যেভাবে শিখদের মন জয় করে নিলো পাকিস্তান
যেভাবে শিখদের মন জয় করে নিলো পাকিস্তান - ছবি : সংগৃহীত
সারা বিশ্বের শিখেরা তাদের ক্রিসমাসের মতো করে তাদের ধর্মের প্রতিষ্ঠাতার ৫৫০তম জন্মদিন উদযাপন করছে। তারা এবার এই উদযাপন করছে কিছুটা বিস্ময়ের সাথে। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে বিরল সহযোগিতার একটি মুহূর্ত সৃষ্টি হয়েছে এখন।
চলতি বছরের প্রথম দিকে দুই পরমাণু প্রতিদ্বন্দ্বী যুদ্ধের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গিয়েছিল। তারা একে অপরের ভূখণ্ডে বিমান হামলা চালায়। পরে কাশ্মিরের স্বায়াত্তশাসন ভারত বাতিল করে দেয়। কিন্তু গত সপ্তাহান্তে দুই দেশ ওই বিরোধ পাশে সরিয়ে রেখে একটি করিডোর চালু করে। এর ফলে ভারতীয় শিখেরা প্রথমবারের মতো ভিসা ছাড়াই তাদের কর্তারপুর সাহিব ভ্রমণ করতে পারবে। পাকিস্তানের এই স্থানে নির্মিত মন্দিরেই শিখ ধর্মের প্রতিষ্ঠাতা গুরু নানক শেষ দিনগুলো কাটিয়েছিলেন।
করিডোরটি চালুর করার ঘটনাটি অবতার সিংয়ের মতো তীর্থযাত্রীদের জন্য ছিল গভীর আবেগময় বিষয়। তার আশঙ্কা ছিল, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তীব্র বিরোধ থঅকায় তিনি কোনো দিনই কর্তারপুর সাহিব সফর করার সুযোগ পাবেন না।
তিনি বলেন, ৭০ বছর আগে আমার পরিবারকে সীমান্তের এপারে আসতে হয়েছিল। আমরা বাস করতাম গুজরানওয়ালায়। এই জায়গায় আর যেতে পারব না ভেবে আমার কষ্ট হতো।
ব্রিটিশরা উপনিবেশ শাসন অবসানের সময় শিখদের ভূমিটি ভাগ করে ভারত ও পাকিস্তানকে দিয়ে দেয়। এর ফলে এক কোটি ২০ লাখ শিখ তাদের পৈত্রিক আবাস ছেড়ে চলে আসে।
সিং বলেন, তারা বলছে যে আমরা স্বাধীনতা পেয়েছি। কিন্তু আমার অভিমত হলো, আমরা স্বাধীনতা পাইনি। আমরা কঠিন অবস্থায় পড়ে গিয়েছিলাম। তারা আমাদের পরিবারগুলোকে বিভক্ত করে ফেলেছিল।
ওই সময়কার অনেক ভুলের একটি অবসানের পদক্ষেপ হলো এই করিডোরটি চালু। তবে এটি চালু হওয়ায় ভারতের সবাই খুশি হয়েছে, এমন নয়।
বছরখানেক আগে দুটি হিন্দু চরমপন্থী গ্রুপ পাকিস্তানের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের চেষ্টায় থাকা এক বিখ্যাত ভারতীয় শিখের মাথার মূল্য ঘোষণা করে। করিডোরটি চালু করায় তার বিপুল ভূমিকা রয়েছে।
বিখ্যাত ক্রিকেটার ও রাজনীতিবিদ নবজ্যোত সিং সিধু ২০১৮ সালে ইমরান খানের সাথে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। দুজন একইসাথে ক্রিকেট খেলেছিলেন। ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন পাকিস্তানের। পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর প্রধান করিডোরটি নির্মাণ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিলে সিধু তাকে জড়িয়ে ধরে কোলাকুলি করেছিলেন।
ভারতীয় মিডিয়া ওই কোলাকুলির জন্য সিধুর ওপর প্রচণ্ড ক্ষিপ্ত হয়। এমনকি চরমপন্থী হিন্দুদের কাছ থেকে মৃত্যুর হুমকিও পেয়েছিলেন। ভারতীয় সংখ্যালঘু শিখ সম্প্রদায়ের সাথে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার পাকিস্তানি উদ্যোগের পেছনে কী রয়েছে তা নিয়ে অনেক হিন্দু জাতীয়তাবাদী উদ্বিগ্ন হয়েছিল।
তাদের মানসিক বৈকল্য চরম করে পাকিস্তান কিন্তু ১৯৮০-এর দশকে শিখদের বিচ্ছিন্নতাবাদকে সমর্থন দিয়েছিল।
সন্ত্রাসদমন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেক বড় অর্থনীতি, জনসংখ্যা ও সামরিক বাহিনীর বিরুদ্ধে পাকিস্তান এভাবেই লড়াই করতে পারে।
ইনস্টিটিউট ফর কনফ্লিক্ট ম্যানেজমেন্টের নির্বাহী পরিচালক ড. আজাই সাহনি ভাইস নিউজকে বলেন, তারা বিশ্বাস করে যে ভারতে এত বৈসদৃশ্য রয়েছে যে দেশটি ভেঙে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। শেষ পর্যন্ত দেশটি ভেঙে যাচ্ছে।
তবে সাহনির মতো অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এই করিডোর দিয়ে পাকিস্তানি সন্ত্রাস বাড়াবে না।
স্বাধীনতার পর প্রথমবারের মতো তীর্থযাত্রীদের কর্তারপর সফর অবশ্য জাতীয়তাবাদকে বলবতী করছে না। বরং এর বিপরীতে প্রমাণ করছে যে সীমান্তের অপর পাড়ও খুব বেশি ভিন্ন নয়।
মনজিত সিং আনন্দ ভাইস নিউজকে বলেন, যে দেশে আগে কখনোই আসতে দেয়া হয়নি সেখানে আসতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। আমাদের খুবই ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার সাথে গ্রহণ করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমি সরকার, জনগণ ও সব ভাইকে বলব : আমি খুবই কৃতজ্ঞ। তারা এই স্থানটি আমাদের দিয়েছে, আমাদের তারা এটি দেখিয়ে দিয়েছে। আর এর মাধ্যমে তারা আমাদের হৃদয় জয় করেছে।
ভাইস.কম