মা-বাবার নেক দোয়া সন্তানের শ্রেষ্ঠ পাথেয়

শামসুল ইসলাম সাদিক | Nov 21, 2019 04:30 pm
মা-বাবার নেক দোয়া সন্তানের শ্রেষ্ঠ পাথেয়

মা-বাবার নেক দোয়া সন্তানের শ্রেষ্ঠ পাথেয় - ছবি : সংগ্রহ

 

সৃষ্টিকর্তা মানবজাতিকে মা-বাবার মাধ্যমেই সুন্দর ধরনীর আলো-বাতাস দেখিয়েছেন। পৃথিবীতে মা-বাবাই সন্তানের আপনজন। সন্তানের জন্য মা-বাবার মতো আপন পৃথিবীতে দ্বিতীয় কেউ নেই। সন্তান জন্ম নেয়ার পর মা-বাবা সর্বোচ্চ ত্যাগ স্বীকার করেন। সৃষ্টিকর্তা মা-বাবার খেদমত করার জন্য সর্বাধিক তাগিদ দিয়েছেন। মহান প্রভু তাঁর ইবাদতের পর মা-বাবার খেদমত করার নির্দেশ দিয়েছেন। মুসলিম জাতির উপর সৃষ্টিকর্তার ইবাদত করা ফরজ ঠিক মা-বাবার খেদমত করা প্রত্যেক মানুষের উপরও ফরজ। সর্বাবস্থায় আল্লাহর সব হুকুম পালনে বাধ্য থাকতে হবে, তেমনি জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে মা-বাবার অনুগত থেকে তাঁদের খেদমত করতে হবে।

সৃষ্টিকর্তা ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তিনি ব্যতীত তোমরা অন্য কারো ইবাদত করো না এবং মা-বাবার প্রতি সর্বদায় সদ্ব্যবহার করো।

তাদের একজন বা উভয়েই তোমাদের জীবদ্দশায় বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদেরকে ‘উফ’ শব্দ বলো না (বিরক্তি, উপেক্ষা, অবজ্ঞা, ক্রোধ ও ঘৃণাসূচক কোনো কথা) এবং তাদেরকে ধমক দিও না, তাদের সাথে সম্মানসূচক নম্র কথা বলো। মমতাবশে তাদের প্রতি নম্রতার পক্ষপুট অবনমিত করো এবং বলো ‘হে আমার রব! তাদের প্রতি দয়া করো, যেভাবে শৈশবে তাঁরা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন। তোমাদের অন্তরে যা আছে তা তোমাদের প্রতিপালক ভালো করেই জানেন। যদি তোমরা সৎ হও, তবে তিনি তওবাকারীদের জন্য ক্ষমাশীল।’

অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে, ‘তোমরা তোমাদের রবের ইবাদত করবে ও কোনো কিছুকে তাঁর সাথে শরিক করবে না এবং মা-বাবা, আত্মীয় স্বজন, এতিম-অনাথ, অভাবগ্রস্ত, নিকটাত্মীয়, দূর, প্রতিবেশী, সঙ্গী-সাথী পথচারী এবং তোমাদের অধিকারভুক্ত দাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করবে’ । মানুষের সম্পদ সৃষ্টিকর্তার জন্য ব্যয় যেমনি করতে হবে, ঠিক সন্তানরাও মা-বাবার খেদমতের জন্য ব্যয় করতে হবে।

মা-বাবা সন্তানের অতি আপনজন। তাঁদের সর্বাবস্থায় সন্তুষ্ট রাখতে হবে, সম্মান প্রদর্শন করতে হবে, সেবা করতে হবে। বর্তমান সমাজে অশিক্ষিত লোকেরা মা-বাবার সাথে দুর্ব্যবহার করছেই; আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত লোকদের অবস্থা করুণ ও ভয়াবহ। অশিক্ষিত লোকদের চেয়ে শিক্ষিতরা আধুনিকতার দম্ভে মা-বাবার সাথে দুর্ব্যবহার করছেন। শিক্ষিত ছেলেরা যদি শিক্ষিত স্ত্রী পেয়ে যান, তাহলে মা-বাবার জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায়। কারণ বয়োবৃদ্ধ মা-বাবার সেবায় এগিয়ে এলে তাদের বর্তমান আধুনিক স্টাইল নষ্ট হয়ে যাবে। বিধায় মা-বাবার খেদমতের ধারে কাছে আসতে রাজি হন না- বরং দূরে দূরে থাকতে চান।

শিক্ষিত-অশিক্ষিত ছেলেরা তারা তাদের প্রিয়তমা স্ত্রীর কুপরামর্শে মা-বাবার স্বর্গীয় সাহচর্য ছিন্ন করতে বাধ্য হন। যা অনেক হৃদয়বিদারক ও মর্মস্পর্শী। বর্তমান সমাজে এর অন্যতম কারণ ইসলামী সুশিক্ষা ও নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়। শিক্ষিত লোক মা-বাবার সাথে দুর্ব্যবহার করবে কেন? স্ত্রীর সুপরামর্শ সায় না দিয়ে কুপরামর্শে সায় দেবে কেন?

শিক্ষিত ছেলেমেয়েরা মা-বাবার অবাধ্য হলে জাতি নৈতিকতা শিখবে কোথায়? সন্তানের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের জন্য নিশ্চয় মা-বাবার বাধ্য থাকতে হবে এবং তাঁদের সেবায় আত্মনিয়োগ করতে হবে। ইসলামের ইতিহাসে মা-বাবার দায়িত্ব ও গুরুত্ব অপরিসীম।

হাদিসে বর্ণিত- যখন কোনো সন্তান তার আপন মা-বাবার প্রতি রহমতের দৃষ্টিতে তাকায়, তখন সৃষ্টিকর্তা প্রতিটি দৃষ্টির বিনিময়ে তার আমলনামায় একটি ‘মকবুল হজ’-এর ছওয়াব লিপিবদ্ধ করে দেবেন। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ! যদি কোনো ব্যক্তি দৈনিক ১০০ বার এরূপ থাকায় তবুও কি সে এই সওয়াব পাবে? তিনি জবাবে বললেন ‘হ্যাঁ’। আল্লাহ অতি মহান, অতি পবিত্র। হাদিসে বর্ণিত আছে যে, তার নাসিকা ধূলিসাৎ হোক, তার নাসিকা ধূলিসাৎ হোক, তার নাসিকা ধূলিসাৎ হোক- এ কথা রাসূল সা: তিনবার বললেন। জিজ্ঞেস করা হলো- ইয়া রাসূলুল্লাহ!

কে সে? যার নাসিকা ধূলিসাৎ হোক। তিনি বললেন, ‘যে ব্যক্তি তার মা-বাবার একজনকে অথবা উভয়জনকে তাদের বার্ধক্য অবস্থায় পেল, অথচ (তাদের খেদমত করে) সে বেহেশতে প্রবেশ করল না। যে ব্যক্তি তার মায়ের চক্ষুদ্বয়ের মধ্যভাগে চুমা দেবে সে দোজখ থেকে মুক্তি পাবে।’ অনত্র বর্ণিত- যে ব্যক্তি তার মায়ের পা চুম্বন করল (কদমবুছি করল) সে যেন বেহেশতের চৌকাঠে চুম্বন করল।

যারা মা-বাবার সাথে খারাপ ব্যবহার, তাঁদের অবাধ্যতা, কষ্ট দেয়া এবং তাঁদের সাথে দুর্ব্যবহার করে, তাদের উপর আল্লাহ ও তাঁর রাসূল সা: এবং ফেরেশতারা অভিসম্পাত করেন। এরূপ কাজে সৃষ্টিকর্তা কখন ক্ষমা করবেন না। মা-বাবার অবাধ্য ছেলে ও মেয়ে যত বেশি ইবাদত করুক না কেন, সে কখনো সৃষ্টিকর্তার নৈকট্য লাভ করবে না। সারা জীবন মা-বাবার খেদমত করি না কেন, তবুও তাঁদের ঋণ শোধ করা যাবে না। মা-বাবার খেদমত ও তাদের দোয়া নেয়া একান্ত জরুরি। তিন ব্যক্তির দোয়া সাথে সাথে কবুল হয়, তাতে কোনো সন্দেহ নেই- মা-বাবার দোয়া, মুসাফিরের দোয়া ও মজলুমের দোয়া। মা-বাবার নেক দোয়া প্রত্যেক সন্তানের সুন্দর জীবনের শ্রেষ্ঠ পাথেয়।
লেখক : প্রবন্ধকার

 


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us