শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী রঙ্গ
শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রার্থী রঙ্গ - ছবি : সংগৃহীত
সবাই একমত যে ১৬ নভেম্বর অনুষ্ঠেয় শ্রীলঙ্কার নির্বাচনে লড়াই হবে শ্রীলঙ্কার প্রধান দুই দলের মধ্যে তথা শ্রীলঙ্কা পদুজনা পেরামুনা (এসএলপিপি) ও ইউনাইটেড ন্যাশনাল পার্টির (ইউএনপি) মধ্যে। এই দুই দলের প্রার্থী হলেন যথাক্রমে গোতাবায়া রাজাপাকসা ও সাজিথ প্রেমাদাসা।
তবে এই নির্বাচনের একটি বিষয় অলক্ষ্যেই থেকে যাচ্ছে। নির্বাচনে যে ৩৫ প্রার্থী অংশ নিচ্ছেন, তাদের অনেকেই কিন্তু পেশাগত জীবনে বিশেষ সাফল্যের পরিচয় দিয়েছেন। এদের মধ্যে আছেন সাবেক আর্মি কমান্ডার জেনারেল মহেশ সেনানায়েকে ও শ্রীলঙ্কার উদ্যেক্তা (তিনি আইনজীবীও) ড. রোহান পালেওত্তা। আরো আছেন শিক্ষাবিদ ও আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত পরিবেশবিদ ড. অজান্থা বিজেসিঙ্গে পেরেরা। ১৯৯৯ সালে চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গার পর তিনিই প্রথম নারী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
শ্রীলঙ্কার নির্মাণ শিল্পে পালেওত্তা বিশেষ সাফল্য পেয়েছেন। তিনি শ্রীলঙ্কার শ্রমিক ব্যবহার করে জাপানি ও ইউরোপিয়ান গাড়ি বাজারের জন্য স্বয়ংক্রিয় এয়ারব্যাগ ও সিট বেল্ট ইমপ্যাক্ট সেন্সর উৎপাদন করছেন। ড. অজান্তা বিজেসিঙ্গে পেরেরা শ্রীলঙ্কার আবর্জনা সঙ্কট অবসানে প্রয়াস চালানোর জন্য বিখ্যাত। তিনি কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য তহবিলের সংস্থানও করেছেন।
ইংল্যান্ডে পড়াশোনা শেষ করে তিনি ২৩ বছর বয়সে শ্রীলঙ্কায় ফিরে বায়োক্যামেস্ট্রি, ফিজিওলজি ও জুলজিতে সহকারী লেকচারার হিসেবে কেলানিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। পরে তিনি এনভাইরনমেন্টাল স্টাডিজের সিনিয়র লেকচারার হিসেবে কলম্বো বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেন। তিনি শ্রীলঙ্কার পাশাপাশি ফিজিরও কয়েকটি মন্ত্রণালয়ে বিশেষজ্ঞ হিসেবে কাজ করেন।
শ্রীলঙ্কায় যেখানে গুটিকতেক ব্যক্তি ও তাদের পরিবারের মধ্যে রাজনীতি সীমিত, সেখানে খ্যাতনামা ব্যক্তিদের রাজনীতিতে প্রবেশ একটি নতুন ধারা। শ্রীলঙ্কার রাজনৈতিক অঙ্গনকে সাধারণভাবে দুর্নীতির আখড়া হিসেবে পরিচিত। এখানে উগ্র লোকদেরই দাপট, শিক্ষিত পেশাদাররা তাই এখানে প্রবেশ করতে চান না।
বর্তমান প্রজন্মের মধ্যে অর্থ কামানোর কোনো ঝোঁক নেই, তারা সম্ভবত চান বিদ্যমান অবস্থার পরিবর্তন। তাদের উদ্যোগের ফলে আদর্শবাদী তরুণেরা রাজনীতিতে যোগ দিয়ে ডাকাতদের একচ্ছত্র আধিপত্যের অবসান ঘটানোর উদ্যোগ গ্রহণ করতে পারে।
উল্লেখ্য যে ২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে সর্বোচ্চ সংখ্যক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। তাদের অনেকে যোগ্য ও সম্মানিত নাগরিক। তারা তাদের বক্তৃতায় অর্থনৈতিক ও রাজনৈকি সঙ্কট থেকে শ্রীলঙ্কার উদ্ধারের সুপারিশ ও পরিকল্পনা পেশ করছেন।
রাজনৈতিক জবাবদিহিতা, অর্থনৈতিক সাম্যতা ও উন্নয়ন, নারীদের অধিকার ও পরিবেশগত সুরক্ষার মতো বিষয়গুলো উঠে আসছে। এসব বিষয় জেভিপি ছাড়া মূলধারার রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে গুরুত্বপূর্ণ কোনো ইস্যু ছিল না। কিন্তু প্রেসিডেন্ট প্রার্থীদের নতুন বাহিনীর জন্য এখন ইউএনপি ও এসএলপিপিও এদিকে নজর দিচ্ছে।
সাবেক সেনা কমান্ডার জেনারেল মহেশ সেনানায়েকে দেশের উন্নয়ন ও নিরাপত্তার ম্যান্ডেট দিয়ে ন্যাশনাল পিপলস মুভমেন্ট ও পিপলস ফোরাম অর্গ্যানাইজেশনের মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন। তিনি পুলিশের মুসলিমবিরোধী দাঙ্গা দমন করতে ব্যর্থ হওয়ার পর এগিয়ে এসে তা প্রতিরোধ করেছিলেন। বেশ কয়েকজন সাবেক সেনা অফিসারের পাশাপারি নাগরিক সমাজের অনেক সদস্য তাকে সমর্থন করছেন।
ড. রোহান পালেওত্তা ৫২ বছর বয়স্ক ব্যবসায়ী। যুক্তরাজ্যের বোল্টন থেকে ডক্টরেট ডিগ্রি করা এই ভদ্রলোক শ্রীলঙ্কার সর্বোচ্চ রাজস্ব আয়কারী ব্যবসায়ী। তার অধ্যবসায় কল্পকাহিনীকেও হার মানায়। ১৬ বছর বয়সে তিনি জাপান সফর করেন। এর ১৫ বছর পর তিনি জাপানের গাড়ি কোম্পানিগুলোর ব্যবহৃত এয়ার ব্যাগ ও সেন্সর উৎপাদন শুরু করেন। তিনি স্বপ্ন দেখতেন, একদিন এগুলো তিনি রফতানি করবেন। ১৫টি বছর সফলতার মুখ না দেখলেও অবশেষে তিনি ২০১৭ সালে সাফল্য পান। এরপর থেকে তিনি এই খাতে ৮০ মিলিয়ন ডলার আয় করেছেন।
অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীকে একত্রিত করার উদ্যোগও গ্রহণ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার ডেইলি এফটি পত্রিকাও কলম্বোর গল ফেস হোটেলে এ ধরনের একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এতে সজিথ প্রেমাদাসা, অরুনা কুমারা দিসানায়েকে, ড. রোহান পালেওত্তা, জেনারেল মহেশ সেনানায়েকের এক প্রতিনিধি, ও ড. অজান্তা পেরেরা অংশ নেন। তবে গোতাবায়া রাজাপাকসা উপস্থিত হননি। তিনি তার একটি জীবন-বৃত্তান্ত পাঠান। এটি সেখানে দেখানো হয়।
এবারের নির্বাচনের একটি বিশেষ দিক হলো, প্রধান দলগুলোর প্রার্থীরা কেবল একে অপরের থেকে নয়, বরং দেশকে উদ্ধার করার মিশনে এগিয়ে আসা পেশাদারদেরও মোকাবিলা করছেন। সাত দশকের বেশি সময় পর প্রথমবারের মতো যোগ্যতাসম্পন্ন শ্রীলঙ্কানরা কেবল ব্যক্তিবিশেষ ও তাদের পরিবারবর্গের ব্যক্তিগত খেলার ময়দান হিসেবে আর দেশকে ব্যবহৃত না হতে দেয়ার জন্য এগিয়ে এসেছেন।