিন্দুদের দেশ হিসেবে দেখার জন্য নানাভাবে লড়াই করছে।

ভারতকে হিন্দু জাতিতে রূপান্তরের এসব ধারণা এবং মুসলমান ও ক্রিশ্চিয়ানকে ভারত থেকে বের করার বিষয়টি বিনায়ক দামোদর সাভারকার আরো সুস্পষ্ট করে তোলেন তার বিতর্কিত বই ‘হিন্দুত্ব’ ১৯২৩ সালে প্রকাশ করে। মজার ব্যাপার হলো, ব্রিটিশ সরকারের কারাগারে থাকার সময়ে তাকে মেরুকরণের এই বইটি লিখতে দেয়া হলো। ‘হিন্দু জাতি’র সংজ্ঞা মতে, খ্রিষ্টান ও মুসলমানেরা এই জাতির বহির্ভূত। কারণ, এরা হিন্দু সংস্কৃতিক ঐতিহ্য মেনে চলে না কিংবা হিন্দু ধর্মও মানে না।

সাভারকার হচ্ছেন হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির সূচনাকারী। পরবর্তী সময়ে তিনি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেন ‘টু ন্যাশন থিওরি’ বা দ্বিজাতি তত্ত্ব। এই সত্য এড়িয়ে চলা যাবে না যে, মুসলিম লীগ লাহোর প্রস্তাব পাস করে ১৯৪০ সালে। আরএসএসের মহাদার্শনিক ও গাইড সাভারকার তারও বহু আগে ছড়িয়ে দিয়েছিলেন এই দ্বিজাতি তত্ত্ব। ১৯৩৭ সালে আহমেদাবাদে অনুষ্ঠিত হিন্দু মহাসভার ১৯তম অধিবেশনে সভাপতির ভাষণে সাভারকার দ্ব্যর্থহীন ভাষায় ঘোষণা করেন : ‘বিষযটি এমন যে, পরস্পরবিরোধী দুটি জাতি ভারতে পাশাপাশি বসবাস করছে। বেশকিছু বালখিল্য রাজনীতিক মারাত্মক ভুলটি করে এমনটি ধরে নিয়ে যে, ভারতে ইতোমধ্যই এই দুই জাতি মিলে মিশে তৈরি করেছে একটি বৈরিতামুক্ত সমাজ, চাইলেই এমন সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব। আমাদের বন্ধুরাও এমনটি মনে করেন, কিন্তু বাস্তবে এদের স্বপ্ন সফল হওয়ার নয়। ...আজকের দিনে ভারতকে একটি ইউনিটারিয়ান হোমোজিনিয়াস ন্যাশন ভাবা যাবে না। বরং বিপরীত ক্রমে মূলত ভারতে দুটি মূল জাতি: হিন্দু ও মুসলমান।’ একথা লেখা আছে ‘কালেকটেড ওয়ার্কস অব সাভারকার’-এর ষষ্ঠ খণ্ডের ২৯৬ পৃষ্ঠায়, যা পুনার হিন্দু মহাসভা প্রকাশ করে ১৯২৩ সালে।

আরএসএস সাভারকারের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই সরাসরি এই ধারণা প্রত্যাখ্যান করে যে, হিন্দু ও মুসলমান এক সাথে মিলে ভারতে গড়ে তুলে একটি একক জাতি। গোলওয়ালকার হচ্ছেন আরএসএসের বড় মাপের একজন আইডিওলগ। তিনি ১৯৩৯ সালে লিখেন তার বই: ‘উই অর আওয়ার ন্যাশনহুড ডিফাইন্ড’ নামেরএকটি বই। এই বইয়ে তিনি ডিক্রি দিয়ে বসেন: ‘হিন্দুস্তান হচ্ছে হিন্দুদের দেশ, হিন্দুরা এখানে বসবাস করবে হিন্দু জাতি হিসেবে।...এর ফলে শুধু সেইসব আন্দোলনই সত্যিকার অর্থে ‘জাতীয়’, যার লক্ষ্য হবে হিন্দু জাতির পুনর্গঠন ও অনুপ্রাণিত করা এবং হিন্দু জাতিকে এর বর্তমান সংজ্ঞাহীন অবস্থা থেকে মুক্ত করা।’ তিনি আরো বলেন, যারা হিন্দু জাতি প্রতিষ্ঠায় বিশ্বাসী নন, তারা হয় জাতি প্রশ্নে বিশ্বাসঘাতক ও শত্রু, অথবা শয়তান’।
অন্যান্য আরএসএস নেতার মতো গোলওয়াকারও ছিলেন হিটলার ও মুসোলিনির ভক্ত। নাৎসিদের ইহুদি গণহত্যাকে প্রশংসা করে তিনি তার প্রাগুক্ত বইটিতে লিখে গেছেন: জার্মানদের জাতিগোষ্ঠীগত গর্ব আজকের দিনের আলোচনার বিষয় হয়ে উঠেছে। জাতিগোষ্ঠীগত ও এর সাংস্কৃতিক বিশুদ্ধতা রক্ষায় জার্মান বিশ্বকে কাঁপিয়ে তুলেছে, সেমেটিক জাতিগোষ্ঠী ইহুদি থেকে দেশটিকে বিশোধিত করে। এর মাধ্যমে দেশটি জাতিগোষ্ঠীগত গর্ব সর্বোচ্চমাত্রায় প্রদর্শন করেছে।’

১৯১৪ সালের ১৫ আগস্ট ভারত স্বাধীন হওয়ার প্রাক্কালে গোলওয়ালকার ছিলেন আরএসএস প্রধান। আরএসএসের ইংরেজি মুখপত্র ‘অরগ্যানাইজার’-এর এক সম্পাদকীয়তে গোলওয়ালকার ‘জাতি’সম্পর্কিত ধারণা তুলে ধরেন এভাবে: ‘ জাতীয়তা প্রশ্নে আমরা যেন ভুল ধারণায় প্রভাবিত না হই। মানসিক সংশয়ের অনেকটাই এবং বর্তমান ও ভবিষ্যৎ সমস্যা তাড়ানো যাবে একটি সরল সত্যকে স্বীকৃতি জানানোর মাধ্যমে। আর এটি হচ্ছে, হিন্দুস্তানে শুধু হিন্দরাই জাতি গঠন করবে এবং জাতীয় কাঠামো অবশ্য্যই নির্মাণ করতে হবে নিরাপদ ও সুষ্ঠু কাঠামোর ভিত্তির ওপর। ... ... জাতি গঠন করতে হবে অবশ্যই হিন্দুদের দিয়ে- হিন্দুদের ঐতিহ্য, সংস্কতি, ধারণা ও প্রত্যাশার ওপর ভিত্তি করে।’

স্বাধীনতাপূর্বকালে ড. বি আর আম্বেদকার ছিলেন ভারতের সাম্প্রদায়িক রাজনীতির এক আগ্রহী গবেষক। যখন হিন্দু মহাসভা ও মুলিম লীগের মধ্যে দ্বিজাতি তত্ত্ব নিয়ে ভেতরে ভেতরে একটা ভালো বোঝাপড়া চলছিল, তখন তিনি লিখেন: এটি অবাক মনে হতে পারে- মি. সাভারকার ও মি. জিন্নাহ একজাতি বনাম দ্বিজাতি প্রশ্নে একে অপরের বিরুদ্ধে দাঁড়ানোর বদলে এরা উভয়েই পুরোপুরি একমত পোষণ করছেন। উভয়ই সম্মত, শুধু সম্মত নয়, বরং জোরালোভাবে প্রচার করছেন- ভারতে রয়েছে দুটি জাতি, একটি মুসলিম জাতি আর অপরটি হিন্দু জাতি।’ আম্বেদকারের লেখা ‘পাকিস্তান অর পার্টিশন অব ইন্ডিয়া’ বই পাঠে আমরা তা জানতে পারি।

এতক্ষণ আলোচনা থেকে স্পষ্ট প্রতীয়মান হয়, বিতর্কিত নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলটি লোকসভায় উত্থাপনের সময় অমিত শাহ যে বললেন, ১৯৪৭ সালে কংগ্রেস ধর্মের ভিত্তিতে দেশ বিভক্ত না করলে আজ এই নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল আনতে হতো না, এটা বড় ধরনের একটি গোয়েবলসীয় ইতিহাস বিকৃতি। আরএসএস আর হিন্দু মহাসভা যে ধর্মের ভিত্তিতে ভারতীয় জনগোষ্ঠীকে বিভক্ত করার প্রয়াস চালিয়েছিল সবার আগে, ইতিহাস এর সরব সাক্ষী। ইতিহাস বিকৃতি যে তাদের মজ্জাগত বিষয়, তার আরেক প্রমাণ বাবরি মসজিদের স্থানে রামমন্দির ছিল বলে তাদের মিথ্যা প্রচারণা। সম্প্রতি ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট রায় দিয়েছে বাবরি মসজিদ যে রাম মন্দিরের ধ্বংসাবশেষের ওপর নির্মিত হয়েছে, তা কোনো প্রমাণ মেলেনি।


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us