পায়খানার সাথে রক্ত : যেসব রোগের লক্ষণ

অধ্যাপক ডা. এ কে এম ফজলুল হক | Nov 12, 2019 04:31 pm
পায়খানার সাথে রক্ত : যেসব রোগের লক্ষণ

পায়খানার সাথে রক্ত : যেসব রোগের লক্ষণ - ছবি : সংগ্রহ

 

পাইলস রোগটি আমাদের দেশের সাধারণ রোগীদের কাছে পরিচিত একটি রোগ। আমাদের ধারণা পায়ুপথের বিভিন্ন সমস্যা যেমন রক্ত যাওয়া, ব্যথা হওয়া, ফুলে যাওয়া এসবই হয় পাইলস রোগের কারণে। এ ধারণা সঠিক নয়। প্রতিটি উপসর্গই পায়ুপথে ক্যান্সার হলে হতে পারে। ফিস্টুলা বা ভগন্দর রোগেও উপরোক্ত উপসর্গগুলো দেখা দিতে পারে। পায়ুপথে ক্যান্সার হয়েছে সেটিও ফিস্টুলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে পারে।

লেখকের দেখা অন্য একজন মহিলা রোগী (৫৫) যিনি রাজধানীর একটি কলেজের অধ্যাপক গত দেড় বছর ধরে মলদ্বারে রক্ত যাচ্ছে। পায়খানা ক্লিয়ার হয় না। নিজে নিজে ল্যাক্সেনা ট্যাবলেট খাচ্ছেন পেট পরিষ্কার করার জন্য। পায়খানার বেগ এলে কিছু তরল জিনিস বের হয়ে আসে কিন্তু পায়খানা অসম্পূর্ণ রয়ে গেছে এরূপ ভাব। মাঝে মাঝে টয়লেটে রক্ত যায়। ইদানীং মলদ্বারে ও কোমরের নিচের দিকে ব্যথা মলদ্বার থেকে পেছন দিকে ছড়িয়ে পড়া ব্যথা। ভেতরের ব্যথা কোমরে অনুভূত হতে পারে আবার ঊরুর দিকেও সম্প্রসারিত হতে পারে।

এই রোগিণীর প্রাথমিক ইতিহাস শোনার পর লেখকের স্বাভাবিকভাবেই একটু সন্দেহ হয়েছে। অতঃপর তার সিগময়ডস্কপি ও প্রকটস্কপি পরীক্ষায় ধরা পড়ে যে তার রেকটামের ভেতর ক্যান্সার আছে। কিন্তু রোগীর বিশ্বাস তিনি পাইলসে ভুগছেন। বিস্তারিত ইতিহাস না নিলে ভুল হতো। কারণ রোগীর সাদামাটা বক্তব্য হচ্ছে যে, তার রক্ত যায় এবং পায়খানা ক্লিয়ার হয় না। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে রোগীরা মলদ্বারের ভেতর যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা করাতে চান না। ব্যথা হতে পারে এই ভেবে খুব ভয় পেয়ে যান। জিজ্ঞাস করেন যে, এই পরীক্ষা করলে আমি আগামীকাল অফিসে যেতে পারব কিনা? এটি নিশ্চিত করেই বলা যায় যে, এ পরীক্ষায় সামান্য অস্বস্তি ছাড়া কোনোরূপ ব্যথা হয় না। বেশির ভাগ রোগীই এ পরীক্ষায় কোনোরূপ ব্যথা পান না। এ পরীক্ষার জন্য খুবই সামান্য সময়ের প্রয়োজন। সারা দিন না খেয়ে থাকার প্রয়োজন হয় না। মলদ্বারে তীব্র ব্যথা আছে এমন রোগীদেরও এ পরীক্ষা করা যায়।

যেসব রোগে পায়খানার সাথে রক্ত যায় তার মধ্যে ক্যান্সার অন্যতম। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রক্ত যায় যেসব রোগে সেগুলো হচ্ছে ১. এনাল ফিসার ২. পাইলস ৩. রেকটাল পলিপ (শিশুদের বেশি হয়) ৪. ক্যান্সার ৫. আলসারেটিভ কেলোইটিস ৬. ফিস্টুলা ও অন্যান্য।
মফস্বল থেকে আসা অনেক রোগী দেখি যাদের ক্যান্সার আছে অথচ হাতুড়ে চিকিৎসকরা তদের ইনজেকশন দিচ্ছেন। কোনো কোনো হাতুড়ে চিকিৎসক আবার এক ধাপ এগিয়ে সেখানের অপারেশনেরও মহড়া দিচ্ছেন। আবার কখনো কখনো একই রোগীর পাইলস ও ক্যান্সার থাকতে পারে। সে ক্ষেত্রে আমরা যদি পাইলসের চিকিৎসা করি তাহলেও দেখা যায় যে রোগীর সমস্যা যাচ্ছে না, তখন মলদ্বারের ভেতর লম্বা যন্ত্র দিয়ে পরীক্ষা (সিগময়ডস্কপি বা কোলনস্কপি) করলে ক্যান্সার ধরা পড়ে। এ জাতীয় সমস্যাও মাঝে মধ্যে দেখা যায়।

মলদ্বারের মুখ থেকেও রক্ত যেতে পারে আবার অনেক ভেতর অর্থাৎ রেকটাম বা বৃহদন্ত্রের ভেতর থেকেও রক্ত যেতে পারে। কী কারণে যাচ্ছে তা বিশেষ ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে একজন উপযুক্ত চিকিৎসক বলে দিতে পারেন। কিছু কিছু রোগী বলেন, আমার পাইলস হয়েছে আমাকে কিছু ওষুধ দেন খেয়ে দেখি পরীক্ষা-নিরীক্ষার দরকার নেই। কিন্তু লেখক বিশেষ ধরনের পরীক্ষা না করে অনুমাননির্ভর পাইলস চিকিৎসার বিপক্ষে। কারণ এতে যে রোগীদের ক্যান্সার আছে তা শনাক্তকরণে বিলম্ব হবে।
লেখক : বৃহদন্ত্র ও পায়ুপথ বিশেষজ্ঞ, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান, (অব) কলোরেকটাল সার্জারী বিভাগ, বিএসএমএমইউ, ঢাকা।

চেম্বার : ইডেন মাল্টি-কেয়ার হসপিটাল, ৭৫৩, সাতমসজিদ রোড, (ষ্টার কাবাব সংলগ্ন) ধানমন্ডি, ঢাকা। ফোন : ০১৭৫৫৬৯৭১৭৩-৬


 

ko cuce /div>

দৈনিক নয়াদিগন্তের মাসিক প্রকাশনা

সম্পাদক: আলমগীর মহিউদ্দিন
ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক: সালাহউদ্দিন বাবর
বার্তা সম্পাদক: মাসুমুর রহমান খলিলী


Email: online@dailynayadiganta.com

যোগাযোগ

১ আর. কে মিশন রোড, (মানিক মিয়া ফাউন্ডেশন), ঢাকা-১২০৩।  ফোন: ৫৭১৬৫২৬১-৯

Follow Us