স্বামীর অনুপস্থিতিতে পরকীয়া, ফেঁসে গেলেন মিশু
পরকীয়ায় ফেঁসে গেলেন প্রবাসীর স্ত্রী - ছবি : সংগৃহীত
বরিশালের বানারীপাড়ায় আলোচিত ট্রিপল মার্ডারের ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন অভিযুক্ত দুইজন। এ ঘটনায় আটক করা হয়েছে গৃহকর্ত্রী প্রবাসীর স্ত্রীকে। ধারণা করা হচ্ছে, অভিযুক্ত একজনের সাথে প্রবাসীর স্ত্রীর পরকীয়া সম্পর্কের কারণেই এ হত্যাকাণ্ড।
এ হত্যা মামলায় কুয়েত প্রবাসীর স্ত্রী মিশরাত জাহান মিশুকে রোববার গ্রেফতার করা হয়েছে।
অপরদিকে হত্যাকান্ডের ঘটনায় গ্রেফতার হওয়া প্রধান দুই ঘাতক জাকির ও জুয়েল আদালতের কাছে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে। রোববার রাতে বরিশাল সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো: এনায়েত উল্লাহ তাদের জবানবন্দি রেকর্ড শেষে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
র্যাব ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গ্রেফতারকৃত দুই ঘাতকের মধ্যে রাজমিস্ত্রি জাকির হোসেনের সাথে পূর্ব থেকেই কুয়েত প্রবাসী আ: রবের স্ত্রী মিশরাত জাহান মিশুর পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক ছিলো। প্রবাসীর বাড়িতে ভবন নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে তাদের মধ্যে এ পরকীয়া প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সেই সম্পর্ক ধরেই পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী শুক্রবার দিবাগত রাতে সহযোগী জুয়েলকে নিয়ে প্রবাসীর ঘরে প্রবেশ করেছিলেন জাকির। তারা দু’জনে মিলেই প্রবাসীর মা ও ভগ্নিপতিসহ তিনজনকে হত্যা করেন।
প্রথমে তারা প্রবাসীর খালাতো ভাই ভ্যানচালক ইউসুফকে (২২) শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন। পরে প্রবাসীর মা মরিয়ম বেগমকে (৭৫) একইভাবে শ্বাসরোধ করে হত্যা করার সময় পাশের কক্ষে ঘুমানো শফিকুল আলম ঘুমের মধ্যে কাশি দিলে ঘাতকরা মনে করেন তিনি বিষয়টি টের পেয়েছে। ফলে ধরা পড়ার ভয়ে তাকেও শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়।
শনিবার সকালে ঘটনাস্থল থেকে রাজমিস্ত্রি জাকির হোসেন ও রাতে র্যাবের সহযোগিতায় তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে বরিশাল সদর উপজেলার কাগাশুরা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় জুয়েলকে। ওই বাসা থেকে ঘাতকদের স্বর্ণালঙ্কার ও তিনটি মোবাইল ফোন নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য ছিলো হত্যাকান্ডের বিষয়টি চুরি-ডাকাতির কারণে হয়েছে এটা প্রমাণ করা।
আরো জানা যায়, আসামিদ্বয় আদালতে জবানবন্দি দেয়ার পরে ঘটনার সাথে প্রবাসীর স্ত্রী মিশরাত জাহান মিশুর জড়িত থাকা এবং পরকীয়ার বিষয়টি প্রসাশনের নজরে আসে। এ কারণেই রোববার রাতেই মিশুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এদিকে, তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, পরকীয়া প্রেমিকের সাথে নির্বিঘেœ অবাধে অভিসারে মিলিত হতে ও সংসারে স্বাধীনভাবে বিচরণ করে কর্তৃত্ব নিজের হাতে নিতে প্রবাসীর স্ত্রী পরকীয়া প্রেমিককে নিয়ে পূর্বপরিকল্পিতভাবে শাশুড়িসহ এ ট্রিপল হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে। তবে পথের কাঁটা হিসেবে তাদের মূল টার্গেট ছিলো বৃদ্ধা মরিয়ম বেগম ও তার বোনের ছেলে ইউসুফ।
উল্লেখ্য, গত ৭ ডিসেম্বর শুক্রবার দিবাগত রাতে বানারীপাড়ার সলিয়াবাকপুর গ্রামের হাওলাদার বাড়ির বাসিন্দা ও কুয়েত প্রবাসী আ: রবের মা মরিয়ম বেগম, ভগ্নিপতি ও সাবেক স্কুল শিক্ষক শফিকুল আলম এবং খালাতো ভাই ইউসুফকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়।
রোববার সকালে এ ঘটনায় প্রবাসী আ: রবের ছোট ভাই ঢাকায় এনআরবি ব্যাংকের কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বাদী হয়ে প্রধান ঘাতক রাজমিস্ত্রি জাকির হোসেনকে সুনির্দিষ্ট ও ২/৩ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে বানারীপাড়া থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে ওই মামলায় আসামি করে অপর ঘাতক জুয়েল হাওলাদার ও প্রবাসীর স্ত্রী মিশরাত জাহান মিশুকে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
এদিকে, লোমহর্ষক এ হত্যাকান্ডে জড়িত ঘাতকদের ফাঁসির দাবিতে আজ সোমবার সকালে বানারীপাড়ার বাসস্ট্যান্ড চত্বরে এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছেন।
অপরদিকে থানা সূত্রে জানা গেছে, প্রবাসীর স্ত্রী মিশুর তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছে আদালত।