পেঁয়াজ ঝুলিয়ে ঝালমুড়ি বিক্রি : অভিনব বিক্রেতা
পেঁয়াজ ঝুলিয়ে ঝালমুড়ি বিক্রি - ছবি : নয়া দিগন্ত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসিতে খাবার খেয়ে কলা ভবনের সামনে দিয়ে স্যার এ. এফ. রহমান হলের দিকে যাওয়ার সময় চোখে পড়ে এক ঝালমুড়ি বিক্রেতা। তার সামনের গাছে একটি বড় পেঁয়াজ ঝুলিয়ে রেখেই মুড়ি বিক্রি করছেন। কৌতুহলী হয়ে তার সামনে এগিয়ে গেলাম। সালাম দিয়ে নাম জানতে চাইলাম। তিনি জানালেন, তার নাম মোহাম্মদ জসিম। বয়স ৩৭-৩৯ বলে দাবি তার। জসিমের গ্রামের বাড়ি ফরিদপুর। জীবিকার তাগিদে পরিবার নিয়ে থাকেন পুরান ঢাকায় জিনজিরা এলাকায়। তার ছোট পরিবারে আছেন তিনি, তার স্ত্রী ও দুই কন্যা। দুই মেয়ের জনক জসিমের বড় মেয়ে প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী আর ছোট মেয়ের বয়স মাত্র দেড় বছর। এই ছোট পরিবারের পরিচালনা ব্যয় জোগান দিতে তিনি ঝালমুড়ি বিক্রি করেন।
কুশল বিনিময়ের পর ঝালমুড়ি বিক্রেতার কাছে তার সামনে বড় পেঁয়াজটি ঝুলিয়ে রাখার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, যে লোক মুড়ি খেতে আসে সেই লোকই পেঁয়াজ চায়। কিন্তু পেঁয়াজের দাম বেশি হওয়ায় আমার পক্ষে পেঁয়াজ দেয়া সম্ভব না। তাই এখানে ৬৫ টাকায় কিনে আনা বড় পেঁয়াজটি ঝুলিয়ে রেখেছি। কেউ পেঁয়াজ চাইলে তাদের এটা দেখিয়ে বলি দাম কমলে ইনশাল্লাহ ঝালমুড়িতে আবার পেঁয়াজ ব্যবহার করবো।
ঝালমুড়ি বিক্রয় করে মাসে কত টাকা আয় হয়- এমন প্রশ্নের জবাবে জসিম উদ্দিন নয়া দিগন্তকে বলেন, সকল খরচ বাদ দিয়ে মাসে ১৫ থেকে ১৬ হাজার টাকা। কিন্তু পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি হওয়ায় তার বেচা কেনায় প্রভাব পরেছে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, অনেক ক্রেতা পেয়াইজ ছাড়া ঝালমুড়ি খান না। তাই আগের চাইতে বিক্রয় কম হওয়ায় তার আয়ে যে ঘাটতি দেখা দিয়েছে তার প্রভাব পড়ছে এই দরিদ্র ঝালমুড়ি বিক্রেতার পরিবারে।
পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে কী রকম সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে জসিম বলেন, আমার পরিবার ও দোকানে মাসে ২৫ কেজি পেঁয়াজ লাগে। আগে পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ৪০ টাকা হওয়ায় আমি মাত্র ১০০০ টাকায় ২৫ কেজি পেঁয়াজ কিনতে পারতাম। কিন্তু এখন পেঁয়াজের মূল্য হঠাৎ ২৫০ টাকা হয়ে যাওয়ায় ২৫ কেজি পেঁয়াজের দাম কিনতে প্রয়োজন ছয় হাজার টাকার উপরে। এই যে হঠাৎ বাড়তি ৫ হাজার টাকা মূল্য বৃদ্ধি হলো। কিন্তু আমার আয় কিন্তু ১ টাকাও বাড়েনি। তাই পেঁয়াজ ছাড়াই পরিবার ও দোকান চালাচ্ছি।
এ পরিস্থিতিতে কী করবেন? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, স্বল্পমূল্যে পেঁয়াজ বিক্রি করেন এমন এক ব্যবসায়ীর সাথে কথা হয়েছে। তিনি বলেছেন ৪৫ টাকা কেজি দরে আমাকে পেঁয়াজ দিবেন। বিনিময়ে প্রতি কেজিতে তাকে ১০ টাকা বেশি করে দিতে হবে। এখন যদি তিনি আমাকে পেঁয়াজ দেন তবে আমি আবার ঝালমুড়িতে পেঁয়াজ ব্যবহার করব। তাতে হয়তো আমার আবার বেচা-বিক্রি স্বাভাবিক পর্যায়ে চলে আসবে। এতে হয়তো পরিবার নিয়ে একটু ভালোভাবে চলতে পারবো।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের শিক্ষার্থী সাইদুর রহমান বলেন, পেঁয়াজ ছাড়া ঝালমুড়ি তেমন ভালো লাগে না। তবে এখন প্রায় ঝালমুড়ি বিক্রেতা পেঁয়াজের ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছেন। তাই আগের মতো ঝালমুড়ি খাওয়া হয়না।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থীকে জুই আক্তার বলেন, পেঁয়াজ ছাড়া কিভাবে ঝাল মুড়ি তৈরী হয়? আমার কাছে পেঁয়াজ ছাড়া ঝালমুড়ি একদমই ভালো লাগে না। তাই এখন আপাতত ঝাল মুড়ি খাচ্ছি না।