পাকিস্তানি-১৬ ভূপাতিত : চাঞ্চল্যকর তথ্য মার্কিন বিশেষজ্ঞের
পাকিস্তানি-১৬ ভূপাতিত - ছবি : সংগৃহীত
ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল (অব.) বি এস ধানোয়ার দাবির কয়েক মিনিটের মধ্যেই পাকিস্তান দাবি করে যে ২৬ এপ্রিল বালাকোটে জৈশ-ই-মোহাম্মদের সন্ত্রাসী ক্যাম্পে ভারতীয় বোমারু বিমানগুলো তাড়াহুড়া করে বোমা ফেলেছে, টার্গেটও মিস করেছে। আর দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ও সামরিকবিষয়ক বিশেষজ্ঞ ক্রিস্টাইন ফেয়ার বলেছেন, ওই অভিযান ও এর পরের ঘটনাবলী সম্পর্কে ভারতীয় বক্তব্য ‘সন্দেহজনক’ দাবির ওপর ভিত্তি করে দেয়া।
জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা সীমক্ষার অধ্যাপক ফেয়ার শনিবার চন্ডিগড়ে মিলিটারি লিটারেচার ফেস্টিভালে উত্তপ্ত বিতর্ক উস্কে দিয়েছেন এই বলে যে তিনি বিশ্বাস করে না যে বালাকোটে ভারতীয় বিমান হামলার পর ভারতীয় ও পাকিস্তানি বিমানগুলোর মধ্যে আকাশযুদ্ধের সময় ভারত একটি এফ-১৬ জঙ্গি বিমান গুলি করে ভূপাতিত করেছে। উল্লেখ্য, ফেয়ার অনেক বছর ধরে পাকিস্তানের ওপর গবেষণা করছেন।
ফেয়ার বিস্মিত শ্রোতাদের সামনে বলেন, আমি ১০০ ভাগ নিশ্চয়তা দিয়ে বলছি যে কোনো এফ-১৬ বিমান ভূপাতিত হয়ীন। আমি আপনাদের মতো বিশ্বাস করি না। আমি বিশ্বাস করি যে পাকিস্তানের সমালোচনা করার ব্যাপারে আমার বিশ্বস্ততা নিজের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তবে ফেয়ার যোগ করেন যে তিনি ও পেন্টাগনের আরো অনেকে সত্যিই আশা করেছিলেন যে ভারতীয় বিমান বাহিনী সত্যিই এফ-১৬ ভূপাতিত করেছিল। কারণ পুলওয়ামা হামলার বদলায় পাকিস্তানে বোমা হামলা চালানোর অধিকার ছিল ভারতের।
অবশ্য তিনি ওই ঘটনা সম্পর্কে ভারতীয় বিমান বাহিনীর ভাষ্য নিয়ে প্রশ্ন তুলে বলেন, এটি বস্তুনিষ্ঠ তথ্যভিত্তিক নয়। এটি আসলে ‘নির্বাচনে জয়ী হতে রাজনীতিবিদদের নির্দেশিত বক্তব্য।... ভারতের বাইরের দুনিয়া এখানে এখন যেভাবে বলা হয়, বিষয়টি সেভাবে দেখে না। যদিও, আমার মনে আকাঙ্ক্ষা, তাদের কথাই সত্য হোক।‘ ‘ফাইটিং টু দি এন্ড : দি পাকিস্তান আর্মিস ওয়ে অব ওয়ার’ নামের বইটির লেখক ফেয়ার পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর নির্মম সমালোচক। তিনি এই বাহিনীকে বিশ্ব রাজনীতির অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী বাহিনী হিসেবে অভিহত করেন।
ভারতের বিশ্বাসযোগ্যতার অনেক ক্ষতি হয়েছে
শ্রোতাদের (তাদের বেশির ভাগই ছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ও কর্মরত প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা) কাছ থেকে কিছু বাধার মধ্যেই ফেয়ার অভিযোগ করে চলেন যে সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়া পাকিস্তানি ভূখণ্ডে এফ-১৬ বিমান ভূপাতিত হওয়ার ভিডিও এবং পাঞ্জাবি ভাষাভাষী গ্রামবাসীদের সেখানে পাইলটের অবতরণের বক্তব্য ছিল ‘ভুয়া।‘ তিনি বলেন, সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া কিছু কিছু ছবি (এগুলো কিসের তা বোঝা যায় না) নিয়ে দেয়া বক্তব্যের ফলে ভারত তার বিশ্বাসযোগ্যতার অনেক ক্ষতি করেছে।
পাকিস্তানের একটি এফ-১৬ গুলি করে ভূপাতিত করার জন্য ভারত উইয়িং কমান্ডার অভিনন্দন বর্তমানকে বীর চক্র খেতাব দেয়া হয়েছে। ভারতীয় বিমান বাহিনী বলছে যে বর্তমান যে মিগ-২১ বাইসন চালাচ্ছিল, তার থেকে এফ-১৬ ছিল অনেক ভালো বিমান। ফেয়ার এই বক্তব্য নাকচ করে দিয়ে বলেন, ভারতের বাইরের বিমান বিশেষজ্ঞরা একমত যে পাকিস্তান যে এফ-১৬ উড়িয়েছিল তার তুলনায় এই বিশেষ মিগ বাইসনটিই ছিল বেশি দক্ষতাসম্পন্ন। এই ভাষ্যটির প্রতি ভারতের অনড় মনোভাবের সমালোচনা করে ফেয়ার বলেন, এটি ভারতের স্বার্থ হাসিল করবে না। কারণ একটি ছোট বাইসনের শক্তিশালী ফ্যালকনকে ভূপাতিত করাটা রাজনৈতিক ফায়দার জন্য ভালো। তবে এতে আরো প্রমাণিত হয় যে আপনাদের আরো আধুনিক অস্ত্রের প্রয়োজন নেই।
ফেয়ারের এই বক্তব্য তার ১ মার্চের মন্তব্যের বিপরীত। ওই সময় তিনি বলেছিলেন যে ভারত একটি পাকিস্তানি বিমান ভূপাতিত করেছে। তিনি আরো বলেছিলেন যে ওই পাইলটের ভাগ্য পরিষ্কার নয়। ভারতীয় সূত্রগুলো দাবি করছে যে পাকিস্তানি জনসাধারণ ভুলক্রমে ওই পাইলটকে পিটিয়ে মেরে ফেলেছে। আর পাকিস্তানি সূত্রগুলো তা অস্বীকার করেছে। তবে শনিবার ধানোয়া ও বিমান বাহিনীর আরো দুই পদস্থ কর্মকর্তার উপস্থিতিতে ফেয়ার বালাকোটে সন্ত্রাসী ক্যাম্পে হামলায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বলে ভারতের দাবি নিয়েও প্র্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক দৃষ্টিকোণ থেকে এটি গ্রহণযোগ্য নয়। অনেক বিশেষজ্ঞ (তারা ভারতের বন্ধু) তা প্রত্যাখ্যান করছে।
তিনি বলেন, উপগ্রহ চিত্র বিশ্লেষণ করে অনেক নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ বলছেন, ভারত যত ক্ষতির কথা বলছে, তারা তা দেখতে পাননি। ভারতীয় বিমান বাহিনী বলে আসছে যে তারা গাইডেড স্পাইস বোমা ব্যবহার করেছিল। এ কারণে ওই ভবনে ছোট গর্ত হয়ে বোমা প্রবেশ করে ভেতরে ক্ষতি সাধন করলেও ভবনটি বিধ্বস্ত হয়নি। তিনি বলেন, স্পাইস অস্ত্র পেন্টাগনের মতো কঠিন কাঠামোর ওপর ফেলার জন্য তৈরী করা হয়েছে। কিন্তু বালাকোটের সন্ত্রাসী ক্যাম্পটি তৈরী করোগেট টিনের। এ ধরনের স্থাপনায় স্পাইস বোমা ফেলা হলে ভবনটি নিশ্চিতভাবেই গুঁড়িয়ে যাবে।
ভারতীয় বিমান বাহিনী তাড়াহুড়া করে বোমা ফেলেনি
এর আগে বালাকোট হামলার স্থপতি সাবেক বিমান বাহিনী প্রধান ধানোয়া ওই প্যানেল আলোচনায় বলেন, ভারতীয় বিমান বাহিনী তাড়াহুড়া করে বোমা ফেলার কারণে টার্গেট মিস করেছিল বলে যে কথা বলা হচ্ছে, তার কোনোই যুক্তি নেই। তিনি বলেন, নিকটতম ইন্টারসেপ্টর (বিমান) ছিল ১৫০ কিলোমিটার দূরে। পাকিস্তান বিমানবাহিনীর বালাকোট রক্ষার কোনো টার্মিনাল ছিল না। এতে বোঝা যাচ্ছে, পাকিস্তান বিমান বাহিনীকে বালাকোট সম্পর্কে জানানো হয়নি। আর পাকিস্তান বিমান বাহিনী বুঝতে পারেনি যে ভারত তাদের ভূমিতে এত গভীরে হামলা চালাতে পারবে। তিনি বলেন, পাকিস্তানি ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালানোর ব্যাপারে সরকার সাহসী হয়েছিল এ কারণে যে তিন বাহিনীই সরকারকে আশ্বস্ত করেছিল যে যুদ্ধের জন্য তারা প্রস্তুত। পাকিস্তান এ ধরনের প্রচলিত জবাবের সাথে তাল মেলাতে সক্ষম নয়।
কিন্তু ফেয়ার বলেন, বালাকোট থেকে যে শিক্ষাটি উদ্বেগ সৃষ্টি করে তা হলো এই যে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার সময় আবেগ দিয়ে নয়, বস্তুনিষ্ঠ তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নেয়া উচিত। তিনি ভারতীয় বিমান বাহিনীর কথিত ভুল ব্যাখ্যাকে কলিন পাওয়েলের সাথে তুলনা করেন। ২০০৩ সালে ইরাকের পরমাণু কর্মসূচির প্রমাণ হিসেবে পাওয়েল অ্যালুমিনিয়াম টিউবের ছবি দেখিয়ে ইরাকের বিরুদ্ধে যুদ্ধপ্রস্তুতি শুরু করেছিলেন। পাওয়েল বলেন, ওই সময় পাওয়েল জানতেন যে ফটোতে যা দেখা যাচ্ছে, তা সত্য নয়।
দি ওয়্যার