চীনের মিশন ইন্ডিয়া

শৈবাল দাসগুপ্ত | Dec 16, 2019 09:11 am
শি ও মোদি

শি ও মোদি - ছবি : সংগৃহীত

 

বিশ্লেষকেরা বিশ্বাস করছেন যে চীনা বিনিয়োগকারীরা বুদ্ধিমত্তার সাথে তাদের বিনিয়োগগুলোকে ভারত সরকারের ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির সাথে সামঞ্জস্য করে তুলছে। দেশীয় শিল্পেও তারা এ কাজটি করেছে, সবাই সরকারি নীতি অনুসরণ করেছে, এটি বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘ মেয়াদি লক্ষ্য পূরণে যথার্থ।

চীনের কয়েক শ’ বছরের প্রাচীন কনফুশিয়ান সংস্কৃতি হলো কর্তৃপক্ষের শাসন অনুসরণ করা। কর্তৃপক্ষকে মা-বাবা ও অভিভাবক বিবেচনা করা হয়। যেকোনো আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীর মতো চীনা বিনিয়োগকারীরাও বিনিয়োগের গন্তব্য হিসেবে কেবল কর সুবিধার বিষয়টিই বিবেচনা করে না, সেইসাথে অর্থপ্রবাহের উৎস নিয়েও ভাবে। এ কারণেই চীনা অনেক প্রতিষ্ঠানের এফডিআই ভারতে গন্তব্য খুঁজে নিয়েছে। আর এর জের ধরেই ভারত সরকারের হিসাব অনুযায়ী, চীনা এফডিআই দ্বিগুণ হয়েছে।

গাড়ি খাতে চীনা কোম্পানিগুলো টাটা, মহিন্দ্রা অ্যান্ড মহিন্দ্রা, অশোক লেল্যান্ড, জাপানের তিৎসুবিশি, হোন্ডা ও টয়োটা এবং দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাইয়ের পাশে নিজেদের অবস্থান গড়ে নেয়ার চেষ্টা করছে। ভারতে অনেক আন্তর্জাতিক কোম্পানি থাকলেও এবং গাড়ি শিল্পে দুর্দিন বিরাজ করলেও বাস্তবতা হলো এই যে ভারতে এখনো বৈদ্যুতিক যান, বাস, ট্রাক, যাত্রীবাহী গাড়ির বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে। অবশ্য এই বাজার ধরতে চীনা কোম্পানিগুলো বেশ সমস্যায় রয়েছে।

চীনা এসএআইসি মোটর করপোরেশন ও বিওয়াইডি অটো কো লি বাজারে প্রবেশ করেছে এবং সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে। ওয়ানফেঙ অটোহুইল নামের আরেকটি কোম্পানি ২০১৩ সালে হরিয়ানার বাওয়ালে একটি কারখানায় প্রায় ৫০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে। ওয়ানফেঙ টু-হুইলারের বাজারে বেশ বড় হিস্যা আছে। তারা ভোক্তাদের হিরো, হোন্ডা, বাজাজ ও টিভিএস সরবরাহ করছে। প্রতিষ্ঠানটি বছরে অ্যালুমিনিয়াম হুইলের ৩০ লাখ ইউনিট উৎপাদন করে। বিওয়াডির মতো চীনা কোম্পানিগুলোর জন্য একটি সুখবর এই যে ভারত সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে বায়ু দূসণ প্রতিরোধের জন্য বৈদ্যুতিক যানবাহন উৎপাদন ও বিপণনের জোর দেয়া। এই খাতে চীন একটি বড় খেলোয়াড়, তারা ডিজেল ও পেট্রোলিয়ামভিত্তিক অনেক পুরনো কোম্পানিকে হটিয়ে বাজার দখল করতে পারবে বলে আশাবাদী।

আরেকটি কারণে চীনারা খুশি হতে পারে। তা হলো, সরকারের চীনা তৈরী ব্যাটারি রফতানির সুযোগ বাড়িয়ে দেয়া ও ভারতে ব্যাটারি তৈরীর জন্য উৎপাদকদের উৎসাহিত করা। অন্যরা এর বিরোধিতা করলেও চীনারা এতে উৎফুল্ল। কারণ তারা ব্যাটারির বৃহত্তম উৎপাদক। ইনভেস্ট ইন্ডিয়ার সিনিয়র সহকারী ভাইস প্রেসিডেন্ট দিব্য প্রণব বলেন, ভারতের বাজারে সৌর খাতে চীনা কোম্পানিগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে ৯০ ভাগ। ট্রিনা সোলার, জেএ সোলার অ্যান্ড জিনকো, ইয়িংলি, হ্যারেয়ন হলো বড় বড় খেলোয়াড়। সিইটিসি ও লঙ্গি গত বছর প্রথম চীন সৌর মডিউল প্রস্তুতকারী ব্যবস্থা নিয়ে এসেছে অন্ধ্র প্রদেশের শ্রী সিটিতে।

চীনা কোম্পানিগুলোকে পথ দেখাচ্ছে হেয়ার। এটি দক্ষিণ কোরিয়ান প্রতিষ্ঠান এলজি ও স্যামসংয়ের জায়গা দখল করছে। চীন বিশ্বজুড়ে অবকাঠামো প্রকল্প তৈরী করছে। আর এই লক্ষ্যে বিভিন্ন সরঞ্জাম উৎপাদনে নজর দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে তারা ভারতের পুনেতে এক্সকেভেটর, ক্রেন, কনক্রিট পাম্পিং মেশিন তৈরীর দিকে নজর দিচ্ছে। কোম্পানিটি মোট দুই বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করার পরিকল্পনা করছে।

পাশ্চাত্যের চেয়ে কম খরচ হওয়ায় ভারতীয় রেলওয়ে চীনা সরঞ্জাম কেনার কথা বিবেচনা করছে। তবে দুই বছর আগে এ নিয়ে রাজনৈতি হট্টগোল হওয়ায় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ এখন ধীরে চলো নীতি অবলম্বন করছে। তবে কলকাতা, নয়দা ও নাগপুরে মেট্রো কোচ ও অনুষাঙ্গিক উপাদান সরবরাহ করার জন্য সিআরআরসি সাতটি অর্ডার পেয়েছে। হরিয়ানার বাওয়ালে ৬৩.৪ মিলিয়ন ডলারের বৈদ্যুতিক মোটর সংযোজন করার জন্য তারা পাইয়নিয়ারের (ভারত) সাথে একটি যৌথ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

চীনা ডেভেলপার দালিয়ান ওয়ান্ডা গ্রুপ ও চায়না ফরচুন ল্যান্ড ডেভেলপমেন্ট হরিয়ানায় কয়েক বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে এসেছিল। ২০১৪ সালে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙের মধ্যকার বৈঠকে এই উদ্যোগের ব্যাপারে আস্থার সৃষ্টি হয়।

দি প্রিন্ট

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us