ট্রাম্পের শর্ত মানবে তালেবান?
ট্রাম্পের শর্ত মানবে তালেবান? -
সেপ্টেম্বরে তালেবানের সাথে প্রায় এক বছর ধরে চলতে থাকা জটিল আলোচনা হঠাৎ করেই বাতিল করার পর প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চলতি সপ্তাহে আবার তা একই কায়দায় শুরু করার কথা জানিয়েছেন।
আলোচনা আবার শুরুর সম্ভাবনায় স্বস্তি দেখা গেলেও পাশ্চাত্যের কূটনীতিবিদ ও তালেবান নেতারা ভাবতে শুরু করেছেন, ট্রাম্প কি এজন্য নতুন কোনো শর্ত যোগ করেছেন। আফগানিস্তানে আকস্মিকভাবে থ্যাঙ্ক গিভিং সফরের সময় তার মন্তব্যে এই বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। তিনি বলেছেন, যুক্তরাষ্ট্র আবারো চুক্তি করার জন্য তালেবানের সাথে আলোচনায় বসবে, তবে তা হবে যুদ্ধবিরতির। যুদ্ধবিরতি দাবি করাটা হবে আমেরিকার অবস্থান থেকে একটি বড় ধরনের পরিবর্তন এবং এতে তালেবানের কাছ থেকে বিপুল ছাড়ের প্রয়োজন পড়বে।
প্রায় এক বছর ধরে চলা আলোচনায় তালেবান ও যুক্তরাষ্ট্র মূলত একই অবস্থানে ছিল। তা হলো তালেবান চেয়েছিল যে আমেরিকা যেন আফগানিস্তান থেকে সরে যায়। আবার যুক্তরাষ্ট্রও ১৮ বছর ধরে চলা যুদ্ধটি বন্ধ করতে চাচ্ছিল। তবে এ নিয়ে কিভাবে চুক্তিতে উপনীত হওয়া যায়, তা ছিল জটিল বিষয়।
তবে এই জটিলতা কাটিয়ে দুই পক্ষ যখন চুক্তি চূড়ান্ত করতে যাচ্ছিল, তখনই ট্রাম্প আলোচনা ভেঙে দিয়েছিলেন। ওই সময় তালেবান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত না হলেও সহিংসতা হ্রাস করতে রাজি ছিল বলে মনে হয়েছে। তাছাড়া যুক্তরাষ্ট্র তার বাহিনী প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়ার পর তালেবান ও আফগান নেতাদের মধ্যে ভবিষ্যতের আলোচনায় আলোচ্য সূচি হতো ব্যাপকভিত্তিক যুদ্ধবিরতি। কিন্তু বৃহস্পতিবার ট্রাম্প জানালেন, তালেবানের অবস্থানে পরিবর্তন হয়েছে।
তিনি বলেন, তারা যুদ্ধবিরতি চায়নি। কিন্তু এখন বিশ্বাস করি, এখন তারা বলছে যে তারা যুদ্ধবিরতি চায়। আমরা এখন দেখব, কী ঘটে।
ট্রাম্পের ঘোষণায় তালেবান দৃশ্যত বিস্মিত হয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে তালেবান যদিও কোনো না কোনোভাবে আবার আলোচনা শুরু নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অনানুষ্ঠানিক বৈঠক করলেও তাদের নেতারা জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি প্রশ্নে তাদের মূল অবস্থানে কোনো পরিবর্তন হয়নি। তালেবান আলোচক দলের সদস্য সোহাইল শাহিন নিউ ইয়র্ক টাইমসে বলেন, আমেরিকানরাই আলোচনার টেবিল থেকে সরে গিয়েছিল। এখন বল তাদের কোর্টে। এই সমস্যার সমাধান করতে তারা আলোচনার টেবিলে ফিরবে কিনা তা নির্ভর করছে তাদের ওপর। আমাদের অবস্থান একই রয়ে গেছে।
আমেরিকার আলোচকেরা তালেবানকে যুদ্ধবিরতিতে রাজি করাতে পারবে কিনা তা এখনো অস্পষ্ট। এদিকে আমেরিকান সামরিক বাহিনী ইতোমধ্যেই আফগানিস্তানে তাদের উপস্থিতি হ্রাস করতে শুরু করেছে। এর ফলে আলোচকেরা আগের চেয়ে কম সুবিধাজনক অবস্থায় থাকবে। গত মাসে আফগানিস্তানে শীর্ষ মার্কিন কমান্ডার জেনারেল অস্টিন এস মিলার বলেন, গত বছরে সৈন্য সংখ্যা দুই হাজার কমেছে। বৃহস্পতিবার ট্রাম্প বলেন, তিনি সৈন্য সংখ্যা ব্যাপকভাবে কমিয়ে আনছেন।
আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ গানি অবশ্য ট্রাম্পের বক্তব্যকে স্বাগত জানিয়েছেন। যুদ্ধবিরতি ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র যেন সৈন্য প্রত্যাহার না করে, তা নিশ্চিত করার ওপর জোর দিচ্ছিলেন গানি। কারণ তাতে তার সরকার আরো নাজুক অবস্থায় পড়বে।
গানি বাগরাম এয়ার ফিল্ডে ট্রাম্পের সাথে সাক্ষাত করেন। এ সময় তার প্রতিদ্বন্দ্বী আবদুল্লাহ আবদুল্লাহর বিপুলসংখ্যক সমর্থক বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। শুক্রবার আফগান রাজনীতির বড় অংশই নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ছিল। আবদুল্লাহ অভিযোগ করেছেন, দেশটির নির্বাচন কমিশন তিন লাখ প্রশ্নবিদ্ধ ভোট গানির অনুকূলে দিয়েছে।
এই দুই ব্যক্তির মধ্যকার বিরোধ আফগান সরকারকে আরো সমস্যায় ফেলে দিয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্প নতুন করে যে ঘোষণা দিলেন, তাতে করে পরিস্থিতি আরো জটিল হয়ে যাবে। অবশ্য কেউ কেউ মনে করছেন, সাম্প্রতিক বন্দি বিনিময়ের পর তালেবান কাবুলে হামলার সংখ্যা হ্রাস করায় তাদের মধ্যেও যে পরিবর্তন এসেছে, তা বোঝা যাচ্ছে। তবে যুদ্ধবিরতির জন্য চাপাচাপি করলে তালেবান হয়তো আলোচনা থেকেই বের হয়ে যাবে। সেক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের লক্ষ্য অর্জন করা আরো কঠিন হয়ে পড়বে।
এখন যুক্তরাষ্ট্রকেই তার অবস্থা নির্ধারণ করতে হবে। সাবেক মার্কিন কূটনীতিক ও বর্তমানে থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের এশিয়া পরিচালক লরেল মিলার বলেন, যুদ্ধবিরতি বলতে কী বোঝানো হয়েছে, তা মার্কিন কূটনীতিবিদদের আগে পরিষ্কার করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্র সম্ভবত সহিংসতা হ্রাস চাচ্ছে।
দি নিউ ইয়র্ক টাইমস