যুক্তরাষ্ট্রকে বিপদে ফেলছেন গনি!
আশরাফ গনি - ছবি : সংগৃহীত
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প চান আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য প্রত্যাহার করতে। ডেমোক্র্যাটস আর আমেরিকার জনগণ চায় আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্য সরিয়ে নিতে। আর সৈন্যরাও নিশ্চিতভাবে চায় আফগানিস্তান ত্যাগ করতে।
দুর্ভাগ্যজনকভাবে কেউ জানে না কাজটি কিভাবে করতে হবে।
অনেকে আশঙ্কা করছেন যে কঠিন এই প্রত্যাহারের ফলে যে শূন্যতার সৃষ্টি হবে তা তালেবান অল্প সময়ের মধ্যেই পূরণ করে নেবে। আফগানিস্তান শিগগিরই বিশৃঙ্খলায় নিমজ্জিত হবে, আল কায়েদা ফিরে আসবে, আমাদের মিত্ররা কচুকাটার শিকার হবে। ১৮ বছর ধরে সহায়তা করার পর আফগান সরকার নিজের পায়ে ভর করে দাঁড়াতে পারছে না, আর মার্কিন বাহিনী দৃশ্যত ঠেক দিয়ে রেখেছে।
অবশ্য আফগানিস্তান থেকে বের হওয়ার একটি পথ আছে। আর তা করা যেতে পারে ট্রাম্পের হোয়াইট হাউস ত্যাগ করার আগেই। কিন্তু তা করার আগে বিষয়টি আমেরিকান জনগণের কাছে ব্যাখ্যা করা দরকার। কারণ এতে বড় ধরনের প্রত্যাঘাত ও ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি করতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র যদি আফগানিস্তান থেকে প্রত্যাহার করতে চায়, তবে তাকে একটি কঠিন সময়সীমা নির্ধারণ করে তার ওপর অটল থাকতে হবে। কেবল সুস্পষ্টভাবে ঘোষিত সময়সীমার মাধ্যমেই এই চিরস্থায়ী যুদ্ধ থেকে উত্তরণ ঘটা সম্ভব।
সমালোচকেরা চিৎকার চেঁচামেচি করতে পারে যে আমাদের পরিকল্পনা তালেবান জেনে যেতে পারে। কিন্তু তাতে কেবল এটাই প্রমাণিত হয় যে তারা প্রত্যাহারের কৌশলগত যুক্ত বা গেরিলা যুদ্ধকৌশলের প্রকৃতি জানে না।
আফগানিস্তানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, যেটাকে অনেক সময় ভরকেন্দ্র হিসেবে অভিহিত করা হয়, কিন্তু তালেবান নয়, বরং প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি সরকার। মার্কিন প্রশাসনের মূল লক্ষ্য কিন্তু বিদ্রোহীদের পরাজিত করা নয়, বরং নিজের পায়ে দাঁড়াতে সক্ষম একটি বিশ্বাসযোগ্য জাতীয় সরকার প্রতিষ্ঠা।
সফলতার প্রতি প্রধান বাধা কিন্তু আমেরিকান শত্রুরা নয় বরং আমেরিকান মিত্ররাই। ওয়াশিংটনের কৌশলবিদদের দকরার কাবুলের আচরণ বদলের দিকে নজর দেয়া। কারণ এখানেই আসল সমস্যা বিরাজ করছে।
সময়সীমা ঘোষণার ফলে মনোনিবেশন করার পথ তৈরী হবে। যে কেউ যখন কেনো প্রকল্প শেষ করার পরিকল্পনা করে, তখন কোনো বাড়তি চাপ ছাড়া তা করতে পারে না। আর গনি কিন্তু তার সরকারের কর্ম সম্পাদন দক্ষতা বাড়ানোর জন্য খুব কম চেষ্টাই করবে। তিনি যতক্ষণ পর্যন্ত হাজার হাজার ন্যাটো সৈন্যের সহায়তা পেতে থাকবেন, তত দিন পর্যন্ত সমঝোতা প্রতিষ্ঠার কোনো চেষ্টাই করবেন না। যুক্তরাষ্ট্র যত দিন তার মৌলিক নিরাপত্তা দিয়ে যাবে, তত দিন তিনি কোনো কঠিন সিদ্ধান্ত নেবেন না।
তালেবানের বিভিন্ন গ্রুপকে আলোচনার জন্য বাধ্য করাটা ওয়াশিংটনের লক্ষ্য হওয়া উচিত নয়। বরং, তার লক্ষ্য হওয়া উচিত অকার্যকর, দুর্নীতিবাজ, অর্থপিশাচ কেন্দ্রীয় সরকারকে এমন কিছু করতে উৎসাহিত করা উচিত যাতে তারা ন্যাটোর উপস্থিতি ছাড়াই কোনো না কোনোভাবে টিকে থাকার ব্যবস্থা করতে পারে। সম্ভবত সময়সীমা নির্ধারণ করাই এই কাজ হাসিল করার একমাত্র উপায়।
আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে বিদ্রোহীদের চেয়ে ১০ গুণ বেশি সৈন্য আছে। জরিপগুলোতে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে যে তালেবানের প্রতি লোকজনের ভালোবাসা নেই, তারা চায় না যে তারা ক্ষমতায় আসুক। অন্য কথায় বলা যায়, বিদ্রোহীরা অনেক লোককে হত্যা করতে পারে, আফগানিস্তানের জীবনকে বিপর্যস্ত করতে পারে। কিন্তু তারা সক্ষম সরকারকে উৎখাত করতে পারবে না। তবে অব্যবস্থাপনা ও অক্ষমতার কারণে কাবুল নিজে থেকেই পড়ে যেতে পারে।
আফগানিস্তানে যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন একটি জাতি গঠন করার চেষ্টা করছিল, তখনকার অবস্থা পর্যালোচনা করা উচিত। সোভিয়েত নেতা মিখাইল গর্ভাচেভ ১৯৮৮ সালের এপ্রিলে যে মাত্র ঘোষণা করলেন যে আগামী ফেব্রুয়ারির মধে সোভিয়েত সৈন্য প্রত্যাহার করা হবে,সাথে সাথে আফগানিস্তানে তাদের পুতুল সরকার (নাজিবুল্লাহ একমাত্র পরিচিত নাম) বন্ধুপ্রতীম বিদেশী সৈন্যদের সহায়তা ছাড়াই সরকার পরিচালনার ব্যাপারে আন্তরিক হলেন।
চূড়ান্ত সময়সীমা কাজ করে। যদিও নাজিবুল্লাহ যে সরকারের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন, তা বর্তমান সরকারের চেয়ে কম জনপ্রিয় ছিল, এবং আরো কঠোর বিরোধিতার মুখে পড়েছিল, কিন্তু তবুো তিনি জানতেন যে শিগগিরই তাকে নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে। সোভিয়েতরা সময়সীমা অনুযায়ী নিজেদের প্রত্যাহার করে নেয়। ওই সময়ের মধ্যে সিআইএ যতটুকু মনে করেছিল, তার চেয়ে বেশি শক্তির পরিচয় দিয়েছিল নাজিবুল্লাহ সরকার। মস্কোর সহায়তা শেষ হয়ে যাওয়ার পরই কেবল এই সরকারের পতন ঘটেছিল।
যুক্তরাষ্ট্র ১৯ বছর ধরে কাবুলকে ভুল বার্তা পাঠিয়ে আসছে। একের পর এক মার্কিন প্রেসিডেন্ট আমেরিকার মিত্রদের আশ্বস্ত করে আসছেন যে স্থিতিশীলতা ফিরে না আসা পর্যন্ত মার্কিন সৈন্যদের প্রত্যাহার করা হবে না। এর ফলে আফগানরা স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে কোনো উৎসাহ বোধ করেনি। যুক্তরাষ্ট্র যদি চায় যে তার স্থানীয় মিত্ররা তাদের নিজেদের বিষয়াদি দেখভাল করবে, তখনই তারা তা করতে উৎসাহিত বোধ করবে। প্রত্যাহারের একটি সময়সীমা ঘোষণা নিশ্চিতভাবেই সঠিক কৌশলগত বিকল্প এবং তা কাঙ্ক্ষিত সাফল্য বয়ে আনবে।
ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট