বাগদাদির মৃত্যুতে নতুন প্রশ্ন

এ কে এম মাকসুদুল হক | Nov 22, 2019 08:34 pm
আবু বকর আল বাগদাদি

আবু বকর আল বাগদাদি - ছবি : সংগৃহীত

 

গত ২৭ অক্টোবর পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী দেশের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘আইএস’ প্রধান আবু বকর আল বাগদাদিকে প্রায় ১০০ সৈন্যের দুর্ধর্ষ ডেল্টা ফোর্স দুঃসাহসিক এক অভিযানের মাধ্যমে ‘হত্যা করা’র খবর গণমাধ্যমে প্রকাশ করলেন। এই বাগদাদি ছিলেন উগ্রবাদী ‘আইএস’-এর ক্যারিশমাটিক নেতা এবং স্বঘোষিত খলিফা। তার নেতৃত্বে ‘আইএস’ ইরাক ও সিরিয়ার বিশাল এলাকা দখল করে কথিত খেলাফত প্রতিষ্ঠার জন্য নৃশংসতার রাজত্ব কায়েম করেছিল। একই সাথে ‘আইএস’ পাঁচটি মহাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নানা অজুহাতে সন্ত্রাসী আক্রমণ চালিয়ে বহু নিরীহ মানুষ হত্যা করেছে এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধন করে। বাগদাদির আদর্শে উদ্বুদ্ধ হয়ে কোনো কোনো অঞ্চলে কেউ কেউ এককভাবেও সন্ত্রাসী আক্রমণ চালিয়ে অনেকে নির্বিচারে হত্যা করে; অথচ নির্বিচারে মানুষ হত্যা করা ইসলাম কঠোরভাবে নিষিদ্ধ করেছে। আল কুরআন ঘোষণা করেছে, ‘নরহত্যা অথবা দুনিয়ার ধ্বংসাত্মক কার্য করা হেতু ব্যতীত কেউ কাউকে হত্যা করলে সে যেন দুনিয়ার সকল মানুষকেই হত্যা করল, আর কেউ কারও প্রাণ রক্ষা করলে সে যেন সকল মানুষের প্রাণ রক্ষা করল’ (সূরা- মায়েদা : ৩২)।

প্রশ্ন হলো এই বাগদাদির মৃত্যুতেই কি বিশ্ব সন্ত্রাসমুক্ত হয়ে যাবে? এক কথায় এর জবাব না দিয়ে বরং বিশ্বব্যবস্থাকে বিশ্লেষণ করা দরকার এই পরিপ্রেক্ষিতে ‘আইএস’-এর জন্ম, বাগদাদির উত্থান, মধ্যপ্রাচ্যে তেলকেন্দ্রিক অর্থনৈতিক ও আধিপত্যবাদী রাজনীতি, যুক্তরাষ্ট্রের ভূ-রাজনৈতিক কর্তৃত্বের রহস্য ইত্যাদি বিশদ আলোচনার দাবি রাখলেও সংক্ষেপে কয়েকটি বিষয়ে আলোকপাত করার চেষ্টা করছি।

আশির দশকের শুরুতে তৎকালীন কমিউনিস্ট পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তান দখল করে বসে। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী ও পুঁজিবাদী পরাশক্তি যুক্তরাষ্ট্র এশিয়ার হৃৎপিণ্ড আফগানিস্তান থেকে রুশদের বিতাড়িত করার জন্য মুজাহিদ বাহিনী গঠনের মাধ্যমে মুসলিম বিশ্ব থেকে জিহাদি সংগ্রহ করে তাদের হাতে অস্ত্র তুলে দেয়। সৌদি আরব অর্থ ও জনবল-ওসামা বিল লাদেনসহ সরবরাহ করে এবং প্রতিবেশী পাকিস্তান প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ ভূমি ব্যবহারের সুযোগ করে দেয়। দীর্ঘ এক দশকের যুদ্ধে পর্যুদস্ত হয়ে সোভিয়েত রাশিয়া আফগানিস্তান থেকে বিতাড়িত হলে যুক্তরাষ্ট্র ‘সফলতা’ অর্জন করে তড়িঘড়ি আফগানিস্তান ত্যাগ করেছিল। এরপরই স্থানীয় মুজাহিদ গ্রুপগুলো নিজেদের মধ্যে ক্ষমতার লড়াইয়ে লিপ্ত হলে তালেবানের উত্থান ঘটে।

অন্য দিকে বিদেশী মুজাহিদদের নিয়ে লাদেন আলকায়েদা প্রতিষ্ঠা করে সারা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার ডাক দেন। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে পাশ্চাত্যের যৌথ বাহিনী মিথ্যা অজুহাতে ২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণ করে। এদের প্রতিহত করার জন্য আলকায়েদার ইরাকি (AQI) শাখা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিন্তু যৌথ বাহিনীর কাছে বিধ্বস্ত হয়ে তারা ২০০৮ সালে ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক (আইএসআই) প্রতিষ্ঠা করে। পরে ২০১০ সালে বাগদাদি ‘আইএস’-এর নেতৃত্বে আসেন। ইরাকের সামারায় ১৯৭১ সালে জন্ম নেয়া বাগদাদি রাজধানী বাগদাদ ইসলামিক ইউনিভার্সিটি থেকে ‘ইসলামের সংস্কৃতি ও দর্শন’ নিয়ে পিএইচডি অর্জনের পর সামারার একটি মসজিদে ইমামতি করতেন। ২০০৪ সালে তিনি মার্কিন বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেছেন। ইতোমধ্যে সাদ্দাম বাহিনীর পরাজয়ের পর ইরাকে শিয়া শক্তির উত্থান ঘটে এবং শিয়া-সুন্নি দ্বন্দ্ব চরম আকার ধারণ করে। এই সুযোগে ‘আইএসআই’ সাদ্দাম বাহিনীর ছত্রভঙ্গ সৈনিকদের সঙ্ঘবদ্ধ করে শিয়াদের বিরুদ্ধে নৃশংসতা চালায়।

অবশ্য মার্কিন বাহিনী এর সুযোগ সৃষ্টি করে দেয় শিয়া সম্প্রদায়কে পার্শ্ববর্তী ইরানের প্রভাবমুক্ত রাখার জন্য এবং ইরাকের তৎকালীন শিয়া প্রধানমন্ত্রী নূরি আল মালিকিকে উৎখাত করার লক্ষ্যে। এরই মধ্যে ২০১১ সালে ‘আইএসআই’ সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট আসাদের বিরোধী, বিদ্রোহী বাহিনীর সাথে যোগ দিয়ে নিরাপদ এলাকা গড়ে তোলে এবং প্রচুর অস্ত্র ও রসদ পেয়ে যায়। এভাবে ২০১৩ সালে তারা সিরিয়ায় একটি বিশাল অঞ্চল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয় এবং দলের নামকরণ করে ইসলামিক স্টেট ইন ইরাক এবং লেভান্ট (ISIL)। ২০১৪ সালে তারা ইরাকের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলে বিশাল ভূমি দখল করে নেয় এবং সিরিয়ার প্রাচীন নগরী ‘রাকা’কে রাজধানী করে এ অঞ্চলে খেলাফতের ঘোষণা দেয়। এ সময় তারা আবার নাম পরিবর্তন করে হলো ইসলামিক স্টেট (আইএস)। তারা পশ্চিম সিরিয়া থেকে পূর্ব ইরাকের দজলা-ফোরাত নদীর বিধৌত অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তীর্ণ জনপদের প্রায় ৮৮ হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ন্ত্রণ শুরু এবং প্রায় ৮০ লাখ মানুষকে শাসন করতে থাকে।

এর মধ্যেই বাগদাদির ‘খেলাফতে’ অনুপ্রাণিত হয়ে প্রায় ৪০ হাজার বিদেশী যোদ্ধা তাদের সাথে যোগদান করে। এভাবে যুক্তরাষ্ট্রের পরোক্ষ আশকারায় বেড়ে ওঠা ‘আইএস’ একদিন মার্কিন সাংবাদিক জেমস ফোলের শিরñেদের ভিডিও প্রকাশ করার সাথে সাথে মার্কিনিদের টনক নড়ে যায়। ২০১৪ সালের আগস্টে যুক্তরাষ্ট্র বোমাবর্ষণের মাধ্যমে প্রথম ‘আইএস’বিরোধী অভিযান শুরু করে। গত মার্চে ‘আইএস’ তার শেষ ঘাঁটি সিরিয়ার বাঘৌজ হারানোর পর ২৭ অক্টোবর বাগদাদির মৃত্যুর মধ্য দিয়ে আপাতদৃষ্টিতে ‘আইএস’-এর পতন হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। জাতিসঙ্ঘের হিসাব মতে, ২০১৪ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত এই ‘আইএস’ সন্ত্রাস ছাড়াও যৌথবাহিনীর ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ যুদ্ধে প্রায় ৩০,৯১২ জন অসামরিক লোকের মৃত্যু হয়েছে।

খেলাফত ঘোষণার পর বাগদাদিকে মাত্র একবার ২০১৪ সালে ইরাকের মসুলে জনসমক্ষে উগ্রবাদী-জ্বালাময়ী বক্তৃতা দিতে দেখা গিয়েছিল। এরপর বিভিন্ন সময়ে তার মৃত্যুর সংবাদ যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য সূত্র প্রকাশ করেছে। ২০১৪ সালের নভেম্বর, ২০১৫ সালের জুলাই মাসে এবং ২০১৭ সালে জুন মাসে তার মৃত্যুর খবর নিউ ইয়র্ক টাইমসসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে বের হয়েছিল। কিন্তু ২০১৯-এর ২৯ মার্চ পুনরায় বাগদাদিকে শ্রীলঙ্কায় ‘ইস্টার সানডের’ ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার জন্য হামলাকারীদের প্রশংসা করতে দেখা যায়। এতে তিনি শ্রীলঙ্কার হামলাকে ‘নিউজিল্যান্ডে মসজিদে হামলার প্রতিশোধ’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। অবশ্য ফরাসি বিশেষজ্ঞও অন্যরা প্রমাণ করেছিলেন যে, ওই ভিডিওটি ছিল প্রতারণাপূর্ণ, যাতে বাগদাদির মুখে ডাবিং করা বক্তব্য প্রচার করা হয়েছিল ((Saeed Naqvi, The Daily Star, 03 Nov. 2019)। এসব কারণেই বাগদাদির মৃত্যু নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা দফতর বলেছে, এ ধরনের কোনো হামলা সিরিয়ার ইদলিবে হয়নি, যদিও ট্রাম্প রাশিয়াকে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা এই অভিযানের তথ্য সরবরাহ করেছে বলে দাবি করেছে। একটি সূত্র মতে, বাগদাদির একজন বিক্ষুব্ধ সহযোদ্ধা ২.৫ কোটি মার্কিন ডলারের বিনিময়ে তার অবস্থান প্রকাশ করে দেয়। এ দিকে একজন কুর্দি কমান্ডার বলেছেন, তারা মাসের পর মাস ধরে এ ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করছিলেন। আবার, ইরাকি গোয়েন্দা সংস্থা (NIS) এই তথ্য যুক্তরাষ্ট্রকে সরবরাহ করেছে বলে দাবি করছে। সব মিলে বাগদাদির মৃত্যুর এই সর্বশেষ সংবাদ অনেক প্রশ্ন উত্থাপন করেছে বিশ্ববাসীর সামনে। সাংবাদিকরা পরদিন অভিযানস্থলে গিয়ে শুধু ধ্বংসস্তূপই দেখতে পেয়েছেন। বাগদাদি আত্মঘাতী বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে ছিন্ন-ভিন্ন হয়ে যাওয়া, তার দেহাবশেষ সমুদ্রে সমাহিত করা, মার্কিন কংগ্রেস নেতৃবৃন্দ অভিযান সম্পর্কে অন্ধকারে থাকা প্রভৃতি এই অভিযান সম্পর্কে ব্যাপক সন্দেহের সৃষ্টি করেছে।

তবে অভিযানের সংশ্লিষ্ট যেহেতু বের হয়েছে সেহেতু ধরে নিতে হবে বিশদ বিবরণ, বাগদাদি নিহত হয়েছেন অথবা বুঝতে হবে ‘বাগদাদি মরিয়া প্রমাণ করলেন তিনি আগে মরেননি’। কিন্তু ঠিক কবে তার মৃত্যু হয়েছে সেটা হয়তো রহস্যাবৃতই থেকে যাবে। বারাক ওবামা তার দ্বিতীয় মেয়াদের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ঠিক বছরখানেক আগে লাদেনকে বধ করেছিলেন, যেমনটি এবার করলেন ট্রাম্প। আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হতে যাচ্ছে যেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদের জন্য প্রার্থী হবেন বলে জানা যায়। এ দিকে ইউক্রেনে অনাকাক্সিক্ষত প্রভাব বিস্তারের কারণে অভিশংসনের দ্বার প্রান্তে তিনি। অন্য দিকে সিরিয়া নীতি নিয়েও তিনি সমালোচনার মুখে। সিরিয়া থেকে সৈন্য প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের (তার প্রথম নির্বাচনী অঙ্গীকার) কারণে নিজ দলের মধ্যেই তিনি সমালোচিত। এই অভিযান ট্রাম্পের দেশবাসীকে সন্তুষ্ট করতে সহায়ক হবে এ কারণে যে, ‘আইএস’ হুমকি আপাতত নিয়ন্ত্রিত হলো। কারণ সাম্প্রতিক দশকগুলোতে যুক্তরাষ্ট্র বাইরের মোট ১৩টি বিভিন্ন সামরিক সংঘর্ষে জড়িত হয়ে প্রায় ১৮ ট্রিলিয়ন ডলার খরচের সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। কাজেই ‘আইএস’বিরোধী যুদ্ধের এই চোরাবালি থেকে উঠে আসার জন্য ট্রাম্পের সামনে আর কোনো বিকল্প ছিল না। বাগদাদির মৃত্যুতে ট্রাম্পের দলের সাথে বিরোধী দল ডেমোক্র্যাটরা সাময়িকভাবে আপস করেছে বলে মনে হয়।


বাগদাদি বধের পর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন হলো, বিশ্ব কি এবার সন্ত্রাসমুক্ত হয়েছে বা ‘আইএস’ কি স্তিমিত হয়ে পড়বে? মার্কিন সামরিক কর্মকর্তাসহ বিশেষজ্ঞরা কেউ বলতে পারছেন না, এই ক্যারিশমাটিক নেতার মৃত্যুর পর ‘আইএস’ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে কি না। তবে ‘আইএস’ নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রশ্নে দ্বিধাবিভক্ত হয়ে যেতে পারে। কিন্তু এর শক্তিমত্তা খুব একটা কমে আসবে বলে মনে হয় না। কারণ ইতোমধ্যে ‘আইএস’-এর তৎপরতা ইরাকের বাইরে পশ্চিম আফ্রিকা, আফগানিস্তান এবং দক্ষিণ এশিয়ায় লক্ষ করা যাচ্ছে।

ইরাক ও আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা মনে করেন, ‘আইএস’ সিরিয়ার বাইরেও বেড়ে উঠছে। এরই মধ্যে আফগানিস্তানে ‘আইএস-খোরাসান’ প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবং এরা প্রসারিত হচ্ছে পাকিস্তান, তাজিকিস্তান, ইরান, ভারত, বাংলাদেশ এবং ইন্দোনেশিয়াতে। ( (AP, Daily Star : ২৯ অক্টোবর ২০১৯)। এরই মধ্যে গত ২ নভেম্বর আফ্রিকার মালির এক সেনা ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে ৫৩ জন সেনাসদস্যকে হত্যা করা হয়েছে। মালিতে ‘আইএস’-এর শক্ত ঘাঁটি রয়েছে বলে জানা যায়। এ দিকে ভারতে কাশ্মির নিয়ে নতুন সমস্যা সৃষ্টির পটভূমিতে ‘আইএস’ কাশ্মিরিদের স্বাধীনতার যুদ্ধে যুক্ত হয়ে যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। এমনটি হলে পুরো দক্ষিণ এশিয়া সহিংসতাকবলিত হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। বাগদাদি নিহত হলেও তার উগ্রবাদী আদর্শের মৃত্যু হয়নি। তার সম্মোহনী শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিত্বের প্রভাবে অনেক বিদেশী যোদ্ধা চরমপন্থী আদর্শ এবং নৃশংসতার প্রশিক্ষণ সাথে নিয়ে নিজ নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছে। এরাই যথেষ্ট বৈশি^ক নিরাপত্তায় হুমকি সৃষ্টি করার জন্য।

সত্যিকারার্থে বৈশি^ক সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণ বা ‘আইএস’-এর সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধ করতে আন্তরিকভাবে হলে প্রথমেই যুক্তরাষ্ট্রকে এগিয়ে আসতে হবে। ২০১১ সালে লাদেন হত্যাকাণ্ড নিয়ে যেমন আমেরিকার ভূরাজনৈতিক নীতির ব্যাপারে সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছিল, তেমনি বাগদাদির মৃত্যু নিয়েও অনেক প্রশ্ন উত্থাপিত হয়েছে। এ জন্যই যুক্তরাষ্ট্রকে বলতে হচ্ছে ২০০৪ সালে কারাগারে সংগৃহীত নমুনা দ্বারা বাগদাদির ডিএনএ টেস্ট করে অথবা কিছু দিন আগে চুরি করে সংগৃহীত তার অন্তর্বাসের মাধ্যমে ডিএনএ পরীক্ষা করে বাগদাদির মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়েছে। বোঝা যাচ্ছে, বাগদাদির বেঁচে থাকা বা নিহত হওয়া দুটোকেই ‘রাজনৈতিক পণ্য’ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে স্বার্থপরতার সাথে।

বাগদাদির উত্থান, ‘আইএস’-এর বেড়ে ওঠা, সিরিয়ায় তেল ক্ষেত্রের দখল, পাশ্চাত্যের ইরানবিদ্বেষ, মধ্যপ্রাচ্যে সঙ্কট জিইয়ে রেখে সন্ত্রাসী রাষ্ট্র ইসরাইলকে নিরাপদ রাখা ইত্যাদি সব সমস্যাই মূলত এক সূত্রে গাথা। এ দিকে, ইরানি জুজু মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিনিদের তাড়া করে বেড়াচ্ছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে ‘আইএস’ পুরোপুরি বিতাড়িত হলে এখানে ইরানি প্রভাব শূন্যস্থান পূরণ করবে, যা মার্কিন স্বার্থে আঘাত হানতে পারে। কাজেই যুক্তরাষ্ট্রকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে তারা কি সন্ত্রাস নির্মূল চান? নাকি বৈশি^ক শান্তির প্রাধান্য বিনিময়ে নিজেদের স্বার্থটাকেই দিতে চান। শান্তি চাইলে অবশ্যই যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের নীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে।



নইলে খুব শিগগিরই ‘আইএস’ অন্য কোনো ক্যারিশমাটিক নেতার নেতৃত্বে আরো শক্তিশালী হয়ে আবির্ভূত হবে কিংবা এ ধরনের আরো একটি উগ্রবাদী গোষ্ঠী নতুন কোনো নেতার নেতৃত্বে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালিয়ে বিশ^কে আবার অস্থিতিশীল করে তুলতে পারে। সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্র সচিব জন কেরি এ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘শক্তি প্রয়োগ করে আজকের সন্ত্রাসীদের দমন করলেও তা আগামী দিনের সন্ত্রাসীদের হাত থেকে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে না। এ জন্য আমাদের সন্ত্রাসবিরোধী আন্দোলনের অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। আমাদের সশস্ত্র উগ্রবাদকে শুধু যুদ্ধ করে নয়, বরং এটার সৃষ্টিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে হবে’ (ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক এবং পিএইচডি গবেষক, ঢাবি
maksud2648@yahoo.com

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us