বিদেশে কী অবস্থায় পড়েন তারা
বিদেশে কী অবস্থায় পড়েন তারা - ছবি : সংগ্রহ
‘সৃষ্টির যা কিছু সুন্দর চির কল্যাণকর, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। কোনো কালে একা হয়নি কো জয়ী পুরুষের তরবারি, শান্তি দিয়েছে- প্রেরণা দিয়েছে বিজয়লক্ষ্মী নারী।’ সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মানুষ কাজের প্রেরণায় এগিয়ে যায়। এগিয়ে যাওয়ার জন্য জন্ম থেকেই মানুষের পাঁচটি মৌলিক চাহিদা থাকে সেগুলো হলো- অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা ও জৈবিক চাহিদা। তাও আবার এসব চাহিদার অপরিহার্যতা ক্রমান্বয়ে তৈরি হয়, যা বাদ দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। প্রয়োজনের তাগিদে মানুষ বেরিয়ে পড়ে কাজের সন্ধানে, তা হয় দেশে বা বিদেশে। মোট কথা, চাহিদা মেটানোই প্রথম কথা।
বাংলাদেশের নারীরা এখন গৃহকর্মী থেকে শুরু করে ব্যবসা-বাণিজ্য, চাকরি, আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও প্রতিরক্ষা বাহিনীতে কার্যকর ভূমিকাসহ বিদেশে সফলভাবে ভূমিকা রাখছেন। জাতিসঙ্ঘের শান্তিরক্ষী হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় কাজ করছেন। চ্যালেঞ্জিং কাজে সফলতার স্বাক্ষর রাখছেন। পুরুষের পাশাপাশি সেনা, পুলিশ, বিমানবাহিনীসহ বিভিন্ন দায়িত্বশীল পদেও নারীর অবস্থান আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো। এত অগ্রগতি সত্ত্বেও দেশে-বিদেশে কেন আমাদের নারীরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন তা ভেবে দেখার সময় এসেছে।
প্রয়োজন মেটাতে গিয়ে অনেকে দেশে বা বিদেশে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে নারীরা নির্যাতনের সহজ শিকারে পরিণত হন। তার জন্য দায়ী কে? নারী যখন সহিংসতার শিকার হন বা নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে, এর সদুত্তর কি রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীল ব্যক্তি থেকে শুরু করে সমাজের সচেতন ব্যক্তি পর্যন্ত কেউ দিতে পারবেন?
যেখানে দেশ-বিদেশে সবখানে আমাদের দেশের নারীরা ঈর্ষণীয় অগ্রগতির স্বাক্ষর রাখছেন; সেই নারীদের অনেকেই যখন বিদেশ থেকে নির্যাতিত হয়ে দেশে ফিরে আসেন, এ জন্য সবার মনে মর্মবেদনা বড় করুণ হয়ে বাজে। দেশের দায়িত্বশীল নিজের বিবেককে একবারও কি প্রশ্ন করেছেন; এই নির্যাতনের দায়ভার কার?
সম্প্রতি বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সৌদি আরবে আমাদের দেশের অনেক নারীকর্মীর ওপর মর্মান্তিক নির্যাতন চালানো হয়েছে। ইদানীং সৌদি আরব থেকে প্রচুর বাংলাদেশী শ্রমিক নির্যাতনের শিকার হয়ে দেশে ফিরে আসছেন। প্রায় প্রতিদিনই বিমানবন্দরে অনেক নারী শ্রমিক দেশে ফিরছেন। এটি উদ্বেগজনক।
চলতি বছর, অর্থাৎ ২০১৯ সালের নভেম্বর পর্যন্ত প্রায় ২০ হাজার শ্রমিক সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে এসেছেন; যার অনেকই নারী। আমাদের দেশের নারীরা সৌদি আরবে বেশির ভাগ গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করেন। সেখানে তাদের অনেকে শারীরিক-মানসিক নির্যাতন থেকে খাওয়া-দাওয়ার কষ্ট সইতে না পেরে দেশে ফিরেছেন।
ব্র্যাক মাইগ্রেশনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর ১১ মাসে প্রায় এক হাজার ২০০ নারী শ্রমিক সৌদি আরব থেকে দেশে ফিরে এসেছেন। এর মধ্যে প্রায় ৫০ জন নারীর লাশ এসেছে সৌদি আরব থেকে। ফিরে আসা নারীদের বেশির ভাগই অসহনীয় নির্যাতনের কথা বলেছেন। তাদের কেউ কেউ বিভিন্ন সময় দু-তিনটি বাসা পরিবর্তন করেও একই অবস্থার শিকার হন। আবার কেউ কেউ নির্যাতন সইতে না পেরে পালিয়ে দূতাবাসে আশ্রয় নিয়ে খালি হাতে দেশে ফিরেছেন। সরকার বিদেশে নারী শ্রমিক পাঠানোর ব্যাপারে কঠোর সতর্কতা অবলম্বনসহ দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও সোচ্চার থাকবে, এসব অপকর্ম ও অনিয়মের প্রতি, এটিই দেশপ্রেমিক নাগরিকদের প্রত্যাশা।
লেখক : মানবাধিকার কর্মী