সেদিন যা ঘটেছিল শাবরা শাতিলায়
সেদিন যা ঘটেছিল শাবরা শাতিলায় - ছবি : সংগ্রহ
আমরা অনেকেই ভুলে গেছি, ৩৮ বছর আগে বৈরুতের শাবরা শাতিলায় ইসরাইলি সেনাবাহিনী কিভাবে অবরুদ্ধ ৩,৫০০ জন ফিলিস্তিনি ও লেবাননি মুসলমানকে হত্যা করেছিল। ঘটনা ঘটেছিল ১৯৮২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর বিকাল ৬টা থেকে ১৮ ডিসেম্বর সকাল ৮টা পর্যন্ত। ইহুদিবাদী ইসরাইলি সেনাবাহিনীর প্রত্যক্ষ মদদে ও উপস্থিতিতে খ্রিষ্টান ফালাঞ্জিস্টরা এ হত্যাকাণ্ড চালায়। এরা ইসরাইলের প্যারা মিলিশিয়া দল। ফিলিস্তিনি মুক্তি সংস্থা বা পিএলও উৎখাত ও ধ্বংস করার জন্য ইসরাইলি সেনাবাহিনী লেবাননে হামলা চালিয়েছিল। হত্যাকাণ্ডের সময় ইসরাইলি সেনা, ফালাঞ্জিস্ট খ্রিষ্টান বাহিনী ও দক্ষিণ লেবানন আর্মি ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিল। ইসরাইলি সেনাবাহিনী পুরো শাবরা ও শাতিলা শরণার্থী শিবিরের চার দিকে ঘিরে রাখে, যাতে কেউ বের হতে না পারে। রাতে এহেন নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সময় যুদ্ধে ব্যবহৃত ফ্লায়ার ব্যবহার করে আলোর ব্যবস্থা করা হয়।
১৯৮৩ সালে জাতিসঙ্ঘ কমিশন পুরো বিষয়টি নিরীক্ষা করে ইসরাইলকেই দায়ী করে এবং এই হত্যাকাণ্ডকে ‘গণহত্যা’ নামে অভিহিত করেছে। ইসরাইলের কাহান কমিশনও তদন্ত করে বলে, হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে ইসরাইলের নিরাপত্তা বাহিনী অবগত ছিল এবং তা বন্ধ করার জন্য কোনো উদ্যোগ নেয়নি। কমিশন পরোক্ষভাবে হলেও ইসরাইলকে এ জন্য দায়ী করে এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যারিয়েল শ্যারনকে হত্যাকাণ্ডের মহাবিপদকে উপেক্ষা করার জন্য অভিযুক্ত করে তাকে পদত্যাগ করতে বলেছিল। এটা আসলে ইসরাইলের একটি মুসলিম হত্যাযজ্ঞ। তা ছাড়া, ইসরাইলি কমিশন শ্যারনকে ব্যক্তিগতভাবে দায়ী করেছে। এত কিছুর পরও শ্যারন পদত্যাগ করেননি বরং পরবর্তী সময়ে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন। কমিশন মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স ডাইরেকটর যোশুয়া সাগুকে চাকরিচ্যুত করে এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আমোস আরোনের পদোন্নতি তিন বছরের জন্য স্থগিত করে দেয়।
১৯৮২ সালের ১৬ ডিসেম্বর, জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদ শাবরা-শাতিলা হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানায় এবং এটাকে গণহত্যা হিসেবে অভিহিত করে। জাতিসঙ্ঘে ভোটাভুটিতে ১২৩টি দেশ এ গণহত্যার বিরোধিতা করেছিল। জাতিসঙ্ঘ বলেছে, ১৯৪৮ সালের কনভেনশন অনুসারে এই অপরাধ একটি গণহত্যা।
ইসরাইলি সৈন্যরা ঘটনার তিন মাস আগেই লেবানন আক্রমণ করে রাজধানী বৈরুতের দিকে অগ্রসর হয়ে শাতিলার উদ্বাস্তু শিবির ঘেরাও করে রেখেছিল। যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্রবিরতি লঙ্ঘন করে পিএলও নেতৃবর্গ এবং ১৪ হাজার যোদ্ধাকে স্থান ত্যাগ করতে বলে।
নিরাপত্তা পরিষদে ১৫ সেপ্টেম্বর ৫২০ নম্বর সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছিল, সেখানে যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘিত হয়েছে প্রমাণিত হয়। তবে ইসরাইল এসব সিদ্ধান্তে কোনো গা করেনি।
অপারেশন চলাকালে শাবরা শাতিলাকে ইসরাইলের প্রতিরক্ষা ট্যাংক, শত শত ফালাঞ্জিস্ট বাহিনী খ্রিষ্টান যোদ্ধা মোতায়েন করে দুনিয়া থেকে বিছিন্ন করে রাখে। খ্রিষ্টান বাহিনী পিএলও সদস্যদের শত্রুজ্ঞান করে থাকে। লেবাননের গৃহযুদ্ধে তারা মুসলমানদের বিপক্ষে যুদ্ধ করেছিল। ওই যুদ্ধে এক লাখ ২০ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেছে। ফালাঞ্জিস্টরা মনে করে, লেবাননের প্রেসিডেন্ট বশির জামায়েলকে পিএলও হত্যা করেছে। তবে এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
ইসরাইলি সেনাদের উপস্থিতিতে খ্রিষ্টান মিলিশিয়ারা কোনো বাধা ছাড়াই ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু শিবিরে ঢোকে। মিলিশিয়ারা সেখানে মহিলাদের ধর্ষণ ও নির্যাতনসহ হত্যা করে তিন হাজার ৫০০ ফিলিস্তিনিকে এবং শাবরা শাতিলার অধিবাসীদের শেষ করে দেয়, বুলডোজার দিয়ে মৃতদেহ মাটি চাপা দেয়।
লেবাননে পিএলও ঘাঁটি ধ্বংস করে বৈরুতে পুতুল সরকার বসানো ইসরাইলের আরেকটি উদ্দেশ্য ছিল এই হত্যাযজ্ঞের পেছনে। ইসরাইলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী অ্যারিয়েল শ্যারন বাহ্যিকভাবে চুপচাপ থেকে সব নির্দেশ ও পরামর্শ দিয়েছিলেন। বলা হয়, ১৭ সেপ্টেম্বর তাকে সব বিস্তারিত বলা হয়েছিল। তিনি ‘দেখছেন’ বলে মাত্র কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ‘সব কাজ সেরে ফেলার’ নির্দেশ দিয়েছিলেন। পরে তদন্ত কমিশন শ্যারনের এই সম্পৃক্ততা খুঁজে পায়।
নিরাপত্তা পরিষদের ৫২১ নম্বর সিদ্ধান্ত মোতাবেক ১৬ ডিসেম্বর, ১৯৮২ সালে জাতিসঙ্ঘের সাধারণ পরিষদ ঘোষণা দেয় যে ‘এটি একটি গণহত্যা।’ নরপশু শ্যারন তার পদ হারালেও পরে তিনি ২০০১ সালে ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী হন। পিএলও যোদ্ধাদের বৈরুত থেকে বের করে দেয়া হয়। লেবাননে আমেরিকার বাহিনী ছিল তখন। এই ঘটনা আমেরিকার সুনাম নষ্ট করেছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিগ্যান মেরিন সেনাদের দেশে তলব করেন। এক বছর পর ’৮৩ সালের ২৩ অক্টোবর, বৈরুতে ২৪১ জন আমেরিকার সার্ভিসম্যান ব্যাপারে বড় দু’টি ট্রাকবোমা হামলায় নিহত হন। প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান সেখান থেকে চিরদিনের মতো মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করেন। ফিলিস্তিনিদের কাছে শাবরা শাতিলা দেশান্তর, হত্যা ও নিপীড়নের বড় এক স্মারক। লেবাননে এখনো সে প্রক্রিয়া যেন সমাপ্ত হয়নি।
জনগোষ্ঠীর কোনো অংশকে অন্তরীণ রাখা সংশ্লিষ্ট সরকারের নির্যাতনমূলক একটি কাজ। বিনাবিচারে আটকে রাখা এক ধরনের কারাবাস। ‘কনসেনট্রেশন ক্যাম্প’ হিসেবেও এর অশুভ পরিচিতি রয়েছে। সর্বজনীন মানবাধিকার সনদের ৯ নং ধারায় ঘোষিত হয়েছে, কাউকে খামখেয়ালিভাবে গ্রেফতার, অন্তরীণ বা নির্বাসনে দেয়া যাবে না। তবুও বিভিন্ন দেশে বহু মানুষকে অবৈধভাবে অন্তরীণ রাখা হচ্ছে। এর সাথে অনেক অপরাধও সংঘটিত হচ্ছে। মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনমূলক অপরাধও অব্যাহতভাবে চলছে।
মুসলমানরাই প্রধানত এই নির্যাতনের শিকার। অধুনা ভারতেও এমন ঘটনা বেড়ে গেছে। মুসলমানের বিরুদ্ধে যেসব দেশ অবস্থান নিয়েছে মূলত সেসব দেশে এই অপরাধ।
উত্তর-পূর্ব ভারতের আসামের গোয়ালপাড়ায়ও এমন ঘটনা ঘটেছে, যেখানে তিন হাজার মানুষকে পশুর মতো খোঁয়াড়ে আবদ্ধ রাখা হয়েছে। ঘুমানোর জায়গা ও চিকিৎসাসেবা থেকেও তা বঞ্চিত। সেখানে নজরদারির জন্য টাওয়ার বানানো রয়েছে, উঁচু দেয়াল ও প্যাঁচানো কাঁটা তার দিয়ে ঘেরা স্থানটি- অর্থাৎ একটি কনসেনট্রেশন ক্যাম্প বলতে যা বোঝায় তা-ই আছে সেখানে। আসামে এরকম আরো ১১টি ক্যাম্প তৈরি করা হয়েছে। যাদের ভারতের ‘নাগরিকত্ব নেই’ তারা এখানে থাকবে। বলা হলো, অনেক অভিবাসী বাংলাদেশ থেকে একসময় আসামে গেছে। ওখানে বসবাসরত বাঙালি মুসলমানরাও রয়েছে তালিকায় যারা বাপ-দাদার আমল থেকেই আসামে বসবাস করছে। ভারত মনে করে, এখন তাদের আর প্রয়োজন নেই।
অবৈধ অভিবাসীদের জন্য বিশাল আকারে নতুন আটক কেন্দ্র বা ডিটেনশন সেন্টার তৈরি করা হয়েছে কর্নাটকের নেলামঙ্গলায়। বেঙ্গালুরু থেকে প্রায় ৪০ কিলোমিটার দূরে, ‘অবৈধ’ অভিবাসী বা ‘বিদেশী’ নাগরিকদের রাখার জন্য এই নতুন আটক কেন্দ্রটি প্রস্তুত। কাঁটা তারের বেড়া ও বিশাল লোহার দরজা রয়েছে এই সেন্টারে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন, এনআরসি সারা দেশেই পরিচালিত হবে এবং অবৈধ অভিবাসীদের ‘দেশের বাইরে ছুড়ে ফেলে দেয়া’ হবে। কর্নাটকের বিজেপি দলীয় এমপি পিসি মোহন এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে ঘোষণা করেছেন, বাংলাদেশী অভিবাসীরা ‘অবশ্যই আমাদের দেশের জন্য হুমকি’।
ইসরাইলের নেতানিয়াহু ভারতের মোদির ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের একজন। তিনিও ফিলিস্তিনিদের অনেক জায়গায় বন্দী করে রেখেছেন। তার আগে অ্যারিয়েল শ্যারন শাবরা শাতিলায় অবরুদ্ধ ফিলিস্তিনিদের তিন হাজার ৫০০ জনকে পাইকারিভাবে হত্যা করেছিলেন, যা উপরে বর্ণিত হয়েছে।
গাজা ভূখণ্ড, যেখানে দুই মিলিয়ন মানুষের বসবাস, সেটিও এক কারাগার মাত্র। ইসরাইলিরা পুরো গাজাকে, খাবার পানি, বিদ্যুৎ, স্বাস্থ্য ও চিকিৎসার সুযোগ থেকে বছরের পর বছর বঞ্চিত করে রেখেছে। আকাশ, সমুদ্র ও ভূমি সব দিক দিয়ে গাজাবাসীকে রাখা হয়েছে বিছিন্ন করে। তুরস্ক কয়েক বছর আগে জাহাজ করে খাবার ও ওষুধ নিয়ে গেলে ইসরাইলি সেনারা ত্রুদের মেরে সব কিছু জব্দ করে নেয়। এখন বিশ্বে গাজাই বড় কনসেনট্রেশন ক্যাম্প। জাতিসঙ্ঘ মন্তব্য করেছে, গাজা বসবাসের অনুপযোগী হয়ে উঠেছে। সেখানকার লোকজন অন্যত্র চলে গেলে ইসরাইল এটাকে ‘সুন্দরভাবে’ সাজাবে, বাণিজ্য বন্দর ও সমুদ্রে সাবমেরিন সেন্টার বানাবে। সমুদ্রের মধ্যে একটি দ্বীপ বানানোর কাজ এর মধ্যে শুরু হয়ে গেছে। গাজার লোকজন এখন ইসরাইল যা দেয়, তার ওপর নির্ভরশীল। শিশু ও ফিলিস্তিনিদের মানুষের খোঁয়াড়ে আবদ্ধ রেখে ইসরাইল বিশ্ব কুখ্যাতি অর্জন করেছে। এমনকি, সেখানে ১০-১২ বছরের শিশুদেরও জেলক্যাম্পে আবদ্ধ করে রাখা হয়েছে।
ভারত অধিকৃত কাশ্মিরে ৪৭১টি টর্চার সেন্টার রয়েছে। সেখানে প্রতি পাঁচজনে একজন নির্যাতিত। প্রতি পাঁচ কিলোমিটারে একটি নির্যাতন সেন্টার। যারা গ্রেফতার হচ্ছে, তাদের ৯৫ শতাংশকেই নির্যাতন করা হচ্ছে। নির্যাতনের মাধ্যম হলো মাথা পানিতে ডুবানো, বিদ্যুতের শক, পা দিয়ে রোলিং করা, লজ্জাস্থানে মরিচের গুঁড়া লাগিয়ে দেয়া, নির্যাতন চালানোর সময় উলঙ্গ করে রাখা, অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ কাটা, যৌন নির্যাতন, লোহার শলাকা বিদ্ধকরণ, উপুড় করে ঝুলিয়ে রাখা, ময়লা পানি পান করানো প্রভৃতি। ভারত জাতিসঙ্ঘের কনভেনশন অ্যাগেইনেস্ট টর্চারে স্বাক্ষর করলেও তা আজও অনুমোদন করে। কাশ্মিরের টর্চার সেন্টারের মধ্যে সাতটি প্রধান। সেগুলো হলো-
১. হরি নিবাস : কুখ্যাত মহারাজা হরি সিংহের বানানো প্রাসাদ। ১৯৮০-এর দশকে ৪৩ লাখ টাকায় কিনে কাশ্মির হোটেল লিমিটেড করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। ২৫ একর জায়গা, বর্তমান মূল্য ৫০০ কোটি রুপি। ১৯৯০ সালে এখানে কাশ্মিরি যুবকদের জিজ্ঞাসাবাদ করা শুরু হয় এবং বেধড়ক মারধর করা হতো তাদের, অনেকে মারা যেত। ২০০৩ সালে সিআইডি নিয়ে নেন ভবনটি। কিছু অংশ বিবাহ ভোজের জন্যও ব্যবহৃত হয়ে থাকে।
২. পাপা ২ : শ্রীনগরের সবচেয়ে কুখ্যাত এই সেন্টার। বিএসএফ নির্যাতন সেল হিসেবে ব্যবহার করে এটাকে। অনেক কাশ্মিরিকে এখানে হত্যা করা হয়েছে। একবার এখানে ঢুকানো হলে ফিরে আসা নিছক ভাগ্যের ব্যাপার। ১৯৯৬ সালে এটি বন্ধ করে দেয়া হয় এবং সরকার অনেক টাকাকড়ি খরচ করে সরকারি ভবনে পরিণত করে। পরে চিফ মিনিস্টার থাকতেন। মাহবুবা মুফতি ও তার বাবা মুফতি সাঈদও এখানে থেকেছেন।
৩. কারগো : বড় একটি পাকা কোঠা। এখানে সাইবার পুলিশ ও দাঙ্গা পুলিশ থাকে। লোকজনকে ধরে এনে এখানে ফেলে রাখা হয়। ২০০৮ ও ২০১০ সালে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের যারা পাথর বর্ষণ করেছিল, তাদের এখানে এনেই নির্যাতন করা হয়েছে।
৪. কাউসা হাউজ : শ্রীনগরের মাঝখানে অবস্থিত এই ভবনটি ‘সন্ত্রাসবিরোধী’ কার্যক্রম পরিচালনা করে। এখানে লোকজনকে ডিটেনশন দেয়া হয় কোনো আইনগত নির্দেশ ছাড়াই।
৫. লাল ১৬ : একটি লাল রঙের দোতলা দালান। এখানেও মুসলিম যুবকদের ওপর নির্যাতন চলে।
৬. বাদামি বাগ ক্যান্টনমেন্ট : এখানে অগণিত কাশ্মিরিকে নির্যাতন করা হয়েছে। এখনো সেখানে নির্যাতন করা হয়।
৭. শরিফাবাদ ক্যাম্প : এখানে লোহার গরম ট্যাংকে কাশ্মিরিদের নির্যাতন করা হয়।
পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জাতিসঙ্ঘে বলেছেন, গত ৫২ দিন ধরে ৮০ লাখ কাশ্মিরিকে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। ৯ লাখের বেশি সৈন্য মোতায়েন করে সেখানকার নাগরিকদের সাথে পশুসুলভ আচরণ করছে ভারতের আরএসএস মতাদর্শী মোদি সরকার। এই ভাষণের পর হাজার হাজার মানুষ ঘর থেকে বের হয়ে স্বাধীনতার ডাক এবং ইমরানের পক্ষে স্লোগান দিতে থাকে। কাশ্মিরের ১৩ হাজার শিশু এখন কোথায়, তাদের বাবা-মা জানেন না। সম্প্রতি জম্মু ও কাশ্মিরের বিশেষ মর্যাদা বাতিলের পর সেখানে প্রায় তিন শ’ মানুষ ভারতীয় জননিরাপত্তা আইনের অধীনে গ্রেফতার হয়েছেন।
তাদের বেশির ভাগকেই হাজার কিলোমিটার দূরে, উত্তর প্রদেশের বিভিন্ন কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। জননিরাপত্তা আইনের (পিএসএ) অধীনে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিদের বিনা বিচারে দুই বছর পর্যন্ত আটকে রাখা যায়। বিভিন্ন অভিযোগে পাঁচ হাজার মানুষকে আটক করেছে ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। বাড়ি থেকে হাজার কিলোমিটার দূরের কারাগারে আটকে রাখায় বন্দীদের পরিবারের সদস্যরা তাদের সাথে দেখা করতে পারে না কিংবা তারা কী অবস্থায় আছেন সে সম্পর্কে কোনো তথ্যই পাচ্ছেন না। ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলি নির্যাতন ও কাশ্মিরিদের ওপর ভারতের নির্যাতনে কোনো পার্থক্য দেখা যাচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে শাবরা শাতিলা মাইলফলক হয়ে থাকবে যেন!
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত যুগ্মসচিব ও গ্রন্থকার