রোহিঙ্গাদের দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটাচ্ছে গাম্বিয়া

রোহিঙ্গাদের দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটাচ্ছে গাম্বিয়া - ছবি : সংগৃহীত
গত সপ্তাহ পর্যন্ত মিয়ানমার সরকার রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর অগণিত নৃশংসতা চালিয়েই পার পেয়ে যাচ্ছিল। সামরিক বাহিনীর জাতিগত শুদ্ধি অভিযানে খুন, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগ চালানো হয়েছিল। জাতিসঙ্ঘ, মিডিয়া ও মানবাধিকার গ্রুপগুলো এসব নিয়ে বিস্তারিত তথ্য উপস্থাপন করে আসছিল। কিন্তু মিয়ানমারকে জবাবদিহিতার আওতায় আনা যাচ্ছিল না।
গত ১১ নভেম্বর পশ্চিম আফ্রিকার ছোট্ট দেশ গাম্বিয়া সাহসভরে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে মামলা দায়ের করেছে। ‘কনভেনশন অন দি প্রিভেনশন অ্যান্ড পানিশমেন্ট অব দি ক্রাইম অব জেনোসাইড’ লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা হয়েছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে। এই প্রথমবারের মতো উল্লেখিত অপরাধের সাথে প্রত্যক্ষভাবে কোনো ধরনের সম্পৃক না থাকা সত্ত্বেও কোনো দেশ অপর একটি দেশের বিরুদ্ধে বিশ্ব আদালতে গণহত্যা লঙ্ঘনের দায়ে মামলা দায়ের করল। এখন অন্যান্য দেশের উচিত হবে ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার সাথে হাত মিলিয়ে মিয়ানমার সরকারকে বিচারের মুখে দাঁড় করানোর জন্য গাম্বিয়ার পাশে থাকা।
রোহিঙ্গাদের ওপর নৃশংসতা পরিচালনাকারী ব্যক্তিদেরও কাঠগড়ায় দাঁড় করার আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাও ঘটছে।
আর্জেন্টিনায় রোহিঙ্গা ও ল্যাতিন আমেরিকান কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থা রাখাইন রাজ্যে অপরাধ করার জন্য সামরিক বাহিনী ও বেসামরিক নেতাদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা দায়ের করা হয়েছে। তারা বিশ্বজনীন ন্যায়বিচারের নীতিমালার আমলে ওই মামলা দায়ের করেছে। তাদের মতে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বলা সব দেশেরই দায়িত্ব।
এখন আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের তদন্ত শুরু করবে। যেসব নির্যাতনের কারণে ২০১৭ সালে সাত লাখ ৪০ হাজারের বেশি রোহিঙ্গা দেশ ত্যাগ করতে বাধ্য হলো, তা খতিয়ে দেখা হবে, যেসব ব্যক্তি এর সাথে জড়িত, তাদের শনাক্ত করা হবে।
জাতিসঙ্ঘ নিরাপত্তা পরিষদ এই নৃশংসতার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অনীহ ছিল। এখন আইসিসি কেবল রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে করা মারাত্মক অপরাধগুলোই নয়, শান ও কোচিন রাজ্যের অপরাধগুলো নিরসনের ব্যবস্থাও করতে পারবে।
নৃশংসতার সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমার। তারা আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি নামের একটি ছোট্ট সশস্ত্র গ্রুপের ওপর দায় চাপাতে চায়। কিন্তু উপগ্রহ চিত্রে ভিন্ন দৃশ্য দেখা যায়। সরকারের বুলডোজারে রোহিঙ্গা গ্রামগুলো ধ্বংসের চিত্র সুস্পষ্টভাবেই রোহিঙ্গাদের ওপর পরিচালিত নৃশংসতায় মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া যায়।
আং সান সু চির নেতৃত্বে থাকা মিয়ানমার বারবার অপরাধীদের রক্ষা করার চেষ্টা চালাতে থাকায় বিচার পাওয়ার সম্ভাবনা যখন সুদূরপরাহত বলে মনে হচ্ছিল, তখনই গাম্বিয়ার উদ্যোগটি দৃশ্যমান হলো। এখন মিয়ানমারের নেতারা নৃশংসতা চালাতে দুবার ভাববে। আর এটা চীন ও অন্যান্য দেশের জন্যও হুঁশিয়ারি হিসেবে কাজ করবে। আন্তর্জাতিক আইনগত বাধ্যবাধকতা থেকে মিয়ানমারকে তারা অব্যাহতভাবে রক্ষা করে যাবে কিনা তা নিয়েও চীনকে ভাবতে বাধ্য করবে এই ঘটনা।
আর নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারা এখন আশাবাদী হওয়ার সুযোগ পাবে। তারা এখন মনে করতে পারবে যে তাদের বিরুদ্ধে যারা নৃশংসতা চালিয়েছিল, তাদেরকে বিচারের আওতায় আনা হবে। রোহিঙ্গা লেখক মায়ু আলী লিখেছেন, আমাদের ব্যথা বিবেচনা করুন। আমাদের দুর্ভোগ স্বীকার করুন। বিস্মৃতি থেকে আমাদের ভাগ্যকে রক্ষা করুন।
নিউজ উইক