কী ঘটছে বিএনপিতে?
বিএনপি - ছবি : সংগৃহীত
বিএনপির রাজনীতি ঘিরে নতুন একটি তৎপরতার গুঞ্জন ধীরে ধীরে ডালপালা মেলতে শুরু করেছে। বেগম খালেদা জিয়ার অনুপস্থিতিতে দলটির সিনিয়র পর্যায়ের মুষ্টিমেয় কিছু নেতার মধ্যে চেষ্টা চলছে ‘বিকল্প চিন্তা’ ঢুকিয়ে দেয়ার। এ ক্ষেত্রে সুকৌশলে দলটির বর্তমান নেতৃত্বে ‘রাজনৈতিক পরিবর্তন সম্ভব নয়’ এমন একটি অনাস্থার ভাবনা ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে। যাতে করে ওইসব নেতার নেতৃত্বে নতুন একটি প্লাটফর্ম গড়ে তোলা সম্ভব হয়। বিএনপি চেয়ারপারসন সহসা মুক্তি না পেলে এই ধরনের তৎপরতা একটি পর্যায়ে গিয়ে বাস্তবে রূপ নিতে পারে বলেও উল্লেখ করা হচ্ছে।
গত বছরের ৮ ফ্রেব্রুয়ারি বেগম খালেদা জিয়ার কারাবন্দীর পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নেতৃত্বে দলটি পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু তারেক রহমানও রয়েছেন লন্ডনে। দলে কিংবা রাজনীতিতে এই দুই শীর্ষ নেতার সরাসরি অনুপস্থিতিকে একটি মহল ‘নেতৃত্বের সঙ্কট’ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। যার অংশ হিসেবে নতুন এই তৎপরতা শুরু হয়েছে বলে কেউ কেউ বলছেন।
রাজনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, বিএনপির সিনিয়র পর্যায়ের হতাশ কিছু নেতাকে এ ক্ষেত্রে টার্গেট করা হয়েছে। যারা দীর্ঘ সময় ধরে দলীয় রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় অবস্থায় আছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ নিজেদের মধ্যে আলাপচারিতার জন্য মাঝে মধ্যে একত্রে বসছেন। কোন প্লাটফর্ম গঠনের কথা তারা আলোচনায় না আনলেও দলীয় রাজনীতি নিয়ে নানা হতাশার কথা তুলে ধরছেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ বিষয়টি সাপোর্টও করছেন।
বিএনপি ঘিরে গড়াপেটার তৎপরতা দীর্ঘ দিন ধরেই চলে আসছে। যদিও ১২ বছর ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা বিএনপির ঐক্য অটুটই আছে। তবে এই তৎপরতার সাথে যুক্তরা কিছু কিছু ক্ষেত্রে সফল হয়েছে বলেও মনে করা হচ্ছে। দীর্ঘ এই সময়ে কিংবা এরও আগে প্রভাবশালী কিছু নেতার বিএনপি ছেড়ে দিয়ে ভিন্ন দল গঠন কিংবা অন্য কোনো দলে যুক্ত হওয়াকে ওই মহলটি সফলতা হিসেবে দেখছেন। যেটি ভবিষ্যতেও চলবে বলে তারা মনে করেন।
একটি সূত্র বলছে, আগামীতে যেকোনো সময় একটি ‘জাতীয় সরকার’ গঠিত হতে পারে, এমন একটি ধারণাও কোনো কোনো রাজনীতিবিদের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে। বিএনপি থেকে সাম্প্রতিক সময়ে দু’জন নেতা পদত্যাগ করেছেন। তাদের মধ্যে একজন স্থায়ী কমিটির সদস্য মাহবুবুর রহমান, অন্যজন ভাইস চেয়ারম্যান মোর্শেদ খান। দু’জনই ব্যক্তিগত ও বয়সের কারণে পদত্যাগ করেছেন বলে জানিয়েছেন। যদিও বিএনপির মাঠপর্যাযের নেতাকর্মীরা এই কারণকে বিশ্বাস করতে চান না। তারা কোনো অদৃশ্য চাপ কিংবা ব্যবসায় বাণিজ্য রক্ষায় পদত্যাগ করেছেন বলে তারা মনে করেন।
জানা গেছে, আপাতত দলেই থাকতে হচ্ছে বিএনপির পদত্যাগকারী নেতাদের। এসব নেতাদের পদত্যাগের বিষয়ে এখনই চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেবে না দল। পরবর্তী জাতীয় কাউন্সিলে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে চায় দলের নীতি নির্ধারণী ফোরাম। তবে পদত্যাগী নেতাদের দল ছাড়ার কারণ অনুসন্ধান শুরু করেছে বিএনপি।
একাদশ নির্বাচনের আগে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করে আওয়ামী লীগে যোগ দেন উপদেষ্টা পরিষদে থাকা সিলেটের ইনাম আহম্মেদ চৌধুরী। ‘খালেদা জিয়াবিহীন বিএনপিতে যারা পরিচালকের আসনে আছেন, তাদের সাথে আর যাই হোক রাজনীতি করা যাবে না’ এমন অভিযোগ এনে দলত্যাগ করেছেন তিনি। ২০১৫ সালের ২৯ অক্টোবর বিএনপির ভাইস- চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী দল থেকে পদত্যাগ করেন। পদত্যাগপত্রে শমসের মবিন চৌধুরী বলেন, সম্পূর্ণ শারীরিক কারণে তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নিয়েছেন। তবে পদত্যাগের পরের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেছেন, জিয়াউর রহমানের আদর্শ থেকে বিএনপি এখন অনেকটাই দূরে। ২০১৬ সালের ৬ আগস্ট বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন দলের ভাইস-চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক আলী ফালু। নির্বাহী কমিটির আরো বেশ কয়েকজন নেতা বিগত কাউন্সিলের পর নানা কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন। তাদের কারো বিষয়েই এখনো পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি বিএনপি।