পাকিস্তানে অস্ত্র বিক্রি : চীনকেও ছাড়িয়ে যাবে রাশিয়া!

পাকিস্তানে অস্ত্র বিক্রি : চীনকেও ছাড়িয়ে যাবে রাশিয়া! - ছবি : সংগৃহীত
পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক আরো সম্প্রসারণ করছে রাশিয়া, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলারের ব্যবসা ও বাণিজ্যে সম্পৃক্ত হচ্ছে বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। রুশ ফেডারেশনের বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী ডেনিস ভি ম্যানতুরোভের নেতৃত্বে ৬৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি প্রতিনিধিদল পাকিস্তান সফর করছে। এই প্রতিনিধিদল একটি আন্তঃসরকারি কমিশনে যোগদান করতে ১১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পাকিস্তান অবস্থান করবে।
সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, সর্বোচ্চ পর্যায়ে সহযোগিতা বাড়ানোর জন্য দুই দেশের মধ্যে চুক্তি সই হবে। নতুন পাকিস্তান-রাশিয়া চুক্তির আর্থিক মূল্য ৯ বিলিয়ন ডলার হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এর অধীনে পাকিস্তান ভারী ও মাঝারি জঙ্গিবিমান, মাঝারি ও স্বল্প পাল্লার বিমান প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, ট্যাঙ্ক, যুদ্ধ হেলিকপ্টার ও রণতরী কিনবে। পাকিস্তানের মিল মিল প্রকল্প পুনর্বাসন ও আধুনিকায়ন করার জন্য এক বিলিয়ন ডলার আর্থিক সহায়তা করতে পারে রাশিয়া।
মোজাফরগড় তাপ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিকে কয়লায় রূপান্তরিত করার একটি প্রকল্প প্রস্তুত করছে রুশভিত্তিক একটি কোম্পানি। এছাড়া জামশোরোতে ৬০০ মেগাওয়াটের কয়লাচালিত বিদ্যুৎ প্লান্ট প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। রাশিয়া সুখোই সুপারজেট ১০০ (এসএসজে-১০০)-এর প্রস্তাবও দিয়েছে। এই বিমান ১০০ যাত্রী নিয়ে আঞ্চলিক রুটগুলোতে চলাচল করতে পারবে। রাশিয়ার সামরিক বিমান নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সুখোই এটি বিপনণের দায়িত্বে রয়েছে। কাজাখস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনাম, লাওস ও মিয়ানমারে এই বিমান ব্যবহৃত হয়। এক কর্মকর্তা বলেন, এই বিমান এয়ারবাস ও এমনকি বোয়িংয়ের মতো স্বস্তি দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, রাশিয়া বিশাল পরিসরে পাকিস্তানে প্রবেশের প্রস্তুতি নিতে থাকায় শেষ পর্যন্ত নয়া দিল্লির চেয়েও ইসলামাবাদ হয়ে যাবে মস্কোর ঘনিষ্ঠতর অংশীদার। সেনাবাহিনী প্রধান কামার জাভেদ বাজওয়া পাকিস্তান ও রাশিয়ার মধ্যে ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টিতে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন। এক কর্মকর্তা বলেন, সেনাবাহিনী প্রধান এমনকি রাশিয়া সফর করেছেন, প্রতিরক্ষা সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা করেছেন। পাকিস্তান ও রাশিয়া সফর বিনিময় করছে।
গত সপ্তাহে রাশিয়া ও পাকিস্তান পারস্পরিক আর্থিক দাবি প্রশ্নে একটি নিষ্পত্তিমূলক সমঝোতায় উপনীত হয়েছে। এতে করে সাবেক সোভিয়েত আমলের পাওনা হিসেবে রাশিয়াকে ৯৩.৫ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করবে পাকিস্তান। এই নথিতে সই করেন রাশিয়ার উপ অর্থমন্ত্রী সার্গেই স্টোরচ্যাক ও রাশিয়ায় নিযুক্ত পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত কাজী খলিলুল্লাহ। চুক্তিটি বাস্তবায়নের জন্য ৯০ দিনের মধ্যে তহবিলের ব্যবস্থা করা হবে। এক সরকারি কর্মকর্তা বলেন, এই বিষয়টি দুই দেশের সম্পর্কে অস্বস্তি সৃষ্টি করে আসছিল। আমরা এই সমস্যার সমাধান করেছি। রাশিয়া এখন আগের চেয়েও শক্তিশালীভাবে পাকিস্তানে আসবে।
আরেক কর্মকর্তা বলেন, পাকিস্তান ও রাশিয়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের সম্পর্ক আরো জোরদার করেছে। অতীতের তিক্ততার অবসান ঘটেছে। আমরা এখন ঘনিষ্ঠ মিত্র। রুশ অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতে, ১৯৮০-এর দশকে সোভিয়েত ইউনিয়ন ও পাকিস্তানের মধ্যে আমদানি রফতানি হতো। রাশিয়ার ভিইবিআরএফ ব্যাংকের অ্যাকাউন্ট ছিল পাকিস্তান ন্যাশনাল ব্যাংকে। দাবি, পাল্টা দাবির কারণে এই অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছিল। পাকিস্তানের পুনর্গঠন ও প্রধান প্রতিরক্ষা অংশীদার হতে এবং উচ্চ প্রযুক্তির সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করার ব্যাপারে রাশিয়া অনেকবার আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বর্তমানে পাকিস্তানের বৃহত্তর অস্ত্র সরবরাহকারী দেশ হলো চীন। ২০১৪-২০১৮ সময়কালে চীন বিক্রি করেছে ৬.৪ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র। আর দ্বিতীয় স্থানে থাকা যুক্তরাষ্ট্র বিক্রি করেছে ২.৫ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র। তৃতীয় স্থানে আছে ইতালি। তাদের পাকিস্তানে অস্ত্র বিক্রির পরিমাণ ৪৭১ মিলিয়ন ডলার। ৯ বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র বিক্রি চুক্তি হয়ে গেলে রাশিয়া হবে পাকিস্তানের এক নম্বর অস্ত্র বিক্রয়কারী দেশ।
চলতি বছর পাকিস্তান-রাশিয়া কনসালটিভ গ্রুপ অন স্ট্র্যাটেজিক স্ট্যাবেলিটির বৈঠক ইসলামাবাদে হয়। রুশ ফেডারেশনের উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সার্গেই রাইবকভ নেতৃত্ব দেন রুশ প্রতিনিধিদলের। এ সময় দুই পক্ষ আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা পরিবেশ, আন্তর্জাতিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণে এর প্রভাব, নিরস্ত্রীকরণ ও বিস্তাররোধ এজেন্ডা নিয়ে ব্যাপক মতবিনিময় ও আলোচনা হয়। পাকিস্তান-রাশিয়া কনসালটিভ গ্রুপ অন স্ট্র্যাটেজিক স্ট্যাবেলিটি হলো দুই দেশের মধ্যে কাঠামোগত সংলাপের একটি প্লাটফর্ম। এর সভা শুরু হয় ২০০৩ সালে।
দি ন্যাশন