আফগানিস্তানে যুদ্ধ : ধসে পড়ল পেন্টাগনের মিথ্যার বেসাতি

জ্যাকব জি হর্নবার্গার | Dec 11, 2019 08:34 pm
পেন্টাগন

পেন্টাগন - ছবি : সংগৃহীত

 

পেন্টাগন আজকের ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতি খুশি হতে পারবে না। কারণ ওয়াশিংটন পোস্ট সবেমাত্র বিপুল পরিমাণে গোপন নথিপত্র প্রকাশ করে প্রমাণ করেছে যে পেন্টাগন আফগানিস্তান যুদ্ধ (একে তারা চিরস্থায়ী রূপ দিতে যাচ্ছে) নিয়ে ‘অগ্রগতি’ সম্পর্কে বছরের পর বছর ধরে উদ্দেশ্যমূলকভাবেই মিথ্যা তথ্য দিয়ে আসছে। আমেরিকান জনগণকে প্রকাশ্যেই পেন্টাগন আশ্বস্ত করছিল যে যুদ্ধে তারা বেশ ভালো করছে, অথচ বাস্তব ক্ষেত্রে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত।
পোস্টের প্রকাশ করা নথিতে দেখা যাচ্ছে যে সামরিক বাহিনীর অভ্যন্তরীণ ব্যক্তিরা ভয়াবহ অকপটতায় সাক্ষাতকার দিচ্ছেন এই বিশ্বাসে যে তাদের বক্তব্য সারা জীবনের জন্যই গোপন থাকবে। ‘ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অ্যাক্টের’ আওতায় তিন বছর গোপন থাকার পর এক মার্কিন জেলা বিচারক নথিগুলো পোস্টের কাছে হস্তান্তরের নির্দেশ পালন করতে বাধ্য হয়েছে পেন্টাগন। সাক্ষাতকার দেয়া বেশির ভাগ সদস্যদের পরিচিতি পেন্টাগন প্রকাশ করতে এখনো অস্বীকৃতি জানিয়ে এলেও এক সাক্ষাতকার দানকরী ব্যক্তি, ডগলাস লূট, তিনি আফগানিস্তানে দায়িত্ব পালনকারী তিন তারকার সেনাবাহিনীর জেনারেল, স্বীকার করেছেন যে

আমরা আফগানিস্তান সম্পর্কে মৌলিক উপলব্ধি থেকেও বঞ্চিত। আমরা জানি না, আমরা কী করছি। আমরা এখানে কী করছি? আমরা কী করছি, সে ব্যাপারে আমাদের বিন্দুমাত্র ধারণা নেই।

সাক্ষাতকার দানকারী আরেক ব্যক্তি, কর্নেল বব ক্রলি, বলেন যে সম্ভব সর্বোত্তম ছবি উপস্থাপন করার জন্য প্রতিটি তথ্য বদলানো হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জরিপগুলো ছিল পুরো অবিশ্বস্ত, তবে এমনভাবে উপস্থাপন করা হয় যে আমরা ঠিক কাজই করছি, আমরা টিকে থাকার চেষ্টাই করে গেছি।

পোস্টের মতে, সাক্ষাতকার গ্রহণকারী ফেডারেল সংস্থার প্রধান জন সোপকো পোস্টের কাছে স্বীকার করেছেন যে নথিপত্রে দেখা যাচ্ছে যে আমেরিকান জনগণকে সর্বক্ষণ মিথ্যা তথ্য দেয়া হয়েছে। সাক্ষাতকারগুলো ছিল এসআইজিআর নামে পরিচিত সংস্থা অফিস অব দি স্পেশাল ইন্সপেক্টর জেনারেল ফর আফগানিস্তান রিকন্সাক্টাকশনের মূল কাজের উপজাত। এই সংস্থাটি গঠিত হয়েছিল ২০০৮ সালে যুদ্ধ এলাকায় অপচয় ও প্রতারণা সম্পর্কে তদন্ত করার জন্য।

আর এখানেই আছে আসল কথা। এক ট্রিলিয়ন ডলারের যুদ্ধটি তৈরী করা হয়েছিল উদ্দেশ্যমূলক, পরিকল্পিত ও জেনেবুঝে মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে। ঠিক যেমন ছিল ভিয়েতনাম যুদ্ধ। ২,৩০০ আমেরিকান সৈন্য নিহত হয়েছে একেবারেই বিনা কারণে। এছাড়া আরো হাজার হাজার লোক আহত হয়েছে, মানসিক, শারীরিকভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। লাখ লাখ আফগান নিহত হয়েছে, পঙ্গু হয়েছে, আটক হয়েছে, নির্যাতিত হয়েছে। পুরো দেশটি ধ্বংস করা হয়েছে।

এসব করা হয়েছে কেন? একেবারে অকারণে! আমেরিকান সৈন্য অকারণে নিহত হয়েছে, মারা গেছে। অথচ এমনটি যে হবে তা দি ফিউচার অব ফ্রিডম ফাউন্ডেশন এমনকি আফগানিস্তান হামলার আগেই বলে দিয়েছিল, যখন হস্তক্ষেপবাদীরা আমাদেরকে আমেরিকান বিদ্বেষী হিসেবে অভিযুক্ত করেছিল।
অধিকন্তু, কিভাবে তারা এখানে সন্ত্রাসীদের (তারাই আফগানিস্তান ও মধ্যপ্রাচ্যে- উভয় স্থানে তাদের ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে’ এদেরকে সৃষ্টি করেছে) থেকে আমাদের সুরক্ষা করার নামে দেশেই আমাদের স্বাধীনতা ও প্রাইভেসিকে ধ্বংস করেছে চিন্তা করে দেখুন।

বেশির ভাগ সৈন্য সত্য জানে, ঠিক যেমন বেশির ভাগ আমেরিকান তা জানে। পিউ রিসার্চ সেন্টারের মতে, ১৮ বছর আগে আফগানিস্তানে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এবং ১৬ বছর আগে ইরাকে আমেরিকান অভিযান শুরুর পর থেকে মার্কিন সামরিক বাহিনীর যুদ্ধফেরতদের বেশির ভাগই বলেছেন যে এগুলো লড়াই করার মতো গুরুত্বপূর্ণ যুদ্ধ নয়। আমেরিকানদের মধ্যে পরিচালিত এক সমান্তরাল জরিপে এসব অনুভূতির সাথে লোকজনকে একাত্মতা প্রকাশ করতে দেখা যায়।

এই যুদ্ধ সম্পর্কে আমেরিকান জনগণের কাছে মিথ্যা বক্তব্য প্রদান করার জন্য পেন্টাগনের কোনো কর্মকর্তাকে কি কারাগারে যেতে হবে? আপনি কি ধাপ্পাবাজ? ন্যাশনাল ইন্টিলিজেন্সের সাবেক পরিচালক জেমস আর ক্ল্যাপার কি গোপন নজরদারি নিয়ে কংগ্রেসের কাছে মিথ্যা বলার জন্য কারাগারে যাবেন (সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের দোহাই দিয়ে এনএসএ নজরদারি চালাচ্ছিল)? কোনোভাবেই নয়। কেবল যেসব সাধারণ নাগরিক ফেডারেল কর্মকর্তাদের কাছে মিথ্যা বলেছেন, তারাই কারাগারে যাবেন।

জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা ‘জাতীয় নিরাপত্তা’ রক্ষার জন্য মিথ্যা বলছেন, আমেরিকান জনগণকে মিথ্যা বলার জন্য ধরা পড়লে তারা ছাড়পত্র পেয়ে যাবেন। এটাও বলা গুরুত্বপূর্ণ যে যুদ্ধ ঘোষণা করার জন্য সংবিধানে যে কংগ্রেসের অনুমোদন গ্রহণ বাধ্যতামূলক করেছ, পেন্টাগন ওই অনুমতি ছাড়াই আফগানিস্তানে যুদ্ধ করছে। ফলে আফগানিস্তানে যে মৃত্যু ও ধ্বংস হয়েছে, তা অবৈধ। আফগানিস্তানকে স্বর্গে পরিণত করার জন্য আট বছর সব ধরনের কাজ করার অবাধ লাইসেন্স পাওয়া সত্ত্বেও (আগের গোপন তথ্যে দেখা যাচ্ছে) পেন্টাগন কেবল দেশটিকে সহিংসতার নরকে পরিণত করতে, কর্মকর্তাদের দুর্নীতিপরায়ণ করতে, আফিম উৎপাদন বাড়াতে সফল হয়েছে।

অন্য কিছু হওয়া কি সম্ভব ছিল? দেশটি জয়ের পর মার্কিন কর্মকর্তারা তাদের আদর্শ সরকারকে ক্ষমতায় বসায়। এই সরকার ছিল কঠিন কেন্দ্রীয় সরকার, তাদের হাতে ছিল সর্বময় ক্ষমতা, নাগরিক স্বাধীনতা ছিল না বিন্দুমাত্র, আইনের বালাই ছিল না, নৃশংসতা ও অস্বাভাবিক শাস্তির কোনো প্রতিকার ছিল না। এমন অবস্থায় ভালো কিছু হবে কিভাবে?

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিশ্চিতভাবেই পেন্টাগনের মিথ্যায় পতিত হননি। সম্প্রতি তিনি থ্যাঙ্কসগিভিংয়ে সৈন্যদের সফর করর সময় গভীর রাতে দেশটিতে গোপনে প্রবেশ করেন এবং দ্রুত ওয়াশিংটনে ফিরে আসেন মাত্র তিন ঘণ্টা অবস্থান করে। খুবই খারাপ কথা হলো, তিনি সাথে করে সৈন্যদের নিয়ে আসেননি, তিনি তাদেরকে রেখে এসেছেন অকারণে অব্যাহতভাবে হত্যা করতে ও মৃত্যুবরণ করতে। আরো বস্তুনিষ্ঠভাবে বলা যায়, তিনি তাদেরকে রেখে এসেছেন পেন্টাগনের সহিংসতার নরকের ‘স্বর্গ’ টিকিয়ে রাখতে, দুর্নীতি বহাল রাখতে, মাদক ব্যবসা অব্যাহত রাখতে, মিথ্যা জারি রাখতে।

লেখক : প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি, দি ফিউচার অব ফ্রিডম ফাউন্ডেশন

গ্লোবাল ভিলেজ স্পেস


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us