কোন দেশে কত সোনা আছে?
কোন দেশে কত সোনা আছে? - ছবি : সংগ্রহ
পৃথিবীর সবচেয়ে আকর্ষণীয় ধাতু হচ্ছে স্বর্ণ বা সোনা। এই ধাতুটির প্রতি মানুষের আকর্ষণ দুর্নিবার। আবার ব্যবহারও হয় অনেক কাজে। অলংকার তো আছেই, সেইসাথে মুদ্রা হিসেবেও এর ব্যবহার আছে। একসময় তো স্বর্ণমুদ্রার ব্যাপক প্রচলন ছিল। এছাড়া ইলেকট্রনিকসহ বিভিন্ন সামগ্রী উৎপাদনেও স্বর্ণের বিপুল ব্যবহার রয়েছে।
নানা কারণে সব দেশই কমবেশি স্বর্ণ মজুদ করে থাকে। ২০১০ সাল থেকে বিশ্বের কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো সোনার নিট বিক্রেতা থেকে নিট ক্রেতায় পরিণত হয়। জিএফএমএসের সোনার জরিপ অনুযায়ী ২০১৮ সালেই কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর সোনা ক্রয় ৪৬ শতাংশ বেড়ে হয় ৫৩৬ টন, যা এ শতকের বার্ষিক দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ক্রয়। সোনা মজুদের দিক থেকে শীর্ষে থাকা ১০ কেন্দ্রীয় ব্যাংক কয়েক বছর ধরেই অপরিবর্তিত রয়েছে।
এখন দেখা যাক, কোন দেশে কত স্বর্ণ মজুদ রয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র
সরকারিভাবে সোনা মজুদের দিক থেকে প্রথম স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। এ বছরের সেপ্টেম্বরের হিসাব অনুযায়ী দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে রয়েছে আট হাজার ১৩৪ টন সোনা, যা দেশটির মোট রিজার্ভের ৭৬ শতাংশ। এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের এ মজুদ পরবর্তী তিন দেশের মোট মজুদের সমান।
জার্মানি
বিশ্বে সোনার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ মজুদ জার্মানিতে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে রয়েছে তিন হাজার ৩৬৬.৮ টন সোনা, যা মোট বৈদেশিক রিজার্ভের ৭১.৯ শতাংশ। বিশ্বে অর্থনৈতিক সংকটের সময় থেকে দেশটি অব্যাহতভাবে সোনায় বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে। ২০১৭ সাল থেকে ফ্রান্স ও যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে থাকা নিজেদের ৬৭৪ টন সোনা আনা শুরু করেছে জার্মানি, যা ২০২০ সালে সম্পন্ন হবে।
ইতালি
সোনার তৃতীয় সর্বোচ্চ মজুদ রয়েছে ইতালিতে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে রয়েছে দুই হাজার ৪৫১.৮ টন সোনা, যা মোট বৈদেশিক রিজার্ভের ৬৭.৪ শতাংশ। ব্যাংক অব ইতালির একসময়ের গভর্নর মারিও দ্রাগিকে প্রশ্ন করা হয়েছিল সোনার এত বিশাল মুজদ কেন? তিনি বলেছিলেন, ‘এটি দুঃসময়ের নিরাপত্তা। ডলার অস্থির হলে সোনা আমাদের সুরক্ষা দেবে।’
ফ্রান্স
গত কয়েক বছরে ফ্রান্সের কেন্দ্রীয় ব্যাংক কিছু সোনা বিক্রি করেছে। এর প্রতিবাদে সোচ্চার হয়ে ওঠে বিরোধী দলগুলো। বর্তমানে দেশটির হাতে রয়েছে দুই হাজার ৪৩৬.১ টন সোনা, যা মোট বৈদেশিক রিজার্ভের ৬০.৮ শতাংশ। এটি বিশ্বের চতুর্থ বৃহৎ মজুদ।
রাশিয়া
কয়েক বছর ধরে সোনা ক্রয় করে বিশাল মজুদ গড়ে তুলেছে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এমনকি ২০১৮ সালে চীনকে সরিয়ে সোনার পঞ্চম বৃহৎ মজুদকারী দেশে পরিণত হয় রাশিয়া। বর্তমানে দেশটির সরকারের কাছে রয়েছে দুই হাজার ২১৯.২ টন সোনা, যা বৈদেশিক রিজার্ভের ১৯.৬ শতাংশ।
চীন
বিশ্বে সোনার সবচেয়ে বড় খুচরা বাজার চীন। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মজুদের দিক থেকে ষষ্ঠ অবস্থানে রয়েছে। দেশটির মোট বৈদেশিক রিজার্ভের মাত্র ২.৮ শতাংশ সোনা। যার পরিমাণ এক হাজার ৯৩৬.৫ টন। গত এক বছরে চীন সোনা ক্রয় করেছে ১০০ টন।
সুইজারল্যান্ড
সুইজাল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে রয়েছে এক হাজার ৪০ টন সোনা, যা বৈদেশিক রিজার্ভের ৫.৭ শতাংশ। এটি বিশ্বের সপ্তম বৃহৎ মজুদ। তবে মাথাপিছু হিসাবে বিশ্বে সোনার সর্বোচ্চ মজুদ ধরা হয় এ দেশটিতে। সুইজারল্যান্ডের সোনার বেশির ভাগ বাণিজ্য চলে চীন ও হংকংয়ের সঙ্গে।
জাপান
বিশ্বের তৃতীয় বৃহৎ অর্থনৈতিক দেশ জাপানের হাতে রয়েছে সোনার অষ্টম বৃহৎ মজুদ। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে বর্তমানে রয়েছে ৭৬৫.২ টন সোনা, যা বৈদেশিক রিজার্ভের ২.৭ শতাংশ।
ভারত
বিশ্বে সোনার দ্বিতীয় বৃহৎ খুচরা বাজার ভারত। জনসংখ্যাবহুল এ দেশটিতে সোনা ছাড়া কোনো বিয়ে কল্পনা করা যায় না। ফলে ভোক্তা পর্যায়ে সোনার অলংকারের ব্যাপক ব্যবহার রয়েছে। দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হাতে ৬১৮.২ টন সোনা রয়েছে, যা বৈদেশিক রিজার্ভের ৬.৫ শতাংশ এবং বিশ্বের নব মবৃহৎ মজুদ।
নেদারল্যান্ডস
সোনার মজুদের দিক থেকে দশম অবস্থানে রয়েছে ইউরোপের দেশ নেদারল্যান্ডস। ডাচ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ভল্টে বর্তমানে ৬১২.৫ টন
সোনা রয়েছে, যা বৈদেশিক রিজার্ভের ৬৭.৭ শতাংশ।
ইউএসফান্ডস ডটকম