শাসকদের ব্যাপারে কোরআন-হাদিসের নির্দেশনা
মসজিদ - ছবি : সংগ্রহ
শাসকরা একটি দেশ বা একটি জাতির জিম্মাদার বা দায়িত্ববান। এ দায়িত্ব অনেক বেশি। অনেক কষ্টের তবে অনেক সম্মানেরও। একটি সরকারকেই কেন্দ্র করে পুরো দেশ বা জাতি চলে। সরকার ছাড়া জাতি হয় পরগাছার মতো। তাদেরকে পরাধীনতার শিকলে আবদ্ধ হতে হয়। তাদের চাওয়া-পাওয়া সবই পরাধীন হয়। এর দায়িত্ব যেমন বড় বা তার সম্মান যেমন অনেক ঊর্ধ্বে, তেমনি দুনিয়া ও আখেরাতে তার প্রতিদানও প্রচুর। আবার তার জবাবদিহিতাও অনেক। অবহেলায় তার সাজাও হবে অনেক বেশি। যেমন- হুজুর সা: বলেন- ‘হজরত ওমর ইবুল খাত্তাব রা: বলেন , রাসূল সা: বলেন, ‘কিয়ামতের দিন সহনশীল ন্যায়পরায়ণ শাসকই হবেন আল্লাহর কাছে সমস্ত বান্দার চেয়ে উত্তম মর্যাদার অধিকারী। আর কিয়ামতের দিন নিষ্ঠুর অত্যাচারী শাসকরাই হবেন আল্লাহর কাছে সমস্ত মানুষের চেয়ে নিকৃষ্ট’ (মেশকাত)।
রাসূল সা: আরো বলেন, ‘শাসকদের মধ্যে সবার চেয়ে মন্দ শাসক সে- যে জালেম ও নির্যাতনকারী’ (মুসলিম)।
তাহলে দেখা যাচ্ছে, শাসন করে হয়তো আল্লাহর সবচেয়ে প্রিয় বান্দা হবে, না হয় সবচেয়ে মন্দ বা নিকৃষ্ট বান্দা হবে। তা নির্ভর করে শাসকের কর্মকাণ্ড এবং আচার-আচরণের ওপর। যদি তার প্রজাদের শান্তিতে রাখে বা রাখার চেষ্টা করে জুলুম বা অত্যাচার না করে, তবে সে হবে প্রিয় বান্দা। প্রিয় নেতা, প্রিয় রাজা এবং তার জন্য দুনিয়াতে রয়েছে যেমন সম্মান-মর্যাদা, ঠিক তেমনি আখিরাতে রয়েছে অনন্ত অসীম সুখের স্থান জান্নাত। আর তার বিপরীত করলে সে হবে সবচেয়ে নিকৃষ্ট এবং তার জন্য আল্লাহ তায়ালা তৈরি করে রেখেছেন জাহান্নাম। যেমনটি হুজুর সা: বলেন- ‘যদি কোনো ব্যক্তিকে আল্লাহ প্রজাপালনের দায়িত্ব অর্পণ করেন, কিন্তু সে তাদের কল্যাণকর নিরাপত্তা বিধান করল না, সে বেহেশতের গন্ধও পাবে না’ (বোখারি, মুসলিম)।
হুজুর সা: আরো বলেন, ‘যদি কোনো ব্যক্তি মুসলিম জনগণের শাসক নিযুক্ত হয় অতঃপর সে প্রতারক বা আত্মসাৎকারীরূপে মৃত্যুবরণ করে, আল্লাহ তার জন্য জান্নাত হারাম করে দেবেন’ ( বোখারি, মুসলিম)। এখানে একটু ভাবা দরকার, প্রথমত আমি কী বিশ্বাস করি দুনিয়া ও আখেরাত বা কুরআন ও হাদিস বা জান্নাত ও জাহান্নাম। যদি বিশ্বাস না করি, তা হলে আপনাকে আর কিছুই বলার নেই। আপনি যা ইচ্ছা তাই করুন। ভালো করলে দুনিয়াতে প্রতিদান পাবেন আর খারাপ করলে দুনিয়াতেও পাবেন, আখেরাতে তো পাবেনই। আর আপনি যদি বিশ্বাস করেন, যদি বিশ্বাসী হন, তা হলে আপনাকে স্মরণ করিয়ে দিতে পারি উপরোক্ত হাদিসগুলো। মনে রাখবেন, দুনিয়া ক্ষণিকের। অপনার আমার দাদা ও বাবা হয়তো নেই। আমাকেও চলে যেতে হবে, আপনাকেউ। আজ অপনি ক্ষমতায়, কাল অন্য একজন। তা স্থির থাকার নয়।
তাই দুনিয়া ও আখিরাতকে ভয় করুন। ইতিহাস দেখুন, যারা শাসন করার ক্ষেত্রে নিজেদের স্বার্থই দেখেছে, তারা ইতিহাসের আস্তকুড়ে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। দুনিয়াতে বড় বড় রাজা-বাদশাহ এসেছেন ও চিরদিনের তরে না ফেরার পথে চলেও গেছেন। নমরুদ, ফেরাউনের মতো এমন বাদশাও গেছে; তারা নিজেদের খোদ স্রষ্টাও দাবি করেছে।
দুনিয়ার এ প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত প্রতাপের সাথে রাজত্ব করেছে। কত অসম্ভবকে সম্ভব করেছে। যা ইচ্ছা তাই করেছে। তবে তাদের সেই সব কয়দিনের জন্য ছিল? কিন্তু যেখানে গিয়েছে তা তো সারা জীবনের জন্য। তারা ঘৃণিত মানুষের কাছে। ইতিহাসের পাতায়। আর যারা জনগণের সেবা করেছে বা জনগণের জন্য নিজের আরাম আয়েশ ত্যাগ করেছে। তারা জনগণের ভালোবাসা তো পেয়েছে, সাথে আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টিও পেয়েছেন। তারা আজ প্রসংশিত সবার কাছে এবং ইতিহাস তাদের স্মরণ করে শ্রদ্ধাভরে।
ঠিক আজ আমরা যারা আছি, তারাও তাদের কাজ হিসাবে প্রশংসিত বা ঘৃণিত হবে একদিন। জনগণের ভাষা বোঝা দরকার। জনগণের চাওয়া-পাওয়ার প্রতি লক্ষ রাখা প্রয়োজন। এ জনগণই হলো শাসকের জন্য নেয়ামত। জনগণের কারণেই শাসকের জান্নাত বা জাহান্নাম তা নির্দিষ্ট হবে। যে জীবন আমাদের সামনে তাতে আমি কি পুরস্কৃত হবো না লাঞ্ছনায় পড়ব, তা ভেবে দেখার বিষয় এখনই। আসুন আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে যেন জান্নাত পাই।
তাই সামান্য দুনিয়ার লোভে পড়ে আমারা যেন অনন্ত জীবনকে ধ্বংস না করি। আমরা মুসলমান আমরা বিশ্বাস করি- আল্লাহ ও তার নবী সা:কে। তাই আমাদের উচিত হবে আমাদের প্রত্যেক কাজে তাদের অনুসরণ করা ও কথাকে বাস্তবায়ন করা। সত্যেকারে স্রষ্টার বিধান ও রাসূল সা:-এর পথেই সুখ, শান্তি, নিরাপত্তা। আশা করি আমরা সবাই তার পথের দিকে অগ্রসর হবো। বিশ্বাস করি, আখিরাতকে তাই আমরা চেষ্টা করব, সেই আখিরাতের কঠিন আজাব থেকে যেন আমরা প্রজা ও রাজা বা জনগণ মুক্তি পাই। সেই হিসেবে আমাদের কাজ করার চেষ্টা করতে হবে।
লেখক : পরিচালক, ইসলাহ বাংলাদেশ, ঢাকা