বেপরোয়া ডেমোক্র্যাট : কঠিন বিপদে ট্রাম্প
বেপরোয়া ডেমোক্র্যাট : কঠিন বিপদে ট্রাম্প - ছবি : সংগ্রহ
মার্কিন হাউজ স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি গত সেপ্টেম্বরে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্টকে কেন্দ্র করে তদন্ত শুরু করার ঘোষণা দেয়ার আগে এই পদক্ষেপ ভোটারদের মধ্যে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে বলে আশঙ্কা করেছিলেন। কিন্তু তার ওই আশঙ্কা সত্য হয়নি। বরং ভোটারদের মধ্যে বিশেষত দু’দলের সমর্থকরা নিজ নিজ দলের পক্ষে তাদের সমর্থন আরো জোরদার করেছেন। ডেমোক্র্যাটরা ইমপিচমেন্টের পক্ষে এবং রিপাবলিকানরা এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। টেলিভিশনে সম্প্রচারিত ইমপিচমেন্ট শুনানি ডেমোক্র্যাটদের আরো চাঙ্গা করেছে। এতে ডেমোক্র্যাটরা আগামী বছর ট্রাম্পকে প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেয়ার ব্যাপারে আরো বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
রিপাবলিকানদের চেয়ে ডেমোক্র্যাটরা এখন আরো অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ এবং সুদৃঢ় ও সংহত অবস্থানে রয়েছেন। আমেরিকার ভোটারদের অর্ধেক- যাদের বেশির ভাগ হচ্ছেন ডেমোক্র্যাট তারা বলেছেন- ট্রাম্পের ব্যাপারে তাদের মতামত হচ্ছে একেবারেই বিরুদ্ধে। আর তৃতীয় একটি পক্ষ প্রেসিডেন্টের পক্ষে তাদের সমর্থন ব্যক্ত করেছে। ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অত্যন্ত শক্তিশালী যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন করছেন। এ ব্যাপারে কোনো সন্দেহ থাকলে হাউজ ইনটেলিজেন্স কমিটির রিপোর্ট দেখা যেতে পারে। এতে যুক্তি-প্রমাণ উপস্থাপন করে বলা হয়, ট্রাম্প তার ব্যক্তিগত স্বার্থে প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার অপব্যবহার করেছেন। তিনি পররাষ্ট্রনীতি হাইজ্যাক করে ন্যায়বিচারে বাধা দিয়েছেন।
তিনি ইনস্টিটিউশনগুলো ধ্বংস করেছেন এবং মিত্রদের হেয় প্রতিপন্ন করেছেন। তিনি প্রেসিডেন্ট পদের জন্য অযোগ্য। অকথিত বার্তা হলো : প্রথমে ইমপিচ করো। এরপর ভোটের মাধ্যমে তাকে দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দাও। রিপাবলিকান কৌশলবিদ মাইক মরফি উল্লেখ করেন, ‘এতে করে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে পুনর্নির্বাচিত না করতে বিশ্বের দীর্ঘতম ক্যাম্পেইন চালানো হচ্ছে।’ বিচারে সিনেটের ভোটের মাধ্যমে ট্রাম্পকে পদচ্যুত করার উদ্যোগ নেয়া হলে- ডেমোক্র্যাটিক ভোটাররা পরবর্তীতে তাকে নির্বাচনের মাধ্যমে পরাজিত করতে অনুপ্রাণিত হবে। মরফি বলেন, ‘ট্রাম্প অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে আত্মরক্ষামূলক অবস্থান নিতে বাধ্য হবেন... আর এটা হবে ডেমোক্র্যাটদের জন্য নেট প্লাস’।
এদিকে আমেকিার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিশংসন প্রক্রিয়া ক্রমেই এগিয়ে যাচ্ছে। তার বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগের খসড়া প্রস্তাব তৈরিতে প্রতিনিধি পরিষদের জুডিশিয়ারি কমিটির ডেমোক্র্যাট সদস্যরা কয়েক দিন আগে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন।
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সাথে গত ২৫ জুলাই ফোনে কথা বলেন ট্রাম্প।
অভিযোগ উঠেছে ওই সময় আগামী মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট পার্টির সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বী জোবাইডেনের ভাবমর্যাদা ক্ষুণ্ন করার জন্য তার ছেলে হান্টার বাইডেনের অতীতের ব্যবসার ব্যাপারে তদন্তে জেলেনস্কিকে চাপ দেন ট্রাম্প। বিনিময়ে ইউক্রেনের জন্য সামরিক সহায়তা তহবিল অনুমোদনের প্রতিশ্রুতি দেন। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে অবিশংসন তদন্ত শুরু করে প্রতিনিধি পরিষদ। তদন্ত শেষে হাউজ ইনটেলিজেন্স কমিটিতে ৩০০ পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দেয়া হয়। এরপর আইন বিশেষজ্ঞদের উপস্থিতিতে শুনানি শুরু হয়। প্রতিনিধি পরিষদের বিচার বিভাগীয় কমিটিতে চলমান শুনানিতে অংশ নিচ্ছেন না ট্রাম্প। ট্রাম্প তদন্তকে ‘ভিত্তিহীন’ ও আষাঢ়ে গল্প বলে নাকচ করে দেন। অপর দিকে, ডেমোক্র্যাটরা দাবি করছেন ট্রাম্প ব্যক্তিগত স্বার্থ হাসিলের জন্যে একের পর এক ক্ষমতা অপব্যবহার করে চলেছেন। তাই তিনি ক্ষমতায় থাকার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন।
২০০৮ সালে বারাক ওবামাকে হোয়াইট হাউজে জয়লাভে সহায়তাকারী কৌশলবিদ ডেভিড এক্সিলরড বলেন, ইমপিচমেন্টসহ প্রেসিডেন্টের চতুর্দিকে অব্যাহতভাবে যে ঝড় শুরু হয়েছে তা ট্রাম্পের সর্বনাশ করতে পারে। তিনি বলেন, ২০২০ সালের নির্বাচনে ট্রাম্প হেরে গেলে- সেটার কারণ হিসেবে বলা যায়- ভোটাররা আরো চারটি বছর এ ধরনের ব্যক্তিকে সুযোগ দিতে চাইবে না। তবে তিনি বলেন, ডেমোক্র্যাটরা এটাকে রিপাবলিকানদের বর্ণনা অনুযায়ী রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, রক্তপাতহীন অভ্যুত্থান মনে না করে আইনগতভাবে সরাসরি এগিয়ে গেলেই ভালো করবে। অবশ্য স্পিকার পেলোসি এবং তার সহযোগীরা ইমপিচমেন্টকে ২০২০ সালের নির্বাচনী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহারের কোনো পরিকল্পনা করেননি।
চলতি সপ্তাহে এক জরিপে দেখা গেছে, ৪৮ শতাংশ আমেরিকান প্রেসিডেন্টের ইমপিচমেন্ট এবং তাকে দায়িত্ব থেকে অপসারণের পক্ষে। ৪৪ শতাংশ ইমপিচমেন্টের বিরোধিতা করেছেন। অবশ্য এখনো আমাদের কাছে অনেক কিছু অজানা রয়ে গেছে। আগে কোনো প্রেসিডেন্টকে ইমপিচ করার পর তাকে পুনর্নির্বাচনে দাঁড়াতে দেখা যায়নি। আর কোনো চ্যালেঞ্জারকেও ইমপিচমেন্ট বিচারের সময় প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে দেখা যায়নি। ডেমোক্র্যাটরা ট্রাম্পকে বিচারে দোষী সাব্যস্ত করা যাবে না বলে নিশ্চিত হলে হয়তো দ্রুত বিচার চাইতে পারেন। আর রিপাবলিকানরা ডেমোক্রেট প্রাইমারিকে জটিলতায় ফেলতে চাইলে ধীরগতিতে বিচার চাইতে পারে।
কিন্তু বিচার শেষ হলে এবং এমনকি ট্রাম্প দোষী সাব্যস্ত না হলেও এই বিচার প্রক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট নয়া চ্যালেঞ্জার তথা বিরোধী পক্ষই লাভবান হবে। বিল ক্লিনটনের ইমপিচমেন্টের সময় সেটাই দেখা গেছে। তিনি অভিযোগ থেকে খালাস পেলেও পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও প্রেসিডেন্ট প্রার্থী আলগোর ক্ষতিগ্রস্ত হন এবং নির্বাচনে পরাজয় বরণ করেন। ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট মামলায় এ পর্যন্ত যেসব প্রমাণাদি উত্থাপন করা হয়েছে- তা প্রেসিডেন্টের বিপক্ষেই গেছে।