মা বিদিশাকে কাছে রাখতে ছেলে এরিকের জিডি : তোলপাড়
মা বিদিশাকে কাছে রাখতে ছেলে এরিকের জিডি : তোলপাড় - ছবি : সংগৃহীত
পরলোকগত সাবেক রাষ্ট্রপতি জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছোট ছেলে এরিক এরশাদ তার মা বিদিশা এরশাদকে নিয়ে বারিধারার প্রেসিডেন্ট পার্কের বাসভবনে থাকতে চান। নিজ বাড়িতেই নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন জানানোর পাঁচ দিনের মধ্যে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন এরশাদপুত্র শাহতা জারাব এরিক।
সোমবার বিকেল ৩টার দিকে বিদিশার সাথে এসেই এরিক নিজে গুলশান থানায় উপস্থিত হয়ে এ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। এই সাধারণ ডায়েরিতে এরিক তার বারিধার বাড়িতে মা বিদিশাকে রাখতে চাওয়ার কথা জানিয়েছেন বলে গুলশান থানা সূত্রে জানা গেছে।
গুলশান থানার ওসি মো. কামরুজ্জামান গণমাধ্যমকে জানান, এরিক বলেছেন, তিনি অসুস্থ বিধায় তার মাকে নিয়ে থাকতে চান। এসময় তার মা বিদিশাও এসেছিলেন। তিনি বলেন, অনেকে অভিযোগ করেছেন বিদিশা জোর করে বারিধারার বাসায় এসেছেন। কিন্তু এরিক নিজে জিডিতে উল্লেখ করেছেন, তিনি অসুস্থ। এ অবস্থায় বাসায় তার মা বিদিশাকে নিয়ে থাকতে চান। তিনি অভিযোগ করেছেন, মা কাছে না থাকায় তার সেবা হচ্ছে না। তিনি প্রতিবন্ধী, তাই সঙ্গে মাকে রাখতে চান। জিডির বিষয়টি আমলে নিয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিদিশা বলেন, আমি এ বিষয়ে গণমাদ্যমকে আর কিছু বলব না।
প্রসঙ্গত. এরশাদ প্রথম স্ত্রী বিরোধী দলের নেতা বেগম রওশন এরশাদ। দ্বিতীয় স্ত্রী বিদিশা। পরে তাদের বিচ্ছেদ হয়। বিদিশা ও এরশাদের একমাত্র ছেলে এরিক। নিজের আত্মজীবনীতে এরশাদ জানিয়েছেন, এরিক ছাড়াও জেবিন, সাদ ও আলম নামে তার আরও তিন সন্তান রয়েছে। সাবেক রাষ্ট্রপতি ও সেনাশাসক এরশাদ গত ১৪ জুলাই সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
২০০৫ সালে তাদের বিচ্ছেদের পর এরিকের দায়িত্ব নিয়ে এরশাদ ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী বিদিশার লড়াই আদালতে গড়িয়েছিল। আদালতের মাধ্যমে এরিকের দায়িত্ব পান এরশাদ। বারিধারার বাড়িতে এরিককে নিয়ে থাকতেন তিনি। এরশাদ তার মৃত্যুর আগে এরিকের ভরণপোষণের জন্য ট্রাস্ট গঠন করে যান।
এদিকে এরশাদের মৃত্যুর পর থেকে বারিধারার ‘প্রেসিডেন্ট পার্ক’ এ থাকা এরিকের সঙ্গে গত বৃহস্পতিবার রাতে ‘জোর করেই’ উঠে পড়েন বিদিশা। ওই ভবনের পাঁচ তলার একটি ফ্ল্যাটে থাকেন প্রতিবন্ধী তরুণ এরিক।
বিদিশার অভিযোগ, ছেলেকে দেখতে যেতে চাইলেও প্রেসিডেন্ট পার্কে ঢুকতে তাকে বাধা দেয়া হত। বাধা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে এরশাদের ভাতিজা ও জাতীয় পার্টির সভাপতিমন্ডলীর সদস্য মেজর (অব.) খালেদ আখতার বলেছেন, জীবদ্দশায় এরশাদ চাইতেন না যে বিদিশা এই বাড়িতে আসুক।
এদিকে রোববার বিকালে বিদিশা তার ফেইসবুকে পেইজে এরিকের একটি ভিডিও আপলোড করেন। তাতে এরিককে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে উদ্দেশে বলতে দেখা যায়- ‘প্রিয় হোম মিনিস্ট্রার আঙ্কেল, আমি এরিক বলছি। আমাকে নির্যাতন করা হয়েছে। আমাকে খেতে দেওয়া হত না। আমার লিগ্যাল গার্জিয়ান আমার চাচা জি এম কাদের না, আমার মা। সেক্ষেত্রে ওনার (জি এম কাদের) তো কোনো রাইট নাই, আমাদের এরকম টর্চার করার।’
এরিককে নিয়ে বিদিশার অভিযোগের তীর এরশাদের ভাই ও জাতীয় পার্টির বর্তমান চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের দিকে। তবে তার অনুসারী জাতীয় পার্টি নেতারা সেই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন।
এরকিকে দেখতে গেলেন জাপার শরিক দলের নেতারা
এরিককে দেখতে প্রেসিডেন্ট পার্কে গেছেন জাতীয় পার্টি নেতৃত্বাধীন সম্মিলিত জাতীয় জোটের (ইউএনএ) নেতারা। গতকাল বিকেলে ইউএনএ জোটভুক্ত দল বিএনডিপির চেয়ারম্যান শেখ মোস্তাফিজুর রহমান, মহাসচিব সাদ্দাম হোসেন, জোটে যোগ দিতে ‘ইচ্ছুক’ বাংলাদেশ ন্যাশনাল কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট শেখ শহিদুজ্জামান ওই বাড়িতে যান।
এ বিষযে শেখ শহিদুজ্জামান জানান, বিকেলে আমরা ৫ জন এসেছিলাম। দীর্ঘক্ষণ বসে থেকে আমরা এরিক এরশাদ ও বিদিশা ম্যাডামের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পাই। আমরা এরিককে সহানুভূতি জানাতে গিয়েছিলাম। এরিক এরশাদ এখন ‘অনেকটাই সুস্থবোধ’ করছেন বলে জানিয়ে তিনি বলেন, এরিক ও বিদিশা ম্যাডামের সাথে আমাদের খুব বেশি কথা হয়নি। বেশ রিজার্ভ ছিলেন এরিক। এরিক শুধু বলেছেন, তিনি মায়ের সঙ্গে থাকতে চান। বাইরের কেউ যেন তাকে ডিস্টার্ব না করেন। তবে এরিককে দেখতে যাওয়ায় জোটের রাজনীতিতে কোনো সমস্যা হবে না বলে মনে করেন শেখ শহিদুজ্জামান। তিনি বলেন, আমরা জাতীয় পার্টির কোনো নেতার সঙ্গে আলোচনা করে আসিনি। আমার মনে হয় না, আমাদের দেখা করতে আসা নিয়ে কোনো সমস্যা হতে পারে। জি এম কাদেরের সঙ্গে আমাদের গুড রিলেশন।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ লেবার পার্টির চেয়ারম্যান সেকেন্দার আলী মনি বলেন, এরিককে নিয়ে জাতীয় পার্টিতে এখন রাজনীতি চলছে। আমরা গেলে পরে আবার জি এম কাদের সাহেব না ক্ষিপ্ত হন, সবদিক ভেবে আমরা যাইনি। এদিকে দলটির চেয়ারম্যানের প্রেস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সেক্রেটারি সুনীল শুভ রায় জানান, ইউএনএ নেতাদের প্রেসিডেন্ট পার্কে যাওয়ার খবর জাতীয় পার্টির শীর্ষনেতারা কেউ জানেন না।