ভারত-জাপান সম্পর্কে নতুন মাত্রা

কিয়ান ফেঙ | Dec 13, 2019 08:19 am
ভারত-জাপান সম্পর্কে নতুন মাত্রা

ভারত-জাপান সম্পর্কে নতুন মাত্রা - ছবি : সংগৃহীত

 

নয়া দিল্লিতে ৩০ নভেম্বর অনুষ্ঠিত প্রথম ভারত-জাপান ২+২ পররাষ্ট্র ও প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকটি দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক এগিয়ে নিতে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে এবং এশিয়ার দুই শক্তির মধ্যে মধুচন্দ্রিমা পর্ব শুরু হচ্ছে বলে ইঙ্গিত দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রের পর দ্বিতীয় কোনো দেশ হিসেবে জাপানের সাথেই ভারত প্রথমবারের মতো ২+২ সংলাপে বসল।

বৈঠকটি তিনটি শ্রেণিকে কেন্দ্র করে আবর্তিত হয়।
প্রথমত, কোনো দেশের একান্ত স্বার্থের সাথে তেমন সংশ্লিষ্ট না হলেও একে অপরের সাথে অত্যন্ত প্রাসঙ্গিত তখন একে অপরকে তারা পুরোপুরি সমর্থন করবে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, উত্তর কোরিয়ার পূর্ণ পরমাণুমুক্তকরণের আহ্বান জানায় উভয় দেশ। তার দেশটির ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্রত নিক্ষেপের নিন্দা করেছে। উভয় দেশ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য পাকিস্তানের প্রতি আহ্বান জানায়।

দ্বিতীয়ত, জাপান ও ভারত তাদের দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। বৈঠকের পর প্রকাশিত বিবৃতিতে বলা হয়, প্রতিরক্ষা বাহিনীর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় মহড়া আয়োজনের অব্যাহত প্রয়াস চালানোর ব্যাপারে মন্ত্রীরা একমত হয়েছেন। উভয় পক্ষ ‘অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড ক্রস-সার্ভিসিং এগ্রিমেন্টের (এসিএসএ)’ নিয়ে চলমান আলোচনায় সন্তোষ প্রকশ করে। চলতি মাসের শেষ দিকে জাপানি প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মধ্যে বার্ষিক ভারত-জাপান শীর্ষ বৈঠকে এ নিয়ে চুক্তি হবে বলে আশা প্রকাশ করা হচ্ছে। এই চুক্তির ফলে জ্বালানি, গোলাবারুদ ইত্যাদি ব্যাপারে ভারতীয় সামরিক বাহিনী ও জাপানের আত্মরক্ষা বাহিনীর মধ্যে লজিস্টিক সাপোর্ট সম্ভব করে তুলবে। তারা জাপানে প্রথম ভারত-জাপান যৌথ জঙ্গিবিমান মহড়ার ব্যাপারেও একমত হন।

তৃতীয়টি হলো, দক্ষিণ চীন সাগর ও ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলের ব্যাপারে ভারত ও জাপান মতবিনিময় করেছ এবং তারা একে অপরের অবস্থানকে সমর্থন করেছে। তাদের যৌথ বিবৃতিতে বলা হয় যে একটি নিরাপদ, সুরক্ষিত, স্থিতিশীল, সমৃদ্ধ ও টেকসই সমুদ্র উদ্যোগ প্রতিষ্ঠায় ইন্দো-প্যাসিফিক ওশ্যান্স ইনিশিয়েটিভের ভারতীয় ঘোষণাকে স্বাগত জানাচ্ছে জাপান। একইসাথে ২০১৯ সালের নভেম্বরে জাপানের ভিয়েনটাইন ভিশন ২.০-কে স্বাগত জানিয়েছে ভারত। এটি আসলে জাপান ও আসিয়ানের মধ্যে প্রতিরক্ষা সহযোগিহতার নতুন উদ্যোগ। একইসাথে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতাকে এবং সেপ্টেম্বরে নিউ ইয়র্কে জাপান-ভারত-অস্ট্রেলিয়া-যুক্তরাষ্ট্র পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের আলোচনাকেও স্বাগত জানান। এসব মিত্রের মধ্যে গোয়েন্দা ও তথ্য বিনিময়কেও স্বাগত জানান তারা। অধিকন্তু ওই চার মন্ত্রী দক্ষিণ চীন সাগর দিয়ে নৌচলাচল ও বিমান উড্ডয়ন সুরক্ষিত রাখার প্রয়োজনীয়তার ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।

ধারণা করা হচ্ছে যে এই ২+২ সভায় কেবল তাদের মধ্যকার প্রতিরক্ষা সহযোগিতাই জোরদার হবে না, সেইসাথে ভারতে অনুষ্ঠেয় আসন্ন ভারত-জাপান শীর্ষ বৈঠকে দৃঢ় ভিত্তিও প্রতিষ্ঠা করবে। ২০০৭ সালে প্রতিষ্ঠিত ভারত-জাপান বার্ষিক শীর্ষ বৈঠকের ১৪তম সংস্করণটি এবার হবে। এতে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীদের মধ্যে বৈঠক হয়। এশিয়ার দ্বিতীয় ও তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি হিসেবে তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতর সম্পর্কের অনিবার্য পরিণতি রয়েছে। এই সম্পর্ক একদিকে তাদের কৌশলগত প্রয়োজন পূরণ করবে, অন্যদিকে তাদের সহযোগিতায় উৎসাহিত হবে যুক্তরাষ্ট্র। আর তিন দেশই চীনের বিরুদ্ধে সতর্ক হবে।

স্নায়ুযুদ্ধের সময় জাপান ও ভারতের মধ্যে না ছিল সহযোগিতা, না ছিল সঙ্ঘাত। অবশ্য দুই দেশের মধ্যে যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হয় ২১ শতকে। রাজনীতি, অর্থনীতি, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে সম্পৃক্ততার সৃষ্টি হয়। ২০০৬ সালে জাপান-ইন্ডিয়া স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড গ্লোবাল পার্টনারশিপ প্রতিষ্ঠা করা হয়, ২০১৪ সালে তা হালনাগাদ করে করা হয় জাপান-ইন্ডিয়া স্পেশাল স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড গ্লোবাল পার্টনারশিপ। মোদি বলেছেন, ভারত-জাপান সম্পর্ক ভারতের অ্যাক্ট ইস্ট পলিসির জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। তিনি বলেন, দুই দেশের মধ্যকার সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ হওয়ার সুযোগ রয়েছে।
চীন-ভারত বা চীন-জাপান সম্পর্কে বিপরীতে ভারত ও জাপানের মধ্যকার সম্পর্কে কোনো ঐতিহাসিতক দ্বন্দ্ব বা বড় ধরনের কোনো স্বার্থের সঙ্ঘাত নেই। এর ফলে ভারত-জাপান দীর্ঘ মেয়াদি সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার অবকাশ রয়েছে। ভারত ও জাপানের মধ্যে পরস্পর নির্ভরশীলতা ও পারস্পরিক স্বার্থই তাদের সম্পর্কে গতিশীলতা সৃষ্টি করছে। রাজনৈতিকভাবে উভয় দেশই শীর্ষ বিশ্বশক্তিতে পরিণত হতে চায়। অর্থনীতিতে জাপান একটি বড় শক্তি, আর ভারত হলো উদীয়মান অর্থনীতি ও সবচেয়ে জনবহুল একটি দেশ। ভবিষ্যতে ভারতের অর্থনীতি জাপানের সাথে সহযোগির আরো ক্ষেত্র প্রস্তুত করবে।

চীন-ভারত ও চীন-জাপান সম্পর্কে লক্ষণীয় উন্নতি হলেও জাপান ও ভারতের সামনে এশিয়ার শক্তি কাঠামোর ভারসাম্য সবচেয়ে বড় উদ্বেগ হিসেবে বিরাজ করছে। বিশেষ করে চীনের দ্রুত উত্থান ও যুক্তরাষ্ট্রের আমেরিকা ফার্স্ট নীতির ওপর জোরদারের প্রেক্ষাপটে এটি বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে। এটিই জাপান ও ভারতকে আরো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক প্রতিষ্ঠায় উৎসাহিত করছে। আর রিজিওন্যাল কম্প্রেহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপ (আরসিইপি) থেকে ভারতের প্রত্যাহারে জাপানের প্রতিক্রিয়া থেকে তা উপলব্ধি করা যায়।

গত ২৯ নভেম্বর জাপানের উপ অর্থমন্ত্রী হিদেকি মাকিহারা জানিয়েছেন, ভারতকে ছাড়া জাপান কোনো বাণিজ্য চুক্তিতে সই করবে না। এতে ভারতের পাশে থাকার জাপানের দৃঢ়সংকল্পই প্রকাশ পেয়েছে। জাপানের এই সিদ্ধান্তের পেছনে বিদ্যমান কারণ হলো, সে ভারতের মতো বড় বাজার হারানো এবং পার্টনারশিপে চীনা প্রভাব বাড়ার শঙ্কা অনুভব করছে। ফলে চলতি মাসের শেষ দিকে ভারত-জাপান বার্ষিক শীর্ষ বৈঠকের সময় আরসিইপিতে আবার যোগদানের জন্য মোদিকে রাজি করাতে চেষ্টা করতে পারেন অ্যাবে।

গ্লোবাল টাইমস


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us