পরমাণু যুদ্ধের মুখোমুখি হচ্ছে ভারত-চীন?

রিচার্ড ই ক্যারল | Nov 21, 2019 07:15 am
পরমাণু যুদ্ধের মুখোমুখি হচ্ছে ভারত-চীন?

পরমাণু যুদ্ধের মুখোমুখি হচ্ছে ভারত-চীন? - ছবি : সংগৃহীত

 

১৯৬২ সালের চীন-ভারত যুদ্ধের পর থেকে ‘ম্যাকমোহন লাইন’ প্রশ্নে অস্বস্তিকর শান্তি বিরাজ করছে। চীন ঘোষণা দিয়েছে যে তারা অরুনাচল প্রদেশের চীনা এলাকায় ৬০ বিলিয়ন ডলার মূল্যের স্বর্ণখনির সন্ধান পেয়েছে এবং সেখানে কার্যক্রম শুরু করেছে। তাছাড়া দক্ষিণ এশিয়ার প্রধান কয়েকটি নদীর উৎসমুখে ড্যাম নির্মাণের পরিকল্পনাও করছে। আর অরুনাচলকে ‘দক্ষিণ তিব্বত’ হিসেবে উল্লেখ করে নতুন মানচিত্রও প্রকাশ করেছে। উত্তেজনা বাড়ছে। ব্রহ্মপুত্র নদীর প্রবাহে প্রভাব পড়ে, এমন আরো ড্যাম নির্মাণ করার কথা চীন অস্বীকার করেছে। কিন্তু তারা ব্রহ্মপুত্রে প্রথম ড্যাম নির্মাণের কথাও অস্বীকার করেছিল। কিন্তু ২০১৫ সালে তারা তা সম্পন্ন করে ফেলে। উভয় দেশ আরো বেশি জাতীয়তাবাদী হয়ে পড়ায় উত্তেজনা বাড়ার আশঙ্কাই বেশি।

হিমালয়ের ওপর দাবি জোরদার করার জন্য চীনা সরকার ওই এলাকায় হ্যান চীনাদের বসতি স্থাপনকে উৎসাহিত করছে। তিব্বত মালভূমির ওপর চীনা সামরিক নিয়ন্ত্রণ থাকায় দেশটি এখানেও দক্ষিণ চীন সাগর নীতি অবলম্বন (ফিলিপাইনের বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে কৃত্রিম দ্বীপ বানিয়ে সামরিক শক্তি বৃদ্ধি করা) করে তার আধিপত্য বাড়ানোর নীতি অনুসরণ করছে।

ম্যাকমোহন লাইন
সিমলা কনফারেন্সে ১৯১৪ সালে ব্রিটিশ কূটনীতিক হেনরি ম্যাকমোহনের নামে ম্যাকমোহন লাইনের নামকরণ করা হয়। ব্রিটিশ সাম্রাজ্য ও তিব্বতের মধ্যে হওয়া ওই চুক্তিতে চীন সরকার সই করেনি, ওই সীমারেখা চীন প্রজাতন্ত্র স্বীকার করেনি।

হিমালয় ও তিব্বতের ভূরাজনৈতিক তাৎপর্য
সামরিক বিজ্ঞানের একটি গুরুত্বপূর্ণ নীতি হলো উচ্চ ভূমি দখল করা। হিমালয় হলো বিশ্বের সবচেয়ে উঁচু পর্বতমালা। প্রাচীন কাল থেকে চীন সবসময় তার জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হিমালয় ও তিব্বতকে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করে আসছে।
ঐতিহাসিকভাবে তিব্বতকে চীন ম্যান্ডারিন ভাষায় ‘জিজাং’ বা ‘পশ্চিম দিকের গুদামঘর’ হিসেবে অভিহিত করে আসছে।

চীন-ভারতের মধ্যে যুদ্ধ ১৯৬২ সালে শেষ হলেও বৈরিতার অবসান ঘটেনি। ওই যুদ্ধের সময় দুই দেশের কারো হাতেই পরমাণু অস্ত্র ছিল না। বর্তমানে উভয় দেশের হাতেই এই অস্ত্র আছে। ফলে এই দুই দেশের মধ্যে এখন যুদ্ধ হলে তাতে পরমাণু অস্ত্র ব্যবহৃত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে।

চীন ও ভারত উভয়ের জন্যই কিংগিাই-তিব্বত মালভূমি একটি গুরুত্বপূর্ণ পানিসম্পদ উৎস। শক্তিশালী ইয়াংজি নদী ও পীত নদী উভয়ের পানি উৎস তিব্বতের হিমবাহগুলো ও হিমালয়ের বরফগলা পানি। ভারতের ব্রহ্মপুত্র ও সিন্ধু নদীর পানির উৎসও তিব্বতের হিমবাহ ও হিমালয়ের বরফগলা পানি। ব্রহ্মপুত্র ভারতের জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয়। চীন এখানেই কয়েকটি ড্যাম নির্মাণ করছে পানিপ্রবাহ সীমিত করার জন্য। এতে করে ভারত ও চীনের মধ্যে তীব্র বিরোধের সৃষ্টি হতে পারে।

পানি ছাড়াও তিব্বতের তামা, তেল ও অন্যান্য খনি থেকে সম্পদ আরোহণ করে তা শিল্প কারখানায় কাজে লাগাতে চায় চীন। তিব্বত মালভূমিতে অনেক বছর ধরেই উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছে চীন। এর ফলে চীনারা আরো সহজে সেখানে কাজ করতে পারছে।

ব্রহ্মপুত্র ও গাঙ্গেয় বদ্বীপ
গঙ্গা বদ্বীপ (সবুজ বদ্বীপ নামে পরিচিত) গড়ে ওঠেছে ব্রহ্মপুত্র ও গঙ্গা নদীর পানিতে। গঙ্গার সৃষ্টি ভারতের উত্তরাখন্ড (হিমালয়ের পশ্চিম অংশে) থেকে। আর ব্রহ্মপুত্রের সৃষ্টি তিব্বতের আনসি হিমবাহ থেকে। এটি নিয়ন্ত্রণ করে চীন।
গঙ্গা বদ্বীপ হলো বিশ্বের অন্যতম উর্বারা এলাকা। আবার এই বদ্বীপের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ নদী হলো ব্রহ্মপুত্র।

২০১৫ সালে নির্মাণকাজ শেষ হওয়া জাঙ্গমু ড্যামটি ভারত ও চীনের মধ্যকার সম্পর্ককে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। এর মাধ্যমে চীন ব্রহ্মপুত্রের প্রবাহ বন্ধ করে দিতে পারে। আর তাতে পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা বেড়ে যাবে।

এই দুই দেশ ২০১৭ সালে ভুটান সীমান্তের দোকলামে মুখোমুখি অবস্থায় উপনীত হয়েছিল। তবে তা যুদ্ধে গড়ায়নি। চীন সেখানে একটি রাস্তা নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করলে এই জটিলতার সৃষ্টি হয়।

দুই দেশেই জাতীয়তাবাদী সরকার ক্ষমতায় থাকায় ভবিষ্যতে কোনো ধরনের অচলাবস্থা এড়ানো কঠিন হতে পারে। এর ফলে পরমাণু শক্তিধর দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধের শঙ্কা বাড়বে। কিন্তু তা চীন ও ভারত উভয় দেশের মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য অনুকূল হবে না।

ইন্টারন্যাশনাল পলিসি ডাইজেস্ট


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us