ঝুঁকির মধ্যে ৭০ বিলিয়ন ডলারের প্রকল্প!

শফিক রহমান | Nov 30, 2019 08:45 am
প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ও নরেন্দ্র মোদি

প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ও নরেন্দ্র মোদি - ছবি : সংগৃহীত

 

গত বছরের জুনে পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলভিত্তিক দুটি গুরুত্বপূর্ণ সরকারি মালিকানাধীন তেল কোম্পানি সৌদি আরামকো ও আবু ধাবি ন্যাশনাল ওয়েল কোম্পানি (এডিএনওসি) যৌথভাবে ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্যের রত্নাগিরি জেলায় বিশ্বের বৃহত্তম একক স্থানে স্থাপিত পরিশোধনাগার স্থাপনের সমঝোতা স্মারকে সই করেছিল। এতে আরো সই করেছিল ভারত পেট্রোলিয়াম কোরপোরেশন লিমিটেড (বিপিসিএল), ইন্ডিয়ান ওয়েল কোর. লি. (আইইসএল) ও হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম কোর লি. (এইচপিসিএল) নিয়ে গঠিত একটি কনসোর্টিয়াম। সাম্প্রতিক দুটি ঘটনা এই প্রকল্পের অগ্রগতিকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়েছে। এ দুটি হলো মহারাষ্ট্র রাজ্য নির্বাচনে পরাজয় এবং বিপিসিএল থেকে কৌশলগত বিনিয়োগ প্রত্যাহারে সরকারের সম্মতি।

পরিশোধনাগার স্থাপনের জন্য রত্নাগিরি জেলায় ভূমি অধিগ্রহণে বিরোধী হিসেবে পরিচিত রাজনৈতিক দল শিব সেনা রাজ্যে নতুন জোট সরকারের নেতৃত্বে থাকবে। শিব সেনার দীর্ঘ বিক্ষোভের কারণেই আগের সরকার সেখানে ভূমি অধিগ্রহণ করতে পারেনি। এর ফলে রাজ্য সরকার রত্নাগিরির বদলে রাইগাড়ে প্রকল্পের স্থান হিসেবে নির্বাচন করে। এতে নির্মাণ ব্যয় প্রাথমিকভাবে হিসাব করা ৪৪ বিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে হয় ৭০ বিলিয়ন ডলার।

রাজ্য সরকারের এই পরিবর্তন বিদ্যমান চুক্তিতে নিশ্চিতভাবেই প্রভাব ফেলবে। বিশেষ করে ক্ষমতাসীন জোটের এ ব্যাপারে পূর্বসূরীদের চেয়ে ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে। মিডিয়া প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন সরকার জাপান ও ভারতের মধ্যে বুলেট ট্রেন নিয়ে যে বিপুল বিনিয়োগের চুক্তি হয়েছে, তাও বাতিল করে দিতে পারে। এই সরকার ওই তহবিল কৃষকদের ঋণ মওকুফে ব্যয় করতে পারে। একইভাবে নতুন জোট সরকার ভূমি অধিগ্রহন হার বাড়ানোর বিষয়টিও বিবেচনা করছে। তাছাড়া বাস্তুচ্যুত কৃষকদের জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও করতে পারে। এতে করে পরিশোধন প্রকল্পটির জন্য আরো বেশি ব্যয় হবে এবং বাস্তবায়নেও সময় লাগবে। উপসাগরীয় বিনিয়োগকারী আরামকো ও এডিএনওসির প্রস্তুতি সত্ত্বেও ভূমি পাওয়ার ছাড়পত্র না পাওয়ায় প্রকল্পটির অগ্রযাত্রা থমকে আছে।

আরো সমস্যা হতে পারে পরিশোধনাগার চুক্তির অংশীদার বিপিসিএল থেকে সরকারি বিনিয়োগ প্রত্যহারে ভারতের অর্থ মন্ত্রণালয়ের আগ্রহে। আরামকোই বিপিসিএলে ভারত সরকারের ৫৩.২৯ ভাগ শেয়ার কিনে নিতে পারে। এছাড়া সম্ভাব্য আগ্রহীরা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সনমোবিল, শেভরন, ও কেনোকোফিলিপস, যুক্তরাজ্যের রয়্যাল ডাচ শেল ও বিপি, রাশিয়ার রসনেফ ও লাকওয়েল, পেট্রোচায়না, চীনের চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কোরপোরেশন, ও সিনোপ্যাক ও ফ্রান্সের টোটাল এসএ।

সরকারের বিপিসিএলের শেয়ার বিক্রির ঘোষণার পর মুডি তেল কোম্পানিটির রেটিং হ্রাস করার কথা ভাবছে। কারণ এটি সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে বেসরকারি কোম্পানিতে পরিণত হচ্ছে। আরামকো বা ভারতীয় কোম্পানি রিলায়েন্স যদি শেয়ার ক্রয় করতে সক্ষম হয়, তবে পরিশোধনাগারটির নির্মাণের সম্ভাবনা বহাল থাকবে, এমনকি বেড়েও যেতে পারে। অন্যথায়, নতুন বিনিয়োগকারীরা তাদের নিজস্ব শর্ত আরোপ করার মাধ্যমে এর কাজের বিলম্ব ঘটাবে। বাইরের ইস্যু ছাড়াও বিপিসিএলের নিজস্ব ব্যবস্থাপনাগত সমস্যাও আছে। লাভজনক এই সরকারি প্রতিষ্ঠানকে বেসরকারিকরণের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিকেরা দেশব্যাপী ধর্মঘট শুরু করেছে। বিপিসিএলের ভেতরে এসব সমস্যা চূড়ান্তভাবে মহারাষ্ট্রে পরিশোধনগারটির ভবিষ্যত নিয়ে সমস্যারই সৃষ্টি করবে।

এদিকে ভারতের প্রতি সমর্থন প্রদান এবং সেখানে বিপুল বিনিয়োগের পরিকল্পনার কারণে কয়েকটি দেশের সাথে সৌদি আরবের সম্পর্কে টানাপোড়েনের সৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে ভারত সরকারকে প্রকল্পটি এগিয়ে নিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। উল্লেখ্য, এটি হবে পেট্রোলিয়াম সম্পদে আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের একটি মাইলফলক। এছাড়া নির্মাণের সময় এই প্রকল্পে দেড় লাখ চাকরি সৃষ্টি করবে।

এশিয়া টাইমস


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us