গোলাম মাওলা রনির একটি আবেগঘন লেখা
গোলাম মাওলা রনি - ছবি : সংগ্রহ
আমার ছোট্ট মেয়ে সুমাইয়ার বয়স এখন বড়জোর এগারো কিংবা বারো। হালকা পাতলা গড়নের সুমাইয়াকে দেখলে আপনার প্রথমে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কৃষ্ণকলি গানটির নায়িকার ছোটবেলার কথা মনে হতে পারে। অথচ মাত্র এক বছর আগে সে যখন আমাদের বাসায় এলো, তখন তাকে দেখলে আপনার মনে হতো আফ্রিকার কোনো দুর্ভিক্ষকবলিত অঞ্চলের সাত-আট বছরের কঙ্কালসার বালিকা। আর তার দুঃখের কাহিনী শুনলে আপনি কোনো অবস্থাতেই নিজের অশ্রু সংবরণ করতে পারতেন না। আমি যখন শুনলাম যে তার জন্মদাতা পিতা গর্ভাবস্থায় তার মাকে ত্যাগ করে অন্য একটি মেয়েকে বিয়ে করেছে এবং তার মা পেটের জ্বালায় শিশু সুমাইয়াকে তার নানীর জিম্মায় রেখে অন্য পুরুষের ঘরণী হয়েছে, তখন মনটার মধ্যে কেমন যেন চিনচিনিয়ে বেদনার হারমোনিয়াম বেজে উঠল।
প্রথম সাক্ষাতেই আমি জানলাম, সুমাইয়া কোনো দিন তার পিতাকে দেখেনি, কাউকে জীবনে বাবা বলে ডাকেনি, এমনকি মাকে ডাকার সুযোগও তার জীবনে খুব কমই হয়েছে। সে তার নানীর সাথে ছোট্ট ডিঙ্গি নৌকায় বাস করত এবং নদী-সমুদ্রে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত। তার ক্ষুদ্র জীবনে সে তার মাকে বিয়ের পিঁড়িতে দেখেছে একবার এবং নানীকে দেখেছে তিন-চারবার। আসলে সে হিসাব করে বলতে পারে না যে, তার নানী কয়বার বিয়ে বসেছে এবং তার ঠিক কতজন নানা রয়েছে। তবে তার নানীর একটি রোমাঞ্চকর বিয়ের কথা বলতেই সে হেসে গড়াগড়ি যাচ্ছিল এবং তা শুনে আমারও ভীমরতি খাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। সুমাইয়ার নানী সেবার যার সাথে বিয়ের পিঁড়িতে বসল, সেই লোকটি সম্ভবত বয়সে যুবক ছিল। স্বামীর সাথে একত্রে বসবাসের আগে সে সুমাইয়াকে খুব করে মিনতি জানিয়ে বলল যে, সুমাইয়া যে তার নাতি সে কথা যেন সে ভুলেও তার নতুন নানাকে দুই চার মাসের মধ্যে না বলে! নানীর কথায় সুমাইয়া বেশ আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাসা করল, ও নানী! তাইলে নানারে তুমি আমার ব্যাপারে কী বলবা! নানী বলল, তুই আমার ছোট বোন! তোরে যদি নাতি হিসেবে পরিচয় দেই তবে তোর নানা আমারে বুড়ি মনে কইয়া প্রথম রাইতেই পালাইয়া যাইবে!
সুমাইয়াকে দেখে এবং তার কথা শুনে আমার খুব মায়া হলো। আমি তাকে কাছে ডেকে মাথায় হাত বুলালাম এবং বললাম, আজ থেকে তুমি আমার ছোট্ট মেয়ে। তুমি আমাকে আব্বু ডাকবে এবং আমার স্ত্রীকে আম্মু ডাকবে। আমার কথা শুনে আমার ঔরসজাত সন্তানেরা গোস্বায় মুখ ভার করে রইল। কারণ তারা তাদের পিতার আদিখ্যেতা সম্পর্কে বেশ ওয়াকিবহাল। তারা খুব ভালো করে জানে যে, পিতার এই সিদ্ধান্তের কারণে তাদের অধিকার, সুযোগ-সুবিধা ইত্যাদিতে সুমাইয়া ভাগ বসাবে এবং সুমাইয়াকে আপন বোনের মতোই আদর করতে হবে। তারা বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলের একটি দুর্গম চরাঞ্চল থেকে আগত হাড্ডিসার শিশু সুমাইয়ার দিকে বারবার তাকাচ্ছিল এবং আড়চোখে তাদের মায়ের সাথে চোখ টেপাটিপি করে বাবার পাগলামোর অতীত ইতিহাসের সাথে যে নতুন একটি উপসর্গ যোগ হলো তার পরিণামের কথা ভেবে আতঙ্কিত বোধ করতে থাকল।
আমার কথা শুনে সুমাইয়া কী বুঝল বলতে পারবো না। যে কিছুক্ষণ ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে তাকিয়ে রইল এবং কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাল না। তার এই নির্লিপ্ততা দেখে আমার মনে হলো যে, সে সম্ভবত বাবা নামধারী সব পুরুষকে ঘৃণা করে।
প্রেম-ভালোবাসা-আদর-স্নেহ সম্পর্কে তার কোনো ধারণা নেই। তার জীবন বলতে কেবলমাত্র খাদ্য এবং সেই খাদ্যের জন্য সে সবকিছুই করতে পারে- যা আমাদের মতো তথাকথিত শিক্ষিত এবং ভদ্রলোকেরা কল্পনাও করতে পারে না। একটি উদাহরণ দিলেই সম্মানিত পাঠকেরা বিষয়টি আন্দাজ করতে পারবেন। সুমাইয়া এবং তার নানী যে ডিঙ্গি নৌকায় বসবাস করত, তা ছিল খুবই ছোট। নাটক সিনেমায় আমরা যেসব ছোট ছোট জেলেনৌকা দেখি সেগুলোর চেয়েও ছোট। তাদের কোনো জাল নেই। সাধারণত বড়শি দিয়ে মাছ ধরে তারা জীবিকা নির্বাহ করত। যেদিন তাদের বড়শিতে মাছ পড়ত না সেদিন তারা চুরি করত। অন্য জেলেদের জালের মাছ কিংবা চরাঞ্চলের বাজারে বিক্রি করতে আসা তরমুজ-বাঙ্গী-পিয়ারা ইত্যাদি ফলফলাদি নৌকা থেকে চুরি করে নিরাপদে লাফ দিয়ে নদীতে পড়ে ডুব দিয়ে অনেকটা দূরে গিয়ে ভেসে উঠে যেভাবে সে পালাতে পারত তা শুনলে আপনি অবাক না হয়ে পারবেন না।
সুমাইয়ার কথাবার্তা শুনে আমি তার ব্যাপারে দারুণ রোমাঞ্চিত হতে থাকলাম। অন্য দিকে, আমার স্ত্রী সন্তানেরা তাকে আপদ মনে করে যে লোকটি তাকে নিয়ে এসেছে তার চৌদ্দগোষ্ঠী মনে মনে উদ্ধার করা শুরু করল। ফলে একটি বিপরীতমুখী পরিবেশের মধ্যে শিশু সুমইয়ার নতুন যাত্রা শুরু হলো। সে অতি অল্প সময়ের মধ্যে সব কিছু ম্যানেজ করে নিলো। তার কমনসেন্স ও বুদ্ধিমত্তার ব্যাপারে আমি প্রথম থেকেই আশাবাদী ছিলাম এবং সে আজ অবধি আমাদের কাউকে নিরাশ করেনি। আমার ঔরসজাত সন্তানেরা আমার সাথে যেরূপ ব্যবহার করে এবং যেভাবে পরিবারের নিয়মকানুন মেনে চলে ঠিক সেভাবে সুমাইয়াও সব কিছু করতে আরম্ভ করল। সকালে অফিসে আসার সময় সালাম বিনিময়, রাতে বাসায় ফেরার পর সালাম দেয়া, টিভি দেখা, নিয়মিত ঘুমাতে যাওয়া এবং ঘুম থেকে সময়মতো ওঠার মতো অভ্যাসগুলো সে মাত্র দু’দিনের মধ্যেই রপ্ত করে ফেলল।
আমি সুমাইয়াকে আমার বড় মেয়ে নন্দিতার সাথে একই রুমে এবং একই বিছানায় শোয়ার ব্যবস্থা করলাম। আমাকে খুশি করার জন্য সুমাইয়া বেশ খুশি মনে তার বড় বোনের সাথে ঘুমাতে যায়। কিন্তু প্রতিদিন ফজরের সময় দেখি সুমাইয়া খাটের নিচের মেঝেতে আলাদা বিছানা করে শুয়ে আছে। আমার সন্দেহ হলো নন্দিতার ওপর। তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতেই সেও অবাক হয়ে জানাল যে, প্রতি রাতে সে আমাকে দেখানোর জন্য নন্দিতার সাথে ঘুমাতে যায় এবং একটু পর নন্দিতা ঘুমিয়ে গেলে সে চুপিসারে বিছানা থেকে নেমে মেঝেতে ঘুমিয়ে পড়ে। আমি সুমাইয়াকে মেঝেতে ঘুমানোর কারণ জিজ্ঞাসা করতেই সে নয়-ছয় মিলিয়ে একগাছা মিথ্যা কথা এমনভাবে বলল, যা থেকে আমি আসলে কিছুতেই কিছু আন্দাজ করতে পারলাম না। এই ঘটনার কিছু দিন পর জানলাম যে, সুমাইয়ার বিছানায় প্রস্রাব করার অভ্যাস এবং সেই ভয়েই সে রাতে বিচানা থেকে নেমে মেঝেতে ঘুমাত। সুমাইয়া যেদিন ঘুমের ঘোরে মেঝেতে শোয়া অবস্থায় প্রস্রাব করে দিলো, সেদিন বাসার সবাই তার প্রতি বিরক্ত হলেও আমি হলাম না।
বরং তার প্রতি আমার শ্রদ্ধা বহুগুণ বেড়ে গেল। ছোট্ট সুমাইয়া যেভাবে নিজের দুর্বলতা সম্পর্কে সচেতন থেকে তার বড় বোনের বিছানা নষ্ট করেনি, সেভাবে যদি রাষ্ট্রের বড় কর্তারা সচেতন হতেন তবে আমরা অনেক জাতীয় দুর্গন্ধ থেকে বেঁচে যেতে পারতাম।
ছোট্ট সুমাইয়া আমাদের সাথে থাকে এবং প্রতি মাসে তার পুরো উপার্জন তার মায়ের কাছে পাঠিয়ে দেয়। প্রতি ঈদে, উৎসবে এবং পার্বণে সেও আমার ঔরসজাত সন্তানদের মতো সেলামি পায় সমান হারে। সেসব টাকাও গ্রামে পাঠিয়ে দেয়। সে টুকটাক কাজ করে এবং অবসর সময়ে টিভি দেখে। সব জনপ্রিয় ভারতীয় সিরিয়াল, ক্রিকেট ম্যাচ এবং সব ধরনের কার্টুনের চলচ্চিত্র দেখতে দেখতে সে প্রায়ই খিলখিলিয়ে হেসে ওঠে।
তার সেই হাসির শব্দ যে কতটা মধুর এবং কতটা নিষ্পাপ তা আপনি না দেখলে বুঝতে পারবেন না। সে যখন অবসরে থাকে তখন মাঝে মধ্যে মুখভার করে বিড়বিড় করে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দিতে থাকে। আমার স্ত্রী তাকে গালাগালের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করতেই সে ঝটপট জানিয়ে দেয় যে, সে তার জন্মদাতা পিতা এবং গর্ভধারিণী মাকে গালাগাল দিচ্ছে। মাঝে মধ্যে সুমাইয়া প্রশ্ন করে জানতে চায় সে তার জন্মদাতা পিতার সম্পত্তিতে ভাগ পাবে কিনা! আমি যখন বলি, অবশ্যই পাবে তখন সে খুশিতে আত্মহারা হয়ে পিতা, সৎ মা এবং সৎ ভাইবোনের চৌদ্দগোষ্ঠী তুলে বিড়বিড়িয়ে কি যেন বলতে থাকে।
শুরুর দিকে সুমাইয়ার কিছু অদ্ভুত কর্ম আমার পরিবারের অন্য সদস্যদের বিরক্তি সৃষ্টি করতে থাকে। সে সময় পেলেই রঙিন পেন্সিল দিয়ে বাসার দেয়ালে হাবিজাবি আঁকিবুঁকি করে। তার আম্মু এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে সে বেমালুম অস্বীকার করে। সে প্রথমে আমাদের বাসায় বেড়াতে আসা বিভিন্ন শিশুর নাম ধরে বলতে থাকে অমুকে করেছে এবং সে নিজে দেখেছে। এ কথা শোনার পর আমার স্ত্রী যখন পাল্টা যুক্তি দেয় তখন সে নির্বিকারভাবে বলে দেয় যে, ভূতে করেছে। বেলকনি দিয়ে কালো রঙের একটি ভূত এসে বাসার ওয়ালে যখন দাগ দিচ্ছিল তখন সুমাইয়ার খুব ইচ্ছে হচ্ছিল চিৎকার করে আম্মু-আব্বুকে ডাকে। কিন্তু ভূতের ভয়ে তার কণ্ঠ দিয়ে কোনো শব্দ বের হতে পারেনি। এসব কর্মকাণ্ড ছাড়াও সুমাইয়া আরো অনেক কিছু করে। সে মাঝে মধ্যে কানে শোনে না। বিশেষ করে প্রয়োজনের সময় তার আম্মু বা ভাইবোনেরা ডাকলে সে শুনতে পায় না। আর টিভি দেখার সময়তো তার কান পুরো বন্ধ হয়ে যায়।
আমি সারা দিন অফিস শেষে যখন বাসায় ফিরি তখন সবাই এক গাদা অভিযোগ নিয়ে আমার সামনে হাজির হয়। তোমার ছোট মেয়ে আজ একাজ করেছে ওকাজ করেছে, নিজের বাবা-মাকে গালি দেয়ার ছলে আমাদের গালাগালি করেছে ইত্যাদি। আমি অভিযোগগুলো শুনি এবং স্মিত হেসে বলি ঠিকই করেছে- গোলাম মাওলা রনির ছোট মেয়ে এতটুকু তো করতেই পারে। আমার কথা শুনে সুমাইয়ার দুই চোখের তারায় খুশির ঝিলিক বয়ে যায় এবং সে বিশ্বাস করতে আরম্ভ করে যে, সব বাবা খারাপ নয়। সে ধীরে ধীরে নিজেকে পরিবর্তন করার চেষ্টা করে এবং আমাকে খুশি করার জন্য সাধ্যমতো অনেক কিছু করতে থাকে। সে ফজরের সময় উঠে নামাজ পড়তে আরম্ভ করে এবং সুযোগ পেলেই আমার কাছে এসে গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে পিতার স্পর্শ লাভের চেষ্টা চালাতে থাকে। নামাজ কালামে তার আগ্রহ দেখে আমি একজন হুজুর নিয়োগ দিলাম রোজ সকালে এসে তাকে আরবি পড়িয়ে যাওয়ার জন্য।
সে আমাকে খুশি করার জন্য চার-পাঁচ মাস ধরে সাধ্যমতো চেষ্টা করল কিন্তু আলিফ-বা-তা-ছা শেষ করতে পারল না। হুজুর বিরক্ত হয়ে গেলেন। পরে একদিন সুমাইয়া তার আম্মুকে বলল, আব্বুর যে কী হয়েছে। আমার ছয় ধারের নয় ধার নাই, আর আমাকে দিয়েছে কুরআন শরিফ পড়ার জন্য।
সুমাইয়াকে নিয়ে আমি সময় পেলে বেড়াতে যাই এবং তার পছন্দের খাবারগুলো বিভিন্ন হোটেল রেস্টুরেন্টে গিয়ে খাইয়ে আনি। তাকে নিয়ে যেদিন বার্গার কিং নামক বিখ্যাত ফাস্টফুডের দোকানে গেলাম সেদিন তার একটি ব্যবহারে আমি রীতিমতো তাজ্জব বনে গেলাম। আমরা প্রত্যেকের জন্য পর্যাপ্ত অর্ডার দিলাম। আমার অন্য ছেলেমেয়ে সব খাবার গো-গ্রাসে সাবাড় করতে লাগল, কিন্তু সুমাইয়া অন্যদের মতো খেতে পারল না।
সে বহু কষ্টে একটি বার্গারের এক-তৃতীয়াংশ খেল এবং বারবার আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বিব্রত বোধ করতে থাকল। সে বুঝতে পারল যে, আমি কেবল তাকে খুশি করার জন্যই পুরো পরিবারকে নিয়ে বার্গার কিংয়ে এসেছি এবং বার্গার কিংয়ের খাবার দাবারের দাম যে বেশি তাও সে আন্দাজ করে ফেলল। সুতরাং সেই খাবার তৃপ্তিসহকারে না খেতে পারার ব্যর্থতার গ্লানিতে সে বিমর্ষ হয়ে পড়ল এবং আমার দিকে তাকিয়ে বলল, আব্বু! নতুন এসেছি তো। মজা করে খেতে পারছি না। তুমি কিছু মনে করো না। এর পর থেকে খেতে পারব।
আমার আদর যত্নে এবং স্নেহ মমতায় সুমাইয়া প্রায় সব বদাভ্যাস পরিত্যাগ করে ফেলেছে। সে জীবন সম্পর্কে বুঝতে শিখেছে এবং একটি সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করে যাচ্ছে। কিন্তু নিয়তি সম্ভবত সুমাইয়াদের জীবনকে জটিল করে দেয়। সুমাইয়ার জন্মদাতা পিতা যে কিনা কোনো দিন মেয়ের খোঁজ নেয়নি এবং সম্ভবত মেয়ের মুখটিও দেখেনি সে হঠাৎ করে সুমাইয়ার অভিভাবক হওয়ার জন্য সুমাইয়ার গর্ভধারিণী মায়ের সাথে প্রতিযোগিতা শুরু করেছে। সুমাইয়ার নানী এখন আর সুমাইয়ার মায়ের পক্ষে নেই, সে এখন সুমাইয়ার পিতার পক্ষ নিয়েছে। তারা মনে করছে সুমাইয়ার গর্ভধারিণী মা সুমাইয়ার ভবিষ্যৎ নষ্ট করছে। কারণ সুমাইয়া যে টাকা পাটায় তা তার মা, সৎ বাবা এবং সৎ ভাইবোনেরা সাবাড় করে ফেলছে। সুমাইয়ার নানীর দাবি সুমাইয়াকে তো সে-ই লালন পালন করেছে। সুতরাং সুমাইয়ার উপার্জনের ওপর তার দাবি সর্বাগ্রে। তার সেই দাবিকে মজবুত করার জন্য সে তার কন্যার সাবেক জামাতা অর্থাৎ সুমাইয়ার পিতাকে নিজ দলে ভিড়িয়ে নিয়েছে।
উল্লেখিত ঘটনাটি আপনার আমার জন্য হয়তো কৌতুকের বিষয় হতে পারে কিন্তু সুমাইয়াদের জন রীতিমতো জীবন মরণ সমস্যা। ছোট্ট সুমাইয়া প্রায়ই টেলিফোন করে তার অভিভাবকদের সাথে দীর্ঘক্ষণ কথা বলে এবং একজন দক্ষ বিচারকের মতো তাদের পারস্পরিক বিরোধ নিষ্পত্তির চেষ্টা করে। আমি সুমাইয়ার কথাগুলো মাঝে মধ্যে দূর থেকে শোনার চেষ্টা করি এবং ভাবি সরকারের এত উন্নয়ন কেনো সুমাইয়ার নানীর ডিঙ্গি নৌকায় পৌঁছাল না কিংবা সুমাইয়ার অভাবী পিতার চিত্তে কেনো পিতৃত্বের দায়িত্ববোধ জাগ্রত করল না। আমাদের জিডিপি, আমাদের রিজার্ভ এবং পদ্মা সেতু কেনো সুমাইয়ার গর্ভধারিণী মায়ের মধ্যে সন্তানপ্রীতি পয়দা করতে পারল না।
লেখক : সাবেক সংসদ সদস্য