গোয়াদর বন্দরটি কি চীনা নৌবাহিনীর জন্য?

ক্রিজটফ আওয়ানেক | Nov 23, 2019 08:39 am
গোয়াদর বন্দরটি কি চীনা নৌবাহিনীর জন্য?

গোয়াদর বন্দরটি কি চীনা নৌবাহিনীর জন্য? - ছবি : সংগৃহীত

 

ক্রমবর্ধমান যুক্তরাষ্ট্র-চীন উত্তেজনা ও ‘থুসিদিডেস ট্র্যাপ’ (প্রতিষ্ঠিত শক্তি ও উদীয়মান শক্তির মধ্যে সঙ্ঘাত অনিবার্য- এমন তত্ত্ব) একেবারে সহজ করে উপস্থাপনের প্রবণতা বাড়তে থাকায় বেইজিংয়ের অনেক পদক্ষেপকে প্রায় সম্পন্ন হয়ে যাওয়া চুক্তি ও সুদূরপ্রসারী কৌশলগত প্রভাব থাকা উদ্যোগ হিসেবে মনে করা হয়ে থাকে। কিন্তু সবসময়ের মতো আসল কথা বলো, বাস্তবতা আসলেই জটিল বিষয় এবং কেবল সময়ই আসল সত্য প্রকাশ করে। একটি কল্পকথা প্রায়ই ভেসে বেড়ায় যে পাকিস্তানের বেসামরিক বন্দর গোয়াদর (যেটি বেইজিংয়ের সহায়তায় উন্নয়ন করা হচ্ছে) চীনা নৌঘাঁটিতে পরিণত হবে।

নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, ভবিষ্যতের কোনো এক সময় কৌশলগত দৃষ্টিকোণ থেকে তাদের নৌবাহিনীর জন্য পাকিস্তানে একটি ঘাঁটি চালু করতে পারে চীন। কিন্তু তা এখনই হয়ে যাচ্ছে, এমন সুনির্দিষ্ট প্রমাণ নেই।

গোয়াদর বন্দরটি কি চীনা নৌবাহিনীর ঘাঁটিতে পরিণত হয়েছে? এ ব্যাপারে কোনো প্রমাণ নেই এবং বন্দরটি এখন যেভাবে উন্নয়ন করা হচ্ছে, তাতে করে তা হওয়া আরো অসম্ভব হয়ে পড়েছে। গোয়াদর বন্দরটি চীনের কাছে হস্তান্তর করার বা চীনা নৌবাহিনীর ব্যবহার করার জন্য প্রদান করার চুক্তি জানা যায়নি। দুই দেশের সরকারি পর্যায় থেকে এ ব্যাপারে এখন পর্যন্ত কিছুই বলা হয়নি। অনেক কিছুই গোপন রাখা হয়েছে, তা নিয়ে কোনোই সন্দেহ নেই। তবে জিবুতির ক্ষেত্রে যেটা হয়েছে, তা উদাহরণ হিসেবে নিতে পারি। ঘাঁটিটি চালু হওয়ার আগেই দুই দেশের মধ্যে চুক্তির কথা প্রকাশ পেয়েছিল।

আর গোয়াদর চীনা নৌঘাঁটিতে পরিণত হওয়ার কোনো প্রমাণ কি আমরা পেয়েছি? এর সুস্পষ্ট জবাব হবে না। ঘাঁটি সামরিক প্রয়োজনে ব্যবহৃত হতে পারে মর্মে অনেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হলেও তাতে কোনো ধরনের প্রমাণ নেই।
তবে এটা ঠিক, গোয়াদর বন্দরটি বেসামরিক প্রয়োজনের জন্য তৈরী হতে থাকলেও এখানে পাকিস্তান নৌবাহিনীর উপস্থিতি রয়েছে। গোয়াদরে পাকিস্তান নৌবাহিনীর জাহাজ ভেড়া শুরু হয়েছে। উপগ্রহ চিত্রে এবং দেশটির সংবাদপত্রেও এ নিয়ে অনেক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে, ২০১৬ সালের ডিসেম্বরে পাকিস্তান নৌবাহিনী টাস্ক ফোর্স-৮ গঠিন করেছে গোয়াদরে যাতায়াত পথে থাকা সাগরের লেনগুলো সুরক্ষার জন্য। এর ফলে পরিবহন জাহাজগুলো গোয়াদরে নিয়ে আসার জন্য নৌবাহিনীর জাহাজ ব্যবহৃত হয়ে আসছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ২০১৮ সালের মার্চে নৌবাহিনীর দুটি জাহাজ- পিএনএস দেশাত ও পিএনএস কারারকে সঙ্গী করে আসা প্রথম কন্টেইনার জাহাজ এম এস টাইগারকে স্বাগত জানায় গোয়াদর। গোয়াদরে পাকিস্তানি সৈন্য মোতায়েন রয়েছে। সেখানে তাদের প্রধান দায়িত্ব বন্দর উন্নয়নে জড়িত চীনা নাগরিকদের সুরক্ষা দেয়া।

সবচেয়ে বড় কথা হলো, গোয়াদরে পাকিস্তান নৌবাহিনীর রণতরী ভেড়ার খবর প্রকাশিত হলেও এখন পর্যন্ত কোনো চীনা জাহাজ ভেড়ার কথা প্রকাশিত হয়নি। পাকিস্তান ও চীনের মধ্যে বর্তমানে যে সম্পর্ক রয়েছে, তাতে করে চীনা কোনো রণতরী পাকিস্তানের কোনো বন্দরে ভেড়াটা স্বাভাবিক ব্যাপার বলে গণ্য করা হচ্ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও চীনা কোনো রণতরীর গোয়াদর বন্দরে অবতরণের খবর জানা যায়নি।

এখন পর্যন্ত চীনা সশস্ত্র দুটিমাত্র জাহাজের গোয়াদরে ভেড়ার খবর পাওয়া গেছে। এ দুটি হলো পিএমএস বাসল ও পিএমএসএস হিঙ্গল। দুটিই টহল জাহাজ। এবং সেগুলো বেইজিংয়ের কাছ থেকে কিনে নিয়েছে ইসলামাবাদ। জাহাজ দুটি গোয়াদর বন্দর রক্ষার দায়িত্বে রয়েছে।

আচ্ছা চীন কি গোয়াদরকে নৌঘাঁটিতে পরিণত করতে অন্তত চেষ্টা করছে? চীনা ঋণেই এর উন্নয়ন কাজ চলছে। চীন যে শর্তে পাকিস্তানকে ঋণ দিয়েছে, তাতে করে এই ধারণার সত্যতা পাওয়া কঠিন। চীনা ঋণে পাকিস্তানে আরো অনেক প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে। এটি তারই একটি। আবারো বলতে হচ্ছে, যেভাবে গোয়দার বন্দরকে গড়ে তোলা হচ্ছে, তাতে এর অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক চরিত্রটিই প্রকাশিত হচ্ছে। প্রতিরক্ষা প্রয়োজনের আলোকে বন্দরটি নির্মাণ করা হচ্ছে না।

আমরা কথার ফুলঝুড়ি ফুটিয়ে বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভ, মুক্তার মালা, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর ইত্যাদি নিয়ে অনেক কথা বলতে পারি। কিন্তু দিন শেষে বোঝা যাবে যে গোয়াদর এখনো একটি প্রত্যন্ত, প্রাদেশিক নগরীই রয়ে গেছে। এর বন্দরটি এখনো নির্মাণাধীন। এই বন্দরের সাথে পাকিস্তানের অন্যান্য অংশের তেমন যোগাযোগ এখনো হয়নি। এখন পর্যন্ত এখানে পানি, বিদ্যুৎ, বালুচ বিদ্রোহী গ্রুপের হামলা ইত্যাদি অনেক সমস্যায় জর্জরিত। কেবল কৌশলগত সামরিক ভূমিকা নয় ভবিষ্যতে এটি পরিবহন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে ওঠতে পারবে কিনা সে প্রশ্নও রয়েছে। হয়তো চীনা নৌবাহিনীর পাকিস্তানকে নিয়ে কোনো পরিকল্পনা আছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত তা প্রকাশ করা হয়নি।

দি ডিপ্লোম্যাট


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us