শ্রীলঙ্কায় নতুন প্রেসিডেন্ট, শঙ্কায় মুসলিম ও তালিমরা

মুনজা মোশতাক | Nov 25, 2019 08:23 pm
বৌদ্ধদের সাথে গোতাবায়া রাজাপাকসা

বৌদ্ধদের সাথে গোতাবায়া রাজাপাকসা - ছবি : সংগৃহীত

 

গত ১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় আসা নতুন প্রেসিডেন্ট গোতাবায়া রাজাপাকসার অধীনে ভাগ্যে কী আছে তা নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে শ্রীলঙ্কার সংখ্যালঘুরা।

গোতাবায়ার বিরুদ্ধে তামিল সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধের সময়ে যুদ্ধাপরাধ, ২০১৩ সালে কয়েকটি বৌদ্ধবাদী জাতীয়তাবাদী সংগঠনের মুসলিমবিরোধী প্রচারণা চালানো ও ২০১৪ সালে সম্প্রদায়টির বিরুদ্ধে আক্রমণের পরিকল্পনাসহ বিভিন্ন মারাত্মক অভিযোগ রয়েছে।

সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বড় ভাই মহিন্দা রাজাপাকসার আমলে শক্তিশালী প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালনকারী গোতাবায়া রাজাপাকসা লিবারেশন টাইগার্স অব তামিল ইলামকে (এলটিটিই) পরাজিত করার কৃতিত্ব দাবি করে থাকেন। তার ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি, দুর্নীতি ও ভিন্ন মতালম্বীদের দমনের মতো অভিযোগ থাকলেও ২৬ বছর ধরে চলা ওই গৃহযুদ্ধ অবসানের ফলে কঠোর হাতে দেশ শাসনের সুযোগ পেয়েছিলেন।

এবারের নির্বাচনের পর মনে হচ্ছে, রাজাপাকসারা ক্ষমতা মুষ্টিবদ্ধ করার জন্য ফিরে এসেছেন। নতুন প্রেসিডেন্ট পরবর্তী পার্লামেন্ট নির্বাচনের আগে পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তার ভাই মহিন্দা রাজাপাকসাকে নিযুক্ত করেছেন।

গোতাবায়া তার প্রথম ভাষণে এগিয়ে যাওয়ার পথচলায় তার সাথে যোগ দিতে তামিল ও মুসলিমদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু এই আহ্বানের সাথে অস্বস্তিদায়ক একটি কথাও তাদের স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন এই বলে যে ভোটের হিসেবে তিনি তাদের কাছ থেকে সাড়া পেয়েছেন সামান্যই।

তিনি বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ ছিলেন সিংহলি বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠদের প্রতি। তারাই তাকে ক্ষমতায় আনতে ভোট দিয়েছৈ। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটিতে ২১ মিলিয়ন লোকের মধ্যে তামিলরা ১২.৬ ভাগ। আর মুসলিমরা হলো ৯.৭ ভাগ।

বৈষম্যের অবসান
বেলজিয়ামভিত্তিক ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপের কান্ট্রি ডিরেক্টর অ্যালেন কিনান বলেন, নতুন প্রেসিডেন্ট যদি মনে করেন যে তামিল ও মুসলিমদেরও সমান সুরক্ষা পাওয়ার দাবিদার সমান মর্যাদার নাগরিক, তবে তাকে ওই ব্যাপারে সম্প্রদায় দুটিকে আশ্বস্ত করার জন্য কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।

তিনি বলেন, শ্রীলঙ্কায় রাষ্ট্রের হাতে তামিল ও মুসলিম উভয় সম্প্রদায় বৈষম্যের শিকার হয়েছে, তাদের বিরুদ্ধে মারাত্মক অপরাধ সংঘঠিত হয়েছে।

তিনি আনাদুলু এজেন্সিকে বলেন, বাস্তবতা হলো, গোতাবায়া যখন তার ভাইয়ের প্রেসিডেন্ট আমলে পুলিশ ও সামরিক বাহিনীর তদারকির দায়িত্বে ছিলেন, তখনই এ ধরনের অপরাধ হয়েছে। ফলে তাদের ওপর নতুন করে চাপ সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে।

তামিল ও মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতাপূর্ণ দেশটির উত্তর ও পূর্বে রাজাপাকসা ভয়াবহ পরাজয়ের শিকার হয়েছেন। সংখ্যালঘুদের বেশির ভাগই রাজাপাকসার প্রতিদ্বন্দ্বী সজিথ প্রেমাদাসাকে ভোট দিয়েছে। তাকে বিবেচনা করা হয় উদার প্রার্থী হিসেবে।

নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের পর কট্টরপন্থী অনেক রাজাপাকসা ফ্যান সামাজিক মাধ্যমে উত্তর ও পূর্বের ভোটারদের প্রতি তীব্র আক্রোশ প্রকাশ করেন। তারা তাদেরকে সন্ত্রাসী ও চরমপন্থী হিসেবে অভিহিত করে। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ এসব পোস্টের অনেকগুলো বাতিল করে দেয়।

জাতীয় পরিচিতি নির্মাণ

তামিল জাতীয় রাজনৈতিক অ্যাক্টিভিস্ট রঘু বালাচন্দ্রন বলেছেন, তামিল লোকজন সবসময়ই সংখ্যাগরিষ্ঠতাবাদের বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে।

তিনি আনাদুলু এজেন্সিকে বলেন, এই নির্বাচন সত্যিই মেরুকরণ করা ছিল। এতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোর কাছ থেকে একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা ছিল। ভবিষ্যতে এদিকে যথার্থ নজর দিতে হবে।

তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট হিসেবে রাজাপাকসার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হবে সব সম্প্রদায়কে ঐক্যবদ্ধ করা এবং শ্রীলঙ্কার পরিচিতি নির্মাণ করা। দেশকে যদি এগিয়ে নিতে হয়, তবে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ।

বালাচন্দ্রন বলেন, জাতিসঙ্ঘ হিসাবে গৃহযুদ্ধের সময় প্রায় ৪০ হাজার বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। যুদ্ধের সময়ে তামিল লোকজনের নিহত ও গুম হওয়া নিয়ে অনেক প্রশ্নের জবাব দিতে হবে প্রেসিডেন্টকে।
মুসলিম নাগরিক গ্রুপগুলোর জোট মুসলিম কাউন্সিল অব শ্রীলঙ্কার সহ-সভাপতি হিলমি আহমদও বালাচন্দ্রনের বক্তব্যের সাথে সুর মেলান।

তিনি আনাদুলু এজেন্সিকে বলেন, এই নির্বাচনে সিংহলি বৌদ্ধ ও বাকিদের মধ্যে বিরাজমান বিভক্তি তুলে ধরা হয়েছে। উত্তর ও পূর্বের সংখ্যালঘুরা ব্যাপকভাবে রাজাপাকসার বিরুদ্ধে ভোট দিয়েছে। সাবলীলভাবে দেশ পরিচালনা করতে চাইলে দেশকে ঐক্যবদ্ধ করাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে।

ঘটনাক্রমে রাজাপাকসা নির্বাচনে জয়ী হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই বৌদ্ধবাদী সন্নাসীদের নেতৃত্বে থাকা উগ্র জাতীয়তাবাদী দল- বদু বালা সেনা (বিবিএস) ও নবগঠিত সিংহলা রাভায়া ঘোষণা করেছে যে আগামী পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর তারা তাদের সংগঠনকে নিষিদ্ধ করবেন। তদেশ একজন ‘ভালো নেতা’ পেয়েছেন, এ কারণে তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানান। আগামী মার্চে ওই নির্বাচন হতে পারে।

পুরনো ক্ষত নিরাময়

থিঙ্ক ট্যাঙ্ক ন্যাশনাল পিস কাউন্সিলের নির্বাহী পরিচালক জেহান পেরেরা বলেন, শনিবারের নির্বাচন দেখিয়েছে যে যে ক্ষত রয়েছে, তার নিরাময় প্রয়োজন।

তিনি বলেন, জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বর্তমানে বিদ্বেষমূলক প্রচারণা চলছে। প্রেসিডেন্ট রাজাপাকসাকে তার প্রথম পদক্ষেপ হিসেবে জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের আশ্বস্ত করার পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে প্রথমেই।

তামিলদের বিরুদ্ধে গৃহযুদ্ধের সময়ে উভয় পক্ষের যুদ্ধাপরাধের অভিযোগগুলো বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত ও দায়ীদের বিচার করার ব্যাপারে রাজাপাকসার প্রেসিডেন্ট আমলে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে- এমন প্রত্যাশা করেন খুব কম লোকই।

আনাদুলু এজেন্সি


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us