বাবরি মসজিদ রায় নিয়ে নতুন শঙ্কা!

অনুস্কা সিং | Nov 15, 2019 07:55 am
ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট ৯ নভেম্বর রায় দিয়েছে যে উত্তরাঞ্চলীয় নগরী অযোধ্যায় হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ও মুসলিম সংখ্যালঘিষ্ঠদের মধ্যে যে জমিটি নিয়ে বিরোধ চলছিল সেটি পাবে হিন্দু সম্প্রদায়।

ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট ৯ নভেম্বর রায় দিয়েছে যে উত্তরাঞ্চলীয় নগরী অযোধ্যায় হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ও মুসলিম সংখ্যালঘিষ্ঠদের মধ্যে যে জমিটি নিয়ে বিরোধ চলছিল সেটি পাবে হিন্দু সম্প্রদায়। - ছবি : সংগৃহীত

 

ভারতীয় সুপ্রিম কোর্ট ৯ নভেম্বর রায় দিয়েছে যে উত্তরাঞ্চলীয় নগরী অযোধ্যায় হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ও মুসলিম সংখ্যালঘিষ্ঠদের মধ্যে যে জমিটি নিয়ে বিরোধ চলছিল সেটি পাবে হিন্দু সম্প্রদায়।
ওই জমিটিতে একসময় ১৫২৮ সালে নির্মিত বাবরি মসজিদ ছিল। ১৯৯২ সালে বর্তমানে ক্ষমতায় থাকা বিজেপির সাথে সংশ্লিষ্ট বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নেতৃত্বে হিন্দু দাঙ্গাবাজেরা মসজিদটি ভেঙে ফেলে। তাদের দাবি, আগে থেকে থাকা একটি মন্দির ধ্বংস করে মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছিল।

মসজিদটিকে অবৈধভাবে গুঁড়িয়ে দেয়ার পর ভারতজুড়ে দাঙ্গার সৃষ্টি হয়। এতে নিহত হয় প্রায় দুই হাজার লোক, এদের বেশির ভাগই মুসলিম। দাঙ্গার পরই শুরু হয় ধারাবাহিক সন্ত্রাসী হামলা। এতে ইসলামপন্থী গ্রুপগুলোর সম্পৃক্ততা দেখা যায়।

ভারত সেক্যুলার দেশ হলেও প্রায়ই হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়। হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিজেপির উত্থানের ফলে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির অবনতি ঘটেছে।

ভারতের সুপ্রিম কোর্ট ২০১০ সালে দেয়া এলাহাবাদ হাইকোর্টের রায় বাতিল করেছে। আগের রায়ে ওই ২.৭৭ একর জমি তিনটি পক্ষের মধ্যে তথা সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড (মুসলিম পক্ষ), নির্মোহী আখরা (হিন্দু পক্ষ) ও দেবতা রাম লালা (শিশু রাম, তাকে বিচারিক ব্যক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। তার প্রতিনিধি বিবেচনা করা হয় বিশ্ব হিন্দু পরিষদকে) সমানভাবে ভাগ করার কথা বলা হয়েছিল।

সুপ্রিম কোর্টের রায়ে হিন্দুদেরকে একসময় যেখানে মসজিদটি ছিল, সেই পুরো জমি দিয়ে দেয়া হয়েছে। মুসলিমদের অন্য কোথাও ৫ একর জমি দিতে বলা হয়েছে। মামলার সাথে জড়িত এক মুসলিম বলেছেন, বাবরি মসজিদ এলাকায় সরকারের যে ৬৭ একর জমি আছে,সেখান থেকেই এই ৫ একর জমি দিতে হবে।

হিন্দুরা বিশ্বাস করে যে মহাকাব্য রামায়ণে বর্ণিত দেবতা রাম জন্মগ্রহণ করেছিলেন অযোধ্যায়। ২০০৩ সালে এলাহাবাদ হাইকোর্ট স্থানটিতে প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ চালানোর জন্য আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়াকে দায়িত্ব দেয়। তাদের প্রতিবেদনে দ্ব্যর্থবোধকতা দেখা যায়। এতে স্থানটির নিচে একটি কাঠামোর অস্তিত্ব পাওয়া গেছে। প্রত্নতত্ত্ববিদেরা একটি ১.৬৪ মিটার লম্ব অলঙ্কৃত কালো পাথরের স্তম্ভ দেখেছে। এর চার কোণায় যক্ষের চিত্রের পাশাপাশি আরবিতে পবিত্র বাণীও লিখিত রয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, নিচে থাকা কাঠামোটি সম্ভবত হিন্দু উৎসের। তবে কোনো হিন্দু মন্দির ধ্বংস করে মসজিদটি নির্মিত হয়েছিল, এমন কোনো বক্তব্য তাতে দেয়া হয়নি।

এখন সুপ্রিম কোর্টের রায়ে বলা হয়, বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে জমিটি ভাগ করে এলাহাবাদ হাইকোর্ট পুরোপুরি ভুল রায় দিয়েছিল। সুপ্রিম কোর্টের ১১৬ পৃষ্ঠার রায়ে বলা হয়, মসজিদটি নির্মাণের আগে ও পরের হিন্দুদের বিশ্বাস ছিল যে দেবতা রাম জন্মগ্রহণ করেছেন ওই মসজিদের স্থানে। ফলে দলিল দস্তাবেজ ও লোকজ প্রমাণে এই বিশ্বাস প্রমাণিত হয়েছে।

এই রায় এমন একসময় এলো, যখন অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করার জের ধরে জম্মু ও কাশ্মিরে অচলাবস্থা চলছে, আসামে ১৯ লাখ লোক নাগরিকত্ব বাতিলের মুখে রয়েছে।

হিন্দু জাতীয়তাবাদের ভারতীয় রাজনীতিতে অনুপ্রবেশ এখন আর খবর নয়। তবে রাজনীতির বাইরেও মৌলবাদের উত্থান ঘটছে ভারতে। চলতি বছরের প্রথম দিকে হিন্দু ধর্মগ্রন্থের উদ্ধৃতি দিয়ে এক ভারতীয় বিজ্ঞানী বলেন যে স্টেম সেল গবেষণা উদ্ভাবন করেছিল হিন্দুরা। একই সম্মেলনে আরেক বিজ্ঞানী দাবি করেন যে আলবার্ট আইনস্টাইন ও আইজ্যাক নিউটনের তত্ত্ব ভুল। তিনি মধ্যাকর্ষণ তরঙ্গকে নরেন্দ্র মোদি তরঙ্গ হিসেবে নতুন নামকরণ করেন।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, সুপ্রিম কোর্টের রায়টি কোনো পক্ষের হার বা কোনো পক্ষের জিত হয়নি। তিনি সম্প্রীতি রক্ষার জন্য জনসাধারণের প্রতি আহ্বান জানান। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয় ভারতে।

ভারতে এখন ১৬ শতকে ঘটা একটি বিরোধের অবসান ঘটেছে। ওই ঘটনাটি যখন ঘটেছিল, তখন ভারত নামে কোনো জাতিরাষ্ট্রের পর্যন্ত অস্তিত্ব ছিল না। ১৫০০-এর দশকে যা ঘটেছিল, তার সাথে ১৯৯০-এর দশকের সাথে তুলনা করা অযৌক্তিক। ১৯৯০-এর দশকের ঘটনাটি আধুনিক যুগের একটি বর্বর কাজ।

ভারত সরকার যদি মনে করে থাকে যে এর মাধ্যমে বিষয়টির নিষ্পত্তি ঘটেছে, তবে ধরে নিতে হবে যে হিন্দু মৌলবাদীরা যে রক্তপিপাসু, তা ভুলে যাওয়া হয়েছে। রায়টি সম্ভবত আরো ধর্মীয় স্থাপনার আকাঙ্ক্ষা উস্কে দেবে। অল ইন্ডিয়া আখরা পরিষদের প্রধান দাবি করেছেন, বাবরি মসজিদের মতো মন্দির ধ্বংস করে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছিল কাশি ও মাথুরাতেও। ওইসব মসজিদও ধ্বংস করতে হবে।

মোদির দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার সময় কি ভারত সাংবিধানিকভাবে ‘সেক্যুলার’ থাকবে? এখন পর্যন্ত এ ব্যাপারে আশাবাদী হওয়া কঠিন।

সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us