গোলাম মাওলা রনির চোরের মার বড় গলা
গোলাম মাওলা রনি - ছবি : সংগ্রহ
আমার শৈশব কৈশোরের বড় অপূর্ণতা হলো আমি সেই বয়সে কোনো চোর বা চোরনী দেখিনি। ফলে চোরের বাবা কিংবা মায়ের দেখাও মেলেনি এবং তাদের গলার আওয়াজ সম্পর্কেও ধারণা লাভ করতে পারিনি। আমাদের গ্রামটি সব দিক থেকে একটি আদর্শ গ্রাম ছিল। তথাপি সেখানে প্রতি রাতেই বহু সংখ্যক চুরি-চামারির ঘটনা ঘটত। কলা, কচু, আখ, মুরগি, ছাগলের বাচ্চা, গরুর দুধ ইত্যাদি হরহামেশা চুরি হয়ে যেত। তবে কোনো মানুষ ওগুলো চুরি করত না। পশু-পাখি, জন্তু-জানোয়ার এবং কীটপতঙ্গের দল দিনে-রাতে সুযোগ পেলেই চুরি চামারি করত। শেয়াল-খাটাস এবং বনবিড়ালরা মুরগি চুরি করত। তারা মাঝে মধ্যে সুযোগ পেলে ছাগলের বাচ্চাও চুরি করত। বাদরসহ অন্যান্য নিশাচর প্রাণী রাতের আঁধারে কলা বাগানের কলা, খেজুরের রস ইত্যাদি সাবাড় করে দিত। সজারুরা এসে কচু ক্ষেতে হামলে পড়ত এবং বড় বড় সাপ এসে গভীর রাতে গাভীর দুধ পান করে যেত।
জন্তু-জানোয়ারদের মধ্যে চোর হিসেবে শেয়ালের উৎপাত ছিল সবচেয়ে বেশি বিরক্তিকর। তারা যেদিন চুরি-চামারি বেশি মাত্রায় করত সেদিন মনের আনন্দে হুক্কাহুয়া-হুক্কাহুয়া ডাকে গ্রামবাসীর কান ঝালাপালা করে দিত। তারা মুরগি ধরে নিয়ে আখক্ষেতে ঢুকত এবং আখের রসকে কোমল পানীয় হিসেবে ব্যবহার করতে গিয়ে আখ ক্ষেতের সর্বনাশ ঘটাত। পাখিদের মধ্যে বাজপাখি বা চিলও চুরি করত। এ ছাড়া বেজিরাও চুরির পেশায় ভয়ানক দক্ষ ছিল। পরিচিত পাক-পাখালীর মধ্যে কাক বা কাউয়াও কম চোর ছিল না। তারা যা পেত সবই চুরি করত- তবে সাবানের প্রতি কাউয়ার লোভ ছিল উল্লেখ করার মতো। কাউয়ারা ছোট ছোট বাচ্চা, ছেলেমেয়েদের হাতের খাবার, খেলনা থেকে শুরু করে ময়লাযুক্ত কাপড়-চোপড় পর্যন্ত চুরি করত। ফলে সাধারণ ভুক্তভোগীরা চোরজাতীয় জন্তু-জানোয়ার, কীটপতঙ্গের চৌর্য্যবৃত্তি থেকে রেহাই পাওয়ার জন্য সদা সর্বদা সতর্ক থাকত এবং বিভিন্ন প্রতিকার আবিষ্কারের জন্য গবেষণা চালাত। ফলে আমাদের গ্রামে চোরবিষয়ক ডাক্তার-কবিরাজ এবং জ্ঞানী-বিজ্ঞানীর অভাব ছিল না।
আমার শৈশব-কৈশোরের সেই স্মৃতিময় সুন্দর গ্রামখানি এখন কেমন আছে তা জানি না। কারণ, জীবনযুদ্ধের শত বাস্তবতা এবং নয়া জমানার শহুরে চোরদের বাহারি কর্মকাণ্ডে নিত্যকার জীবন এতটাই কঠিন এবং জটিল হয়ে পড়েছে যে, দু’দণ্ড সময় করে কর্মক্ষেত্রের বাইরে যাওয়ার সময় পাই না। ফলে আদিকালের নস্টালজিক দুষ্ট চোররূপী জন্তু-জারোয়ারেরা ইদানীং কি চুরি চামারি করছে নাকি তাদের স্বজাতীয় মানব নামধারী উত্তরসূরিদের সাথে প্রতিযোগিতায় হেরে গিয়ে চৌর্য্যবৃত্তি পরিত্যাগ করেছে তা চাক্ষুস করার সুযোগ পাইনি। গ্রামে গিয়ে জানোয়াররূপী চোর বা মানুষরূপী চোরদের হালহাকিকত দেখতে না পেলেও খোদ রাজধানীতে বসে হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছি চোর-ডাকাত কত প্রকার এবং কী কী! রাজধানীর চোর-ডাকাত এবং তাদের ছেলেপুলে স্ত্রী-কন্যা এবং মা-বাবাদের দাপট দেখে বুঝতে একটুও কষ্ট হচ্ছে না যে, দক্ষতা-অভিজ্ঞতা এবং চৌর্য্যবৃত্তির অপকৌশলে তারা ইতিহাসের যেকোনো চুরির পেশায় নিয়োজিত জন্তু-জানোয়ার এবং কীটপ্রতঙ্গকে ছাড়িয়ে গেছে।
নিকৃষ্ট মানের এবং দুর্বল চরিত্রের জন্তু-জানোয়ারের আদি পেশা-চৌর্য্যবৃত্তি কিভাবে মানুষের পেশায় পরিণত হলো এবং শক্তিশালী ও ক্ষমতাবান মানুষের একাংশ কিভাবে চুরিবিদ্যা রপ্ত করার জন্য উঠেপড়ে লাগল, তা নিয়ে আমাদের দেশে আজও কোনো কার্যকর গবেষণা শুরু হয়নি। প্রকৃতির বিবর্তনবাদ নিয়ে গবেষণা করে বিজ্ঞানী চার্লস ডারউইন আবিষ্কার করেছিলেন, মানুষ বিবর্তনবাদের মাধ্যমে বানর থেকে মানুষে রূপান্তরিত হয়েছে। ডারউইনের সেই তত্ত্ব দুনিয়াব্যাপী হৈ চৈ ফেলে দিয়েছিল এবং বিরাট এক বিতর্কের সৃষ্টি করেছিল। চার্লস ডারউইনের তত্ত্বের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা হলো তিনি উল্লেখ করতে পারেননি যে, ঠিক কত বছর আগে প্রথম বিবর্তন শুরু হয়েছিল এবং সেটা কোথা থেকে অর্থাৎ কোন বনভূমি থেকে শুরু হয়েছিল। তিনি বলতে পারেননি যে, বানরীরা প্রথম মানবী হয়েছিল নাকি বানর বা বান্দরেরা প্রথমে মানুষে রূপান্তরিত হয়েছিল। তিনি আরো বলতে পারেননি যে, বানর প্রজাতির অন্যান্য প্রাণী যথা হনুমান শিম্পাঞ্জী গরিলা ইত্যাদি গোষ্ঠীগুলোতে কেনো বিবর্তন সংঘটিত হয়নি। তাছাড়া বানরের বাহারি আকৃতি- রং, বর্ণ ও স্বভাবগুলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে রূপান্তরিত মানব-মানবীমণ্ডলীর রং, বর্ণ ও স্বভাবগুলোতে কিভাবে রূপান্তর হয়েছে সেই সম্পর্কেও ডারউইন কিছু বলেননি।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিককালের আধুনিক চোর-ডাকাতদের নিয়ে কেউ যদি গবেষণা করতে চান তবে চার্লস ডারউইনের ব্যর্থতা এবং অপূর্ণতা থেকে তারা যথেষ্ট তথ্য-উপাত্ত গ্রহণ করতে পারবেন। প্রথমত. চোর-ডাকাতের গবেষকেরা একটি চোর প্রকৃতির জন্তু-জানোয়ার থেকে মানুষ্যরূপী চোর বা ডাকাতে রূপান্তরিত বা বিবর্তিত হওয়ার সময়কাল অর্থাৎ টাইম ফ্রেম নির্ধারণ করতে পারবেন। তারা এটাও বের করতে পারবেন যে, কোন স্থান থেকে জ্যামিতিক হারে চৌর্যবৃত্তির অভ্যাস কোন সম্প্রদায় বা দলের মধ্যে বিবর্তিত হয়েছিল। এ ছাড়া কোন পশুর চৌর্যবৃত্তির দক্ষতা-অভিজ্ঞতা-নেশা ও পেশা কোন জাতের মনুষ্যের ওপর ভর করেছিল। মানুষদের মধ্যে কোন বয়সী লোকজন কী কারণে- কোন পরিস্থিতিতে এবং কাদের প্রভাবে বা ইন্ধনে চোর-ডাকাত হওয়ার জন্য পাগলপারা হয়ে পড়েছিল, যা কিনা কালের বিবর্তনে ভাইরাস আকারে ছড়িয়ে পড়েছে এবং গণহারে প্রজনন ঘটিয়ে সাংঘাতিক রকম বংশ বাড়িয়ে যাচ্ছে।
গবেষকেরা আরো একটি বিষয় তাদের ধর্তব্যের মধ্যে আনবেন আর সেটা হলো চোর-ডাকাতদের পিতা-মাতা। জন্তু জানোয়ারেরা সাধারণত তাদের জন্মদাতা বা গর্ভধারিণীর কাছ থেকে চুরি চামারির বিদ্যা হাসিল করত। কিন্তু মনুষের ক্ষেত্রে তাদের জন্মদাতা না জন্ম দাত্রী বেশি ভূমিকা রাখে নাকি তাদের মানব পিতা অথবা মানস মাতা বেশি ভূমিকা রাখে! চোরদের সাধারণত তিন ধরনের পিতা-মাতা থাকে। প্রথম ধরনটি হলো তারা, যারা চোরদের জৈবিক প্রজনন ঘটায় এবং ভবিষ্যতে যাতে পাকা চোর হতে পারে সেজন্য খাবার-দাবার, পোশাক-আশাক ও পরিবেশ-প্রতিবেশে চুরি-চামারির ব্যাকগ্রাউন্ড দৃশ্য এবং সঙ্গীতের আবহ সৃষ্টি করে রাখে। দ্বিতীয় ধরনটি হলো- চোরদের মানব পিতা অথবা মানস মাতা যাদের চোরের জাতেরা সাধারণত আব্বা হুজুর কিংবা আম্মা হুজুর বলে ধ্যান-জ্ঞান করে। বাংলাদেশে যাদের আম্মা হুজুর বা আব্বা হুজুর সম্বোধন করা হয়, ঠিক সেই জাতটিকে পশ্চিমা দুনিয়ায় বলা হয় গডফাদার বা গডমাদার। তৃতীয় ধরনটির নাম ধর্ম বাপ বা ধর্মী মা, যাদের অপর নাম হলো প্রত্যক্ষ অভিভাবক বা দলনেতা অর্থাৎ টিম লিডার!
চোরবিষয়ক বিজ্ঞানীরা খুব অবাক হবেন, চুরির মালসামানা নিয়ে জন্তু-জানোয়ারেরা অতীতকালে যেভাবে কলহ বিবাদে জড়াত ঠিক সেইভাবে মানুষরূপী চোরেরা নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সঙ্ঘাত করে না। তারা চুরি-ডাকাতির পণ্যসামগ্রী নিজেদের মধ্যে চমৎকারভাবে বণ্টন করে। তারা চুরির মালের একটি বৃহদাংশ তাদের তিন শ্রেণীর পিতা-মাতার অন্দরমহলে অত্যন্ত সঙ্গোপনে পাঠিয়ে দেয়, যা কাক-পক্ষীটাও টের পায় না। চুরির পণ্যের বণ্টন বা বিতরণের পাশাপাশি চুরিবিদ্যার বিপণন, চুরিসংক্রান্ত প্রশিক্ষণ এবং চুরিবিষয়ক প্রচার প্রপাগান্ডার ক্ষেত্রে মনুষ্যরূপীরা পশুদের শত যোজন পেছনে ফেলে দিয়েছে। চুরির পক্ষে সাফাই গাওয়ার জন্য চোরেরা তাদের তিন শ্রেণীর পিতা-মাতাকে উত্তমরূপে প্রশিক্ষিত করে। তারা তাদের মা’দের গলার দৈর্ঘ্য-প্রস্থ্য-পরিধি এবং ব্যাস বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে অস্ত্রোপচার ঘটিয়ে নিজেদের সুবিধামতো বড় করে নেয় যাতে বাংলা প্রবাদ প্রবচনে চোরের মায়ের বড় গলার অর্থ ও ভাব গাম্ভীর্যের সাথে মানানসই হয়।
বিজ্ঞানীরা একটি বিষয় গবেষণা করতে গিয়ে পেরেশান হয়ে পড়বেন। আর তা হলো- চোরেরা চৌর্য্যবৃত্তির মালসামানা তাদের তিন শ্রেণীর পিতা-মাতাকে কিভাবে খাওয়ায় এবং তার প্রতিক্রিয়া কিরূপ হয়। গবেষণার আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হবে চোরের মায়ের গলা এবং গর্ভের প্রশস্ততার কার্যকারণ খুঁজে বের করা। অর্থাৎ গলা বড় করার জন্য বিশেষ প্রক্ষালন যন্ত্রের ব্যবহার কে বা কারা উদ্বোধন করেছিল এবং কোন চোরের মা’দের গলা কতটুকু বড় হবে সেটির সূত্রসহ গলা বড় করার কায়দা কানুনের বিবরণ তৈরি করার পাশাপাশি চোরের জাত-পাত-জন্মরহস্য তথা জিনমরহস্য সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য সন্নিবেশিত করা। চোরের মা’দের গর্ভ বা জরায়ু রহস্যও বিজ্ঞানীদের ভাবনায় ফেলে দেবে। কারণ, চোরদের অন্যতম জাতভাই হলো প্রাকৃতিক পতঙ্গ বিচ্ছু। বিচ্ছুরা যখন জন্ম নেয় তখন সেগুলোর মা মারা যায়। বিচ্ছু মায়ের মৃত্যুর নেপথ্যে থাকে নবজাত বিচ্ছুর নির্মমতা ও নিষ্ঠুরতা। যেদিন থেকে বিচ্ছু মায়ের গর্ভের বিচ্ছু বাচ্চার শরীরে প্রাণের সঞ্চার ঘটে-সেদিন থেকে বিচ্ছুমণি তার মায়ের গর্ভের নাড়ি-ভুঁড়ি-, কলিজা-ফুসফুস ইত্যাদি খাওয়া আরম্ভ করে এবং যেদিন সে দুনিয়ার আলো বাতাসে বের হয়ে আসে সেদিন বিচ্ছু মায়ের মৃত্যু ঘটে।
চোরদের জাতভাই বিচ্ছুদের উল্লিখিত জন্মরহস্য এবং বিচ্ছুমণিদের মা’দের গর্ভভক্ষণের সাথে কেনো চোরের মায়ের গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মদানের মিল নেই, তাও জনস্বার্থে গবেষণা হওয়া দরকার। মানবসভ্যতার বিকাশে বিচ্ছুদের চেয়ে চোরের ভূমিকা অনেক বেশি ধ্বংসাত্মক। অন্য দিকে, বিচ্ছু মা’দের তুলনায় চোরের মা’দের ধ্বংসাত্মক কর্ম পৃথিবীকে অধিক মাত্রায় বিষাদময় এবং কলঙ্কময় করে তোলে বিধায় চোরের মায়ের গর্ভের কার্যকারিতা ও প্রশস্ততা নিয়ে আরো বেশি বেশি গবেষণা হওয়া উচিত। আমাদের বিজ্ঞানীরা ইতিমধ্যে আবিষ্কার করে ফেলেছেন যে, চোরের মায়েরা জ্যামিতিক হারে চোর জন্মদানে সক্ষম। অর্থাৎ চোরের মা-যদি প্রথম বছর একটি চোর পয়দা করে, তবে দ্বিতীয় বছর জন্ম দেয় দু’টি, যা তৃতীয় বছর হয় চারটি এবং এভাবে জ্যামিতিক হারে বাড়তেই থাকে।
আমরা আজকের আলোচনার শেষলগ্নে চলে এসেছি। এবার চোরের মায়ের গলা প্রসঙ্গে কিছু কথা বলে আজকের নিবন্ধের ইতি টানব। বাংলা ব্যাকরণের প্রবাদবাক্য চোরের মায়ের বড় গলা কোন আমলে রচিত হয়েছিল তা আমার জানা নেই। তবে নিবন্ধের শুরুতে বলেছি যে, আমি আমার শৈশবে আমার গ্রামে মানুষরূপী কোনো চোর বা চোরের মাকে দেখিনি। সুতরাং আবহমান বাংলার ষাট-সত্তর বা আশির দশকে গ্রামবাংলার পরিবেশ এমন ছিল না যাতে করে চোরের মা সমাজে প্রকাশ্যে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারে বা উচ্চস্বরে কথা বলতে পারে। তাহলে চোরের মায়ের বড় গলা নামক প্রবাদ প্রবচনটি কিভাবে এলো! আমার মনে হচ্ছে- এটি কোনো কবি বা সাহিত্যিকের কর্ম যিনি হয়তো ঊনবিংশ বা অষ্টাদশ শতাব্দীতে রচিত কোনো গল্প-কবিতা-উপন্যাসে কোনো কল্পিত চোরের মায়ের চরিত্র অঙ্কন করতে গিয়ে চোরের মায়ের বড় গলার কথা উল্লেখ করে থাকতে পারেন।
আমরা জানি যে, পৃথিবীতে অনেক কিছু বাস্তবে ঘটে যাওয়ার বহু দিন আগেই কবি সাহিত্যিক- জ্ঞানী-মহাজ্ঞানী বা জ্যোতিষীরা অনেক কিছুর নির্ভুল ছবি অঙ্কন করতে পারেন। যেমন লিওনার্দো দা ভিঞ্চি হেলিকপ্টার আবিষ্কারের পাঁচশ বছর পূর্বে যন্ত্রটির নির্ভুল নকশা অঙ্কন করে গিয়েছিলেন। একইভাবে তিনি যুদ্ধ ট্যাংকের ছবি অঙ্কন করে গিয়েছেন। ভারতীয় কবি-ঋষি বেদব্যাস হিন্দু দেবতা রামের জন্মের বহু বছর পূর্বে তার মহাকাব্য রামায়ণে রামের চরিত্র অঙ্কন করে গিয়েছেন এবং হিন্দু উপকথায় বলা হয়ে থাকে যে, ঋষি বেদব্যাস রচিত রামের চরিত্রের সাথে মিল রেখেই নাকি বিধাতা রামকে প্রয়োজনীয় গুণাবলি ও চরিত্র দান করে পৃথিবীতে পাঠিয়েছিলেন।
উপরোল্লিখিত ঘটনাগুলোর প্রেক্ষাপটে আমি ব্যক্তিগতভাবে বাংলার কবি-সাহিত্যিকদের নিয়ে ভীষণ হতাশা অনুভব করি। কারণ, সারা দুনিয়ার কবি-সাহিত্যিকেরা যখন দেবতার চরিত্র বর্ণনা করে কাব্য-রচনা করেন তখন বঙ্গের কবি সাহিত্যিকরা চোরের মায়ের বড় গলা নিয়ে গল্প-উপন্যাস-কবিতা বা প্রবাদ প্রবচন রচনা করেন, যার কারণে ২০১৯ সালে এসে আমাদের চোরের মায়ের বড় গলার বাজখাই আওয়াজের ভেঁপু শুনে ঘুমাতে যেতে হয়- আবার একই ভেপঁর পিলে চমকানো আওয়াজে ঘুম থেকে জেগে উঠতে হয়।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য