শীতে চুলের যত্নে যা করতে পারেন
শীতে চুলের যত্নে যা করতে পারেন - ছবি : সংগ্রহ
শীতকালীন রুক্ষ আবহাওয়ায় চুলের স্বাভাবিক আদ্রর্তা বজায় রাখা খুব সহজ নয়। এই সময় অনেকেই গরম পানি দিয়ে গোসল করেন, যা মাথার ত্বককে আরো শুষ্ক করে দেয়। শীতে রোদ পোহানো হয় খুব, ফলে সরাসরি রোদের তাপ চুলের ক্ষতি করে। আবার মাথায় স্কার্ফ বা টুপি পরলে যদি ঘাম জমে, তা থেকেও হতে পারে চুলের বিভিন্ন সমস্যা। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত শ্যাম্পু বা বিভিন্ন হেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করলে চুলের রুক্ষতা আরো বেড়ে যায়। সব মিলিয়ে কী করা উচিত আর কী করা উচিত নয়, তাই নিয়ে আজকের আয়োজন।
শীতের শুরুতেই একবার চুল ট্রিম (চুলের আগা ছাটা) করে নিন। এতে আগার রুক্ষ চুল দূর হয়ে যাবে। যতই শীতকালের রোদ ভালোবাসুন না কেন, চুলের কথা মাথায় রেখে তা থেকে কিছুটা দূরে থাকুন। দিনের বেলা বের হলে মাথায় হালকা স্কার্ফ ব্যবহার করুন, যা সরাসরি রোদ থেকে চুলকে বাঁচাবে।
বাইরে বের হলে যাতে চুলে বেশি ধুলো-ময়লা না জমে, সে দিকে খেয়াল রাখবেন। সপ্তাহে তিন দিন শ্যাম্পু করতে হবে। চেষ্টা করুন হালকা গরম পানিতে চুল ধোয়ার, পানি যেন বেশি গরম না হয়। ময়েশ্চারাইজারযুক্ত শ্যাম্পু এবং সাথে অবশ্যই ক্রিম কন্ডিশনার বেছে নিন।
শ্যাম্পু করার সময় এতে কয়েক ফোঁটা তেল মিশিয়ে নিতে পারেন। এতে চুল সিল্কি হবে, রুক্ষতাও কম হবে। শীত হোক বা গ্রীষ্ম, তেল মাখা অবস্থায় রাস্তায় বের না হওয়াই ভালো। এতে ধুলো জমবে চুলে এবং বারবার শ্যাম্পু করতে গিয়ে চুলের স্বাভাবিক আদ্রর্তা নষ্ট হয়ে যাবে। সপ্তাহে একদিন রাতে তেল গরম করে ম্যাসাজ করতে পারেন। তবে মনে রাখবেন, কখনই খুব গরম তেল চুলে লাগানো উচিত নয়। এতে চুল উঠে যেতে পারে। সারা রাত চুলে তেলের উপস্থিতিতে চুলের রুক্ষ ভাব কেটে যাবে এবং চুল হয়ে উঠবে ঝলমলে উজ্জ্বল। তবে যাদের ব্রণের সমস্যা আছে তারা চুলে তেল লাগিয়ে রাতে না ঘুমানোই ভালো।
সপ্তাহে অন্তত একদিন ডিপ কন্ডিশনিং মাস্ক বা কোনো ময়েশ্চারাইজিং হেয়ার প্যাক ব্যবহার করুন। চুলের ধরন বুঝে মাস্ক বা প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। একটা পাকা কলা চটকে তাতে এক চা-চামচ নারিকেল তেল, এক চা-চামচ অলিভ অয়েল এবং এক টেবিল-চামচ মধু মিশিয়ে চুলে লাগান। ২০ মিনিট রেখে চুল শুধু পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। শ্যাম্পু করবেন না। এবার বড় দাঁতের চিরুণি দিয়ে একবার চুল আচড়ে ভালো করে ধুয়ে নিন।
ডিপ কন্ডিশনিংয়ের জন্য মাখন খুবই উপকারী। যদি আপনার চুল খুবই রুক্ষ এবং ড্যামেজ হয়ে থাকে, তাহলে আপনি সামান্য পরিমাণ মাখন নিয়ে হালকা হাতে চুলে ম্যাসাজ করুন স্ক্যাল্পে নয়। এতে আপনার চুল আবার মসৃণ ও মোলায়েম হয়ে উঠবে। এটি আপনি চুলে লাগিয়ে সারারাতও রেখে দিতে পারেন।
শীতকালে চুলের প্রয়োজনীয় পুষ্টি বজায় রাখতে অ্যালোভেরা খুবই কার্যকরী। রাতে ঘুমানোর আগে অ্যালোভেরার রস পুরো স্ক্যাল্পে এবং হালকা করে চুলে লাগিয়ে ঘুমিয়ে পড়–ন। এতে চুল পুষ্টি লাভ করে ফলে চুল পড়া কম হয়। অন্য ঋতুতেও অ্যালোভেরা জেল মাথার স্কাল্পে লাগান। উপকার পাবেন।
শীতকালে চুলের মসৃণভাব বজায় রাখার জন্য একটি উপকারী প্যাক হচ্ছে- এক টেবিলচামচ রিঠার গুঁড়ো এক ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। এরপর একটি ডিমের কুসুম, পাকা পেঁপে দুই টেবিলচামচ, লেবুর রস এক চাচামচ, মেহেদি পাতা বাটা এক চা-চামচ একসাথে ভালো করে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করুন। আধাঘণ্টা মাথায় রেখে শ্যাম্পু করে নিন। শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার লাগিয়ে ভালো করে চুল ধুয়ে ফেলুন। এই প্যাকটি ব্যবহার করার আগে ভালো করে চুল তেল ম্যাসাজ করে নিতে হবে। ম্যাসাজ করার নিয়মটি হচ্ছেÑ নারিকেল তেল এক টেবিলচামচ, সরিষার তেল এক টেবিলচামচ, তিলের তেল এক টেবিলচামচ, লাল জবা থেতো করা একটি, দুর্বা ঘাস সাত-আটটি, মেথি এক টেবিলচামচ। এসব উপকরণ একসাথে একদিন রেখে ভালো করে ফুটিয়ে নিন। ঠাণ্ডা করে ছেঁকে মাথায় ম্যাসাজ করুন। সপ্তাহে দুই দিন নিয়মিত ম্যাসাজ করলে উপকার পাওয়া যাবে।
শীতে আমাদের তেমনি মাথার ত্বকের আর্দ্রতা কমে যাওয়ায় ত্বক শুষ্ক হয়ে যায় আর এতে মাথার ত্বকে মৃত কোষের পরিমাণও বৃদ্ধি পায়। তা ছাড়া এ সময় ত্বক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় খুশকি সমস্যাও বৃদ্ধি পায়। খুশকির সমস্যা থেকে বাঁচতে দুই-তিন টেবিলচামচ অ্যালোভেরা জেলের সাথে এক টেবিলচামচ নারিকেল তেল বা অলিভ অয়েল এবং কয়েক ফোঁটা পাতিলেবুর রস মিশিয়ে চুলে এবং মাথার ত্বকে লাগাতে পারেন। ৩০ মিনিট রেখে শ্যাম্পু করে নিন। খুশকি সমস্যা বেড়ে গেলে অ্যান্টি-ড্যানড্রাফ শ্যাম্পু দিয়ে সপ্তাহে অন্তত একবার চুল পরিষ্কার করতে হবে। বাকি দুইদিন অন্য কোনো ময়েশ্চারাইজিং শ্যাম্পু দিয়ে চুল ধুতে হবে।
যারা চুলে নানা রকম রং ব্যবহার করেন, তারা এই মৌসুমে তা থেকে বিরত থাকুন। কেননা হেয়ার কালারে থাকা বিভিন্ন কেমিক্যাল চুলকে রুক্ষ করতে পারে। মেহেদি চুলের জন্য উপকারী হলেও তা আর্দ্রতা টেনে নিয়ে চুলকে শুষ্ক করে দেয়। তাই শীতকালে মেহেদি ব্যবহার করাও ঠিক নয়।
শীতকালে ত্বকের ও চুলের যত্নে কিন্তু আপনাকে খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারেও মনোযোগী হতে হবে। শীতের শাকসবজি ও ফল সুন্দর স্বাস্থ্যোজ্জ্বল ত্বক ও চুলের জন্য প্রয়োজন। শিম, বরবটি, বিভিন্ন রকম শাক, মটরশুঁটি, ফুলকপি ইত্যাদি প্রতিদিনের খাদ্যতালিকায় রাখুন। হাতের নাগালের সব ফলই প্রতিদিন খাবেন। যেমন- আপেল, আমলকী কিংবা আমড়া সে যা-ই হোক না কেন। সপ্তাহে দু-তিনবার ফিশ অয়েল ক্যাপসুল বা ভিটামিন-ই ক্যাপসুল খেতে পারেন। এতে চুল ভালো থাকবে।
যেহেতু আমাদের শরীর শীতকালে প্রয়োজনীয় আর্দ্রতা হারিয়ে ফেলে, তাই আমাদের প্রয়োজন বেশি করে পানি পান করা। বেশি করে পানি পান করলে তা শরীরের স্বাভাবিক নমনীয়তা বজায় রাখতে সাহায্য করে। যার ফলে শরীরে রুক্ষ অনুভূতি সহজে আসতে পারে না। পাশাপাশি চুলও সতেজ থাকবে। সুতরাং বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় শীতকালে তুলনামূলক বেশি পানি পান করার চেষ্টা করুন।
এই মৌসুমে ঘন ঘন চুল আচড়ানোর অভ্যাস পরিহার করুন। আর উচ্চ তাপে ব্লো ড্রাই করাও উচিত নয়। এতে চুলের গোড়া ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এই সময়টা যত দূর সম্ভব ড্রায়ার বা অন্যান্য হিটিং টুল এড়িয়ে চলা উচিত। কিন্তু একেবারে জবজবে ভেজা চুল নিয়েও তো বাইরে বেরোনো যায় না, আর চুল শুকাতেও সময় লাগে। সে ক্ষেত্রে কী করণীয়? আমাদের পরামর্শ, একটা বড় তোয়ালে দিয়ে ভেজা চুল প্রথমে চেপে বাড়তি পানি শুষে নিন। ঘষবেন না, তাতে চুল রুক্ষ হয়ে যেতে পারে। এরপর তোয়ালেটা চুলে পাগড়ির মতো করে জড়িয়ে রেখে বাকি কাজ সারুন। মেকআপ করা বা পোশাক পরার মতো কাজগুলো এখনই করে নিতে পারেন। ৮০ ভাগ চুল এতেই শুকিয়ে যাবে। বাকিটা প্রাকৃতিক হাওয়ায় শুকিয়ে নিতে পারেন।